যীশু খ্রীষ্টের জীবনী - Yesu Biography in Bengali
যীশু খ্রীষ্টের জীবনী - Yesu Biography in Bengali

যীশু খ্রীষ্টের জীবনী – Yesu Biography in Bengali

যীশু খ্রীষ্টের জীবনী – Yesu Biography in Bengali : ঈশ্বরপুত্র যীশু খ্রীষ্ট ইহুদীরা তখনো পরাধীন জাতি । রোমানদের হাতে প্যালেস্টাইন পদানত । এই পরাধীন জাতিরই একজন ইহুদী জন দ্য ব্যাপটিস্ট পরাধীন জাতিকে আশার আলোর কথা বলে সান্ত্বনা দিয়ে বেড়াতেন ৷ যীশু খ্রীষ্ট (Yesu) সবাইকে ডেকে ডেকে বলতেন — ‘ ‘ শীঘ্রই তোমাদের ত্রাণকর্তা আসছেন । তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য তোমরা তৈরি হও । ‘ তারপর ঘটলো সেই মহাঘটনা । সেদিন এক কিশোর এলো তাঁর কাছে । তার উপদেশ শুনতে । সে ছুতোর মিস্ত্রির কাজ করে । কিন্তু তাহলেও এই বয়সে সে জ্ঞানগর্ভ বেশকিছু বই পড়ে ফেলেছে । এর মধ্যেই । বালক হলেও তার জ্ঞানের গভীরতা অনেক প্রবীণ ব্যক্তির চেয়েও বেশি । কী প্রবল সম্মোহনী শক্তি এই বালকের । এই কিশোর আর কেউ নন , ইনিই স্বয়ং যীশু খ্রীষ্ট । প্রথম দিকের সব খ্রীষ্টানরাই ছিলেন ইহুদী । তখন ইহুদী ও সনাতন ধর্ম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মও সুপ্রচলিত ছিলো না । যীশু নিজেও ছিলেন এক ইহুদী পরিবারের সন্তান । তাই ইহুদী ধর্মমতের সঙ্গে খ্রীষ্টান ধর্মমতের যেমন মিল আছে , তেমনি পার্থক্যও আছে ।

  যিহূদী ধর্মপ্রচারক ও ধর্মীয় নেতা যীশু খ্রীষ্ট এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । যীশু খ্রীষ্ট এর জীবনী – Yesu Biography in Bengali বা যীশু খ্রীষ্ট এর আত্মজীবনী বা (Yesu Jivani Bangla. A short biography of Yesu. Yesu Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) যীশু খ্রীষ্ট এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

যীশু খ্রীষ্ট কে ছিলেন ? Who is Yesu ?

যীশু খ্রীষ্ট (Yesu) ছিলেন প্রথম শতাব্দীর একজন যিহূদী ধর্মপ্রচারক ও ধর্মীয় নেতা। যীশু খ্রীষ্ট (Yesu) বিশ্বের বৃহত্তম ধর্ম খ্রীষ্টধর্মের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। অধিকাংশ খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসমতে যীশু খ্রীষ্ট (Yesu) হলেন পুত্র ঈশ্বরের অবতার বা মাংসে মূর্তিমান বাক্য এবং পুরাতন নিয়মে ভাবোক্ত প্রতীক্ষিত মশীহ বা খ্রীষ্ট।

যীশু খ্রীষ্টের জীবনী – Yesu Biography in Bengali :

নাম (Name) যীশু খ্রীষ্ট (Yesu)
জন্ম (Birthday) ৪ খ্রীষ্টপূর্ব
জন্মস্থান (Birthplace) বৈৎলেহম, যিহূদিয়া, রোমান সাম্রাজ্য
পিতা – মাতা  মরিয়ম 

যোষেফ

অন্যান্য নাম খ্রীষ্ট

মশীহ

যীশু খ্রীষ্ট

নাসরতীয় যীশু

ঈসা মসীহ

ঈসা ইবনে মরিয়ম

আদি নিবাস নাসরৎ, যিহূদিয়া, রোমান সাম্রাজ্য
মৃত্যু (Death) ৩০ বা ৩৩ খ্রীষ্টপূর্ব
মৃত্যুর কারণ  ক্রুশারোপণ 

যীশু খ্রীষ্টের জন্ম – Yesu Birthday :

 যীশু খ্রীষ্ট খ্রীস্টপূর্বাব্দ ৪ সালে জেরুজালেম থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বেথেলহেম নামক এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । জন দ্য ব্যাপটিস্ট নিজেও এই বালকের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হলেন । তাঁর মনে হলো প্যালেস্টাইনের রাজা হবে এই বালকই ৷ 

যীশু খ্রীষ্টের বাল্যকাল – Yesu Childhood :

 যীশুর জন্মের সময় তখনকার ইহুদী রাজা ছিলেন হেরদ । তিনি রাজ জ্যোতিষীর কাছে জানতে পেরেছিলেন নবজাত এক শিশুই খুব শিঘ্রই এদেশের রাজা হবেন । হেরদ তাই দারুণ আতঙ্কিত ও বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে উঠলেন । হেরদ বেথেলহেম ও তার আশেপাশের নবজাতক সকল পুরুষ সপ্তানকে হত্যার আদেশ দিলেন । এই খবর শুনে যীশুর পিতা যোসেফ এবং মাতা মেরী শিশুসন্তানকে নিয়ে মিশরে পালিয়ে গেলেন । রাজা হেরদের মৃত্যুর পর যীশু খ্রীষ্ট নিজ প্রদেশ নাজরাথে ফিরে এলেন । 

যীশু খ্রীষ্টের বাণী প্রচার :

 যীশু খ্রীষ্টের বয়স যখন ৩০ বছর তখন থেকেই তিনি প্রকাশ্যে ঈশ্বরের বাণী প্রচার করতে শুরু করেন । যীশু খ্রীষ্ট (Yesu) ধর্ম প্রচার করতেন একান্ত সাধারণ ভাষায় । অনেকটা গল্পের মতো করে । যীশু খ্রীস্ট ঈশ্বরের বাণী প্রচারের সাথে সাথে মানুষকে ডেকে বলতে লাগলেন — ‘ মানুষকে ভালোবাসো । মানুষের সকল অপরাধ ক্ষমা করো । যারা তোমাদের শত্রু তাদেরকেও ভালোবাসো । মানুষকে ভালোবাসলে ঈশ্বর তোমাদের ভালোবাসবেন।’ 

 মহামানব যীশুর উপদেশ শুনে মানুষ দলে – দলে তার দিকে ধাবিত হলে ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো তাঁর অনুসারীর সংখ্যা । তার মুখের অমৃতবাণী শোনার জন্য মানুষ আকুল হয়ে থাকতো।

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]

যীশু খ্রীষ্টের বাণী :

 যীশু খ্রীস্ট তাঁর অনুসারীদের ডেকে বলতে লাগলেন — ‘ আমিই সত্যপথ । আমাকে ছাড়া জগতপিতার কাছে যাবার অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই । নরকে যাবার পথ সহজ খুব । সেজন্যে অনেকেই সে পথ বেছে নেয় । কিন্তু স্বর্গে যাবার পথ খুবই সংকীর্ণ ও কন্টকময় । খুব কম লোকই সে পথ দিয়ে যেতে পারে। 

 সে সময় প্রতি বছর জেরুজালেমে জাঁকজমকের সাথে ধর্মীয় উৎসব পালিত হতো । ইহুদীরা শত শত মন্দিরে পুজো দিতে আসতো । সেখানে পশু বলি দেওয়া হতো ধর্মের নামে । যীশু এ দৃশ্য সহ্য করতে পারতেন না । তাই তিনি পশু বিক্রেতাদের বিতারিত করলেন । পশু বিক্রেতারা যীশুর উপর খুব ক্ষেপে গেল । ঘটনা শুনে রোমানরা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলো । 

 ইহুদী পুরোহিতরা এসে রোমান শাসনকর্তা পাইলটের কাছে অভিযোগ করলো — যীশু তাদের ঈশ্বরকে অপমান করেছে । যীশু ঈশ্বরদ্রোহী । তার বিচার করতে হবে । শাস্তি দিতে হবে । 

যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা :

 মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ভালোবাসা আর ক্ষমার মহান দূত যীশু খ্ৰীষ্ট ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন— “ হে পিতা , তুমি এদের ক্ষমা করো । এরা জানে না এরা কী করছে । ”

 বিচারপতি পিলেতের অনুমতি পেয়ে সৈন্যরা যিশুর মৃতদেহ নামিয়ে আনলে , যিশুর একভক্ত ইহুদী তা গ্রহন করলেন সমাহিত করার জন্য ৷ পাহাড়ের গায়ে এক ছোট গুহায় মৃতদেহ শুইয়ে দিয়ে বড়বড় পাথর দিয়ে গুহার মুখ ঢেকে দিলেন ।

 গুহা পাহারা দিতে লাগল প্রহরীর দল । যিশুর কয়েকজন শিষ্য সমবেত হয়েছেন গুহার কাছে । সহসা এক জ্যোতির্ময় আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল গুহামুখ । দেখা গেল গুহামুখ উন্মুক্ত , ভেতরে যিশু নেই । 

[আরও দেখুন, গৌতম বুদ্ধের জীবনী – Gautam Buddha Biography in Bengali]

যীশু খ্রীষ্টের তার শিষ্যদের দর্শন : 

 ক্রুশবিদ্ধ হবার চল্লিশ দিন পর ক্যালভেরি পর্বতে সমবেত শিষ্যদের দর্শন দিলেন যিশু । যীশু খ্রীষ্ট (Yesu) তাঁদের বললেন , ‘ সমস্ত মানুষের কাছে আমার উপদেশ পৌছে দাও , দীক্ষিত করো । যারা আমাকে বিশ্বাস করবে তারা অনন্ত শান্তির অধিকারী হবে । অনন্ত কাল আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব । ‘

 এরপরই যিশু অন্তর্ধান করলেন । ঈশ্বরপুত্র ফিরে গেলেন তাঁর পিতার কোলে ।

 যীশু খ্রীস্ট নেই , কিন্তু তার প্রচারিত সত্যের বাণী বাইবেল এবং তাঁর ধর্ম আজো বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ অনুসরণ করে থাকেন । যীশুর অনুসারীরা খ্রীস্টান হিসাবে পরিচিত ।

যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুদণ্ড – The death penalty of Jesus Christ :

 যীশুর খুব ঘনিষ্ঠ বারোজন শিষ্য ছিলো । একজনের নাম জুডাস । শত্রুরা টাকার লোভ দেখিয়ে জুডাসকে হাত করে ফেললো । জুডাস বিশ্বাসঘাতকতা করে যীশুকে রোমানদের হাতে ধরিয়ে দিলো । বিচারের নামে প্রহসন করে যীশুকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হলো ।

যীশুখ্রীষ্টকে ক্রুশকাণ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা :

 পাইলটের আদেশে নগরের সীমানায় ক্যালভরি পাহাড়ে নিয়ে ৩৪ বছর বয়স বিচারক পিলেতের যীশুখ্রীষ্টকে ক্রুশকাণ্ঠে ঝুলিয়ে হাতে পায়ে পেরেক ঠুকে ঈশ্বরপুত্র যীশুকে হত্যা করা হলো । ধর্মীয় নির্মমতা কতো মর্মান্তিক হতে পারে , যে ক্রুশকাষ্ঠে যীশুকে হত্যা করা হয়েছিলো , সেই ক্রুশকাষ্ঠটি যীশুকে দিয়ে বহন করে আনা হয়েছিলো । এমনিভাবে একদল উগ্র ধর্মান্ধ নিকৃষ্ট মানুষের হাতে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হয়েছিলেন ঈশ্বরের প্রেরিত মহামানব যীশুখ্রীষ্ট ।

যীশু খ্রীষ্টের জীবনী – Yesu Biography in Bengali FAQ :

  1. যীশু খ্রীষ্ট কে ছিলেন ?

Ans: যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন প্রথম শতাব্দীর একজন যিহূদী ধর্মপ্রচারক ও ধর্মীয় নেতা ।

  1. যীশু খ্রীষ্টের জন্ম কোথায় হয় ?

Ans: যীশু খ্রীষ্টের জন্ম হয় বেথেলহেম নামক এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ।

  1. যীশু খ্রীষ্টের পিতার নাম কী ?

Ans: যীশু খ্রীষ্টের পিতার নাম যোষেফ ।

  1. যীশু খ্রীষ্টের মাতার নাম কী ?

Ans: যীশু খ্রীষ্টের মাতার নাম মরিয়ম ।

  1. যীশু খ্রীষ্টের জন্ম কবে হয় ?

Ans: যীশু খ্রীষ্টের জন্ম হয় ৪ খ্রীষ্টপূর্ব ।

  1. যীশু খ্রীষ্টের কিভাবে হত্যা করা হয় ?

Ans: যীশু খ্রীষ্টের হত্যা করা হয় ক্রুশারোপণ করে ।

  1. যীশু খ্রীষ্ট কে ক্রুশবিদ্ধ করার পর তিনি কী বলেন?

Ans: “ হে পিতা , তুমি এদের ক্ষমা করো । এরা জানে না এরা কী করছে । ”

  1. যীশু খ্রীষ্ট কবে মারা যান ?

Ans: যীশু খ্রীষ্ট মারা যান ৩০ – ৩৩ খ্রীষ্ট পূর্ব ।

[আরও দেখুন, রাজা রামমোহন রায় জীবনী – Ram Mohan Roy Biography in Bengali

আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali

আরও দেখুন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী – Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali

আরও দেখুন, আলবার্ট আইনস্টাইন জীবনী – Albert Einstein Biography in Bengali

আরও দেখুন, অ্যাডলফ হিটলার এর জীবনী – Adolf Hitler Biography in Bengali]

যীশু খ্রীষ্ট এর জীবনী – Yesu Biography in Bengali

   অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” যীশু খ্রীষ্ট এর জীবনী – Yesu Biography in Bengali  ” পােস্টটি পড়ার জন্য। যীশু খ্রীষ্ট এর জীবনী – Yesu Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই যীশু খ্রীষ্ট এর জীবনী – Yesu Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।