পৃথিবীর অন্দরমহল

ছোট প্রশ্নউত্তর

1 পৃথিবীর অভ‍্যন্তরে পদার্থ কি অবস্থায় আছে?
উত্তরঃ গলিত অবস্থায়।
2 পৃথিবীর ভেতরটা দেখার জন্য 6370 কিমি গর্ত খোঁড়া সম্ভব কি?
উত্তরঃ না, অসম্ভব।
3 নিফেসিমার প্রধান উপাদান কি?
উত্তরঃ নিকেল, লোহা, সিলিকা, ম্যাগনেশিয়াম।
4 আপেলের কোন্ অংশ গুরুমণ্ডলের সঙ্গে তুলনীয় ?
উত্তরঃ শাঁস অংশ
5 আপেলের কোন্ অংশ কেন্দ্রমণ্ডলের সঙ্গে তুলনীয়?
উত্তরঃ বীজ বা দানা অংশ।
6 পৃথিবীর কেন্দ্রের উয়তা কত ?
উত্তরঃ 5000℃
7 কেন্দ্রমণ্ডল স্তরটিকে কী বলা হয় ?
উত্তরঃ নিফে (Ni+Fe)
8 ভূগর্ভে কী হারে উয়তা বৃদ্ধি পায় ?
উত্তরঃ প্রতি 33 মিটার গভীরতায় 1℃
9 লেহম্যান বিযুক্তিরেখা কোন্ দুটি স্তরকে পৃথক করেছে ?
উত্তরঃ বহিঃকেন্দ্র মন্ডল ও অন্তঃকেন্দ্র মন্ডল।
10 গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডলের মাঝে কোন্ বিযুক্তিরেখা আছে ?
উত্তরঃ গুটেনবার্গ বিযুক্তি রেখা।
11 কেন্দ্রস্থলের গড় ঘনত্ব কত ?
উত্তরঃ 9.1 = 13.1 গ্রাম/ঘনসেমি।
12 পৃথিবীর কোন স্তরটি সবচেয়ে বেশি অংশ জুড়ে অবস্থান করেছে?
উত্তরঃ গুরুমণ্ডল।
13 পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত দেখতে গেলে কত গভীর গর্ত খুঁড়তে হবে ?
উত্তরঃ 6,370কিমি গভীর।
14 কোন দেশ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূ – তাপশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ?
উত্তরঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।
15 Journey to the Centre of the Earth বইটি কার লেখা ?
উত্তরঃ জুল ভার্নের লেখা।
16 সিয়াল ও সিমার মাঝে কোন্ বিযুক্তিরেখা আছে ? অথবা , সিয়াল ও সিমা স্তরের মাঝে – গুটেনবার্গ / কনরাড / মােহ / লেম্যান বিযুক্তি রেখা দেখা যায় ।
উত্তরঃ কোনরাড বিযুক্তিরেখা।
17 ক্রোফেসিমা ও নিফেসিমার মাঝে কোন্ বিযুক্তিরেখা আছে ?
উত্তরঃ রেপিত্তি বিযুক্তিরেখা।
18 আপেলের কোন অংশ ভূত্বকের সঙ্গে তুলনীয় ?
উত্তরঃ খোসা।
19 মহাসাগরীয় ভূত্বকের অপর নাম কী ?
উত্তরঃ সিমা।
20 ম্যাগনেশিয়াম আর অ্যালুমিনিয়ামের মধ্যে কোন্টা বেশি ভারী ?
উত্তরঃ ম্যাগনেশিয়াম।
21 পৃথিবীর গভীরতম খনি রবিনসন ডিপ – এর গভীরতা কত ?
উত্তরঃ 3-4 কিমি।
22 পৃথিবীর গভীরতম কৃত্রিম গর্তের গভীরতা কত ?
উত্তরঃ 12 কিমি।
23 পৃথিবীর গভীরতম কৃত্রিম গর্ত কোথায় অবস্থিত ?
উত্তরঃ রাশিয়ার কালো উপদ্বীপে।
24 কোন্ শিলায় প্রধানত মহাদেশীয় ভূত্বক তৈরি হয় ?
উত্তরঃ গ্রানাইট।
25 ভূগর্ভের উত্তপ্ত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে এলে তাকে কী বলা হয় ?
উত্তরঃ লাভা
26 পশ্চিমবঙ্গের কোথায় উয় প্রস্রবণ আছে ?
উত্তরঃ বক্রেশ্বরে।
27 পৃথিবীর ভিতরের তাপশক্তিকে কী বলে ?
উত্তরঃ ভূ-তাপশক্তি।
28 পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ কত ?
উত্তরঃ 6,370 কিমি।
29 ভূত্বকের গড় গভীরতা কত ?
উত্তরঃ প্রায় 30 কিমি।
30 মহাদেশীয় ভূত্বকের অপর নাম কী ?
উত্তরঃ সিয়াল।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Q.1  মাগম কী ?

উত্তর ভূগর্ভের পদার্থ প্রচণ্ড চাপ ও তাপে গ্যাস ও বাম্পমিশ্রিত হয়ে উত্তপ্ত গলিত অবস্থায় থাকলে তাকে ম্যাগমা বলে । ম্যাগমা যেখানে সঞ্চিত থাকে তাকে ম্যাগমা চেম্বার বলে ।

Q.2 তাপীয় বিকিরণ কাকে বলে ?

উত্তর পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যত গভীরে যাওয়া যায় ততই তাপমাত্রা বুদ্ধি পায় । বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি 33 মি গভীরতায় উয়তা 1°C হারে বৃদ্ধি পায় । পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ এখনও উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে বলে তাপমাত্রা বেশি হয় । এ ছাড়াও ভূগর্ভের অনেক তেজস্ক্রিয় পদার্থ অনবরত তাপ বিকিরণ করে তাপমাত্রা আরো বাড়িয়ে তােলে । এইভাবে দেখা যায় পৃথিবীর কেন্দ্রে তাপমাত্রা । বেড়ে 5000°C – এর অধিক হয়ে যায় ।

Q.3 লাভা ( Lava ) কী ?

উত্তর ভূ – আন্দোলনের প্রভাবে সৃষ্ট ভূত্বকের কোনাে ফাটল বা চ্যুতির মাধ্যমে কিংবা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে গলিত অর্ধতরল ম্যাগমা যখন ভূপৃষ্ঠের ওপরে এসে পেীছােয় তখন তার ভিতর থেকে গ্যাস ও বাষ্প পৃথক হয়ে যায় । এই তরল পদার্থকে লাভা বলা হয় ।

Q.4 অ্যাসথেনােস্ফিয়ার ( Asthenosphere ) সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট লেখ?

উত্তর সংজ্ঞা : অ্যাসথেনােস্ফিয়ার ( Asthenosphere ) কথাটি এসেছে গ্রিক অ্যাসথেনে ‘ ( astheniea ) মানে দুর্বল আর স্ফিয়ার ‘ ( sphere ) মানে মণ্ডল ’ শব্দ দুটি থেকে , যার অর্থ দুর্বল মণ্ডল । অ্যাসথেনােস্ফিয়ার হল ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডলের অন্তর্গত এক সান্দ্র দুর্বল ও নমনীয় প্রকৃতির পরিবর্তনশীল স্তরবিশেষ ।

বৈশিষ্ট :

1 ) গভীরতা : প্রায় 200 কিমি গভীরতায় এই স্তরটি মূলত লােহা ও ম্যাগনেশিয়াম দ্বারা গঠিত ।
2 ) প্রকৃতি : প্রচণ্ড তাপমাত্রা ও চাপযুক্ত এই অঞ্চল স্থিতিস্থাপক ও সান্দ্র অবস্থায় আছে ।
3 ) উষ্ণুতা : এই অঞলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ যেমন — ইউরেনিয়াম , থােরিয়াম প্রভৃতি থাকার জন্য উন্নতা বৃদ্ধি পেয়ে শিলা গলনাঙ্কের ( 1 , 400°C ) কাছাকাছি থাকে ।
4 ) ভাসমান পাত : এই স্তরে ম্যাগমার পরিচলন স্রোতের । সাহায্যে মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় পাত ভাসমান অবস্থায় চলমান রয়েছে ।
5 ) ভূকম্প তরল : সান্দ্র অবস্থায় থাকার জন্য এই স্তরে P ‘ ও ‘ S ‘ তরঙ্গ তুলনামূলকভাবে ধীর গতিসম্পন্ন হয় , তাই একে LVZবা Low Velocity Zone বলে ।
6 ) গুরুত্ব : অগ্ন্যুৎপাত এই অ্যাসথেনােস্ফিয়ার থেকে সংঘটিত হয় বলে একে ক্ষুব্বমন্ডল বলে ।

Q.5 ভূ – তাপশক্তি ( Geothermal Energy ) অথবা , ভূ – তাপ কী ?

উত্তর সংজ্ঞা : পৃথিবীর কেন্দ্রের তাপ ধীরে ধীরে বাইরের দিকে অর্থাৎ , পৃথিবীপৃষ্ঠের দিকে আসতে থাকে । এই তাপশক্তিকে ভূ – তাপশক্তি বলে ।
ব্যবহার : প্রবহমান ও দূষণহীন এই ভূ – তাপশক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে লাগে ।
বিদ্যুৎ উৎপাদন : 1904 সালে ইটালির লারডেয়াললােতে প্রথম ভূতাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয় । বর্তমানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ভূ – তাপশক্তি উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে । ফিলিপাইন্স দ্বিতীয় ও মেক্সিকো তৃতীয় স্থান । অধিকার করে । এ ছাড়া রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে , নিউজিল্যান্ডের ওয়াইরাকেতে ভূ – তাপশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র আছে । ভারতে হিমাচল প্রদেশের মণিকরণে একটি বড়াে ভূ – তাপশক্তি চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে ।
সুবিধা : 1 এই শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে কয়লা , খনিজ তেলের ব্যবহার কমানাে যায় । 2 এই শক্তি ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ হয় না ।

Q.6 উষ্ণ প্রস্রবণ ( Hot Spring ) ।

উত্তর সংজ্ঞা : মাটির নীচ থেকে যখন উয় জল আপনা আপনি বেরিয়ে আসতে থাকে , তখন । তাকে উষ্ণ প্রস্রবণ বলে ।
উৎপত্তি : মাটির নীচে শিলাস্তরের জল ( ভৌমজল ) পৃথিবীর অভ্যন্তরের তাপ অর্থাৎ , ভূ – তাপের সংস্পর্শে এসে গরম হয়ে ফুটতে শুরু করে এবং পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনাে ফাটল বা দুর্বল স্থান পেলে সেখান দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে উয় প্রস্রবণ সৃষ্টি করে ।
উদাহরণ – পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর , বিহারের রাজগির প্রভৃতি স্থানে উয় প্রস্রবণ দেখা যায় ।


রচনা ধর্মী প্রশ্নোত্তর

Q.1 কেন্দ্রমণ্ডল ( Core ) কাকে বলে ? কেন্দ্রমণ্ডলের | বৈশিষ্ট্য লেখাে ।

উত্তর সংজ্ঞা : গুরুমণ্ডলের নীচে এবং পৃথিবীর কেন্দ্রের চারদিকে বেষ্টনকারী সর্বাধিক ঘনত্বযুক্ত স্তরকে কেন্দ্রমণ্ডল বা কোর বলে ।
বৈশিষ্ট্য

1 ) গভীরতা : গুরুমণ্ডলের নীচে 2 , 900 কিমি থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র 6 , 370 কিমি গভীরতা পর্যন্ত কেন্দ্রমণ্ডল বিস্তৃত । অর্থাৎ , এই স্তরটি প্রায় 3 , 470 কিমি পুরু ।

2 ) উপাদান : এই স্তর অত্যন্ত ভারী নিকেল ( Ni ) ও লােহা । ( Fe ) দিয়ে গঠিত বলে একে নিফে ( Nife ) বলে ।
3 ) উষ্ণতা : এই স্তরের গড় উষ্ণতা প্রায় 5000°C ।
4 ) ঘনত্ব : এই স্তরের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি । গড় ঘনত্ব প্রায় 9 . 1 – 13 . 1 গ্রাম / ঘনসেমি । ।
5 ) উপস্তর : বিজ্ঞানীরা কেন্দ্রমণ্ডলকে দুটি অংশে ভাগ । করেছেন ।
বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল : 2 , 900 – 5 , 100 কিমি গভীরতায় রয়েছে বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল । এর চাপ , তাপ ও ঘনত্ব অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডলের তুলনায় কম হওয়ায় এখানে পদার্থ অর্ধকঠিন অবস্থায় আছে ।

অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল : পৃথিবীর কেন্দ্রের চারদিকে বেষ্টন । করে রয়েছে অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল । এর গভীরতা 5 , 100 – 6 , 370 তরের চাপ , তাপ ও ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি । অত্যধিক চাপে পদার্থগুলি এখানে কঠিন অবস্থায় আছে ।
6 ) বিযুক্তিরেখা : গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা দ্বারা কেন্দ্রমণ্ডল গুরুমণ্ডল থেকে আলাদা হয়েছে । বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল ও অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডলের মাঝে রয়েছে লেহম্যান বিযুক্তিরেখা ।

Q.2 ভূত্বক ( Crust ) কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে । অথবা , ভূকম্পীয়বিদ্যা অনুসারে ভূগর্ভের শ্রেণিবিভাগ করে যে – কোনাে একটি ভাগের বিবরণ দাও ।

উত্তর সংজ্ঞা : সবার ওপরে অবস্থিত হালকা ও কঠিন পদার্থে গঠিত যে স্তরটি পৃথিবীকে শক্ত আবরণে মুড়ে রেখেছে , তাকে ভূত্বক বা ক্রাস্ট বলে । পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত স্তরগুলিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় , যথা 1 কেন্দ্রমণ্ডল ( Core ) , 2 গুরুমণ্ডল ( Mantle ) , 3 শিলামণ্ডল ( Lithosphere ) । ভূগর্ভের এই বিভিন্ন স্তরগুলির প্রকৃতি , উয়তা , ঘনত্ব ও চাপ ভূকম্প তরঙ্গের গতিবেগের পার্থক্যের মাধ্যমে বােঝা যায় ।


বৈশিষ্ট্য :
1) গভীরতা : মহাদেশের নীচে গড়ে 60 কিমি এবং মহাসাগরের নীচে গড়ে 5 কিমি গভীরতা পর্যন্ত ভূত্বক বিস্তৃত । এর গড় গভীরতা প্রায় 30 কিমি ।
2) উপাদান : ভূত্বকের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে অক্সিজেন ( O ) । এ ছাড়া সিলিকন ( Si ) , ম্যাগনেশিয়াম ( Mg ) , অ্যালুমিনিয়াম ( AI ) প্রভৃতি উপাদানে ভূত্বক গঠিত ।
3) উন্নতা বা তাপমাত্রা : পৃথিবী তাপ বিকিরণ করে গ্যাসীয় অবস্থা থেকে ক্রমশ শীতল হয়ে তরল হয় । তরল অবস্থা থেকে ক্রমশ শীতল হয়ে পৃথিবীর উপরিভাগের এই কঠিন আবরণটি সৃষ্টি হয় । ভূ – অভ্যন্তরের তিনটি স্তরের মধ্যে এই স্তরটির উন্নতা সবচেয়ে কম । ভূত্বকের গড় তাপমাত্রা 15°C ।
4) ঘনত্ব : ভূত্বক সবচেয়ে হালকা । এর ঘনত্ব 2 . 2 – 2 . 9 গ্রাম / ঘনসেমি ।
5)  শিলা : ভূত্বক আগ্নেয় , পাললিক ও রূপান্তরিত এই তিন প্রকার শিলা দিয়ে গঠিত । এই শিলা নানা খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ । ভূত্বকের একেবারে ওপরে আছে মাটি ।
6) উপস্তর : ভূত্বকের দুটি অংশ । যথা — A) সিয়াল : সিলিকন ( Si ) ও অ্যালুমিনিয়াম ( AI ) দ্বারা গঠিত ওপরের অপেক্ষাকৃত হালকা স্তরটি হল সিয়াল ( Si + A = Sial ) বা মহাদেশীয় ভূত্বক । এটি গ্রানাইট জাতীয় শিলায় গঠিত এবং মহাসাগরের নীচে অনুপস্থিত ।
B) সিমা : সিলিকন ( Si ) ও ম্যাগনেশিয়াম ( Mg ) দ্বারা গঠিত অপেক্ষাকৃত ভারী স্তরটি হল সিমা ( Si + Ma = Sima ) বা মহাসাগরীয় ভূত্বক । এটি ব্যাসল্ট জাতীয় শিলায় গঠিত এবং সিয়ালের নীচে অবস্থিত । 7) বিযুক্তিরেখা : ভূত্বকের সিয়াল ও সিমার মাঝে রয়েছে । কনরাড বিযুক্তিরেখা এবং ভূত্বককে গুরুমণ্ডল থেকে পৃথক করেছে মােহােরাভিসিক বিষক্তিরেখা ।

Q.3 গুরুমণ্ডলের ( Mantle ) সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য লেখাে?

উত্তর সংজ্ঞা : ভূত্বকের নীচ থেকে পৃথিবীর অভ্যন্তরে কেন্দ্রমণ্ডলের ঊর্ধ্বভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় একই ঘনত্বযুক্ত স্তরকে গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টেল বলে ।
বৈশিষ্ট্য : 1) গভীরতা : ভূত্বকের নীচ থেকে প্রায় 2 , 900 কিমি গভীরতা পর্যন্ত গুরুমণ্ডল বিস্তৃত ।
2) উপাদান : এই স্তরের প্রধান উপাদান লােহা ( Fe ) , নিকেল ( Ni ) , ক্রোমিয়াম ( Cr ) , ম্যাগনেশিয়াম ( Mg ) ও সিলিকন ( Si ) ।
3)  উম্নতা : এই স্তরের উয়তা 2000°c – 3000°C । • 4) ঘনত্ব : এখানে পদার্থের ঘনত্ব 3 . 4 – 5 . 6 গ্রাম / ঘনসেমি ।
5) উপত্তর : গুরুমণ্ডলের দুটি স্তর । যথা-
বহিঃগুরুমণ্ডল : গুরুমণ্ডলের 30 – 700 কিমি পর্যন্ত অংশে ক্রোমিয়াম ( Cr ) , লােহা ( Fe ) , সিলিকন ( Si ) ও ম্যাগনেশিয়ামের ( Mg ) প্রাধান্য দেখা যায় বলে একে ক্রোফেসিমা ( Crofesima ) বলে ।
অন্তঃগুরুমণ্ডল : 700 – 2 , 900 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে নিকেল ( Ni ) , লােহা ( Fe ) , সিলিকন ( Si ) ও ম্যাগনেশিয়ামের ( Mg ) আধিক্যের জন্য একে নিফেসিমা ( Nifesima ) বলে । |
6) বিযুক্তিরেখা : গুরুমণ্ডল মােহােরাভিসিক বিযুক্তিরেখা দ্বারা ভূত্বক থেকে এবং গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা দ্বারা কেন্দ্রমণ্ডল থেকে বিচ্ছিন্ন । আর বহিঃগুরুমণ্ডল ও অন্তঃগুরুমণ্ডলের সঙ্গে রয়েছে রেপিত্তি বিযুক্তিরেখা ।

Q.4 পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ সম্পর্কে কীভাবে তথ্যসংগ্রহ করা যায় ?

উত্তর ভূমিকম্প তরঙ্গের গতিবিধি লক্ষ করে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ সম্পর্কে নানা তথ্যসংগ্রহ করেছেন । ভূমিকম্প তরঙ্গ তিন প্রকার – P , ও L তরঙ্গ । এর মধ্যে । প্রাথমিক বা P তরঙ্গ ও গৌণ বা S তরঙ্গের গতিবিধি দ্বারা ভূ – অভ্যন্তরের গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় । যেমন –

‘ P ‘ তরঙ্গ থাকে প্রাপ্ত ভূ – অভ্যন্তর সংক্রান্ত ধারণা : ‘ P ‘ তরঙ্গ কঠিন ও তরল উভয় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যেতে পারে এবং পদার্থের ঘনত্ব যত বৃদ্ধি পায় ‘ P ‘ তরঙ্গের গতি ততই বৃদ্ধি পায় । পৃথিবীর যত অভ্যন্তরে যাওয়া যায় ততই ‘ P ‘ তরঙ্গের গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে । এর থেকে বােঝা যায় ভূপৃষ্ঠ থেকে কেন্দ্রের দিকে পদার্থের ঘনত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পায় ।
‘ S ‘ অৱঙ্গ থেকে প্রাপ্ত ভূ – অভ্যন্তর সংক্রান্ত ধারণা : ‘ S ‘ তরঙ্গ কেবল কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হয় , তরল বা অর্ধতরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে হারিয়ে যায় । ভূ – অভ্যন্তরে ‘ S ‘ তরঙ্গের একটা নির্দিষ্ট স্তরে হারিয়ে যাওয়া এটা প্রমাণ করে যে পৃথিবীর অভ্যন্তরের কোনাে কোনাে অংশ তরল অবস্থায় আছে ।
    এইভাবে ‘ P ‘ ও ‘ S ‘ তরঙ্গের গতিবেগের তারতম্য , প্রতিসরণ , তরঙ্গদৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি প্রভৃতির সাহায্যে ভূ – অভ্যন্তরের গঠন সম্পর্কে বহু তথ্য জানা গেছে ।

Q.5 পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের বিভিন্ন বিযুক্তিরেখার পরিচয় দাও ।

উত্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত যেখানে যেখানে ভূমিকম্পের তরঙ্গের গতিবেগ পরিবর্তিত হয় সেই স্থানকে ভূতত্ত্ববিদরা বলেন বিযুক্তিরেখা ( Discontinuity line ) । পৃথিবীর অভ্যন্তরে এরূপ 5টি বিযুক্তিরেখার অবস্থান জানা গেছে । এগুলি হল |
1) কনরাড বিযুক্তিবেথা ( Conrad Discontinuity Line ) : ভূত্বকের মহাদেশীয় অংশ সিয়াল ও মহাসাগরীয় অংশ সিমার মাঝের বিযুক্তিরেখাকে কনরাড বিযুক্তিরেখা বলে । অস্ট্রিয়ার ভূবিজ্ঞানী কনরাড এই বিযুক্তিরেখা আবিষ্কার করেন । ভূ – অভ্যন্তরে গড়ে 10 – 12 কিমি নীচে এটি অবস্থিত ।
2) মােহেরােভিসিক বিযুক্তিরেখা ( Mohorovisic Discontinuity Line ) : ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলের মাঝে অবস্থিত । বিযুক্তিরেখাকে মােহােরােভিসিক বা মােহে বিযুক্তিরেখা বলে । বিজ্ঞানী মােহােরাভিসিক এটি আবিষ্কার করেন বলে এরূপ নামকরণ । ভূ – অভ্যন্তরে গড়ে 30 কিমি নীচে এই বিযুক্তিরেখা অবস্থিত ।
3) রেপিজি বিযুক্তিরেখা ( Repetti Discontinuity Line ) ; উধর্ব গুরুমণ্ডল এবং নিম্ন গুরুমণ্ডলের মাঝে অবস্থিত বিযুক্তিরেখাকে রেপিত্তি বিযুক্তিরেখা বলে । ভুপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 700 কিমি গভীরতায় এটি অবস্থিত । |
4) গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা ( Gutenberg Discontinuity Line ) : ভূ – অভ্যন্তরে গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডলের মাঝে অবস্থিত বিযুক্তিরেখাকে গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা বলে । 1912 সালে ভূবিজ্ঞানী গুটেনবার্গ এটি আবিষ্কার করেন । ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 2 , 900 কিমি গভীরে এই বিযুক্তিরেখা অবস্থিত । একে উইচার্ট – গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখাও বলা হয় ।
5) লেহম্যান বিযুক্তিরেখা ( Lehman Discontinuity Line ) : কেন্দ্রমণ্ডলের বাইরের স্তর বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল এবং ভিতরের স্তর অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডলের মধ্যে অবস্থিত বিযুক্তিরেখাকে লেহম্যান বিযুক্তিরেখা বলে । এটি প্রায় 5 , 100 কিমি গভীরে অবস্থিত । বিজ্ঞানী লেহম্যান এর আবিষ্কারক ।

Q.6 শিলামণ্ডলের ( Lithosphere ) সংক্তেয়া ও বৈশিষ্ট্য লেখাে ।

উত্তর সংজ্ঞা : গ্রিক শব্দ ‘ Lithos ” অর্থ “ শিলা ‘ ও ‘ Sphere ‘ অর্থ মণ্ডল । গুরুমণ্ডলের উর্ধ্বে অবস্থিত মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় ভূত্বকের সমষ্টিকে শিলামণ্ডল বা অশ্মমণ্ডল বলে।

শ্রেণিবিভাগ : –
ক্ষুদ্ধমণ্ডল ( Asthenosphere ) : বহিঃগুরুমণ্ডলের । ওপরে প্রায় 100 কিমি বিস্তৃত নমনীয় ও আপাত স্থিতিস্থাপক অথচ অশান্ত স্তরটি হল ক্ষুদ্ধমণ্ডল ( Asthenosphere ) ।
ভূত্বক ( Earth ‘ s Crust ) : আসথেনােস্ফিয়ারের ওপরে গড়ে প্রায় 30 কিমি পুরু , কঠিন , হালকা ও পাতলা স্তরটি হল ভূত্বক । ভূত্বককে পুনরায় দুটি উপবিভাগে ভাগ করা যায় । যথা – – 1 সিয়াল বা মহাদেশীয় ভূত্বক । 2 সিমা বা মহাসাগরীয় ভূত্বক।
বৈশিষ্ট্য :
1 ) ক্ষেত্রমান ও ডর : পৃথিবীর মােট ক্ষেত্রমানের 1 % এবং মােট ভরের 0 . 04 % হল শিলামণ্ডল ।
2 ) গভীরতা : শিলামণ্ডল মহাসাগরের তলদেশে 5 কিমি এবং মহাদেশের নীচে প্রায় 50 – 60 কিমি গভীর । এর গড় গভীরতা প্রায় 30 কিমি ।
3 ) পরিমাণ : শিলা মন্ডলের 7/10 ভাগ মহাসাগরীয় অংশ এবং 3/10 ভাগ মহাদেশীয় অংশ ।
4 ) গঠন : শিলামণ্ডল আগ্নেয় , পাললিক , রুপান্তরিত শিলায় গঠিত ।
5 ) খনিজ উপাদানসমূহ : স্তরটি সিলিকন ( Si ) , অ্যালুমিনিয়াম ( AI ) , ম্যাগনেশিয়াম ( Mg ) সহ অন্যান্য বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত ।
6 ) জৈব পদার্থ : উল্লিখিত খনিজ উপাদানগুলি ছাড়াও কিছু জৈব পদার্থ এবং পলির সমন্বয়ে এই স্তরটি গঠিত হয় ।
7 ) ঘনত্ব : গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিলার ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় । এখানকার উপাদানগুলির গড় ঘনত্ব 2 . 6 – 3 . 3 গ্রাম / ঘনসেমি ।
8 ) মানবজীবনের ওপর প্রভাব : শিলামণ্ডলকে কেন্দ্র করেই । কৃষিকাৰ্য , শিল্পস্থাপন , বসতি নির্মাণ প্রভৃতি কার্যাবলিগুলাে সম্পন্ন হয় । তাই মানবজীবনের ওপর শিলামণ্ডলের গুরুত্ব অপরিসীম ।

সৌজন্য- ভূগোল শিক্ষা 
Bhugolshiksha.com