মেরি কম এর জীবনী
Mary Kom Biography in Bengali
মেরি কম এর জীবনী – Mary Kom Biography in Bengali : সোনার মেয়ে মেরিকম অনুশীলন চলত লুকিয়ে চুরিয়ে । মেয়ে খেলাধুলো করুক বাবার সায় ছিল না মোটেই । রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর খবরের কাগজে ছবি প্রকাশিত হওয়ায় পুরস্কারের বদলে বাবার কাছ থেকে যে মেয়ের কপালে জুটেছিল তিরস্কার , সেই মেয়েই কিনা এখন এদেশের খেলাধুলোর জগতে বড় আইকন । বক্সিংয়ে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেরি কম (Mary Kom) ৷ দেশকে এনে দিয়েছেন একগুচ্ছ আন্তর্জাতিক সাফল্য । প্রথম ভারতীয় মহিলা বক্সার হিসেবে অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার কৃতিত্বও মেরি কম (Mary Kom) এর । মনিপুরের মেয়ে মেরি কম আজ প্রকৃত অর্থেই বক্সিংয়ের ‘ সোনার মেয়ে ‘ ।
ছোট্ট রাজ্য হলেও খেলাধুলো মনিপুরের সুখ্যাতি কম নয় । ফুটবল থেকে ভারোত্তোলনে উঠে এসেছেন অনেক খেলোয়ার । বক্সিংয়ে ডিঙ্গো সিংহ এদেশের পরিচিত মুখ ।
ভারতীয় মহিলা বক্সার মেরি কম এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । মেরি কম এর জীবনী – Mary Kom Biography in Bengali বা মেরি কম এর আত্মজীবনী বা (Mary Kom Jivani Bangla. A short biography of Mary Kom. Mary Kom Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) মেরি কম এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মেরি কম কে ? Who is Mary Kom ?
মেরি কম (Mary Kom) হলেন একজন ভারতীয় বক্সার। তার পুরো নাম মাংতে চুংনেইজাং মেরি কম। মেরি কম (Mary Kom) পাঁচ বারের বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়ন এবং ছয়টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেই পদকজয়ী একমাত্র মহিলা বক্সার। তিনিই একমাত্র ভারতীয় মহিলা বক্সার যিনি ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে ৫১ কেজি ফ্লাইওয়েট বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান। এই অলিম্পিকসে তিনি একটি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছেন। মেরি কম (Mary Kom) এআইবিএ ওয়ার্ল্ড উইমেন’স র্যাঙ্কিং ফ্লাইওয়েট ক্যাটাগরিতে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন।
ভারতীয় মহিলা বক্সার মেরি কম এর জীবনী – Mery Kom Biography in Bengali :
নাম (Name) | মেরি কম (Mary Kom) |
জন্ম (Birthday) | ১ মার্চ ১৯৮৩ (1st March 1983) |
জন্মস্থান (Birthplace) | মনিপুর, ভারত |
উচ্চতা | ৫ ২ ইঞ্চি |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | বক্সিং |
মেরি কম এর জন্ম ও পরিবার – Mary Kom Birthday and Family :
১৯৮৩ সালে পয়লা মার্চ এ রাজ্যের চূড়াচাদপুরের অজগ্রাম কাংসেই গ্রামের এক গরিব পরিবারে মেরীর জন্ম । পুরো নাম মংতে চুং নেইজাং মেরি কম । কুকি ভাষী মেরিরা তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মেরিই বড় ।
মেরি কম এর শৈশবকাল – Mary Kom Childhood :
কঠিন এক লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে কেটেছে ছেলেবেলা । বাবা – মাকে ঝুম চাষে সাহায্য করা থেকে বাড়ির ছোট ভাইবোনের দেখভাল , অল্প বয়সে সামলাতে হত অনেক কিছুই ।
মেরি কম এর শিক্ষাজীবন – Mary Kom Education Life :
এরই মধ্যে প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনা শুরু লোকতাকের ক্রিশ্চিয়ান মডেল হাইস্কুলে । মইরাং এর সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ভর্তি হন ইম্ফলের আদিমজাতি স্কুলে । মজার কথা , আজ বক্সার হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠলেও ছেলেবেলায় মেরি কিন্তু অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন । তা হলে বক্সার হয়ে উঠলেন কীভাবে ? আসলে এশিয়ান গেমসে নিজের রাজ্যের সোনাজয়ী বক্সার ডিঙ্গো সিংহের সাফল্যই মেরিকে বক্সার হয়ে ওঠার প্রেরণা জোগায় । এরপর বক্সিং রিং হয়ে ওঠে মেরির সব চেয়ে ভালোলাগার জায়গা । স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া সাই – এ যোগ দেওয়ার পর মেরির উঠে আসার রাস্তাটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায় ।
মেরি কম এর রূপো জয় – Mary Kom Win Silver :
২০০১ সাল ১৮ বছরের মেয়েটি ওমেখ ওয়ার্ল্ড অ্যামেচার বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে আমেরিকার পেনসিলভানিয়া থেকে ৪৫ কেজি বিভাগে জিতে আসেন রূপো । প্রথম বছরেই বিশ্ব প্রতিযোগিতা থেকে পদক জয় । এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মেরি কমকে (Mary Kom) ।
মেরি কম এর খেতাব গুলি – Mary Kom Titles :
প্রথমবার বিশ্বলড়াইয়ে নেমে যে ছাপ তিনি রেখে এসেছিলেন পরবর্তী প্রতিযোগিতা গুলোতে তার প্রভাব দেখেছে বিশ্ব । টানা পাঁচ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের গৌরব বাড়িয়েছেন মেরি কম (Mary Kom) । ২০০২ সালে তুর্কি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শিপে ৪৫ কেজি বিভাগে সোনা জয় দিয়ে শুরু । এরপর ২০০৫ সালে রাশিয়ায় , ২০০৬ সালে দেশের মাটিতে নিউ দিল্লিতে , ২০০৮ সালে চিন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে একই বিভাগে লড়াইয়ে নেমে রোমানিয়ান বক্সারকে ধরাশায়ী করে সোবার্সের দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্বাডোজ থেকে জিতে আনেন নিজের পঞ্চম বিশ্ব খেতাব ৷
মেরি কম এর এশিয়ান গেমস এ সোনা জয় – Mary Kom Win Gold In Asian Games :
শুধু পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়াই নয় । মেরি কমের সাফল্যের ঝুলিতে আছে আরও অনেক আন্তর্জাতিক সাফল্য । এশিয়ান উওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছেন চারবার । চতুর্থ সোনাটি জিতেছেন মঙ্গোলিয়ায় প্রতিযোগিতায় নেমে ৫১ কেজি বিভাগে । এই বিভাগেই চিনের ওয়াঝৌ এশিয়ান গেমসে ২০১০ সালে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ । ডেনমার্কের ভেনাস উত্তমেন্স বক্সকাপ , হ্যানয়ের এশিয়ান ইন্ডোর গেম্স , চিনের এশিয়ান উওমেন্স কাপের মতো একাধিক প্রতিযোগিতাও মেরির জ্যাব , আপার কাট , হুকে বারবার পরাস্ত হয়েছেন বিদেশি প্রতিযোগিরা । আপাতশাস্ত পাঁচ ফুট দু’ইঞ্চি উচ্চতার এই মেয়েটি রিংয়ে নেমে কতটা নির্মম , তাওর সাফল্যই বলে দেয় । পাঁচবার বিশ্বজয়ের পর মেরির লক্ষ্য ছিল অলিম্পিকে অংশ নেওয়া । লন্ডন অলিম্পিকে মেয়েদের বক্সিংয়ের সূচনা বছরেই সেই লক্ষ্যে পৌছঁতে পেরেছেন মেরি । পেয়েছেন ওলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক ।
মেরি কম এর বিবাহ জীবন – Mary Kom Marriage Life :
২৯ বছরের এই বক্সার তার সাফল্যের অনেকটা কৃতিত্বই দিতে পারেন সাহস ও উৎসাহ যুগিয়ে যাওয়া তার স্বামী কে অনলার কমকে । যমজ দুই সন্তানের মা হওয়ার পর শেষ তিনটি বিশ্বখেতাব ঘরে তুলেছেন মেরি । ওঁর কথায় , “ আমি যখন ছেলেদের মিস করি । তখন স্বামীই হয়ে ওঠেন ওদের বাবা এবং মা । তিন পুত্র রেচুংভার , খুপনিভার ও প্রিন্স কম বাবার মতোই মা মেরির বড় সমর্থক । তার লড়াকু জীবনের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে ‘ হাম সে হ্যায় লাইফ ‘ নামে তৈরী হয়েছে টিভি সিরিয়াল ।
[আরও দেখুন, মিলখা সিং এর জীবনী – Milkha Singh Biography in Bengali]
মেরি কম এর পুরস্কার সমুহ – Mary Kom Prizes :
২০০৪ সালে হয়েছেন বক্সিংয়ের ‘ অর্জুন ‘ । ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী , রাজীব গাঁন্ধী খেলরত্ন পুরস্কার পান ২০০৯ সালে । ২০০৮ সালে বিশ্ব অ্যামেচার বক্সিং সংস্থা তাঁকে ‘ ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি ’ আখ্যায় ভূষিত করে । বক্সিং করলে মেয়ের বিয়ে না হওয়ার আশঙ্কায় ভুগতেন যে বাবা , তাঁকে সঙ্গে নিয়েই দেশের প্রথম মহিলা বক্সার হিসাবে অর্জুন পুরস্কার নিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিলেন মেরি । মনিপুর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরি কমের বক্সিং নিয়ে স্বপ্ন অনেক । নিজেই গড়ে তুলেছেন বক্সিং অ্যাকাডেমি । সেখানে অনেক মেয়ে তাঁকে আদর্শ মেনে বক্সিং শিখতে আসছেন । এই অ্যাকাডেমি থেকে নতুন বক্সার তুলে আনতে চান তিনি । পাঁচ পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েও অনেকটাই প্রচারের আড়ালে মেরি । ধোনি , সচিন তেন্ডুলকর কিংবা বিশ্বনাথন আনন্দের যা কদর , বিশ্বসেরা হয়ে তার একটুও পাননি এই মহিলা বক্সার । অথচ বক্সিংয়ের মতো কঠিন খেলায় তিনি বিশ্বসেরা । দ্বাদশ সাফগেমস ২০১৬ মহিলা বক্সার মেরিকম ৫১ কেজি বিভাগে স্বর্ণপদক পেয়েছেন । একবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে মেরি বলেছিলেন , “ বক্সিং ইজ নট জাস্ট আ ম্যান্স গেম । ” রিংয়ে নেমে বারবার তারই প্রমান দিয়েছেন মেরি ।
[আরও দেখুন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী – Sourav Ganguly Biography in Bengali]
মেরি কম কমনওয়েলথ গেমস এ সোনা জয় – Mary Kom Win Gold In Common wealth Games :
ভারতীয় মেয়েদের বক্সিংয়ে কিংবদন্তী এম্ সি মেরিকম ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছেন । ৪৮ কেজি বিভাগে কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম ভারতীয় মহিলা বক্সার হিসাবে সোনা জিতে নয়া কীর্তিত্ত স্থাপন করেছেন তিনি ।
মেরি কম এর জীবনী – Mary Kom Biography in Bengali FAQ :
- মেরি কম কে?
Ans: মেরি কম একজন ভারতীয় বক্সার ।
- মেরি কম এর জন্ম কবে হয় ?
Ans: মেরি কম এর জন্ম ১ মার্চ ১৯৮৩ সালে হয় ।
- মেরি কম কবে জন্মগ্রহণ করেন ?
Ans: মেরি কম ১ মার্চ ১৯৮৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন ।
- মেরি কম এর জন্ম কোথায় হয় ?
Ans: মেরি কম এর জন্ম মনিপুর এ হয় ।
- মেরি কম কত সালে পদ্মশ্রী পেয়েছেন ?
Ans: মেরি কম ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী পেয়েছেন ।
- মেরি কম এশিয়ান গেমস এ কতবার সোনা জয় করেন ?
Ans: মেরি কম এশিয়ান গেমস এ পাঁচবার সোনা জয় করেন ।
- মেরি কম কত সালে এশিয়ান গেমস এ ব্রোঞ্জ জিতেন ?
Ans: মেরি কম ২০১০ সালে এশিয়ান গেমস এ ব্রোঞ্জ জিতেন ।
- মেরি কম কবে রাজীব গান্ধী খেল রত্ন পান ?
Ans: মেরি কম ২০০৮ সালে রাজীব গান্ধী খেল রত্ন পান।
- মেরি কম এর স্বামীর নাম কী ?
Ans: মেরি কম এর স্বামীর নাম অনলার কামজে।
- মেরি কম কত সালে কমনওয়েলথ গেমস এ সোনা জয় করেন ?
Ans: মেরি কম ২০১৮ সালে কমনওয়েলথ গেমস এ সোনা জয় করেন।
[আরও দেখুন, সুনীল গাভাস্কারের জীবনী – Sunil Gavaskar Biography in Bengali
আরও দেখুন, শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী – Sachin Tendulkar Biography in Bengali
আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali
আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali
আরও দেখুন, ইমরান খানের জীবনী – Imran Khan Biography in Bengali]
মেরি কম এর জীবনী – Mary Kom Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” মেরি কম এর জীবনী – Mary Kom Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। মেরি কম এর জীবনী – Mary Kom Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই মেরি কম এর জীবনী – Mary Kom Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।