যামিনী রায়ের জীবনী
Jamini Roy Biography in Bengali
যামিনী রায়ের জীবনী – Jamini Roy Biography in Bengali : আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী যামিনী রায় আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ মহান চিত্রশিল্পী যামিনী রায় (Jamini Roy) ছিলেন শিল্পীর শিল্পী । ভারতীয় চিত্রকলায় তাঁর স্বকীয়তা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল । যামিনী রায় (Jamini Roy) এর তুলিতে রূপ পেয়েছে বাংলার নিজস্ব রূপ ও শিল্পশৈলী ।
কেবল ভারতবর্ষেই নয় সারা বিশ্বজুড়ে যামিনী রায় (Jamini Roy) এর শিল্পের খ্যাতি ও সমাদর । যামিনী রায় (Jamini Roy) এর অসংখ্য চিত্র সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন পৃথিবীর নানা প্রাস্তের সুধী শিল্পরসিকবৃন্দ । এই নীরব শিল্পীর ব্যক্তি জীবন ও শিল্প সাধনার ইতিহাস বড় বিচিত্র ৷
আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী যামিনী রায় এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । যামিনী রায় এর জীবনী – Jamini Roy Biography in Bengali বা যামিনী রায় এর আত্মজীবনী বা (Jamini Roy Jivani Bangla. A short biography of Jamini Roy. Jamini Roy Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) যামিনী রায় এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যামিনী রায় কে ছিলেন ? Who is Jamini Roy ?
যামিনী রায় (Jamini Roy) ছিলেন একজন বাঙালি চিত্রশিল্পী। যামিনী রায় (Jamini Roy) বাংলার বিখ্যাত লোকচিত্র কালীঘাট পটচিত্র শিল্পকে বিশ্বনন্দিত করে তোলেন। যামিনী রায় (Jamini Roy) নিজে পটুয়া না হলেও নিজেকে পটুয়া হিসেবে পরিচয় দিতেই তিনি পছন্দ করতেন।১৯১৮-১৯ থেকে তার ছবি ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টের পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে।
আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের জীবনী – Jamini Roy biography in Bengali :
নাম (Name) | যামিনী রায় (Jamini Roy) |
জন্ম (Birthday) | ১১ এপ্রিল ১৮৮৭ (18th April 1887) |
জন্মস্থান (Birthplace) | বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
অভিভাবক (Parents) | রামতারণ রায় , নগেন্দ্রবালা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা (Occupation) | চিত্রশিল্পী |
পরিচিতির কারণ | চিত্রকলা |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | পদ্মভূষণ (১৯৫৪) |
মৃত্যু (Death) | ২৪ এপ্রিল ১৯৭২ (24th April 1972) |
যামিনী রায়ের জন্ম – Jamini Roy Birthday :
১৮৮৭ খ্রিঃ ১১ এপ্রিল বাঁকুড়া জেলার বেলেতোড় গ্রামে এক জমিদার বংশে যামিনী রায়ের জন্ম ।
যামিনী রায়ের পিতামাতা – Jamini Roy Parents :
যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক সম্পর্ক ’ ছিল । যামিনী রায় (Jamini Roy) এর বাবার নাম রামতারণ রায় , মা নগেন্দ্রবালা ।
জমিদার রামতারণের আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাল ছিল না । সামান্য চাষবাস যেটুকু ছিল তাতেই পরিবারের ভরণপোষণ চলত ।
ছবি আঁকার অভ্যাস ছিল রামতারণের । পালা – পার্বণ উপলক্ষে আলপনা ও ছবি নিজেই আঁকতেন রঙের গুঁড়ো দিয়ে । পুত্র যামিনী উত্তরাধিকার সূত্রে পিতার এই শিল্প প্রতিভা পেয়েছিলেন ।
যামিনী রায়ের শিক্ষাজীবন – Jamini Roy Education Life :
যামিনীর লেখাপড়া শুরু হয়েছিল স্থানীয় পাঠশালায় । পড়াশুনার অবসরে খেলাধুলো ভুলে তিনি চলে যেতেন বাড়ির কাছের পটুয়া পাড়াতে । সেখানে নিবিষ্ট মনে লক্ষ্য করতেন পটুয়াদের পট আঁকার কলা – কৌশল । কখনো তাঁকে দেখা যেত গ্রামের মৃৎশিল্পীদের বাড়িতে । মাটির পুতুল , মাটির ঘোড়া ইত্যাদি নিজেও তাদের সঙ্গে বসে তৈরি করার চেষ্টা করতেন ।
এভাবেই জন্ম নেয় ভবিষ্যতের সার্থক শিল্পী যামিনী রায়ের শিল্পী জীবনের সূত্রপাত । এক সময় দেখা গেল পড়াশুনার চাইতে পটের ছবি আঁকা , মাটির পুতুল গড়ার দিকেই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন যামিনী । স্বপ্ন দেখছেন নিজেও ছবি এঁকে বড় শিল্পী হবেন ।
শিল্পের প্রতি আকর্ষণ রামতারণের সহজাত । পুত্রের মধ্যে তিনি আগামী দিনের শিল্পীর সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন হয়তো । তাই যামিনীর ছবি আঁকার প্রেরণা কখনও ব্যাহত হতে দেননি । বরং যথাসাধ্য তাকে উৎসাহ দেবার চেষ্টা করেছেন ।
যামিনী রায়ের কলেজ জীবন – Jamini Roy College Life :
সেই কালে ছবি আঁকা পেশা হিসাবে খুব আশাপ্রদ ছিল না । ছবি এঁকে সংসার চালানো ছিল কঠিন ব্যাপার । তা সত্ত্বেও নিজের শিল্পপ্রীতি ও ছেলের প্রবণতা লক্ষ্য করে একসময় তিনি যামিনীকে আঁকা শেখানোর জন্য কলকাতায় মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন । যামিনীর বয়স তখন যোল । ১৯০৩ সালে তিনি কলকাতা আর্টস্কুলে ভর্তি হলেন । বর্তমানে ওই স্কুল কলেজে স্থানান্তরিত হয়েছে ।
আর্ট স্কুলে গিলার্ডি সাহেবের কাছে যামিনী পাশ্চাত্য রীতির অঙ্কন পদ্ধতি ও তেল রং – এ আঁকা শিখতে লাগলেন এবং অল্প দিনের মধ্যেই এই কাজে খুব দক্ষ হয়ে উঠলেন ।
যামিনীর শিল্প প্রতিভার পরিচয় পেয়ে স্কুলের অধ্যক্ষ বিচক্ষণ পার্সি ব্রাউন খুবই খুশি হলেন । তিনি যামিনীকে যে কোনও শ্রেণীতে গিয়ে ক্লাশ করার অনুমতি দিলেন ।
ক্লাশে বরাবর কৃতিত্ব দেখানো সত্ত্বেও স্কুলের শিক্ষাক্রম শেষ করতে যামিনীর নির্দিষ্ট সময়েরও বেশি লেগে গেল । কারণ আর কিছুই নয় , অতিরিক্ত ক্লাশ কামাই ।
বেশির ভাগ সময়েই যামিনী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতেন । এজন্য স্কুলের খাতায় অনেক সময় তাঁর নামই থাকতো না ।
যামিনী রায়ের প্রথম পুরস্কার – Jamini Roy First Prize :
ছাত্রজীবনেই ১৯০৬ খ্রিঃ যামিনী রায় তার জীবনের প্রথম পুরস্কার পেলেন ‘ সমাজ ‘ নামে একটি ছবি এঁকে । বাঁকুড়ার জেলাশাসক তাঁকে পুরস্কার স্বরূপ একটি গিনি দিয়েছিলেন ।
ওই বয়সেই ইউরোপীয় প্রথায় তিনি ছবি দেখে কিংবা কোনও মডেল সামনে বসিয়ে এমন প্রতিকৃতি আঁকতেন যে তা জীবন্ত বলে মনে হত । তার এই দক্ষতার জন্য শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ তাঁকে বিশেষ স্নেহের চক্ষে দেখতেন । মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের একটা প্রতিকৃতি তিনি যামিনীকে দিয়ে করিয়েছিলেন ।
যামিনী রায়ের কর্মজীবন – Jamini Roy Work Life :
আর্ট স্কুলের শিক্ষা শেষ হলে যামিনী স্বাধীন কর্মজীবনে প্রবেশ করলেন । ততদিনে সেকালের সামাজিক রীতি অনুযায়ী তিনি বিবাহিত হয়েছেন । তার স্ত্রী আনন্দময়ী বিয়ের পরে কিছুদিন গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন । রোজগারের ব্যাপারটা একটু সড়গড় হলে যামিনী তাঁকে বাড়ি ভাড়া করে কলকাতায় নিয়ে এলেন।
তার কর্মজীবনে গোড়ার দিকে যামিনী পাশ্চাত্য রীতিতে প্রাকৃতিক দৃশ্য এঁকেছেন অনেক । এঁকেছেন বহু প্রতিকৃতিও । প্রতিকৃতি অঙ্কনের জন্য তার নামও ছড়িয়ে পড়েছে তখন ।
ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব আর্টস পত্রিকা প্রকাশ :
১৯১৮-১৯১৯ খ্রিঃ কয়েকজন শিল্পী মিলে ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব আর্ট নামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন । এই পত্রিকায় যামিনীর আঁকা ছবি প্রকাশিত হতে থাকে । ছবি এঁকে বিশেষ করে প্রতিকৃতি আঁকার জন্য যামিনীর অর্থ রোজগার বেশ ভালই হতে লাগল ।
এ বিষয়ে তাঁর নৈপুণ্য এতটাই ছিল যে যদি প্রতিকৃতি বা ফটো বড় করে আঁকার কাজ নিয়ে পড়ে থাকতেন তাহলে তিনি পাশ্চাত্য রীতিতে প্রতিযোগিতা অঙ্কনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন ।
আমাদের সৌভাগ্য যে জাত – শিল্পী যামিনী রায়ের শিল্পীসত্তা সৃষ্টির অতৃপ্তিতে একদিন তাঁর অঙ্কন পদ্ধতির পরিবর্তন করলেন এবং তাঁর সৃষ্টিশীল শিল্পপ্রতিভা সার্থক রূপ নেবার সুযোগ পেল । আমরা পেলাম একালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী যামিনী রায়কে ।
প্রতিকৃতি অঙ্কন যামিনীকে অর্থ যশ দিচ্ছে । কিন্তু একজন প্রতিভাবান শিল্পীর মধ্যে আত্মপ্রকাশের সুযোগ কতটুকু ? অতৃপ্তিতে ভুগতে লাগলেন যামিনী । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন , কেবলমাত্র প্রতিকৃতি এঁকে বড় শিল্পী হওয়া যাবে না । ভবিষ্যৎ তাকে বেশি দিন মনে রাখবে না ।
শিল্পী হিসেবে কালের বুকে স্থায়ী দাগ রাখতে হলে তাঁকে নতুন পথের সন্ধান করতে হবে — যেখানে তিনি স্বকীয় চিন্তা – ভাবনা প্রকাশের সুযোগ পাবেন । তিনি স্থির করলেন , আর ইউরোপীয় পদ্ধতি নিয়ে পড়ে থাকবেন না । নিজস্ব একটি পথ তাকে বের করে নিতে ,হবে ।
এবার থেকে নতুনভাবে ছবি অঁকার পরীক্ষা
নিরীক্ষা আরম্ভ করলেন যামিনী ।
এই বোধোদয় যখন হল তখন তাঁর বয়স চৌত্রিশ বছর । নিশ্চিত অর্থকরী পথ বন্ধ করে তিনি পা বাড়ালেন অনিশ্চয়তার দুর্গম পথে ।
আশাতিরিক্ত টাকা আসছিল প্রতিকৃতি ও তেল রঙের ছবি এঁকে । সেসব আঁকা বন্ধ করে দেওয়াতে সংসারে দেখা দিল অভাব – অনটন ।
জীবনের এই সময়টা কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে । সংসার চালাবার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের কাজ করতে হয়েছে । কখনো ছাপাখানার কাজ নিতে হয়েছে , কখনো বসেছেন কাপড়ের দোকানে ।
এত করেও সংকুলান হচ্ছিল না । এমন অনেক দিন গেছে , স্বামীস্ত্রীকে আধপেটা খেয়ে দিন কাটাতে হয়েছে । জীবনের এই সঙ্কটময় সময়ে সেদিন পাশে দাঁড়াবার মতো কাউকে পাশে পাননি তিনি ।
অনিশ্চয়তা ও কৃচ্ছ্রতার এই দিনগুলিতেও ছবি আঁকার বিরাম ছিল না তার । সৃষ্টিশীল শিল্পীসত্তাটিকে তিনি সংসারের তাপ উত্তাপের স্পর্শে মুহ্যমান হতে দেননি । নিভৃতে ঘরের কোণে বসে নিজের শিল্প ভাবনাকে রূপদেবার সংকল্পে সময় ও সুযোগ বার করে নিতেন । নিরলস চেষ্টায় আত্মপ্রকাশের নতুন পথের সন্ধান করতেন ।
অভাব অনটন ও দুঃখভারাক্রান্ত জীবন যামিনীকে বহন করতে হয়েছে ১৯৩৭ খ্রিঃ পর্যন্ত । নূতন পথের সন্ধান করতে বসে কিছুদিন ভারতীয় রীতিতে ছবি আঁকলেন । তাতে মন ভরল না । কোথায় যেন একটা শূন্যতা থেকে যাচ্ছে ।
যামিনীর অন্তরসত্তায় ছেলেবেলার গ্রামের পটুয়া মৃৎশিল্পীদের সংস্পর্শে পাওয়া লোকশিল্পের একটা গভীর প্রভাব ছিল । শিল্পের এই সহজ সরল রূপটি তাকে বরাবরই আকর্ষণ করত ।
পাশ্চাত্য রীতি ত্যাগ করেছেন । ভারতীয় শিল্পরীতির পরম্পরাও যখন মন ভরাতে পারল না , স্বভাবতঃই তার দৃষ্টি নতুন পথের সন্ধানে বাংলার লোকসমাজে চির প্রবাহমান লোকশিল্পের ধারাটিকেই একসময় নিজস্ব পথরূপে বেছে নিল ।
তিনি অনুভব করলেন শহুরে পোশাকী শিল্পীরীতির চাইতে গ্রামীণ শিল্প রচনায় রয়েছে অনেক বেশি সাবলীল সরলতা যা একই সময়ে মন ও দৃষ্টিকে নন্দিত করে ।
তিনি লোকশিল্পের এই সরলতাকেই নিজস্ব নতুন শিল্পরীতি হিসাবে বেছে নিলেন । এই সঙ্গে নিরলস অনুশীলনের মধ্যদিয়ে রেখা অঙ্কনের সহজ কৌশলটি রপ্ত করে নেন ।
এভাবেই তরুণ শিল্পী যামিনীর লোকজীবনের ঐতিহ্যাশ্রয়ী নিজস্ব বিশিষ্ট চিত্রশৈলী রূপ লাভ করল । তার এই নতুন ধারার ছবি ১৯৩৭ খ্রিঃ এক প্রদর্শনীতে দেখে অধ্যাপক শাহিদ সুরাওয়ার্দি যামিনীকে অভিনন্দন জানান ।
যামিনী রায়ের স্বর্ণপদক লাভ – Jamini Roy’s Gold Medal :
স্বীকৃতি অবশ্য পেয়েছেন তার আগেই ১৯৩৪ খ্রিঃ । তাঁর ছবি ‘ উত্তরা অভিমন্যু ’ অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস – এর সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে ভাইসরয় – এর স্বর্ণপদক লাভ করে ।
ততদিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজ উঠেছে । গোটা বিশ্বজুড়ে পড়েছে আলোড়ন । কলকাতায় এসে জুটেছে ইংরাজ আর আমেরিকান সৈন্য । এই সৈনিকদের মধ্যে চিত্ররসিক অনেকেই যামিনী রায়ের ছবি দেখে মুগ্ধ হলেন । তারা দেশে ফেরার সময় স্মারক হিসেবে কিনে নিয়ে গেলেন অনেক ছবি ।
এভাবে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যামিনী পৌঁছে গেলেন বিদেশেও । এর ফল হল সুদূরপ্রসারী ।
বিদেশের চিত্ররসিক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল যামিনী রায়ের ছবি । ভারতীয় চিত্রকলায় তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বিদেশীদের প্রশংসা লাভ করল । তাঁর চিত্রের ওপরে পত্র – পত্রিকায় আলোচনা প্রকাশিত হতে লাগল ৷
আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য এটা যে , সাহেবদের প্রশংসা না পেলে এ দেশের মানুষ স্বদেশীয় কোনও বিষয়ে আগ্রহী হয় না । রবীন্দ্রনাথ , জগদীশচন্দ্র প্রমুখ প্রতিভার ক্ষেত্রেও এই ব্যাপার ঘটেছে ।
যামিনী রায়ের চিত্রকলার বিষয়েও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে সম্ভবতঃ পরাধীনতার অভিশাপ !
বিদেশে খ্যাতিলাভ করার পরে যামিনী রায়ের ছবির ব্যাপারে এদেশের চিত্ররসিকদের নিস্পৃহতা দূর হল । তারা আগ্রহী হয়ে উঠলেন এবং ধীরে ধীরে শিল্পীর অভাবের দিনের অবসান হল ।
বি . নিকলসের ‘ ভার্ডিকট অন ইন্ডিয়া ‘ গ্রন্থ :
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় বি . নিকলসের ‘ ভার্ডিকট অন ইন্ডিয়া ‘ গ্রন্থটির কথা । বিশেষ করে এই গ্রন্থটি যামিনী রায়কে বিশ্বখ্যাতি লাভে সহায়তা করেছে বেশি ।
এই বই পড়ার পর দেশ – বিদেশে তাঁর ছবি সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে , অগণিত মানুষ কলকাতায় তাঁর স্টুডিওতে এসেছেন ছবি দেখতে ।
স্বীকৃতি লাভের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীর তুলিতে এল সৃষ্টির গতি । সেই সঙ্গে পরিবর্তনও ঘটতে লাগল তাঁর অঙ্কন রীতির ।
পাশ্চাত্য রীতি ততদিন সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করেছেন তিনি । বদলে দেশীয় প্রচলিত রীতির সঙ্গে নিজস্ব চিন্তাভাবনা মিশিয়ে নতুন মাধ্যম ব্যবহার করে ছবি আঁকতে শুরু করলেন ।
আগে সমতল ক্যানভাসে ছবি আঁকতেন । এবারে ছবির জন্য তিনি অসমতল ক্যানভাস ব্যবহার করতে লাগলেন । কাগজ , বোর্ড বা কাপড়ের ওপরে কখনও কাদা , কখনও চুনের প্রলেপ দিয়ে ছবির জমি করলেন । এই জমির ওপর পছন্দমতো রঙ বুলিয়ে রেখা টানতেন ।
রঙ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও যামিনী রায়ের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ছিল । তিনি এমন সব সহজলভ্য রঙে ছবি আঁকতেন যে ভেবে বিস্মিত হতে হয় ।
তিনি সাধারণতঃ ছবিতে লাল , নীল , সবুজ , গেরুয়া , ধূসর রঙ ব্যবহার করতেন । কখনও গাঢ় টানে কখনো হালকা ছোঁয়ায় ।
তিনি রঙ তৈরি করতেন গিরিমাটি , চুন , খড়ি , হরিতাল , হিঙ্গুল , চিমনির ধোঁয়া প্রভৃতি অত্যন্ত সুলভ জিনিস দিয়ে ৷
আপাত দৃষ্টিতে গ্রাম্যরীতির ছবি বা কালীঘাটের পটুয়াদের পটের ছোঁয়া যুক্ত ছবি মনে হলেও এদেশের বিদগ্ধ কবি সাহিত্যিকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করল যামিনী রায়ের ছবি । এযুগের বিশিষ্ট শিল্পী বলে স্বীকৃতি পেলেন তিনি । বিশিষ্ট বিদগ্ধ কবি ও সমালোচক সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যামিনী রায়ের ছবি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন “ যামিনী রায়ের এসব ছবি চিত্রের বিশুদ্ধতা বজায় রেখেও তীব্রভাবে নাটকীয় , মানবিকতায় ধনী এবং চরিত্রের প্রতি তার অন্তর্দৃষ্টি সূচিমুখ ” ।
শিল্পী যামিনী রায়ের সাফল্যের প্রসঙ্গে অনিবার্যভাবেই এসে পড়ে তার সহধর্মিনী আনন্দময়ীদেবীর কথা । সেকালের সামাজিক রীতি মেনে তার শিল্প শিক্ষা শেষ হবার আগেই যামিনী বিবাহ করেছিলেন । তার যথার্থ সহধর্মিনী হলেন আনন্দময়ী ।
কলকাতার ভাড়া ঘরে নিপুণ হাতে তিনি সংসার গুছিয়ে নিয়েছিলেন । দারিদ্র্যের চরম সঙ্কটময় দিনগুলিতেও দুহাতে তিনি আগলে রেখেছিলেন শিল্পী স্বামীকে ।
যামিনী নিশ্চিন্তে তার ছবি আঁকায় মগ্ন থেকেছেন । ক্রমে সংসার বড় হয়েছে । স্বামীর খ্যাতি বেড়েছে , ব্যস্ততা বেড়েছে । সবকিছুর মধ্যে নিজেকে মিশিয়ে রেখেও আনন্দময়ী অন্তরাল থেকে স্বামীকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমার ভয়ে কোলকাতা ছেড়ে অনেক লোক গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন । যামিনীও সপরিবারে চলে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ায় নিজের গ্রামে । অনেক দিন পরে গ্রামের মানুষদের সান্নিধ্য শিল্পীকে নতুন ভাবনায় উদ্দীপিত করে তুলল ।
তিনি প্রাণখুলে আগে যাঁদের সঙ্গে মিশতেন , সেই কুমোর , কামার , জেলে , তাঁতী , কৃষক , ছুতোর , বাউল , এঁরা এবার এক নতুন রূপ নিয়ে তার মনে ধরা দিল ।
শিল্পীর ছবির মধ্যে এই নগণ্য মানুষেরা অসামান্য রূপ নিয়ে বারবার ধরা দিয়েছে ।
যুদ্ধের পরে পরেই অসাধারণ চাহিদা বেড়ে যেতে লাগল যামিনীর ছবির । ছবি কেনার জন্য দেশের ও বিদেশের অগণিত শিল্পরসিকও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমাগম হতে লাগল তাঁর বাড়িতে । ছবি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে সংসারেও এল স্বচ্ছলতা ।
জীবনের একটা বিশেষ পর্ব কেটেছে ভাড়া বাড়িতে । এবারে নিজস্ব বাড়ি করলেন ডিহি শ্রীরামপুরে , এখন যার নাম বালিগঞ্জ প্লেস ইস্ট । ১৯৪৮ খ্রিঃ এখানকার নতুন বাড়িতে উঠে এলেন ।
মনের মতো করে সাজিয়েছেন এই বাড়ি । নিচতলায় হয়েছে স্টুডিও ও আর্ট গ্যালারি । দোতলায় বসবাসের ব্যবস্থা । নিজের আঁকা ছবির সঙ্গে সংগ্রহ করা নানা ছাঁচের পুতুল দিয়ে সাজানো হল ছবি রাখার ঘর ।
দেশ – বিদেশের অভ্যাগত ও গুণীজনদের সমাবেশ হতে লাগল এই বাড়িতে । প্রকৃত ভারতীয়ত্বের গুণ সম্বলিত ও তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল অসামান্য ছবিগুলি চিত্ররসিক ও সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সকলকে অভিভূত করেছে ।
[আরও দেখুন, লতা মঙ্গেশকর এর জীবনী – Lata Mangeshkar Biography in Bengali]
যামিনী রায়ের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি – Jamini Roy’s Famous Paintings :
সারাজীবনে হাজার দশেক ছবি এঁকেছেন শিল্পী যামিনী রায় । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নাম করা যেতে পারে । যেমন , কৃষ্ণবলরাম , গণেশজননী , যশোদা , বুদ্ধদেব , সীতার অগ্নিপরীক্ষা , রাধাকৃষ্ণ , স্ত্রীলোক , সাঁততাল রমণী , ক্রুশবিদ্ধ যীশু , মায়ের কোলে শিশু , হাতির পিঠে রাজা , লাল ঘোড়া , বাংলার বধূ , গরু , দুই বৈষ্ণব , তিন যোদ্ধার চিত্র , রথের ওপর রাজারানী , বাছুর , চিংড়ি মুখে দুই বেড়াল , বাউল , সাঁওতালের মাথা প্রভৃতি ।
একটি বিষয় অবলম্বন করে অনেকগুলি পরপর ছবি এঁকেছেন তিনি । এইভাবে কৃষ্ণ , যীশু , সাঁওতাল , পশুপাখির চিত্রমালা রচনা করেছেন । বাঙলার গ্রামীণ জীবনের গভীর প্রাণস্পন্দন অনুভূত হয় যামিনী রায়ের ছবি দেখে । তাঁর এক অসাধারণ নতুন সৃষ্টি খেজুর পাতার চাটাইয়ের ওপরে আঁকা যীশুর চিত্রমালা ।
বালক বয়সে গ্রামে থাকার সময় থেকেই ছবি আঁকা আরম্ভ করেছেন যামিনী রায় । মূর্তিও গড়েছেন অনেক । কিন্তু তখনও পর্যন্ত ছবিতে তার নিজস্বতা পরিপূর্ণভাবে ফুটে ওঠেনি ।
[আরও দেখুন, মহাত্মা গান্ধীর জীবনী – Mahatma Gandhi Biography in Bengali]
যামিনী রায়ের শিল্পধারার ছবিগুলি – Jamini Roy’s Art genre pictures :
পরবর্তীকালে আঁকা তার শিল্পধারার ছবির মধ্যে পাওয়া যায় পাশ্চাত্য রীতির ছবি , ভারতীয় শিল্পরীতি , সাঁওতাল জীবন ও শিল্পরীতি অনুসরণে আঁকা ছবি , লাইন ড্রইং , ফ্ল্যাট টেকনিক , অলঙ্কৃত আলপনা , নতুন রীতির দ্বিমাত্রিক ছবি , ডাকের কাজের অনুসরণে আঁকা ছবি । তাঁর মহৎ শিল্পকর্ম তাঁকে জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পীর সম্মান দিয়েছে ।
তার সাবলীল সরল রীতির ছবির মধ্যে মানুষ খুঁজে পায় অপার আনন্দ , শান্তি ও মানসিক বিশ্রাম । এই দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর ছবির আবেদন বিশ্বজনীন বলা যায় ।
চিত্রশিল্পী যামিনী রায় কিছুদিন রঙ্গমঞ্চের দৃশ্যরচনার কাজও করেছেন । তাঁর আলপনা ও ডাকের সাজের সজ্জায় রঙ্গমঞ্চে এক ভিন্ন মাত্রার সৌন্দর্য সৃষ্টি হত ।
নাটকও রঙ্গমঞ্চের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন তিনি । মঞ্চ সজ্জার ব্যাপারে প্রখ্যাত নট ও নাট্যকার শিশির ভাদুড়ী , যোগেশ চৌধুরী , অহীন্দ্র চৌধুরী প্রমুখের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল ।
আজীবন শিল্পের সাধক যামিনী রায় ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন রাশভারী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রকৃতির । তার জীবনযাত্রা ছিল সরল ও অনাড়ম্বর । সাধারণ সাদা মোটা কাপড়ের একটা ফতুয়া পাঞ্জাবী আর থান ধুতি এই ছিল তার পোশাক ।
শীতকালে গায়ে দিতেন একটা ধূসর রঙের আলোয়ান । সব ঋতুতেই পায়ে থাকত তালতলার চটি ।
শিল্পকর্মে যেমন তিনি ফুটিয়ে তুলতেন সহজ সরল অথচ অসামান্য গ্রামীণ জীবনের ছবি তেমনি জীবন চলনাতেও তিনি ছিলেন গ্রামের মানুষের মতোই সরল অথচ খাঁটি মানুষ ।
ছকে বাঁধা ছিল প্রতিদিনের জীবন । সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দুপুরে খাওয়া ও সামান্য বিশ্রামের সময়টুকু ছাড়া দিনেরাতে সারা সময়ই তিনি ছবি আঁকতেন । অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন ।
দিনেরাতে সমানভাবে একই নিয়মে শিল্প – লক্ষ্মীর সাধনায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন যামিনী । সত্তর বছর অতিক্রম করে শরীর বিমুখ হল । মাঝেমাঝেই অসুস্থ হতে লাগলেন । এই অবস্থাতেও মনের জোরে ছবি এঁকেছেন ।
শেষ পর্যন্ত প্রবল নিউমোনিয়ায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন । সময়টা ১৯৭০ খ্রিঃ । সৌভাগ্যক্রমে ডাক্তারদের অক্লান্ত চেষ্টায় সেবারের রোগাক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হল । কিন্তু শরীর একেবারে ভেঙ্গে পড়ল।
রং – তুলি তবুও ছাড়েননি । জীবনের শেষ শয্যা গ্রহণের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছবি এঁকেছেন ।
যামিনী রায়ের মৃত্যু – Jamini Roy Death :
১৯৭২ খ্রিঃ আবার অসুস্থ হয়ে শয্যা নিলেন । এই রোগশয্যাই তার শেষ শয্যা হল । ২৪ ই এপ্রিল ১৯৭২ খ্রীঃ শিল্পী যামিনী রায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ।
রঙে , রূপে , রেখায় অসামান্য যামিনী রায়ের ছবি লোকজীবনের সার্থক চিত্ররূপ । বাংলা ও বাঙালীর গর্ব । শিল্পীর বাসগৃহটি বর্তমানে দেশেবিদেশে শিল্পরসিকদের কাছে বিশিষ্ট শিল্পকেন্দ্র রূপে পরিচিতি লাভ করেছে ।
যামিনী রায়ের জীবনী – Jamini Roy biography in Bengali FAQ :
- যামিনী রায় কে ছিলেন ?
Ans: যামিনী রায় ছিলেন একজন বাঙালি চিত্রশিল্পী।
- যামিনী রায়ের জন্ম কোথায় হয় ?
Ans: যামিনী রায়ের জন্ম হয় বাঁকুড়া জেলায় ।
- যামিনী রায়ের জন্ম কবে হয় ?
Ans: যামিনী রায়ের জন্ম হয় ১১ এপ্রিল ১৮৮৭ সালে।
- যামিনী রায়ের পিতার নাম কী ?
Ans: যামিনী রায়ের পিতার নাম রামতারণ রায় ।
- যামিনী রায়ের মাতার নাম কী ?
Ans: যামিনী রায়ের মাতার নাম নগেন্দ্রবালা ।
- যামিনী রায়ের কোন ছবি স্বর্ণপদক পেয়েছ ?
Ans: যামিনী রায়ের উত্তরা অভিমন্যু ছবি স্বর্ণপদক পেয়েছ ।
- যামিনী রায়ের ছবি কত সালে স্বর্ণপদক পান ?
Ans: যামিনী রায়ের ছবি ১৯৩৪ সালে স্বর্ণপদক পান।
- যামিনী রায় কবে পদ্মভূষণ পান ?
Ans: যামিনী রায় ১৯৫৪ সালে পদ্মভূষণ পান ।
- যামিনী রায়ের শিল্পধরার ছবি গুলি কী ?
Ans: যামিনী রায়ের শিল্পধরার ছবি গুলি হলো – ভারতীয় শিল্পরীতি , সাঁওতাল জীবন ও শিল্পরীতি অনুসরণে আঁকা ছবি , লাইন ড্রইং , ফ্ল্যাট টেকনিক , ইত্যাদি ।
- যামিনী রায় কবে মারা যান ?
Ans: যামিনী রায় মারা যান ২৪ এপ্রিল ১৯৭২ সালে ।
[আরও দেখুন, সুনীল গাভাস্কারের জীবনী – Sunil Gavaskar Biography in Bengali
আরও দেখুন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী – Sourav Ganguly Biography in Bengali
আরও দেখুন, শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী – Sachin Tendulkar Biography in Bengali
আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali
আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali]
যামিনী রায় এর জীবনী – Jamini Roy Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” যামিনী রায় এর জীবনী – Jamini Roy Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। যামিনী রায় এর জীবনী – Jamini Roy Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই যামিনী রায় এর জীবনী – Jamini Roy Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।