আশাপূর্ণা দেবী জীবনী – Ashapurna Devi Biography in Bengali
আশাপূর্ণা দেবী জীবনী – Ashapurna Devi Biography in Bengali : আধুনিক বাংলা সাহিত্যে আশাপূর্ণা দেবীর স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত । অন্য যে সকল সাহিত্যিকদের পরিচয় আমরা পাইতাদের মধ্যে আশাপূর্ণা দেবীই হলেন একমাত্র সাহিত্যিক যিনি বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা জানতেন না । আধুনিক বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় তার স্থান আজও অন্যতম । রবীন্দ্র পরবর্তী ছােট গল্পের সৃষ্টি ধারায় আশাপূর্ণা দেবী (Ashapurna Devi) একটি স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ।
বিখ্যাত কথা সাহত্যিক আশাপূর্ণা দেবীের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী। আশাপূর্ণা দেবী জীবনী বা জীবন কথা নিয়ে বা জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো । A short biography of Ashapurna Devi. Ashapurna Devi’s Birthday, Parents, Education Life, Work Life, Poetry, Novels, Honors, Prize, Books Biography (Jivani) in Bengali.
আশাপূর্ণা দেবী কে ছিলেন ? Who is Ashapurna Devi ?
আশাপূর্ণা দেবী (Ashapurna Devi) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন, বিশেষত সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তার রচনার মূল উপজীব্য। ব্যক্তিজীবনে নিতান্তই এক আটপৌরে মা ও গৃহবধূ আশাপূর্ণা ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞা। বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষায় তার জ্ঞান ছিল না। বঞ্চিত হয়েছিলেন প্রথাগত শিক্ষালাভেও। কিন্তু গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণশক্তি তাকে দান করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকার আসন।
কথা সাহত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর জীবনী – Ashapurna Devi’s Biography in Bengali :
নাম (Name) | আশাপূর্ণা দেবী (Ashapurna Devi) |
জন্ম (Birthday) | ৮ জানুয়ারি ১৯০৯ (8th January 1909) |
জন্মস্থান (Birthplace) | কলকাতায় মাতুলালয়ে |
অভিভাবক (Guardian)/পিতামাতা | হরেন্দ্র নাথ গুপ্ত (বাবা)
সরলাদেবী (মা) |
দাম্পত্য সঙ্গী (Spouse) | কালিদাস গুপ্ত |
পেশা (Occupation) | লেখিকা ও ঔপন্যাসিক |
উল্লেযোগ্য রচনাবলী | প্রথম প্রতিশ্রুতি ’ , সুবর্ণলতা ’ , ‘ বকুলকথা ’ , ‘ অগ্নিপরীক্ষা ’ , ‘ সাগর শুকায়ে যায় ’ , ‘ শশী বাবুর সংসার ’ , ‘ সােনার হরিন ইত্যাদি |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | জ্ঞানপীঠ পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমী ফেলোশিপ |
সন্তান | প্রশান্ত ও সুশান্ত |
মৃত্যু | ১৩ জুলাই ১৯৯৫ (13 th July 1995) |
আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম – Ashapurna Devi’s Birthday :
আশাপূর্ণা দেবী ১৯০৯ খ্রি : ৮ ই জানুয়ারি কোলকাতা শহরে জন্মগ্রহণ করেন । আশাপূর্ণা দেবীদের আদি নিবাস ছিল হুগলির বেগমপুরে ।
আশাপূর্ণা দেবীর পিতামাতা – Ashapurna Devi’s Perents :
তাঁর পিতার নাম ছিল হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত । মাতার নাম সরলা সুন্দরী দেবী । তার পিতা মাতা ছিলেন শিল্প – সাহিত্যের রসজ্ঞ ব্যক্তি । তার পিতা কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসাবে যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন । সম্ভবত তার শিল্প প্রতিভাই আশাপূর্ণা দেবীকেসাহিত্য চর্চায় উৎসাহ প্রদান করেছিল ।
আশাপূর্ণা দেবীর শিক্ষাজীবন – Ashapurna Devi’s education life :
তৎকালীন সমাজে নারীশিক্ষার প্রসার তেমন ভাবে ঘটেনি । তাছাড়া রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিল আশাপূর্ণা দেবী।তাইস্কুল কলেজের মধ্যে ভর্তি হবার সুযােগ তিনি পাননি । প্রথাগত শিক্ষার সুযােগ তিনি না পেলেও যে শিক্ষা মানুষকে পরিপূর্ণ জীবনের পথে এগিয়ে দেয় সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন আশাপূর্ণা দেবী ।
আশাপূর্ণা দেবী একসাহিত্যপ্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তাই পারিবারিক শিক্ষার ফলে তার সহজাত সাহিত্য প্রতিভা বিকশিত হয়েছিল । তিনি তার সাহিত্য রচনা করেন মূলত ছােটদের লেখা দিয়েই । তার এই শিল্প সাহিত্যের রচনার মধ্য দিয়েই তিনি বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় প্রথম পদার্পন করেছিলেন ।
আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম কবিতা – Ashapurna Devi’s first Poetry :
কথা – সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হলেও আশাপূর্ণা দেবীর প্রথমআবির্ভাব ঘটেছিল কবি হিসেবে । তার প্রথম কবিতা ‘ বাইরের ডাক ১৯২২ খ্রীঃ শিশুসাথী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । গৃহবধু এবং মা হিসেবে সংসারে তার যে কর্মক্ষেত্র , সাহিত্য রচনা কোনদিনতার গৃহকর্মের প্রতিবন্ধকবাঁধা হয়ে ওঠেনি । আশ্চর্য ছিল তার প্রতিভা । সাহিত্য সৃষ্টির জন্য বিশেষ কোন পরিবেশ বা সময়ের প্রয়ােজন হতাে না । সংসারের কাজের অবসরেই তিনি সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য সাহিত্য ভান্ডার ।
আশাপূর্ণা দেবীর লেখা বই – Ashapurna Devi’s Books :
১৯৩৮ খ্রিঃ তার বই প্রথম প্রকাশিত হয় । “ ছােট ঠাকুরদার কাশীযাত্রা ” বইটি সরস লেখনীর গুণে এবং ঘরােয়া পরিবেশের বাস্তব চিত্ররূপ অঙ্কনের জন্য ছােটদের মন জয় করেছিল ।
এরপর থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার রচনা নিয়মিত ভাবে প্রকাশ হতে থাকে । তার লেখাও চলতে থাকে বিরামহীন গতিতে।
[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]
আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস – Ashapurna Devi’s Novels :
১৯৪৪ খ্রি ৪ আশাপূর্ণার প্রথম উপন্যাস প্রেম ও প্রয়ােজন । প্রকাশিত হয় মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীপুরুষের চাওয়া পাওয়া , মানসিক দ্বন্দ্ব – সংঘাত , প্রেম – বিরহ সেইসঙ্গে সমসাময়িক সামাজিক পটভূমি , প্রয়ােজন – অপ্রয়ােজন — এই ছিল আশাপূর্ণার সাহিত্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ।
অন্তপুরে থেকেই মেয়েদের বহির্মুখী জীবন তিনি আশ্চর্য দক্ষতায় চিত্রায়িত করেছেন । আধুনিক সমাজের যথাযথ ভূমিকা নিয়েই তার । সাহিত্যে উপস্থিত হয়েছে । আধুনিক মেয়েদের কথা তিনি বলেছেন , তাদের চাহিদা ও ত্যাগের সব খবরই তিনি রাখতেন । তবুআধুনিকতার বিলাসিতা তার সাহিত্যে কখনাে প্রশ্রয় পায়নি । যা কিছু রুচিহীন , বিকৃততার প্রতিষ্ঠার অবজ্ঞা ও ব্যঙ্গ প্রকাশ পেয়েছে । তবে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা কখনাে বিসর্জন দেননি ।
সর্বস্তরের নারীসমাজের আশাআকাঙ্খ দুঃখবেদনার কথা তিনি । অকপটে সহজ সরল ভাষায় ও ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন ।
পুরুষদের মনের দ্বন্দ্ব – সংঘাতও তিনি যথাযথরূপে প্রকাশ করতে পেরেছেন । আশাপূর্ণার সাহিত্যসৃষ্টির সার্থকতা এখানেই ।
অসংখ্য গল্প ও উপন্যাস সারা জীবনে তিনি লিখেছেন । কোন লেখাতার অনাদৃত হয়নি । তার লেখা বাঙালী মেয়েদের উজ্জীবিত করেছে ।
আশাপূর্ণা দেবীর পুরস্কার সমুহ – Ashapurna Devi’s Prize :
আশাপূর্ণার সার্থক ত্রয়ী উপন্যাস প্রথম প্রতিশ্রুতি , সুবর্ণলতা , বকুলকথা । প্রথম প্রতিশ্রুতির জন্য ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্যসম্মান জ্ঞানপীঠ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন ।
দীর্ঘ জীবনের সত্তর বছর বয়সেও অক্লেশে ও মনের আনন্দে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার লেখা বের করতেন এবং লেখার প্রকাশকদের তিনি কোনদিনও ফিরিয়ে দিতেননা । তিনি যেসকল উপন্যাস রচনা করে গেছেন তার সংখ্যা প্রায় দুশােটি । এছাড়া ছােট গল্প সংকলন ও ছােটদের নিয়ে লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ প্রায় সত্তর খানার । মত প্রকাশ করেছেন ।
আশাপূর্ণা দেবীর লেখা গ্রন্থসমূহ – Ashapurna Devi’s Notable texts :
তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল — প্রথম প্রতিশ্রুতি ’ , সুবর্ণলতা ’ , ‘ বকুলকথা ’ , ‘ অগ্নিপরীক্ষা ’ , ‘ সাগর শুকায়ে যায় ’ , ‘ শশী বাবুর সংসার ’ , ‘ সােনার হরিন ইত্যাদি । তার শেষ প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘ আর এক আশাপূর্ণা ’ ।
বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় যাটটিরও বেশি গ্রন্থ অনূদিত হয়েছে । সাহিত্য সাধনার জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার , সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি – লিট উপাধি অর্জন করেছেন ।
বাংলা সাহিত্যে আশাপূর্ণা দেবীর অবদান অনেক । তাই আজও তিনি বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।
আশাপূর্ণা দেবীর প্রাপ্ত সন্মান – Ashapurna Devi’s Honors received :
- ১৯৭৬ – পদ্মশ্রী
- ১৯৮৩ – সাম্মানিক ডক্টরেট (জব্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়)
- ১৯৮৭ – সাম্মানিক ডক্টরেট (রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়)
- ১৯৮৮ – সাম্মানিক ডক্টরেট (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়)
- ১৯৯০ – সাম্মানিক ডক্টরেট (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)
- ১৯৯৪ – সাহিত্য আকাদেমী
আশাপূর্ণা দেবীর মৃত্যু – Ashapurna Devi’s Death :
১৯৯৫ খ্রি : ১৩ ই জুলাই এই অসাধারণ প্রতিভা সম্পূর্ণ লেখিকার জীবনাবসান ঘটে ।
আশাপূর্ণা দেবীর জীবনী (প্রশ্ন ও উত্তর) – Ashapurna Devi biography in Bengali (FAQ) :
- আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম কবে হয় ?
উ:- ১৯০৯ খ্রি : ৮ ই জানুয়ারি ।
- আশাপূর্ণা দেবীর পিতা ও মাতার নাম কি ?
উ:- হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত ও সরলা সুন্দরী দেবী ।
- আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম কবিতার নাম কি ?
উ:- বইয়ের ডাক ।
- আশাপূর্ণা দেবীর কবিতা কত সালে প্রকাশিত হয় ?
উ:- ১৯২২ সালে ।
- আশাপূর্ণা দেবীর লেখা বইয়ের নাম কি ?
উ:- ছোট ঠাকুরদার কাশীযাত্রা ।
- আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম উপন্যাস কি ?
উ:- প্রেম ও প্রয়োজন ।
- আশাপূর্ণা দেবী কি পুরস্কার পেয়েছিলেন ?
উ:- জ্ঞানপীঠ সাহিত্য পুরস্কার ।
- আশাপূর্ণা দেবীর লেখা গ্রন্থসমূহের নাম কি ?
উ:- সুবর্ণলতা ’ , ‘ বকুলকথা ’ , ‘ অগ্নিপরীক্ষা ’ , ‘ সাগর শুকায়ে যায় ’ , ‘ শশী বাবুর সংসার ’ , ‘ সােনার হরিন ইত্যাদি ।
- আশাপূর্ণা দেবী কত সালে প্রথম পুরস্কার পান ?
উ:- ১৯৭৮ সালে ।
- আশাপূর্ণা দেবীর কত সালে মারা যান ?
উ:- ১৯৯৫ সালে ১৩ জুলাই ।
[আরও দেখুন, সুকুমার রায় জীবনী – Sukumar Roy Biography in Bengali
আরও দেখুন, প্রেমেন্দ্র মিত্র জীবনী – Premendra Mitra Biography in Bengali
আরও দেখুন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী | Sarat Chandra Chattopadhyay Biography in Bengali
আরও দেখুন, বিভূতভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনী – Bibhutibhushan Bandyopadhyay Biography in Bengali]
আশাপূর্ণা দেবী জীবনী – Ashapurna Devi Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” আশাপূর্ণা দেবী জীবনী – Ashapurna Devi Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।