শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী | Sarat Chandra Chattopadhyay Biography in Bengali
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী – Sarat Chandra Chattopadhyay Biography in Bengali : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিম্নবিত্তের মানুষকে তাঁর উপন্যাসের কেন্দ্রে স্থাপন করে বাঙালির ঘরােয়া জীবনের শােক – দুঃখের কথা এবং বিভিন্ন সমস্যার বাস্তব রূপ অতি সযত্নে তুলে ধরেছেন । এ কারণেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে আমরা এত ভালােবাসি ।
বিখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জবন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। A short biography of Sarat Chandra Chattopadhyay. Sarat Chandra Chattopadhyay Birth, Place, Poems, Biography in Bengali are given below.
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Sarat Chandra Chattopadhyay) কে ছিলেন?
বাংলা সাহিত্যের অপরাজেয় ও অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Sarat Chandra Chattopadhyay) । স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ গল্প ও উপন্যাসের ক্ষেত্রে তার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে গেছেন । জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে শরৎচন্দ্র আজো সবার উপরে । এমন মহাপ্রাণ কথাশিল্পী বাংলা ভাষায় এখনাে দ্বিতীয়টি জন্মগ্রহণ করেনি । মনীষী রােমাঁ রােলাঁ শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত পড়ে বলেছিলেন নােবেল পুরস্কার পাওয়ার মতাে উপন্যাস ।
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবনী (Sarat Chandra Chattopadhyay Biography In Bengali)
নাম (Name) | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Sarat Chandra Chattopadhyay) |
জন্ম (Birthday) | ১২৮৩ সনের ৩১শে ভাদ্র , ইংরেজি ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ই সেপ্টেম্বর (15 September 1876) |
জন্মস্থান (Birthplace) | দেবানন্দপুর, ব্যান্ডেল, হুগলি জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
ডাকনাম (Nickname) | ন্যাড়া |
ছদ্দনাম (Pseudonym) | অনিলা দেবী |
অভিভাবক (Guardian) / পিতা ও মাতা | মতিলাল চট্টোপাধ্যায় (বাবা)
ভুবনমােহিনী দেবী (মা) |
দাম্পত্যসঙ্গী (Spouse) | শান্তি দেবী, হিরন্ময়ী দেবী |
পেশা (Career) | লেখক (উপন্যাস, ছোটগল্প) |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | শ্রীকান্ত, দেবদাস |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | ডিলিট (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), জগত্তারিণী পদক (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) |
মৃত্যু (Death) | ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮ (16 January 1938) |
মৃত্যুস্থান | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম (Birth Place Of Sarat Chandra Chattopadhyay)
হুগলী জেলার অন্তর্গত দেবানন্দপুর গ্রামে বাংলা ১২৮৩ সনের ৩১ শে ভাদ্র , ইংরেজি ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ ই সেপ্টেম্বর আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথা সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের অপরাজেয় কথা শিল্পী শরৎচন্দ্রের জন্ম হয়।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বংশপরিচয় (Parents Of Sarat Chandra Chattopadhyay)
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় , মায়ের নাম ভুবনমােহিনী দেবী । শরৎচন্দ্রেরা ছিলেন ছয় ভাইবােন । সবার বড় বােন অনিলা , তারপরই শরৎচন্দ্র । শরশ্চন্দ্রের পর দু’ভাই তারপর দুই বােন । শরৎচন্দ্রের পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ছিলেন উদাসী প্রকৃতির মানুষ । পাণ্ডিত্যের জন্য তার খ্যাতি ছিল । গল্প , কবিতা , উপন্যাস , নাটক রচনা করতেন । কিন্তু কোনােটাই শেষ করতে পারেননি।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শৈশব (Sarat Chandra Chattopadhyay’s Childhood)
সংসারের প্রতি মতিলালের উদাসীনতার জন্য দারিদ্র্য ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী । তাই শরৎচন্দ্রের ছেলেবেলা কেটেছে নিদারুণ অভাব অনটনের মধ্যে । পরে কিশাের বয়সে ভাগলপুরে মামার বাড়িতে থাকতে হয়েছিল তাকে । শরৎচন্দ্র ছােটবেলায় খুব দুরন্ত ও দুষ্টু প্রকৃতির ছিলেন । তার দুরন্তপনায় গ্রামবাসী ছিলাে অতিষ্ঠ । স্কুলের পন্ডিতমশাই পর্যন্ত তার অত্যাচারে ছিলেন তটস্থ ।
শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিলাে ন্যাড়া । আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় শরৎচন্দ্র বিহারের ভাগলপুরে মামার বাড়ি মানুষ হন । তাঁর মাতামহ কেদারনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ভাগলপুরের এম . ই . স্কুলের সেক্রেটারী । শরৎচন্দ্রকে তিনি এই স্কুলে ভর্তি করে দেন।
শরৎচন্দ্রক গল্প – উপন্যাস পড়তে খুবই ভালােবাসতেন । তার যখন বারাে – তেরাে বছর , তখন থেকেই শরৎচন্দ্র নবীনচন্দ্র সেন ও মধুসূদনের কাব্যগ্রন্থ , বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস , ভূদেব মুখােপাধ্যায়ের প্রবন্ধাবলী , দীনবন্ধু মিত্রের নাটক এবং বিদ্যাসাগরের বিভিন্ন রচনা পড়ে ফেলেন ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শিক্ষাজীবন (Sarat Chandra Chattopadhyay’s Educational Life)
শরৎচন্দ্র ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে ভাগলপুরের তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন । পরে তিনি কলেজে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে এফ . এ ( বর্তমানের আই – এ ) পরীক্ষা দিতে পারেননি । সেখানেই তার শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে । শরৎচন্দ্রের মন চলে গেল খেয়াল – খুশির রাজ্যে । তিনি থিয়েটারে অভিনয় ও গান – বাজনা নিয়ে মেতে উঠলেন । ইতিমধ্যে ১৮৯৫ সালে তার মা মারা গেলেন ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবিকা (Sarat Chandra Chattopadhyay’s Work Life)
১৯০৩ সালে শরৎচন্দ্র জীবিকার সন্ধানে রেঙ্গুনে যান । তখন তার বয়স ২৭ বছর । শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে অঘােরনাথ বাবুর বাড়িতে গিয়ে ওঠেন । অঘােরনাথ বাবু বর্মা রেলওয়েতে ৭৫ টাকা বেতনে শরৎচন্দ্রের একটি চাকরি জুটিয়ে দেন । শরৎচন্দ্র কিছুকাল বর্মায় ভবঘুরে হয়ে জীবন কাটান ।
রেঙ্গুনে থাকতেই শরৎচন্দ্র কলকাতার বিভিন্ন পত্র – পত্রিকায় লেখা পাঠাতেন । সেগুলাে যথাযােগ্য মর্যাদায় ছাপানােও হতাে । আস্তে আস্তে শরৎচন্দ্র বাংলার সাহিত্যাকাশে নিজেকে চন্দ্রের মতাে প্রকাশিত প্রভাসিত করতে সক্ষম হলেন । শরৎচন্দ্রের লেখা পড়ার জন্য মানুষ উগ্রীব উৎসুক হয়ে থাকে ।
সাহিত্য করে জীবিকা নির্বাহ করবেন – এই ভেবে শরৎচন্দ্র একদিন বর্মা থেকে কলকাতায় ফিরে এলেন । বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন নামে বেনামে ছদ্মনামে লেখা দিয়ে যেতে লাগলেন ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য রচনাবলি :
শরৎচন্দ্র আস্তে আস্তে গল্প – উপন্যাস লেখার দিকে ঝুঁকে পড়লেন । নিরলসভাবে তিনি লিখে চললেন । মাঝখানে তিনি কিছুদিনের জন্যে বনেলীরাজ এস্টেটে এক অস্থায়ী চাকরি করেন । ১৯০১ সালে শরৎচন্দ্র পিতার উপর অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান । তিনি সে – সময় এক অবাঙালী সাধুবাবার চেলা সেজে দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন । একদিন সন্ন্যাসী বেশে তিনি আবার দেশেও ফিরে এলেন ।
দেশে ফিরে এসে গান – বাজনা শিকার আর সাহিত্যচর্চা নিয়ে মেতে উঠলেন ।
বড়দিদি উপন্যাস তার প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ । ছদ্মনামেও তিনি কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন । যমুনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল অনিলা দেবী ছদ্মনামে লেখা , নারীর মূল্য , কানকাটা , গুরু – শিষ্য – সংবাদ প্রভৃতি । বিভিন্ন সাময়িক পত্রে রাজনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় । তরুণের বিদ্রোহ তার উল্লেখযােগ্য রাজনৈতিক রচনা ।
স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গেও শরৎচন্দ্র অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন । প্রকাশ্যভাবেও বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন । হাওড়া জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন । পরে বিতশ্রদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরে আসেন ।
স্বদেশী যুগে তার পথের দাবী উপন্যাসটি দেশজুড়ে আলােড়ন সৃষ্টি করেছিল । বাংলার বিপ্লববাদের সমর্থক অভিযােগ তুলে ব্রিটিশ সরকার এই উপন্যাস ১৯২৫ খ্রিঃ বাজেয়াপ্ত করেছিল ।
শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তা তার জীবিতকালে প্রবাদ রূপ লাভ করেছিল । তার গ্রন্থের প্রতি দেশের সর্বস্তরের মানুষই আগ্রহ বােধ করত ।
শরৎচন্দ্রের প্রথম মুদ্রিত গল্পের নাম “ মন্দির ” কুন্তলীন পুরস্কার প্রতিযােগিতায় দেবার জন্য তিনি এই গল্পটি লেখেন ।
কুন্তলীন পুরস্কার প্রতিযােগিতায় ছদ্মনামে মন্দির ’ গল্পটির জন্য প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে শরৎচন্দ্রের তরুণ প্রতিভা সাহিত্যানুরাগীদের স্বীকৃতি লাভ করেছিল । তারপর থেকেই চলতে থাকল তাঁর একের পর এক মহৎ সৃষ্টি অব্যাহত গতিতে । তার অসংখ্য কালজয়ী উপন্যাস , গল্প , প্রবন্ধের মধ্যে বিরাজ বউ ’ , ‘ বিন্দুর ছেলে ’ , ‘ শ্রীকান্ত ’ ( চার খন্ড ) , পল্লীসমাজ ’ , ‘ দেনা পাওনা ’ , ‘ পন্ডিত মশায় ’ , ‘ বিপ্রদাস ’ , ‘ ষােড়শী ’ , ‘ চন্দ্রনাথ ’ , ‘ শেষ প্রশ্ন ’ , ‘ বড়দিদি , ‘ বিজয়া , ইত্যাদি উপন্যাস , ‘ নিষ্কৃতি , “ রামের সুমতি , মেজদিদি , ‘ মহেশ ’ , ‘ অভাগীর স্বর্গ ’ ইত্যাদি চিরকালীন গল্প ও ‘ স্বদেশ ও সাহিত্য ’ , ‘ তরুণের বিদ্রোহ ’ প্রভৃতি প্রবন্ধ বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্যকে মর্যাদা দান করেছে ।
● শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস –
তিনি ২০ টি উপন্যাস লিখেন সেগুলি হলো বড়দিদি, বিরাজবৌ, পন্ডিতমশাই, পল্লী-সমাজ, চন্দ্রনাথ, শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব, দেবদাস, চরিত্রহীন, দত্তা, শ্রীকান্ত-দ্বিতীয় পর্ব, গৃহদাহ, বামুনের মেয়ে, দেনা পাওনা, নব-বিধান, পথের দাবী, শ্রীকান্ত-তৃতীয় পর্ব, শেষ প্রশ্ন, শ্রীকান্ত-চতুর্থ পর্ব, বিপ্রদাস, শুভদা।
● শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাটক –
নাটক ৪ টি রচনা করেন সেগুলি হলো ষোড়শী, রমা, বিরাজ বউ, বিজয়া।
● শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ –
তিনি ১২ টি প্রবন্ধ রচনা করেন সেগুলি হলো নারীর মূল্য,তরুণের বিদ্রোহ, স্বদেশ ও সাহিত্য, স্বরাজ সাধনায় নারী, শিক্ষার বিরোধ, স্মৃতিকথা, অভিনন্দন, ভবিষ্যৎ বঙ্গ-সাহিত্য, গুরু-শিষ্য সংবাদ, সাহিত্য ও নীতি, সাহিত্যে আর্ট ও দুর্নীতি, ভারতীয় উচ্চ সঙ্গীত,
● শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প –
২১ ছোটো গল্প রচনা করেন এবং তাঁর রচিত গল্প গুলি বাংলা সাহিত্যে তাকে এক অন্য মর্যাদা দিয়েছে । তার লেখা গল্প গুলি হলো রামের সুমতি ,পরিণীতা, বিন্দুর ছেলে, পথ-নির্দেশ, মেজদিদি, আঁধারে আলো ,দর্পচূর্ণ ,বৈকুণ্ঠের উইল, অরক্ষণীয়া, নিষ্কৃতি, কাশীনাথ, স্বামী, ছবি, বিলাসী, মামলার ফল, হরিলক্ষ্মী, মহেশ, অভাগীর স্বর্গ, অনুরাধা, সতী, পরেশ,
● শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চলচ্চিত্রায়ণ –
তার সাহিত্য-কর্মকে ঘিরে ভারতীয় উপমহাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি চলচ্চিত্র বিভিন্ন ভাষায় তৈরি হয়েছে । তার মধ্যে ‘দেবদাস’ উপন্যাসটি বাংলা, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় আটবার তৈরি হয়। এছাড়াও তার যেসমস্ত গল্প এবং উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র হয়েছে সেগুলি হলো বড়দিদি , পরিণীতা , রজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত , মাঝলি দিদি , স্বামী, বিন্দুর ছেলে ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সংসার জীবন :
শরৎচন্দ্রের প্রথমা স্ত্রী মারা যাবার পর শরৎচন্দ্র দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেছিলেন । শরৎচন্দ্রের কোনাে সন্তানাদি ছিলাে না । সন্তানাদি না থাকায় শরৎচন্দ্রের স্নেহবাৎসল্য গিয়ে পড়েছিলাে পশুপাখিদের ওপর ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকীর্তির জন্য সম্মান (Sarat Chandra Chattopadhyay’s Awards And Honors)
অনন্যসাধারণ সাহিত্যকীর্তির জন্য বহু সম্মান তিনি লাভ করেছিলেন । ১৯২৩ খ্রিঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে জগত্তারিণী পদক দিয়ে সম্মানিত করে । ১৯৩৬ খ্রিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডি – লিট উপাধি পান । ১৯৩৪ খ্রিঃ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য হন ।
শরৎচন্দ্র সাহিত্যক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথকে গুরুর মর্যাদা দিতেন । রবীন্দ্রনাথ উপন্যাস সাহিত্যে শরৎচন্দ্রকে জয়মাল্য দিয়েছিলেন । মানবতাবাদী শরৎচন্দ্র চিরকাল মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের কথা চিন্তা করে গেছেন । ধর্মীয় কুসংস্কারের মূলে কুঠারাঘাত করতে চেয়েছেন । এজন্যে তিনি অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ জীবন :
মধ্যবয়সে শরৎচন্দ্র হাওড়া জেলার পানিত্রাস (সামতাবেড়) গ্রামের মাটির বাড়িতে বাস করতেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দেউলটি স্টেশন থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটারের পথ সামতাবেড়ের বাড়িটা রূপনারায়ণ নদের তীরে এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। পাশাপাশি দুটো পুকুরে সানের ঘাট, বাগান, ডালিম, পেয়ারা গাছে ঘেরা। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ঘরভাঙানি বন্যায় পাশাপাশি সব গাঁয়ের মাটির বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। শরৎচন্দ্রের মাটির বাড়িটা রূপনারায়ণের কূলে থেকেও আশ্চর্যজনকভাবে রক্ষা পেয়ে যায়। জানালা পর্যন্ত ভিতটা ইঁট-সিমেন্টে গাঁথা ছিল বলে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পড়ে যায়নি। পরে সরকারি উদ্যোগে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র শিবপুরেও থাকতেন। শিবপুর ব্যাতাইতলা বাজার থেকে চ্যাটার্জিহাট পর্যন্ত রাস্তা শরৎচন্দ্রের নামেই চালু আছে। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শরৎচন্দ্র প্রায়শই অসুস্থ থাকতেন।
চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি স্বাস্থ্য উদ্ধারের উদ্দেশ্যে দেওঘরে তিন চার মাস কাটিয়ে কলকাতা ফিরে এলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সময় তার যকৃতের ক্যান্সার ধরা পড়ে, যা তার পাকস্থলী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মৃত্যু (Sarat Chandra Chattopadhyay’s Death)
বাংলা ভাষার এই সর্বশ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী অমরঔপন্যাসিক মনীষী শরৎচন্দ্র ১৯৩৮ সনের ১৬ ই জানুয়ারি কলকাতায় অমৃতলােকে যাত্রা করেন ।
শরৎচন্দ্র বলেছেন , “ সংসারে যারা শুধু দিলে , পেলে না কিছুই , যারা বঞ্চিত , যারা দুর্বল , উৎপীড়িত , মানুষ যাদের চোখের জলের কোন হিসাব নিলে না , নিরুপায় দুঃখময় জীবনে যারা কোনদিন ভেবেও পেলে না , সমস্ত থেকেও কেন তাদের কিছুতেই অধিকার নেই — এদের বেদনাই দিলে আমার মুখ খুলে , এরাই পাঠালে আমাকে মানুষের কাছে মানুষের নালিশ জানাতে ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী প্রশ্ন ও উত্তর (Sarat Chandra Chattopadhyay Biography In Bengali FAQ)
1.শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম কবে ও কোথায়?
Ans: হুগলী জেলার অন্তর্গত দেবানন্দপুর গ্রামে বাংলা ১২৮৩ সনের ৩১ শে ভাদ্র , ইংরেজি ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ ই সেপ্টেম্বর আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথা সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের অপরাজেয় কথা শিল্পী শরৎচন্দ্রের জন্ম হয় ।
- শরৎচন্দ্রের প্রথম মুদ্রিত গল্পের নাম কি?
Ans: শরৎচন্দ্রের প্রথম মুদ্রিত গল্পের নাম
“ মন্দির ”।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম কি?
Ans: অনিলা দেবী।
- শরৎচন্দ্রের ডাকনাম কি ছিলাে?
Ans: শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিলাে ন্যাড়া ।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতার নাম কি?
Ans: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায়।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মায়ের নাম কি?
Ans: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মায়ের নাম ভুবনমােহিনী দেবী ।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবে মৃত্যু হয়?
Ans: শরৎচন্দ্র ১৯৩৮ সনের ১৬ ই জানুয়ারি কলকাতায় অমৃতলােকে যাত্রা করেন ।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রেঙ্গুনে কবে যান?
Ans: ১৯০৩ সালে শরৎচন্দ্র জীবিকার সন্ধানে রেঙ্গুনে যান ।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কি নামে পরিচিত?
Ans: কথাশিল্পী।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দাম্পত্যসঙ্গী কে ছিলেন?
Ans: শান্তি দেবী, হিরন্ময়ী দেবী।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী (Sarat Chandra Chattopadhyay Biography In Bengali)
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী (Sarat Chandra Chattopadhyay Biography In Bengali) ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।