অনুপ্রবেশ বা পতন (Infiltration), Hydrology

 

সংজ্ঞা (Defination): অনুপ্রবেশ বা Infiltration কথাটির অর্থ হলো ভূমিভাগ থেকে অধঃক্ষেপিত জলের ভূ-অভ্যন্তরের চলন। জলচক্র যে সকল প্রক্রিয়াগুলির সহায়তায় পূর্ণতা লাভ করে তার মধ্যে অনুপ্রবেশ একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। কারণ অনুপ্রবিষ্ঠ জলের পরিমান অধিক হলে জলচক্রে বাস্পীভবনের পরিমান কম হয়।

 

অনুপ্রবেশের কারণ সমূহ ( Factors of Infiltration ):

যে সকল কারণে ভূ-অভ্যন্তরে জলের অনুপ্রবেশ বা Infiltration ঘটে সেগুলি নিম্নরূপ –

 

1 . মৃত্তিকা কনা  মধ্যস্থ ফাঁকের আয়তন : সাধারণত মৃত্তিকার অনুপ্রবেশ ক্ষমতা নির্ভর করে ভূপৃষ্ঠের মৃত্তিকার গুনাবলীর ওপর। এই মৃত্তিকা যদি শিথিল এবং মোটা দানযুক্ত হয় বা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র বর্তমান থাকে তবে অনুপ্রবেশর মাত্রা অধিক হয়।

 

2 . শিলায় জলের প্রবেশ্যতা : মাটি কণার আকার অনুসারে বিভিন্ন অঞ্চলে মাটি রন্ধ্রের ব্যবধান দেখা যায়। এই রন্ধ্রের ব্যবধান বেশি হলে সেখানে ভূ-অভন্তরে বেশি পরিমাণে জলের প্রবেশ ঘটে। কিন্তু রন্ধ্রের ব্যবধান কম হলে খুব ধীরে ধীরে জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মৃত্তিকায় জলের প্রবেশ্যতা অনুসারে ভূ-ত্বকের শিলারাশিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়-
(a) প্রবেশ্য শিলা : যে শিলার মধ্যে দিয়ে জল সহজেই প্রবেশ করতে পারে তাকে প্রবেশ্য শিলা বলে। যেমন- বেলে পাথর, চুনাপাথর ইত্যাদি।
(b) অর্ধ প্রবেশ্য শিলা : এই শিলার মধ্যে অল্পজল প্রবেশ করে। যেমন- শুষ্ক বালু, দো-আঁশ মাটি।
(c ) অপ্রবেশ্য শিলা : যে শিলার মধ্যে দিয়ে জল সহজেই প্রবেশ করতে পারে না তাকে অপ্রবেশ্য শিলা বলে। যেমন- গ্রানাইট, ব্যাসল্ট ইত্যাদি।

 

3 . মাটির গঠন : চূর্ণকার গঠন বিশিষ্ট মৃত্তিকায় জলপ্রবেশ বেশিঘটে। ব্লক আকার মৃত্তিকা কণা জল আটকে অনুপ্রবেশে বাধা দেয়। পিজম বা শ্লেট আকৃতির মৃত্তিকা কণার জল প্রবেশকে কম বেশি প্রভাবিত করে।

 

4 . মাটিতে বাতাসের সঞ্চালন : মাটিতে বাতাসের সঞ্চালন বেশি হলে জলের অনুপ্রবেশ কম হয়। অর্থাৎ বাতাসের পরিমান অনুপ্রবেশের হারকে নিয়ন্ত্রিত করে। আবার অন্যদিকে বাতাসের পরিমাণ কম হলে জলের অনুপ্রবেশ হার বেশি হয়।

 

5 . বৃষ্টিপাতের মাত্রা : জলের অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের পরিমান এই অনুপ্রবেশের হারকে নিয়নত করে। শুষ্ক মাটিতে খুব কম পরিমানে বৃষ্টিপাতের জলও অতিদ্রুত অনুপ্রবেশ করে। বৃষ্টিপাতের পরিমান বৃদ্ধি ঘটার সঙ্গে মাটিতে অনুপ্রবেশের পরিমান বৃদ্ধি ঘটলেও একটি পর্যায়েতা কমে যায়। কারন আর্দ্র মাটিতে জলের অনুপ্রবেশের হারও কম থাকে।আবার দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে বৃদ্ধি হলেও মাটিতে জলের অনুপ্রবেশের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

 

6 . অববাহিকার নতিমাত্রা বা ঢাল : অববাহিকার অঞ্চলের ঢালও অনুপ্রবেশের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। নতি মাত্রার পরিমান যত কম হবে জলের অনুপ্রবেশের হার ততো বেশি হয়। কারণ ভূমিঢালের পরিমান বেশি হলে বৃষ্টির জল অতিদ্রুত প্রবাহিত হয় ফলে মাটিতে অনুপ্রবেশের হারও কমে যায়।

 

7 . ঋতুগত অবস্থান : বিভিন্ন ঋতুতে বৃষ্টিপাতের তারতম্য ঘটে, ফলে মাটিতে জলের অনুপ্রবেশের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে উত্তাপের পরিমান অধিক থাকে বলে বাস্পীভ্যবনের পরিমানের বৃদ্ধি ঘটে। ফলে মাটিতে অনুপ্রবেশের হার কম থাকে। অন্যদিকে বৃষ্টিবহুল আদ্রঋতুতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে বলে বাস্পীভ্যবন কম হওয়ায় অনুপ্রবেশের পরিমান বেশি হয়।

 

8 . উদ্ভিদের আবরণ : উদ্ভিদ আচ্ছাদিত ভূপৃষ্ঠে জলের প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়, ফলে মাটিতে জলের পরিমানে বৃষ্টির জল ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহরূপে গড়িয়ে চলে যায় বলে সেসব অঞ্চলে অনুপ্রবেশের পরিমান কম হয়। আবার উদ্ভিদ আচ্ছাদিত অঞ্চলে উদ্ভিদের শিকড় মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মৃত্তিকা শিথিল করে থাকে এবং এর ফলেও অনুপ্রবেশের বৃদ্ধি ঘটে।

 

9 . ধৌত প্রক্রিয়া : মাটির ধৌত প্রক্রিয়া অনুপ্রবেশকে প্রভাবিত করে। ধৌতপ্রক্রিয়ায় মৃত্তিকাস্থ জলের নিম্নগমনের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্তিকার স্থূলকনাসমূহ দ্রবীভূত হয়ে নিম্নগমন করে এবং নিম্নস্থ মৃত্তিকার ফাঁকগুলি এই প্রক্রিয়ায় ভরাট হতে সাহায্য করে। এর ফলে জল আরও গভীরে প্রবেশে বাঁধা পায়। ফলে মৃত্তিকা সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে এবং অনুপ্রবেশ হ্রাস পায়।

 

10 . কৃষিকাজ বা ভূমির ব্যবহার : কৃষিকাজের অন্তর্গত ভূমির ওপরের মৃত্তিকা কনা আলগা হয়ে থাকে যা বৃষ্টির জলকে দ্রুত নিম্নগমনে সাহায্য করে।

 

11 . সময় উপকরণ : তুমুল বৃষ্টিপাতের প্রথম ঘটায় যে পরিমান অনুপ্রবেশ ঘটে, পরের ঘন্টা গুলিতে তা ঘটে না। এজন্য তুমুল বৃষ্টিপাত দীর্ঘক্ষনস্থায়ী হলে জল জমা ও বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

 

12 . সূর্যতাপ : প্রখর সূর্যালোকে ভূপৃষ্ঠের জলের বাস্পীভবন ঘটায়। সেই জলীয় বাস্পপূর্ণ বায়ু থেকে বৃষ্টিপাত হয় তবেই অনুপ্রবেশ ঘটে।

 

13 . জৈবিক গঠন ( Biological Structure ): ইঁদুর, ছুঁচো, সাপ ইত্যাদি জীবজন্তু দ্বারা সৃষ্ট যে গর্তগুলো রয়েছে সেই গর্ত দিয়ে জল গড়িয়ে মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

 

14 . মাটির ফাটল : মৃত্তিকার মধ্যে ফাটল থাকলে অনুপ্রবেশ বা Infiltration এর হার বেশি হয়। এই ফাটল দিয়ে জল গড়িয়ে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

 

15 . মাটির তাপমাত্রা : মাটির তাপমাত্রা বেশি থাকলে অনুপ্রবেশের পরিমান বেশি হয় এবং তাপমাত্রা কম থাকলে অনুপ্রবেশের পরিমানও কম হয়। যেমন- নিরক্ষীয় মরু উষ্ণ অঞ্চলের মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা বেশি এবং শীতল মেরু অঞ্চলের মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা কম থাকে।

 

উপরিউক্ত জলপ্রবাহের কারণগুলি জন্য ভূ-অভ্যন্তরে জলের অনুপ্রবেশ বা Infiltration ঘটে।
নিচের বাটনে ক্লিক করে এই পিডিফ ফাইলটি ডাউনলোড করেন
© ভূগোল শিক্ষা – Bhugol Shiksha
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের পােস্টটি পড়ার জন্য ।  এই ভাবেই ভূগোল শিক্ষা – Bhugol Shiksha এর পাশে থাকুন, ভূগোল বিষয়ে যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই আমাদের ওয়েবসাইট টি ফলাে করুন এবং নিজেকে ভৌগােলিক তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন, ধন্যবাদ

 

নিচের শেয়ার বাটনে ক্লিক করে শেয়ার করেন বন্ধুদের মাঝে