পাভো নুরমি এর জীবনী
Paavo Nurmi Biography in Bengali
পাভো নুরমি এর জীবনী – Paavo Nurmi Biography in Bengali : উড়ন্ত ফিনবাসী অ্যাথলেটিকস্ পাভো নুরমি অনেকে তাঁর সাথে মহাভারতের ট্র্যাজিক চরিত্র একলব্যের তুলনা করে থাকেন । একলব্য নীচু বংশের ছেলে বলে গুরুর সান্নিধ্য এবং দাক্ষিণ্য পাননি , পাভো নুরমিকেও এইভাবে অনেক অত্যাচার অপমান সহ্য করতে হয়েছিল । তবুও পাভো নুরমিকে কেউ দমাতে পারেনি । গুরুর আসন মনমন্দিরে অঙ্কিত করে একা একাই অনুশীলন করেছেন । এইভাবেই কেটে গিয়েছিল পাভো নুরমির ছেলেবেলার রঙিন দিনগুলি । বিগত শতাব্দীর অ্যাথলেটিকসের ইতিহাসে এক অসাধারণ নাম পাভো নুরমি ।
বিখ্যাত দৌড়বিদ পাভো নুরমি এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । পাভো নুরমি এর জীবনী – Paavo Nurmi Biography in Bengali বা পাভো নুরমি এর আত্মজীবনী বা (Paavo Nurmi Jivani Bangla. A short biography of Paavo Nurmi. Paavo Nurmi Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) পাভো নুরমি এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পাভো নুরমি কে ছিলেন ? Who is Paavo Nurmi ?
পাভো নুরমি (Paavo Nurmi) ছিলেন একজন ফিনিশ মধ্য-দূরত্ব এবং দীর্ঘ-দূরত্বের দৌড়বিদ ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে দূরত্বের দৌড়ে পাভো নুরমি (Paavo Nurmi) আধিপত্য বিস্তার করায় তাকে “ফ্লাইং ফিন” বা “ফ্যান্টম ফিন” বলা হত। নূরমি 1500 মিটার থেকে 20 কিলোমিটারের দূরত্বের মধ্যে 22 টি বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেছেন এবং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে তার বারোটি ইভেন্টে নয়টি স্বর্ণ এবং তিনটি রৌপ্য পদক জিতেছেন। তার চূড়ায়, নুরমি m০০ মিটার উঁচু থেকে দূরত্বের জন্য ১২১ টি দৌড়ে অপরাজিত ছিলেন। তার 14 বছরের ক্যারিয়ারে, পাভো নুরমি (Paavo Nurmi) ক্রস কান্ট্রি ইভেন্ট এবং 10,000 মিটারে অপরাজিত ছিলেন।
পাভো নুরমি এর জীবনী – Paavo Nurmi Biography in Bengali :
নাম (Name) | পাভো নুরমি (Paavo Nurmi) |
জন্ম (Birthday) | ১৩ জুন ১৮৯৭ (13th June 1897) |
জন্মস্থান (Birthplace) | ফিনল্যান্ড |
উচ্চতা | ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি |
ওজন | ৬৫ কেজি |
দেশ | ফিনল্যান্ড |
খেলা | অ্যাথলেটিক্স |
মৃত্যু (Death) | ২ অক্টোবর ১৯৭৩ (2nd October 1973) |
পাভো নুরমি এর জন্ম ও শৈশবকাল – Paavo Nurmi Birthday and Childhood :
জন্মেছিলেন তিনি ফিনল্যান্ডের তুর্ক শহরে , ১৮৯৭ সালের ১৩ জুন । অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয়েছিল পাভো নুরমির । বারো বছর বয়সে বাবার মৃত্যু তার চারপাশে টেনে আনল অমানিশার ঘোর অন্ধকার । ছ’জনের মুখে অন্ন তুলে দেবার দায়িত্ব পড়ল সদ্য বালক পাভো নুরমির ওপর । কীভাবে এই কাজ করবেন তিনি ? পড়াশোনার জগতে প্রবেশের ছাড়পত্র হাতে পাননি । তাই সারাদিন ঠেলাগাড়ি ঠেলতে হত পাভো নুরমিকে (Paavo Nurmi) । মাল পাঠাতে হত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় । শহরটা এবড়ো থেবড়ো , উঁচু নীচু , পাহাড়ি অঞ্চলে ভরা । তাই মাল ঠেলতে যথেষ্ট কষ্ট হত সেদিনের বালক পাভো নুরমির । অমানুষিক পরিশ্রমের ফলে শরীর ভেঙে পড়ল , দেখা দিল দুরারোগ্য ব্যাধির আক্রমণ । মনের আকাশে শুধুই হতাশার কালো মেঘের আনাগোনা ।
অথচ সেই বয়স থেকেই দৌড়ের প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল পাভো নুরমির । হাড়ভাঙা খাটুনির শেষে সময় পেলেই দৌড় লাগাতেন কোনো এক জনহীন মাঠে । পাভো নুরমির কেবলই মনে হত দূরের ওই আকাশটা বুঝি তাকে অদ্ভুত আকর্ষণে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ৷ কখনো একা একা কোনো বনের ভেতর চলে যেতেন । দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন । ছুটতেন , ছুটলেই তার আনন্দ । ছোটার মধ্যে একটা অদ্ভুত স্বাধীনতা লুকিয়ে আছে । চার দেওয়ালের বন্দী পাভো নুরমি সেই স্বাধীনতার স্বপ্ন আঁকতেন দুই চোখের তারায় ।
পাভো নুরমি এর অনুপ্রেরণা – Paavo Nurmi Inspiration :
ঠিক এই সময় একটাই খবর তাঁর জীবনের ধারাকে একেবারে পালটে দেয় । ১৯১২ সাল । তখন অলিম্পিকে ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত দৌড়বিদ হ্যান্স কোলেমেনন তিনটি সোনা জিতেছেন । ফিনল্যান্ড একটি অনুন্নত দেশ । সেখানকার এক বাসিন্দা এমন একটি অসাধারণ কান্ড করে ফেলেছেন , ঘটনাটা পাভো নুরমির মনকে নাড়িয়ে দিল । তখন নুরমির বয়স মাত্র পনেরো বছর । দেশবাসীর এই সাফল্য সংবাদ শোনার পর থেকেই পাভো নুরমি ভাবতেন , আমিই বা কেন চেষ্টা করলে একজন দৌড়বিদ হতে পারব না ? আমিও কি হ্যান্সের মতো তিনটি সোনার পদক গলায় ঝোলাতে পারব না ?
শুরু হল আরও বেশি অনুশীলন । রাতের অন্ধকারেও পাভো নুরমি একা একা ছুটে চলেছেন । মা কত বকাঝকা করছেন । পরিচিত প্রিয়জনরা নিষেধের বেড়াজাল টানার চেষ্টা করছেন । পাভো নুরমির মনের মধ্যে তখন জেদের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে । যে করেই হোক আমাকে অলিম্পিকে সোনা জিততেই হবে — এমন একটা নাছোড়বান্দা মনোভাব পাভো নুরমি (Paavo Nurmi) এর মনের ভিতর প্রকটিত হয়েছে ।
এই সময় পাভো নুরমি একটা অদ্ভুত কায়দায় অনুশীলন করতেন । স্টপ ওয়াচের কাঁটার দিকে লক্ষ্য রাখতেন , কখনও চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতেন এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে । তাঁর অনুশীলনের ধরন দেখে বন্ধুরা ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করেছেন । বলেছেন পাভো নুরমির মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে । কিন্তু কারো কথাতেই পাভো নুরমি তার নিজের উদ্ভাবিত এই ট্রেনিং পদ্ধতিকে বিসর্জন দেননি ।
পাভো নুরমি কর্মজীবন – Paavo Nurmi Work Life :
১৯১৯ সালে যোগ দিতে হল ফিনল্যান্ডের সেনাবাহিনীতে । দীর্ঘ দু’বছর ধরে তিনি যে কঠিন পরিশ্রম করেছিলেন , এবার তার সোনার ফসল ঘরে তোলার পালা । বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঁচ হাজার মিটার এবং দশ হাজার মিটার দৌড়ে অংশ নিলেন । একটির পর একটি সোনার পদক এল তার হাতে । একসময় গোটা ফিনল্যান্ডে তিনি ছিলেন দূর পাল্লার সেরা দৌড়বিদ । পাভো নুরমিকে (Paavo Nurmi) চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো সাহস বা সামর্থ অন্য কোনো দৌড়বিদের ছিল না ।
[আরও দেখুন, মিলখা সিং এর জীবনী – Milkha Singh Biography in Bengali]
পাভো নুরমি এর ১৯২০ অলিম্পিক – Paavo Nurmi 1920 Olympic :
১৯২০ সালে অ্যান্টওয়ার্প অলিম্পিকে ফিনল্যান্ড দলে প্রবেশের ছাড়পত্র পেলেন । পাভো নুরমির অনেক দিনের স্বপ্ন তখন সফল হতে চলেছে , কিন্তু তিনি কি পারবেন তার সোনালী স্বপ্নকে সফল করতে ? প্রথম আত্মপ্রকাশেই বাজিমাত করেছিলেন পাভো নুরমি । পাঁচ হাজার মিটারে রূপো পেলেন , দশ হাজার মিটারে প্রবলতর প্রতিদ্বন্দীদের ছিটকে দিয়ে সোনা জিতলেন । দশ হাজার মিটারে ব্যক্তিগত ক্রশ কান্ট্রিকে অনেকে বলে থাকেন সর্বনাশা দৌড় ভরদুপুরে প্রায় ৪৫ ° সেন্টিগ্রেডেএই দৌড় শুরু হয়েছিল । পাথুরে রাস্তা , কোথাও বা হাঁটু সমান কাঁটা গাছ । এবারেও প্রথম হলেন পাভো নুরমি । আবার একটি সোনা পেলেন । তাঁকে দেখে বোঝাই যেতো না যে এমন একটি কঠিন দৌড় এইমাত্র শেষ করেছেন পাভো নুরমি (Paavo Nurmi) । এভাবেই পাভো নুরমি তখন সারা বিশ্বের খেলা পাগল মানুষের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছেন । তবে আরও চমক বুঝি বাকি ছিল।
পাভো নুরমি এর ১৯২৪ অলিম্পিক – Paavo Nurmi 1924 Olympic :
১৯২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক গেমসে একটির পর একটি ইভেন্টে সোনা জিতে ‘ ফ্লাইংফিন ‘ বা উড়ন্ত ফিনবাসী আখ্যা পেলেন । ১১৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট উষ্ণতার মধ্যেও অক্লান্তভাবে ছুটে গেছেন । পাভো নুরমি । মাঝারি এবং দুরপাল্লার দৌড়ে পাঁচবার সোনা জিতে বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছিলেন । ১৫০০ এবং ৫ হাজার মিটার দৌড় হয়েছিল একঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে । দুটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে পাভো নুরমি সোনা জিতেছেন । ১০ হাজার মিটারে দলে জায়গা না পাওয়াতে ষষ্ঠ সোনাটি তাঁকে হারাতে হয়েছিল । স্বদেশীয় ভিলি রিটোলা যে সময় নিয়ে প্রথম হলেন , নুরমি তার থেকে ১৫ মিনিট কম সময় করতে পারতেন।
[আরও দেখুন, মারাদোনা এর জীবনী – Diego Maradona Biography in Bengali]
পাভো নুরমি এর অলিম্পিক এ সোনা জয় – Paavo Nurmi Win Gold :
১৯২৮ সালে আরস্টমার্ডম অলিম্পিকে রিটোলাকে হারিয়ে সোনা জিতলেন ১০ হাজার মিটারে । তার স্বপ্নের অ্যাথলেট ছিলেন হ্যান্স কোলেমেনন । তিনি অলিম্পিকে তিনটি সোনা জিতেছিলেন । নুরমি ৯ টি সোনা এবং ৩ টি রূপো জিতেছেন । দীর্ঘ ৬৮ বছর বাদে পাভো নুরমির এই রেকর্ড স্পর্শ করেছিলেন কার্ল লিউয়িস ।
পাভো নুরমি এর মৃত্যু – Paavo Nurmi Death :
দারিদ্রতার অভিশাপ তাঁর স্বপ্নের দৌড়কে থামাতে পারেনি , কায়িক পরিশ্রম ও মনোবলে ভাঙন ধরাতে পারেনি । তাই বোধহয় পাভো নুরমিকে আমরা বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা অ্যাথলেট বলে থাকি । তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ , জীবিত অবস্থাতেই যাঁর ব্রোঞ্জ মূর্তি স্থাপিত হয়েছিল হেলসিঙ্কি অলিম্পিক স্টেডিয়ামের বাইরে । ১৯৫২ সালের অলিম্পিকে পুতাগ্নি জ্বালানোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন পাভো নুরমি । ১৯৭৬ সালের ২ অক্টোবর ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি শহরে তিনি পরলোক গমন করেন ।
পাভো নুরমি এর জীবনী – Paavo Nurmi Biography in Bengali FAQ :
- পাভো নুরমি কে ছিলেন ?
Ans: পাভো নুরমি ছিলেন একজন ফিনিশ মধ্য-দূরত্ব এবং দীর্ঘ-দূরত্বের দৌড়বিদ ছিলেন ।
- পাভো নুরমি এর জন্ম কোথায় হয় ?
Ans: পাভো নুরমি এর জন্ম হয় ফিনল্যান্ডে ।
- পাভো নুরমি কবে জন্মগ্রহণ করেন?
Ans: পাভো নুরমি জন্মগ্রহণ করেন ১৩ জুন ১৮৯৭ সালে।
- পাভো নুরমি অলিম্পিকে কয়টি সোনা জয় করেন ?
Ans: পাভো নুরমি অলিম্পিকে ৯ টি সোনা জয় করেন ।
- পাভো নুরমি কয়টি রূপো জিতেন ?
Ans: পাভো নুরমি ৩ টি রূপো জিতেন ।
- কত সালে পাভো নুরমি ১০০০ মি. এ সোনা জয় করেন ?
Ans: ১৯২৮ সালে পাভো নুরমি ১০০০ মি. এ সোনা জয় করেন ।
- পাভো নুরমি কত সালে প্যারিসে সোনা জয় করেন ?
Ans: পাভো নুরমি ১৯২৪ সালে প্যারিসে সোনা জয় করেন ।
- পাভো নুরমি কবে মারা যান ?
Ans: পাভো নুরমি মারা যান ২ অক্টোবর ১৯৭৩ সালে।
[আরও দেখুন, পেলের জীবনী – Pele Biography in Bengali
আরও দেখুন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী – Sourav Ganguly Biography in Bengali
আরও দেখুন, শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী – Sachin Tendulkar Biography in Bengali
আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali
আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali]
পাভো নুরমি এর জীবনী – Paavo Nurmi Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” পাভো নুরমি এর জীবনী – Paavo Nurmi Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। পাভো নুরমি এর জীবনী – Paavo Nurmi Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই পাভো নুরমি এর জীবনী – Paavo Nurmi Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।