কালীপ্রসন্ন সিংহ জীবনী – Kaliprasanna Singha Biography in Bengali
কালীপ্রসন্ন সিংহ জীবনী – Kaliprasanna Singha Biography in Bengali : ঊনবিংশ শতকের একজন বাংলা-সাহিত্য আন্দোলনে অন্যতম একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মাত্র উনত্রিশ বছরের জীবনে তিনি সাহিত্য ও সমাজের উন্নয়নের জন্য অসংখ্য কাজ করেছেন। তিনি বিধবা বিবাহের একজন সমর্থক ছিলেন। বহু বিধবা দুখিনীর জীবন পরিবর্তন এর জন্য তিনি অকাতরে দান করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি।
বাংলা নবজাগণের অন্যতম পথিকৃৎ কালীপ্রসন্ন কালীপ্রসন্ন সিংহের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী (Kaliprasanna Singha Biography in Bengali)। কালীপ্রসন্ন সিংহ জীবনী বা জীবন কথা নিয়ে বা জীবন পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
কালীপ্রসন্ন সিংহ কে ছিলেন ? Who is Kaliprasanna Singha ?
কালীপ্রসন্ন সিংহ (Kaliprasanna Singha) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সমাজসেবক। বাংলা সাহিত্যে কালীপ্রসন্ন সিংহের (Kaliprasanna Singha) দুই অমর অবদানসমূহের জন্য চিরস্মরনীয় হয়ে আছেন। সেগুলো হল, বৃহত্তম মহাকাব্য মহাভারতের বাংলা অনুবাদ এবং তার বই হুতোম প্যাঁচার নক্শা।
বাংলা নবজাগণের অন্যতম পথিকৃৎ কালীপ্রসন্ন সিংহের জীবনী : Kaliprasanna Singha Biography in Bengali
নাম (Name) | কালীপ্রসন্ন সিংহ (Kaliprasanna Singha) |
জন্ম (Birthday) | ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৪০ (23rd February 1840) |
জন্মস্থান (Birthplace) | কলকাতার জোড়াসাঁকো |
অভিভাবক (Parents) / পিতামাতা | নন্দলাল সিংহ (বাবা)
বিম্ববতী (মা) |
পেশা (Occupation) | সাহিত্যিক |
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ | হুতোম প্যাঁচার নকশা |
নাটক | বাবু নাটক |
মৃত্যু (Death) | ২৪ জুলাই ১৮৭০ (24th July 1970) |
কালীপ্রসন্ন সিংহের জন্ম – Kaliprasanna Singha’s Birthday :
উনবিংশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ কালীপ্রসন্ন ১৮৪০ খ্রিঃ কলকাতার জোড়াসাঁকো অঞ্চলের বিখ্যাত জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন ।
কালীপ্রসন্ন সিংহের পিতামাতা – Kaliprasanna Singha’s Parents :
তাঁর পিতার নাম নন্দলাল সিংহ ।
বাল্যবয়স থেকেই কালীপ্রসন্ন অসাধারণ মেধাবী ছিলেন । বালকের । মাথায় বৃদ্ধের মস্তিষ্ক বললে যা বােঝায় তিনি ছিলেন তাই । অতি অল্প বয়সেই বিভিন্ন ভাষা ও বিষয়ে বুৎপত্তি লাভ করেন ।
কালীপ্রসন্ন সিংহের শিক্ষাজীবন – Kaliprasanna Singha’s Education Life :
হিন্দু কলেজে ভর্তি হয়েও প্রথাবদ্ধ পড়া সম্পূর্ণ করতে পারেননি তবে কলেজের অসম্পূর্ণ পড়া সম্পূর্ণ করেছিলেন একজন ইংরেজ গৃহশিক্ষকের সাহায্যে ।
বিদগ্ধ বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বিদ্যোৎসাহিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এই সভা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ ছিল স্বদেশের সর্ববিধ উন্নতি বিধান । তাইসভ্যদের আলােচনার মুখ্য বিষয়ই ছিল ভাষা সাহিত্য ও সমাজের নানাবিধ সমস্যা ।
কালীপ্রসন্ন সিংহের থিয়েটার ও পত্রিকা – Kaliprasanna Singha’s Theatre and Magazine :
সনাতনপন্থী সমাজের গোঁড়ামি ও কুসংস্কার তাকে পীড়িত করত । দেশবাসীর মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও প্রগতিমূলক চিন্তার প্রসার ঘটাবার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করেন সভার মুখপত্র বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা ১৮৫৫ খ্রিঃ । পরের বছর গড়ে তােলেন বিদোৎসাহিনী থিয়েটার ।
বস্তুতঃ এসব উদ্যোগের মাধ্যমেই বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে কালীপ্রসঙ্গের আবির্ভাবসূচিত হয় । শিক্ষার প্রসার ও উন্নতির উদ্দেশ্যে পরে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সর্বতত্ত্ব প্রবেশিকা , বিবিধার্থ । সংগ্রহও পরিদর্শক প্রভৃতি পত্রিকা । প্রাণিতত্ত্ব , ভূ – তত্ত্ব , শিল্প সাহিত্য ও সমাজ ছিল এইসকল পত্রিকার প্রধান বিষয়।
দেশেনীলসাহেবদের অত্যাচার এবং অসহায় চাষীদের দুরবস্থা অবলম্বনে রায়বাহাদুর দীনবন্ধু মিত্র রচনা করেছিলেন নীলদর্পণ নাটক , ১৮৬০ খ্রিঃ । এই নাটক বহুভাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল ।
মাইকেল মধুসূদন নাটকটি ইংরাজিতে অনুবাদ করেছিলেন । বই আকারে প্রকাশ করেছিলেন পাদ্রী লঙ সাহেব । এর জন্য ইংরাজ সরকারের আদালতে তাকে অর্থদন্ডে দন্ডিত হতে হয়েছিল ।
জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ কালীপ্রসন্ন লঙ সাহেবের জরিমানার হাজার টাকা আদালতে জমা দিয়েছিলেন ।
সমাজ হিতৈষী কালীপ্রসন্ন এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হরিশ মুখােপাধ্যায় ও তার পরিবারবর্গকে ; মুখার্জীস ম্যাগাজিন – এর শম্ভুচন্দ্র মুখার্জী , শিক্ষক রিচার্ডসন ও লঙসাহেব প্রমুখদের বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন।
কালীপ্রসন্ন সিংহের আন্দোলন – Kaliprasanna Singha’s Movement :
বিদ্যাসাগর প্রবর্তিত বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ বন্ধ করার জন্য বিদ্যাসাগর দেশব্যাপী যে আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন কালীপ্রসন্ন ।
কালীপ্রসন্ন সিংহের নাটক – Kaliprasanna Singha’s Drama :
সাহিত্যক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিলেন প্রধানতঃ নাটক রচনার মাধ্যমে । তার রচিত বাবু নাটক প্রকাশিত হয় ১৮৫৪ খ্রিঃ । পরবর্তী তিন বছরে প্রকাশিত হয় বিক্রমাের্বশী , সাবিত্রী সত্যবান ও মালতীমাধব । তৎকালীন বাবুসম্প্রদায়ের রুচিবিকৃতি ও সাধারণ সমাজব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলির প্রতি কটাক্ষ করে বিদ্রুপাত্মক রচনা হুতােম প্যাচার । নন্স প্রকাশ করে ১৮৬২ খ্রিঃ । হুতােম প্যাচা ছিল তারই ছদ্মনাম ।
নানাদিক থেকেই এই গ্রন্থ স্মরণীয় । বিশেষ করে সংস্কৃত শব্দ । কন্টকিত ভাষার পরিবর্তেসাহিত্যে কথ্য ভাষার প্রচলন করার লক্ষ্যে এই গ্রন্থটিই ছিল প্রথম পদক্ষেপ এবং একারণেই বাংলা সাহিত্যে । তিনি স্মরণীয় ।
কালীপ্রসন্ন সিংহের শ্রেষ্ঠ কীর্তি – Kaliprasanna Singha’s The best fame :
মুল সংস্কৃত মহাভারত বাংলায় অনুবাদ করে নিজ খরচে তা প্রকাশ করা কালীপ্রসন্ন সিংহের জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি । এই মহৎ কাজে তাকে উৎসাহিত করেছিলেন বিদ্যাসাগর স্বয়ং । তারই তত্ত্বাবধানে এবং হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য , ভুবনচন্দ্র মুখােপাধ্যায় , নবীনকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ পন্ডিতের সাহায্যে কালীপ্রসন্ন এই শ্রমসাধ্য দুরূহ কর্মসম্পাদন করেছিলেন ।
কালীপ্রসন্ন সিংহের মৃত্যু – Kaliprasanna Singha’s Death :
তিনি সরকার কর্তৃক অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট ও জাস্টিস অব দ্য পীস নিযুক্ত হয়েছিলেন । মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে ১৮৭০ খ্রিঃ ২৪ শে । জুলাই কালীপ্রসন্ন সিংহ অমৃতলােকে যাত্রা করেন ।
কালীপ্রসন্ন সিংহের জীবনী (প্রশ্ন ও উত্তর) – Kaliprasanna Singha’s Biography in Bengali (FAQ) :
- কালীপ্রসন্ন সিংহ কবে জন্মগ্রহণ করেন ?
উ:- ২৩ ফেব্রু়ারি ১৮৪০ ।
- কালীপ্রসন্ন সিংহের জন্মস্থান কোথায় ?
উ:- কলকাতার জোড়াসাঁকো ।
- কালীপ্রসন্ন সিংহের পিতামাতার নাম কী ?
উ:- নন্দলাল সিংহ, বিম্ববতী ।
- কালীপ্রসন্ন সিংহ কে ছিলেন ?
উ:- একজন সাহিত্যিক ।
- কালীপ্রসন্ন সিংহের উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থের নাম কী ?
উ:- হুতোম প্যাঁচার নকশা ।
- কালীপ্রসন্ন সিংহের নাটকের নাম কী ?
উ:- বাবুনাটক ।
- কালীপ্রসন্ন সিংহের শ্রেষ্ঠ কীর্তি কী ছিলো ?
উ:- সংস্কৃত মহাভারত বাংলায় অনুবাদ ।
- কালীপ্রসন্ন সিংহের মৃত্যু কবে হয় ?
উ:- ২৪ জুলাই ১৮৭০ ২৯ বছর বয়সে ।
কালীপ্রসন্ন সিংহ জীবনী – Kaliprasanna Singha Biography In Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” কালীপ্রসন্ন সিংহ জীবনী – Kaliprasanna Singha Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।