দার্শনিক থেলিসের জীবনী
Thales Biography in Bengali
দার্শনিক থেলিসের জীবনী – Thales Biography in Bengali : আধুনিককালে গ্রীক দার্শনিকদের মধ্যে থেলিস , প্লেটো , এবং এ্যারিস্টটলকে দার্শনিকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে গণ্য করা হয়ে থাকে । এই পরিচয়েই তারা বিশ্ববিখ্যাত । এই পরিচয়েই তাঁরা ব্যাপকভাবে পরিচিত । কিন্তু জার্মান দার্শনিক নীটশের মতে থেলিস , এনেকসিমেন্ডার , হেরাক্লিটাস , পারমেনাইডিস এইসব দার্শনিকদের বর্তমান দর্শনজগতের আদিস্রষ্টা হিসাবে আরো উঁচুমানের দার্শনিক বলে বিবেচনা করতে হবে ।
দর্শনের আদিজনক দার্শনিক থেলিস এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । থেলিস এর জীবনী – Thales Biography in Bengali বা থেলিস এর আত্মজীবনী বা (Thales Jivani Bangla. A short biography of Thales. Thales Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) থেলিস এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
থেলিস কে ছিলেন ? Who is Thales ?
থেলিস (Thales) ছিলেন প্রাচীন গ্রিক গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা এবং দর্শনের জনক হিসেবে নন্দিত। থেলিস (Thales) এর মাত্র দুটি উক্তি অক্ষত অবস্থায় আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে একটি হলো “সবকিছুই ঈশ্বরে পরিপূর্ণ” এবং অন্যটি “সবকিছুর আদিমতম উপাদান হচ্ছে জল।“
দর্শনের আদিজনক দার্শনিক থেলিসর জীবনী – Thales Biography in Bengali :
নাম (Name) | মাইলেটাসের থেলিস বা থেলিস (Thales) |
জন্ম (Born) | 624 – 625 BC |
ধারা | আয়োনীয় দর্শন, মাইলেশীয় দর্শন, প্রাকৃতিক দর্শন |
প্রধান আগ্রহ | নীতিশাস্ত্র, অধিবিদ্যা, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান |
উল্লেখযোগ্য অবদান | সবকিছু জল থেকে এসেছে, থেলিসের উপপাদ্য |
মৃত্যু (Death) | 547 – 546 BC |
থেলিসের জন্ম – Thales Birthday :
দর্শনের আদি জনক এই থেলিস – এর জন্ম ও জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে সঠিক কিছু বলা এখন সম্ভব না হলেও ইদানীং দার্শনিক মহলে থেলিস (Thales) মহাজ্ঞানী হিসাবেই বিবেচিত হয়ে আসছেন ।
থেলিসের জন্মস্থান – Thales Birthplace :
থেলিসের জন্মস্থান ছিলো আধুনিক পশ্চিম তুরস্কের প্রাচীন নগরী মাইলেটাসে ৷ এই নগরীটি তখন ব্যবসা – বাণিজ্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ছিলো । থেলিস (Thales) এর পরবর্তীকালের দার্শনিক এনেকসিমেন্ডার এবং এনেকসিমেনিস মাইলেটাসের অধিবাসী ছিলেন বলে তারা তিনজনেই মাইলেসিও দার্শনিক হিসাবেও পরিচিত । তবে গ্রীসের উপাখ্যানে থেলিসকে সাত জ্ঞানীর এক জ্ঞানী বলে অভিহিত করা হয় এবং যদিও তিনি মাইলেটাসের অধিবাসী ছিলেন , তবুও থেলিস (Thales) গ্রীক দার্শনিকদের সারিতেই বিবেচিত হন ।
থেলিসের অবদান – Contributed by Thelis :
দার্শনিক থেলিসের পূর্বে গ্রীস এবং আশেপাশের দেশগুলিতে ধর্মের এবং দর্শনের ভেতর তেমন কোনো তফাৎ করা যেতো না । তখন যে – কোনো জ্ঞানের প্রশ্নে ধর্মীয় সিদ্ধান্ত সত্য বলে মেনে নেওয়া হতো । ইতিপূর্বে মহাকবি হোমার এবং হেসিয়াড তাঁদের বইতে যেভাবে দেব – দেবীদের কল্পনা করেছিলেন , তাতে যদিও গ্রীক সাধারণ মানুষের মনে ধর্ম সম্পর্কে খুব একটা উচ্চভাব পোষণ করার কারণ ছিলো না , তবুও থেলিস খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে যখন ধর্মে অবিশ্বাস থেকে স্বাধীনভাবে ঘোষণা করলেন এই বিশ্ব , মাটি , মানুষ , জীবজন্তু , গাছপালা , নদী – নালা সবকিছুর আদি কারণ জল , সেই সময় থেকেই প্রকৃত অর্থে দর্শনশাস্ত্র জন্মলাভ করে।
থেলিসের শিক্ষাজীবন – Thales Education Life :
দার্শনিক থেলিস মিশরে পড়াশুনা করেছিলেন । গ্রীসের জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা সম্বন্ধেও থেলিস (Thales) পড়াশুনা করেন । মিশর এবং গ্রীস এই দুই প্রাচীন সভ্যতায় পরিপুষ্ট হয়ে থেলিস জলকেই সবচাইতে শক্তিশালী কল্পনা করেছিলেন । এছাড়া , সব জীবজগতেরই মূল উপাদান হচ্ছে জল – বর্তমানকালের এই বৈজ্ঞানিক সত্যের প্রথম উদ্গাতা হিসাবে থেলিসকেই বিবেচনায় আনতে হবে । মধ্যপ্রাচ্যের পরবর্তীকালের সেমিটিক ধর্মগুলোর মতো প্রাক – থেলিস যুগের গ্রীক দার্শনিকরা জল , বাতাস , আগুন এবং মাটিকে বিশ্বের সবকিছুর আদি উপাদান হিসাবে গণ্য করেছিলেন । তবে ভারতীয় হিন্দুশাস্ত্রে ক্ষিতি , অপ , তেজ , করুত , ব্যোম — এই পঞ্চভূতকে বিশ্বের মৌল উপাদান হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ।
আদিবিজ্ঞানী থেলিস – Thelis, the original scientist :
দার্শনিক থেলিস মিশরে এসে অঙ্কশাস্ত্র এবং ব্যাবিলন থেকে জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী হয়েছিলেন বলে জানা যায় । থেলিস (Thales) গণনা করে পিরামিডের আয়তন বলে দিতে পারতেন — এতে মিশরবাসীরা আশ্চর্য হয়ে যেতেন । এছাড়া থেলিস (Thales) জ্যোর্তিবিদ্যা চর্চা করে খ্রীষ্টপূর্ব ৫৮৫ অব্দে যে সূর্যগ্রহণ হয়েছিলো , তার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যাতে দেশবাসীরা থেলিসকে (Thales) আদিবিজ্ঞানী হিসাবে গণ্য করা শুরু করেছিলেন ।
[আরও দেখুন, আলবার্ট আইনস্টাইন জীবনী – Albert Einstein Biography in Bengali]
থেলিসের দর্শনশাস্ত্র – Thales Philosophy :
থেলিসের দর্শন ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত বস্তুবাদ । থেলিস (Thales) দেব – দেবীর অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করতেন না । হোমারের মহাকাব্য এবং তৎকালে প্রচলিত ধর্মীয় উপাখ্যানে দেব – দেবীদের হস্তক্ষেপের ফলে এ – জগতের সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । কারণ ছাড়া কোনো কিছু ঘটে না । মানুষের বা প্রকৃতির কার্যকলাপে দৈব বা কাল্পনিক অপশক্তির করার কিছুই নেই ।
দার্শনিক থেলিস – philosopher Thales :
থেলিস (Thales) প্রাক – থেলিস গ্রীক দার্শনিকদের প্রায় সবার মতোই অনুধাবন করতেন যে , যাবতীয় জড়পদার্থেই প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে । থেলিস (Thales) জগৎ ব্যাখ্যায় যে নীতি এবং পদ্ধতি অনুসরণ করেন , তা তার সমসাময়িককালের তুলনায় সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রমধর্মী এবং এক অর্থে বিপ্লবাত্মক । জগৎব্যাখ্যায় থেলিস (Thales) দর্শনকে বেশিরভাগ্ তাঁর ‘ দার্শনিক ’ জ্ঞানী ব্যক্তি বস্তুনিষ্ঠ বলে স্বীকার করে নেন ।
[আরও দেখুন, জেমস ওয়াট এর জীবনী – James Watt Biography in Bengali]
থেলিসের বিবহ জীবন – Thales Marriage Life :
থেলিস বিয়ে না করে আজীবন কুমার থেকে যান । কথিত আছে যৌবনকালে যখন তাঁর মা তাঁকে বিয়ে করতে বলেছিলেন , তখন থেলিস (Thales) বলেছিলেন বিয়ে করার সঠিক বয়স তাঁর হয়নি । এদিকে প্রবীণ বয়সে আবার তার মা তাঁকে বিয়ে করার তাগিদ দিলে থেলিস (Thales) বলেছিলেন , বয়স পার হয়ে গেছে , এখন কী করে বিয়ে করি ?
জানা যায় এক সময় ব্যবসা করে থেলিস প্রচুর অর্থ লাভ করতে পেরেছিলেন ।
থেলিসের মৃত্যু – Thales Death :
দার্শনিক থেলিস আনুমানিক ৫৪৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ৭৮ বছর বয়সে মারা যান ।
দার্শনিক থেলিস এর জীবনী – Thales Biography in Bengali FAQ :
- থেলিস কে ছিলেন ?
Ans: থেলিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিক গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা এবং দর্শনের জনক ।
- থেলিসের জন্ম কবে হয় ?
Ans: থেলিসের জন্ম হয় ৬২৪ – ৬২৫ বি সি।
- থেলিস এর উল্লেখযোগ্য অবদান কী ?
Ans: থেলিস এর উল্লেখযোগ্য অবদান সবকিছু জল থেকে এসেছে ।
- সমস্ত জড়পদার্থে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কে বলেন ?
Ans: সমস্ত জড়পদার্থে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে বলেন থেলিস ।
- থেলিস কবে জন্মগ্রহণ করেন?
Ans: থেলিস জন্মগ্রহণ করেন ৬২৪ – ৬২৫ বি সি।
- থেলিসের মৃত্যু কবে হয় ?
Ans: থেলিসের মৃত্যু হয় আনুমানিক ৫৪৭ খ্রিস্টপূর্ব ।
[আরও দেখুন, সক্রেটিসের জীবনী – Socrates Biography in Bengali
আরও দেখুন, উইলিয়াম শেকসপিয়র এর জীবনী – William Shakespeare Biography in Bengali
আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali
আরও দেখুন, আর্কিমিডিস এর জীবনী – Archimedes Biography in Bengali
আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali]
থেলিস এর জীবনী – Thales Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” থেলিস এর জীবনী – Thales Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। থেলিস এর জীবনী – Thales Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই থেলিস এর জীবনী – Thales Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।