জসীম উদ্দীন জীবনী
Jasimuddin Biography in Bengali
জসীম উদ্দীন জীবনী – Jasimuddin Biography in Bengali : আধুনিক বাংলা কাব্য সাহিত্যে রূপময় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জসীমউদ্দীন । এক নতুন আদর্শ , গভীর অন্তদৃষ্টি ও বলিষ্ঠ লােকচেতনাবােধে বাংলা কাব্যকে জসীম উদ্দীন (Jasimuddin) সমৃদ্ধি দান করেছিলেন ।
বাংলার পল্লীপ্রকৃতি ও গ্রামবাংলাকে প্রধান বিষয় করে কাব্য রচনার মাধ্যমে সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন জসীমউদ্দিন । বাংলার রাখালী , সাজী , মুরশেদি , ভাটিয়ালি , বাউল , মারফতী গানের ধারার উত্তরসাধক হিসেবেই তিনি চিহ্নিত হয়েছেন ।
পল্লীকবি জসীম উদ্দীনর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । জসীম উদ্দীন জীবনী – Jasimuddin Biography in Bengali বা জসীম উদ্দীন (Jasimuddin) আত্মজীবনী বা জসীম উদ্দীনর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
জসীম উদ্দীন কে ছিলেন – Who is Jasimuddin ?
জসীম উদ্দীন (Jasimuddin) ছিলেন একজন বাঙালি কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক। জসীম উদ্দীন (Jasimuddin) ‘পল্লীকবি’ উপাধিতে ভূষিত, জসীম উদ্দীন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের জীবনী – Jasimuddin Biography in Bengali :
নাম (Name) | জসীম উদ্দীন (Jasimuddin) |
জন্ম (Birthday) | ১ জানুয়ারি ১৯০৩ (1st January 1903) |
জন্মস্থান (Birthplace) | ফরিদপুরের তাম্বুলখানা |
অভিভাবক (Parents)/ পিতা ও মাতা | আনসার উদ্দীন (বাবা)
আমিনা খাতুন (মা) |
পেশা (Occupation) | কবি |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
ধরন | কবিতা |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী | নকশী কাঁথার মাঠ
সোজন বাদিয়ার ঘাট |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার |
মৃত্যু (Death) | ১৪ মার্চ ১৯৭৬ (14th March 1976) |
জসীম উদ্দীন এর জন্ম – Jasimuddin’s Birthday :
বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ১৯০৩ খ্রি : ১ লা জানুয়ারি তাম্বুলখানা গ্রামে মামার বাড়ি জন্মগ্রহণ করেন ।
জসীম উদ্দীন এর পিতা ও মাতা – Jasimuddin’s Parents :
তার পিতার নাম আনসারউদ্দীন । তিনি ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক । পিতার একমাত্র পুত্রসন্তান হওয়ায় একরকম সচ্ছলতার মধ্যে মানুষ হন তিনি ।
পিতা আনসার উদ্দিন স্কুলশিক্ষক হওয়ায় তিনি শিক্ষার মর্যাদা বুঝতেন । তাই জসিম উদ্দীন একটু বড় হতেই তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন নিজের হিতৈষী এম . এ.স্কুলে ।
জসীম উদ্দীন এর শৈশবকাল – Jasimuddin’s Childhood :
কবি ছােটবেলায় খুড়তুতাে ভাই নেহাজুদ্দিনের সাথে দুষ্টমি করে বেড়াতেন।খেলাধূলা করা আর গান – বাজনা শােনারও বাতিক ছিলাে । তার । অন্যের গাছের আম – জাম চুরি করে খাওয়ার মতাে দস্যিপনা । করেও বেড়াতেন । এসব কিছুর সঙ্গে পড়াশুনাও চালিয়ে যেতে থাকেন আন্তরিকতার সাথে ।
জসীম উদ্দীন এর শিক্ষাজীবন – Jasimuddin’s Education Life :
হিতৈষীস্কুলে পড়া শেষ করে জসিম উদ্দীন ভর্তি হন ফরিদপুর । জেলা স্কুলে । তিনি স্কুলের বাঁধাধরা পড়াশুনার পাশাপাশি নানা ধরনের গল্পের ও কবিতার বই পড়তে থাকেন ।
তার স্কুলের বাংলা পাঠ্যপুস্তকে ছাপা কবিতা পড়ে তারও খুব ইচ্ছা হতাে তিনি নানা ধরনের ছন্দেভরা কবিতা লিখবেন । বিশেষ করে তার কবিতায় তিনি পল্লীগ্রামের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলবেন ।
জসীম উদ্দীন এর কবিতা রচনার লড়াই :
একবার তিনি শুনলেন , তাদের গ্রামের তাতীপাড়ার রহিম মােল্লা কবিগান রচনা করে । শুনে জসিম উদ্দীন ছুটে গেলেন তার কাছে , তার সঙ্গে গান রচনার পাল্লা দিতে চান । শুরু হলাে কবিতা রচনার লড়াই । রহিম মােল্লা জসিম উদ্দীনের কবিত্বশক্তির পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হলেন এবং তাকে এ – ব্যাপারে খুব উৎসাহ দিলেন ।
ফরিদপুর ঈশান স্কুলের ক্ষিরােদবাবু বলে এক শিক্ষক ছিলেন । তিনি একাধারে ছিলেন পণ্ডিত ব্যক্তি । কবিতা লিখতেন আবার কবিতার গুণগ্রাহীও ছিলেন । ক্ষিরােদবাবু একদিন জসিম উদ্দীনের কবিতা শুনলেন এবং তার মধ্যে কবিপ্রতিভা আছে দেখে তাকে বেশি করে কবিতার বই পড়তে উপদেশ দিলেন ।
এদিকে তখন শুধু কবিতা নয় , সাহিত্যের সব শাখাই ছিলাে কলকাতা কেন্দ্রিক । তাই জসিম উদ্দীন কলকাতা যাবার জন্য আগ্রহী । হয়ে উঠলেন ।
স্বদেশী আন্দোলন চলছেতখন দেশব্যাপী । তাই সেইসময় একদিন বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় চলে গেলেন এক রকম পালিয়েই । সেখানে তিনি তৎকালীন স্বনামধন্য কবি মােজাম্মেল হক – এর সাথে দেখা করলেন তার কবিতার খাতা নিয়ে । মােজাম্মেল হক তখন বঙ্গীয় মুসলিম পত্রিকার সম্পাদক । তিনি তার কিছু কবিতা তার পত্রিকায় ছাপাতে রাজী হলেন ।
এরপর তার পরামর্শ মতাে তিনি দেখা করলেন কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে । নজরুল ইসলাম তাকে উৎসাহ দিলেন এবং তাঁর । কয়েকটি কবিতা রেখে দিলেন বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানাের জন্য । জসিম উদদীন উৎসাহ পেয়ে পড়াশুনা শেষ করে কবিতা লিখবেন -এই মনােভাব নিয়ে আবার ফরিদপুরে ফিরে এলেন ।
জসীম উদ্দীন এর কলেজ জীবন – Jasimuddin’s College Life :
কবি জসীম উদ্দীন একদিন বি.এ. পাস করলেন রাজেন্দ্র কলেজ । থেকে।বি.এ পাস করে এম . এ . পড়ার জন্য কলকাতা চলে গেলেন । ইতিমধ্যে কবির দুটো বই রাখালী ‘ এবং ‘ নকশী কাথার মাঠ প্রকাশিত হয়ে গেছে । তিনি একটি করে বই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে প্রীতির চিহ্ন হিসাবে দিয়েছিলেন ।
কবিগুরু কাব্যগ্রন্থ দুটো পড়ে জসিম উদদীনকে বাংলাদেশের মুসলমান চাষীদের প্রতিনিধিত্বকারী পল্লীকবি হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন ।
[আরও দেখুন, আব্বাস উদ্দিনের জীবনী – Abbasuddin Ahmed Biography in Bengali]
জসীম উদ্দীন এর কর্মজীবন – Jasimuddin’s Work Life :
জসীম উদ্দীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একদিন এম . এ . পাস করলেন । এম.এ পাস করে তিনি ড . দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে গবেষণা সহকারী হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন । এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর অধ্যাপনা করেন ।
জসীম উদ্দীন এর কাব্যগ্রন্থ – Jasimuddin’s Poetry :
১৯৪১ সালে তিনি সরকারের প্রচার বিভাগে চাকরি পান । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ একবার বাংলা কবিতার একটা সংকলন প্রকাশ করেন , তাতে পল্লীকবি জসিম উদ্দীনের বালুচর কাব্যের ‘ উড়ানীর চর ’ কবিতাটি স্থান পায় । কবির কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হলাে – ধানক্ষেত , রঙ্গিলা নায়ের মাঝি , সােজনবদিয়ার ঘাট , রাখালী , নকশী কাথার মাঠ , বালুচর , মাটির কান্না , ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনায় ইত্যাদি । তাঁর ভ্রমণকাহিনী ভিত্তিক বই ‘ হলদে পরীর দেশে ’ ইউনেস্কো পুরস্কারে পুরস্কৃত ।
পল্লীকবি জসিম উদ্দীন বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধারার কবি । নজরুল ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মতাে তিনিও বাংলা কাব্য । সাহিত্যাঙ্গনে আপন বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর ।
[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]
জসীম উদ্দীন এর উল্লেখযোগ্য রচনাবলী – Jasimuddin’s Noteble Works :
জসীম উদ্দিন নিজে গান লিখতেন ; গাইতেও পারতেন ভাল । বহুসারি , জারি , ভাটিয়ালি গান তিনি লিখেছেন , তাতে সুর দিয়েছেন । “ নিশীথে যাইও ফুল বনে রে ভ্রমর ‘ কিংবা ‘ ও রঙিলা নায়ের মাঝি , এই ঘাটে লাগাইয়া নাও , নিগুণ কথা কইয়া যাও শুনি ’ প্রভৃতি ভাটিয়ালি গানের সুর স্বনামধন্য গায়ক সুরকার শচীনদেব বর্মনের কণ্ঠে একসময় সমস্ত দেশ মাতিয়ে তুলেছিল । এই মন – পাগল – করা । গান – গুলি জসীম উদ্দিনের রচনা ।
জসীম উদ্দীন এর মৃত্যু – Jasimuddin’s Death :
কবি জসিম উদদীন ১৯৭৬ সালের ১৪ ই মার্চ ৭৪ বছর বয়সে ঢাকায় পরলােকগমন করেন । তাকে ফরিদপুরে নিজ গ্রামে সমাহিত করা হয় ।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের জীবনী (প্রশ্ন ও উত্তর) – Jasimuddin’s Biography in Bengali (FAQ) :
- জসীমউদ্দীন কবে জন্মগ্রহণ করেন ?
Ans : ১ জানুয়ারি ১৯০৩ সালে ।
- জসীমউদ্দীনের পিতার নাম কী ?
Ans : আনসার উদ্দীন ।
- জসীমউদ্দীনের মাতার নাম কী ?
Ans : আমিনা খাতুন ।
- জসীমউদ্দীনের জন্ম কোথায় হয় ?
Ans : ফরিদপুরের তাম্বুল খানায় ।
- জসীম উদ্দীন কে ছিলেন ?
Ans : একজন বাংলাদেশী কবি ।
- জসীমউদ্দীনের উল্লেখযোগ্য রচনাবলী কী ?
Ans : নকশী কাঁথার মাঠ সোজন বাদিয়ার ঘাট ।
- জসীম উদ্দীন কী কী গান লিখেছেন ?
Ans : বহুসারি , জারি , ভাটিয়ালি গান তিনি লিখেছেন , তাতে সুর দিয়েছেন ।
- জসীম উদ্দীন কোথায় থেকে এম . এ পাস করেন ?
Ans : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ।
- জসীম উদ্দীন এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম কী ?
Ans : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ।
- জসীম উদ্দিন কবে মারা যান ?
Ans : ১৪ মার্চ ১৯৭৬ সালে ।
[আরও দেখুন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এর জীবনী – Ustad Allauddin Khan Biography in Bengali
আরও দেখুন, জহরলাল নেহেরু জীবনী – Jawaharlal Nehru Biography in Bengali
আরও দেখুন, মির্জা গালিব জীবনী – Mirza Ghalib Biography in Bengali
আরও দেখুন, নবীন চন্দ্র সেন জীবনী – Nabinchandra Sen Biography in Bengali]
🔘 প্রতিদিন আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন 🔘 | |
Join Our Telegram Channel | Click Here |
Subscribe Our YouTube Channel | Click Here |
Like Our Facebook Page | Click Here |
জসীম উদ্দীন জীবনী – Jasimuddin Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” জসীম উদ্দীন জীবনী – Jasimuddin Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।