তাত্ত্বিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর
তাত্ত্বিক ভূগোল | Theoretical Geography (Geography) Question and Answer in Bengali
তাত্ত্বিক ভূগোল (ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Theoretical Geography : তাত্ত্বিক ভূগোল – (ভূগোল – Geography) তাত্ত্বিক ভূগোল – Theoretical Geography প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হল। এই (তাত্ত্বিক ভূগোল – Theoretical Geography – তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল Geography) প্রশ্নোত্তর গুলি স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। তোমরা যারা তাত্ত্বিক ভূগোল – Theoretical Geography – তাত্ত্বিক ভূগোল – (ভূগোল – Geography) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর (Short Question and Answer) খুঁজে চলেছো, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্নউত্তর ভালো করে পড়তে পারো।
তাত্ত্বিক ভূগোল (Theoretical Geography) তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর
1. জনসংখ্যা বিবর্তন প্রসঙ্গে ম্যালথাস তত্ত্ব কী ?
Ans: ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ম্যালথাস ১৭৪৮ সালে তাঁর বই Essay on the Principles of population as it affects the future improvement of Mankind’- এ জনসংখ্যা হতাশা তত্ত্ব বা Populatio Pessimism প্রকাশ করেন ।
মূলকথা : আর্থিক সামর্থ্য অপেক্ষা জনসংখ্যা বেশী হলে মানুষের সুখ , উন্নয়ন ব্যহত হবে , খাদ্যসংকট সমাজকে অনুন্নত ও দুর্বল করবে । তাঁর মতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ে গাণিতিক নিয়মে ; যেমন 1- 2 – 3 – 4 – 5 – 6 গুণহারে । জনসংখ্যা বাড়ে জ্যামিতিক বা গুণোত্তর হারে ।
যেমন —1 → 2 – 4 → 8 – 16 – 32 – 64 – 128 ফলস্বরূপ দুই শতাব্দীর মধ্যে মানুষ ও খাদ্য অনুপাত দাঁড়াবে 256 : 9 : তিন শতাব্দীতে তা হবে 4096 : 13। দুই হাজার বছর ব্যবধানে তা দাঁড়াবে অপরিমেয়ভাবে …..
অনুমিত ধারণা : ( i ) মানবজীবনে খাদ্য অপরিহার্য ( ii ) নারী – পুরুষ আকর্ষণ স্বাভাবিক শাশ্বত , ( iii ) ( iv ) কৃষিতে ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধি প্রযোজ্য মোট জমি সীমিত , খাদ্য উৎপাদন স্থির , উৎপাদন প্রযুক্তি এক সময় স্থির হবে । ( v ) • নীতি ও সিদ্ধান্ত : ( i ) জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করা দরকার , মানব অস্তিত্বের জন্য জনসংখ্যাকে সীমিত রাখা দরকার । ( ii ) খাদ্য উৎপাদন যোগান ও চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে । ( iii ) শিক্ষিত সচেতন মানুষ নৈতিক সংযম ও সুঅভ্যাস দ্বারা জনবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করবে । ( iv ) দ্রুত ও গুণোত্তর জনবুদ্ধি খাদ্য যোগান ও চাহিদার মধ্যে অসামঞ্জস্য তৈরী করে , ফলে অর্থনীতি ও সামাজিক ভিতকে দুর্বল করবে , সমাজ সকল ক্ষেত্রে অনুন্নত হয়ে পড়ে । ( v ) দুর্ভিক্ষ , মহামারী , যুদ্ধ , দাঙ্গা , প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রভৃতি দ্বারা জনসংখ্যা ক্রমশ নিয়ন্ত্রিত হবে ।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উপায় : 1. নিবারণ ব্যবস্থা গ্রহণ : এক্ষেত্রে ম্যালথাস কয়েকটি ব্যবস্থার কথা বলেন ।
যেমন ( i ) অনিয়ম ও অনাচার থেকে বিবাহ হতে বিরত হতে হবে । ( ii ) অপকার্য থেকে বিরত থাকতে হবে ; যেগুলো হলো : নির্বিচার যৌনকাম অস্বাভাবিক অনুরাগ , বিবাহ শয্যার পবিত্রতা লংঘন ও গর্হিত সহবাস । ( iii ) যুদ্ধ – বিগ্রহ , অসামাজিক কাজের বাড়াবাড়ি রোধ করতে হবে ।
২। স্বাভাবিক রোধন ব্যবস্থা গ্রহণ : যেগুলো দ্বারা স্বাভাবিক নিয়মেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । ( i ) চরম দারিদ্রতা দূর করতে হবে । ( ii ) শিশু ও নারীদের অযত্ন ও বৈষম্য দূর করতে হবে । ( iii ) জটিল রোগ ও মহামারী দূর করতে হবে ।
৩। বিরুদ্ধ আচরণ দূর ঃ জন্ম নিয়ন্ত্রণে অস্বাভাবিক ও কৃত্রিম পদ্ধতির প্রয়োগকে তিনি নীতি বিরুদ্ধ বলেছেন । জন্ম নিয়ন্ত্রণে তিনি বলেন ( i ) বিবাহপূর্ব সম্ভ্রম রক্ষা করতে হবে । ( ii ) বিলম্বে বিবাহ করতে হবে । ( iii ) সংযমী জীবনাচরণ করতে হবে । ( iv ) ব্যভিচার দূর করে আত্মসম্মানবোধ ও আত্মসংযম বজায় রাখতে হবে ।
ম্যালথাস তত্ত্বের ত্রুটি : ম্যালথাস তত্ত্বের কিছু দুর্বল দিক তাঁর চিন্তাকে সমালোচিত হতে হয় , এগুলো হলো
১। জমি ও উৎপাদন ক্ষমতা গতিশীল : তাঁর মতে জমি ও উৎপাদন ক্ষমতা স্থির ও সীমিত । কিন্তু বর্তমানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি , উন্নত বীজ , সার , সেচ দ্বারা যে বহুগুণ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব সে সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল না ।
২ । বহুমুখী উৎপাদন কৃষি ছাড়াও মাছ , পশুখামার , শিল্প উৎপাদন , পরিবহন প্রভৃতির উৎপাদন দ্বারা যে জীবন রূপায়নের মান উন্নত করা যায় তা তিনি উল্লেখ করেন নি ,
৩ । শিশু মৃত্যু হার হ্রাস ঃ উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে দম্পতির দুটি সন্তানের সাবালকত্ব হওয়ার নিশ্চয়তার ফলে অধিক সন্তান নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হতে চলেছে ।
৪ । স্থানান্তর ঃ উন্নত পরিবহনের ফলে অধিক ঘনত্বপূর্ণ অঞ্চল থেকে মানুষ অন্যত্র গমন করে সেখানে সম্পদ উৎপাদন করতে পারে তার ধারণা তিনি দেন নি ।
৫। জন্মহার হ্রাস ঃ সকল মানুষের শিক্ষা দ্বারা মানুষের উন্নত রুচি ও দৃষ্টিভঙ্গীর ফলে যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হতে পারে তার উল্লেখ করেননি ; যা সম্ভব হচ্ছে এখন ।
মূল্যায়নঃ এভাবে সমালোচিত হলেও তাঁর তত্ত্ব বর্তমানে আবার প্রাসঙ্গিক হচ্ছে ।
যেমনঃ ( 1 ) উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সত্ত্বেও ২০১০-১১ বর্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকট ও খাদ্য দাঙ্গা দেখা দেয় । ( হাইতি , আফ্রিকার অনেক দেশ ; এমনকি এখনো প্রায় ১০০ কোটি মানুষ রাত্রে না খেয়ে ঘুমোতে যায় ) ( 2 ) খাদ্য ও শক্তি উৎপাদন অসীম নয় ; উন্নত প্রযুক্তির ফলে তার নির্দিষ্ট মাত্রায় তা শেষ হবে । আবার কৃষি বিপ্লব যুক্ত অঞ্চলেও রাসায়নিক দূষণ চরম মাত্রায় পৌঁছেছে । ( 3 ) জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও খাদ্য ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের মাত্রা বিপজ্জনক হচ্ছে ক্রমশ । ( 4 ) বর্তমানে সঠিক উন্নয়ন ও উন্নত জীবন ধারণের জন্য সকল দেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা ভারছে ; যা ম্যালথাস চিন্তা থেকে ধার করা । ( 5 ) যৌন ব্যভিচার অবাধ যৌন স্বাধীনতা , যেমন পারিবারিক বন্ধন শিথিল করে তেমনি অবাঞ্ছিত সস্তান থেকে মস্তান , গুণ্ডারাজ অশুভ ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি প্রভৃতির সামাজিক অনিয়মের জন্ম দেয় । -যা পৃথিবীর সব দেশেই দেখা যাচ্ছে ।
2. জনসংখ্যার বিবর্তন প্রসঙ্গে কার্লমার্কস তত্ত্ব কী ?
Ans: জার্মান চিন্তাবিদ , দার্শনিক – অর্থনীতিবিদ কার্লমার্কস সামাজিক তত্ত্বের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা হিসাবে “ পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টি আপেক্ষিক উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি ” তত্ত্বে বলেছেন সকল মানুষই সম্পদ , সকল মানুষ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভোগের সমান অধিকার পেলে সকলেরই কার্যকারিতা ও উপযোগিতা রয়েছে ।
তত্ত্বের মূলকথা : ধনতান্ত্রিক কাঠামোতে মালিক শ্রেণীর লক্ষ্য সর্বাধিক মুনাফা অর্জন ; ফলে তারা পুঁজি সঞ্চয় করে , অন্যদিকে দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণী জনসংখ্যা বৃদ্ধি দ্বারা শ্রমকে পুঁজি করলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে , শ্রমিকরা জানে মালিক শ্রেণী শ্রমের জন্য শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে । এই অবস্থায় মালিক – শ্রমিক শ্রেণীর পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে শ্রমিকরা অধিক জনসংখ্যা ( শ্রম ) উৎপন্ন করে ।
সমাধান তত্ত্ব : মার্কসের মতে ধনী – দরিদ্রের অসাম্যের কারণেই দরিদ্ররা সমান সুযোগ পায় না বলে সকল মানব সম্পদ উন্নয়ন ঘটে না । তাঁর মতে সমাজে সাম্যবাদ দ্বারা আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার শ্রমকে আরো উন্নত ও সুদক্ষ করা যায় । তখন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় । সমাজ অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত হয় । তখন অতিরিক্ত জনসংখ্যা ( উদ্বৃত্ত শ্রম ) বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হয় । অর্থাৎ মানুষই সম্পদ – মনুষ্য সম্পদ ।
মূল প্রতিপাদ্য বিষয় : মার্কসের জনসংখ্যা তত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় হলো ( 1 ) উদ্বৃত্ত শ্রম ঃ ধনতান্ত্রিক কাঠামোতে শ্রমিক পক্ষ শ্রমকে পুঁজি করে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটিয়ে এক সময় অপ্রয়োজনীয় হয় ; কর্মসংস্থানের অভাব হয় ; প্রচুর কর্মক্ষম মানুষ বেকার ও ছদ্ম বেকারে পরিণত হয় । ( 2 ) জন বৃদ্ধিহার অধিক পুঁজিবাদী কাঠামোয় মালিক পক্ষের শ্রমিক স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকার জন্য শ্রমিক শোষিত হয় ও জনবৃদ্ধির হারকে বেশী করে দেখানো হয় । ( 3 ) জমির বহন ক্ষমতার হ্রাস : পুঁজিবাদী ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জমির সর্বাধিক বহন ক্ষমতাকে কাজে লাগানো হয় না ; তখন জনসংখ্যা স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে জনাধিক্য দেখানো হয় , যাতে মালিক পক্ষের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে ।
মার্কসতত্ত্বের সমালোচনা : মার্কসের জনসংখ্যা তত্ত্ব তাত্ত্বিক ; বাস্তব ভিত্তিতে তা অনেক ত্রুটিপূর্ণ । যেমন ( 1 ) পুঁজিবাদী দেশের বেকারত্বঃ মার্কসের জনসংখ্যা তত্ত্ব সবক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয় । তাই ব্রিটেন , ফ্রান্স , যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনতান্ত্রিক কাঠামোতেও বেকারত্ব দেখা যায় ।
( 2 ) প্রজনন স্বাভাবিক ক্ষমতা : মানুষের প্রজনন ক্ষমতা ও ইচ্ছা স্বাভাবিক এক প্রাকৃতিক বিষয় , যা কোন তাত্ত্বিক নেতার মতবাদ নির্ভর নয় । তাই সমাজতান্ত্রিক চীনে জনসংখ্যার চাপ অধিক ।
( 3 ) জনবৃদ্ধি ও মজুরীঃ মার্কস বলেছেন যে জনসংখ্যা বাড়লে শ্রমিক যোগান বেশী হয় বলে মজুরী কমে , বাস্তবে তা দেখা যায় না । শ্রমের যোগান বাড়লেও মজুরীর পরিমাণও ক্রমশ বাড়ছে । ( 4 ) মজুরী ও জন্মহারঃ মার্কস বলেছেন মজুরী বাড়লে জনবৃদ্ধি কমবে ; কিন্তু জনবৃদ্ধিতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রভাব যে খুব গুরুত্বপূর্ণ মার্কস সে সম্পর্কে উদাসীন থেকেছেন । ( 5 ) সর্বত্র প্রযোজ্য নয় : মার্কসের তত্ত্ব ধনতান্ত্রিক কাঠামোতে প্রযোজ্য হলেও সামন্ততান্ত্রিক সমাজবাদী , আদিম শিকারী সমাজ , আদিম খাদ্য সংগ্রাহী সমাজ , যাযাবর সমাজ , আদিম জনজাতি সম্পর্কে এর কোন ভিত্তি নেই । ( 6 ) স্বতোপ্রণোদিত বিষয় কোনো সময় উন্নত অর্থনৈতিক ও উন্নত জীবন ভোগের আশায় মানুষ নিজেই তার পরিবারকে ছোট ও নিয়ন্ত্রিত করে ; সমাজবিজ্ঞানী দম তাঁর Social Capillarity তত্ত্বে এরূপ কথা বলেছেন ।
3. SADLAR- এর জনঘনত্ব ও প্রজনন বৃদ্ধি তত্ত্ব কী ?
Ans: ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ও সমাজ সংস্কারক M.T. Sadiar তাঁর তত্ত্বে কোন স্থানের জনঘনত্বের সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্পর্ক আলোচনা করেছেন । তাঁর মতে যেখানে নাগরিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বেশী সেখানে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে ও প্রজনন প্রবণতা কমবে ।
তত্ত্বের মূল বক্তব্য ঃ স্যাভলার তাঁর তত্ত্বে কয়েকটি প্রতিপাদ্য বিষয় উল্লেখ করেন ; যেমন ( 1 ) কোন স্থানে জনঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে ওই স্থানে মানুষের মোট সংখ্যাগত বৃদ্ধির অনুপাত প্রাকৃতিক উপায়েই কমবে । তখন প্রত্যেকেই উন্নত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হবে ও সেই পর্যায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার কম হবে । ( 2 ) . কোন স্থানে অতীত ও বর্তমানে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে প্রাকৃতিক নিয়মেই ; সেই স্থানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে একই অবস্থায় তাঁদের প্রজনন ক্ষমতা বিপরীতভাবে পরিবর্তিত হয় । ( 3 ) কোন স্থানে মানুষের সুখ – স্বাচ্ছন্দ্য যত বাড়বে ততই শিক্ষা , রুচি , সংস্কৃতি ও চেতনার বিকাশ ঘটবে তখন সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হবে কম ও নিয়ন্ত্রিত । তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নাগরিক স্বাচ্ছন্দা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
4. THOMAS DABLEDAY- এর প্রাকৃতিক জনসংখ্যা তত্ত্ব কী ?
Ans: ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক ঊনবিংশ শতাব্দীতে জনসংখ্যা সংক্রান্ত এক প্রাকৃতিক বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন যা এক ম্যালথাসত্তোর ধারণা ।
তত্ত্বের মূলকথা : ডাবলভে তাঁর প্রাকৃতিক তত্ত্বে উল্লেখ করেন যে খাদ্য সরবরাহের সাথে জনসংখ্যার এক বিপরীত সম্পর্ক থাকে । তাঁর মতে কোন স্থানে যদি খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি পায় তবে ওই স্থানে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে । বা জনবৃদ্ধি হার কম হবে । বিপরীত ক্ষেত্রে কোনো অঞ্চলে যদি খাদ্য সরবরাহ বা খাদ্যযোগান কম হয় তবে উক্ত অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশী হবে ও মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ।
তত্ত্বের অনুমিত ধারণা : ( 1 ) স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতাঃ কোনো জীব প্রজাতি কোন কারণে বিপদগ্রস্থ বা অস্তিত্বের সংকটময় অবস্থায় এলে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক নিজস্ব ক্ষমতা দ্বারা তার প্রজজনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে । যা খাদ্যাভাবজনিত সংকট বা বিপদগ্রস্থ অবস্থায় ঘটে । ঠিক এরুপ প্রাকৃতিক নিয়মে খাদ্যাভাব পীড়িত দরিদ্র জনগণ কবলিত স্থানে জনসংখ্যার বুদ্ধি ঘটে ।
( 2 ) খাদ্যযোগান বৃদ্ধি ও জন্মহার হ্রাস ঃ যে সমাজে খাদ্য যোগান ও সরবরাহ যত বেশী সেখানে সমাজ তত উন্নত সচেতন হয় বলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হয় ও জন্মহার কম হয় ।
( 3 ) মধ্যবর্তী অবস্থা ঃ কোন স্থানে যদি খাদ্য যোগান ও জনসংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে তবে সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার স্থির হয় বা স্থিতাবস্থা বজায় থাকে ।
( 4 ) খাদ্যের প্রকৃতি : ডাবলডে খাদ্যের সরবরাহ ও প্রকৃতির কথা মেনে নিয়ে জনসংখ্যার হ্রাস ও বুদ্ধি সম্পর্কে আধুনিক সমাজবিজ্ঞানী Josuc De Castro বলেছেন :
( 5 ) যে সকল অঞ্চলের অধিবাসীদের খাদ্যে আমিষ পরিমাণ বেশী তাদের প্রজনন হার কম হয় ও সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার কম হয় । যেমন — ইউরোপের দেশসমূহ ।
( 6 ) যে স্থানের লোকেদের খাদ্যে আমিষ কম ও কার্বোহাইড্রেড বেশী সেখানের লোকেদের প্রজনন বেশী বলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারও বেশী । যেমন — এশিয়া , আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কিছু দেশ ।
5. হারবাট স্পেনসারের প্রজনন অক্ষে জনসংখ্যা তত্ত্ব কী ?
Ans: ব্রিটিশ সমাজ দার্শনিক হারবার্ট স্পেনসার জনসংখ্যা সম্পর্কে এক প্রাকৃতিক তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন । তিনি বলেন সামাজিক ও জীবজগতের যা কিছু পরিবর্তন ঘটে চলেছে তা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই হয় । তিনি তাঁর তত্ত্বে বলেছেন যে সমাজ জীবনের জটিলতা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের ইচ্ছাই হলো সমাজে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিয়ামক ।
তত্ত্বের মূল কথা : ( 1 ) যে সমাজে যত বেশী আর্থসামাজিক জটিলতা দেখা যায় সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ততই কম যেমন — শিল্পভিত্তিক আধুনিক সমাজ আর্থসামাজিক জটিলতা ও পারিবারিক সমস্যা ও জটিলতা বেশী বলে সে সমাজে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার কম হয় । যেমন – জার্মানী , ফ্রান্স , সুইডেন প্রভৃতি । অর্থাৎ সামাজিক জটিলতা বেশী জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার কম ।
( 2 ) যে সমাজে আর্থ সামাজিক জটিলতা যত কম অর্থাৎ পারিবারিক ও আর্থ – সামাজিক সরলতা যত বেশী সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার তত বেশী । যেমন — কৃষিভিত্তিক সমাজে আর্থসামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা ও জটিলতা কম বলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার খুব বেশী হয় ।
উদাহরণ : বাংলাদেশ , থাইল্যান্ড , ভারতের কিছু অংশ । অর্থাৎ — আর্থ – সামাজিক জটিলতা কম — জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার বেশি ।
স্পেনসার তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় : ( 1 ) কোন স্থানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিক নিয়মে আপনা থেকেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার কমতে থাকবে । ( 2 ) অধিক জনসংখ্যা যুক্ত অঞ্চলের মানুষ তখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছায় যে তারা অধিক বংশবৃদ্ধি অপেক্ষা ব্যক্তিগত , সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে যত্নবান হওয়ার সাথে সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারকে কমাতে থাকবে । ( 3 ) অধিক জনসংখ্যা যুক্ত অঞ্চলের লোকদের মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও সন্তান উৎপাদন পরস্পর বিরোধী প্রক্রিয়া হিসাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার কমবে । ( 4 ) কোন স্থানের মানুষ যখন নিজেদের ব্যক্তিগত আশা আকাঙ্খা চরিতার্থ করার দিকে বেশী নজর দেবে সেখানের লোকেরা ততই কম সন্তান উৎপাদনে আগ্রহী হবে । তখন সেখানে জনসংখ্যা বুদ্ধি হার কমবে । ( 5 ) মানুষ বিশেষত মেয়েরা যখন কোন স্থানে নিজেদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে যত বেশী সময় দেবে ততই তাঁদের প্রজনন ক্ষমতা কমবে ও আগ্রহ কমবে । সেখানে সামাজিক বিবর্তন বেশী হবে বলে প্রজনন ক্ষমতা কম হবে ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ততই ধীর হবে । ( 6 ) যে সকল স্থানের লোকেরা যত বেশী শিক্ষিত হচ্ছে সেখানে ততই সচেতনতা বাড়বে ; বুচি রোজগারের ব্যবস্থা দেখে বিয়ে করছে বলে বিবাহ বিলম্বিত হচ্ছে । ফলে প্রজনন হার ও সময়কাল দুইই কমছে বলে সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার কমছে ।
6. হ্যানরী জর্জ এর জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদন তত্ত্ব কী ?
Ans: আমেরিকান অর্থনৈতিবিদ হ্যানরী জর্জ ম্যালথাস তত্ত্বের সমালোচনায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদন বিষয়ক তত্ত্ব প্রকাশ করেন ।
হ্যানরী জর্জ তত্ত্বের মূলকথা : হ্যানরী জর্জ তাঁর তত্ত্বে বলেছেন যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করবে না । 100 ভূগোলিকা মানব সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে ঠিক সেই অনুপাতেই খাদ্য উৎপাদন হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাঁর মতে খাদ্য উৎপাদন তখনই ব্যহত হবে যখন কৃষিজমি মুষ্টিমেয় কয়েক জনের হাতে কুক্ষিগত হবে । এই প্রসঙ্গে হ্যানরী জর্জ সঠিকভাবে ভূমি সংস্কার করে জমির সঠিক বন্টনের ওপর অধিক জোর দেন । জমির সঠিক কর ধার্যের পক্ষে তিনি মত পোষণ করে বলেন যে অতিরিক্ত কর ধার্য যাতে না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে । জমির মালিকানাস্বত্ব কৃষকদের দেওয়ার ওপর তিনি অধিক জোর দেন । তখন কৃষক তার নিজের জমিতে অধিক পরিমাণ যত্ন নেবে , ফলে কৃষিজ ফসল উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে প্রচুর । এরুপ অবস্থার জনসংখ্যা বাড়লেও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা আর কোন সমস্যা বলে গণ্য হবে না ।
হ্যানরী জর্জের অনুমিত ধারণা : হ্যানরী জর্জ তাঁর তত্ত্বে কয়েকটি ধারণার কথা বলেন ।
যেমন ( i ) মানুষের বুদ্ধি বৃত্তির যত বিকাশ ঘটবে সেখানে ততই প্রজনন ইচ্ছা কমবে এবং ফলস্বরূপ জন্মহার কম হবে । ( ii ) কোন স্থানের মানুষের দুঃখ – দুর্দশা কমে যত বেশী স্বাচ্ছন্দ্য আসবে সেখানে মানুষের প্রগতি দ্রুত আসবে ও জনসংখ্যা হার তত কমবে । ( iii ) কৃষকদের হাতে জমি দিয়ে কর কম করে করনীতির ব্যস্তবায়ন ঘটালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে । ( iv ) ১৮৭৯ সালে হ্যানরী জর্জের এতদ সংক্রান্ত রচনা প্রকাশের সাথে সাথে জনগণের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ জাগ্রত হয়ে ইউরোপের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আসতে শুরু করে ।
( v ) জন্ম নিরোধক ব্যবস্থার নিক পদ্ধতির প্রয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে ; যা পশ্চিমের দেশে দেখা যায় ।
7. এরসেন ডুমন্ট এর সামাজিক কৈশিকতা তত্ত্ব কী ?
Ans: ফরাসী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডুমন্ট ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ফরাসী জনসংখ্যা পরিবর্তনের ধারা দেখে তাঁর সামাজিক কৈশিকতা তত্ত্ব বর্ণনা করেন । ডুমন্ট তত্ত্বের মূলকথা : মানুষ যতই তার অবস্থার পরিবর্তন করে উচ্চস্তরে উঠতে থাকে ততই তার বংশবৃদ্ধির প্রবণতা কমতে থাকে । তাই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে উচ্চস্তরে উন্নীত হলে জনসংখ্যাবৃদ্ধি হার কম হবে ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হবে ।
অনুমিত ধারণা : মানব সমাজের পরিবর্তন ঘটে উচ্চস্তরে উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে শারীরিক কৈশিকতার সাদৃশ্য থাকে । তখন মানুষ ওপরে উঠে স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে বিচ্যুত হলে বংশবৃদ্ধির উৎসাহ কম হবে ; জনসংখ্যা বৃদ্ধিও কমবে । ( ii ) মানুষ যত ওপরে উঠবে ততই তার পারিবারিক জীবনের আকাঙ্খা কমবে । তখন বংশবৃদ্ধির প্রবণতা কমবে ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হবে । ( iii ) ডুমন্ট বলেছেন যে শারীরিক জগতের সাথে সামাজিক কৈশিকতারও সম্পর্ক রয়েছে , তার কারণেই মানুষের এক শ্রেণী অন্য শ্রেণীতে উত্তরণ ঘটে ; তখন জন্মহারের নিম্নগতি লক্ষিত হয় । ( iv ) যখন মানুষের ব্যক্তিগত উন্নতি ঘটে তখন জন্মহারের নিম্নগতি ও বিপরীত ক্ষেত্রে তার বিপরীত অবস্থা দেখা যায় । অর্থাৎ ব্যক্তি মানুষের উন্নয়নের সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এক সম্পর্ক রয়েছে । যে সকল দেশে সামাজিক স্তর বিন্যাস বেশী বা জাতিপ্রথা বেশী সেখানে সামাজিক কৈশিকতার প্রভাব কম বলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি দ্রুত হয় । যেমন — ভারত , বাংলাদেশ । ( vi ) যে সকল স্থান বা দেশের জনগণের মধ্যে যত বেশী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে তত বেশী সামাজিক কৈশিকতার প্রভাব থাকবে । তখন সেখানে জন্মহার দ্রুত কমতে থাকবে । যেমন— পশ্চিমী দেশ সমূহে এই অবস্থা দেখা যাচ্ছে । ( vii ) যে সকল স্থানের সমাজে মানুষদের মধ্যে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে যাবার সম্ভবনা বেশী ও বাধা কম সেখানে ব্যক্তিগত উন্নতির চরম প্রকাশ দেখা যায় । যখন পর্যায়ক্রমিক ধাপে মানুষেরা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে যেতে থাকে তখন তারা অধিক ব্যস্ত থাকে । এই অবস্থায় তারা সংসার প্রতিপালনের সময় কম পায় । ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে না । জন্মহার বৃদ্ধি পায় না । জনসংখ্যা থাকে নিয়ন্ত্রিত ।
যেমন — উত্তর পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহ ।
মূল্যায়ন : এই তত্ত্ব প্রভাবের কোন প্রমাণ নেই । তবে জাতীয় জনসংখ্যা প্রবাহ নির্ধারণ ক্ষেত্রে সমাজে স্বাধীন চিন্তাধারার প্রয়োজনীয়তা ক্ষেত্রে তাঁর তত্ত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ফলে প্রজনন কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে । কম সন্তান সম্পর্কে কি সুবিধা পাওয়া যায় তা জনমনে সচেতনতা নিয়ে আসে ।
8. জনসংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে ADOPH LANDRY এর তত্ত্ব কী ?
Ans: ADOPH LANDRY জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে এক বিকল্প শ্রেণীতে ভাগ করেন , যাতে তিনি জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবস্থার প্রভাবের ওপর জোর দেন । তিনি তাঁর জনসংখ্যা বৃদ্ধির তত্ত্বকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেন । যেমন
১। অদিম জনসংখ্যা অবস্থা :
মূলকথা : এই পর্যায়ে বলা হয় মানুষ যখন তার নিজস্ব সর্বনিম্ন অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য সংগ্রাম করে তখন জনসংখ্যা পরিস্থিতি যে অবস্থায় থাকে তাকে ওই দেশের আদিম জনসংখ্যা অবস্থা বলে ।
বৈশিষ্ট্য ঃ ( i ) তাঁর মতে খাদ্যশস্যের যোগান বাড়লে ওই দেশে তখন জনসংখ্যাও বাড়বে । ( ii ) এই অবস্থায় বর্ধিত জনসংখ্যার কারণে মানুষের জীবনযাপন মান নেমে যায় । ( iii ) এই অবস্থায় মৃত্যুহার ও জন্মহার দুই বেশী থাকে । ( iv ) খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহের ওপর সে দেশের জনসংখ্যার আয়তন নির্ভর করে । ( v ) Landry এর মতে মৃত্যুহারের সাথে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে । যা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে খাদ্য সরবরাহ কম হলে সেখানে মৃত্যুহার বাড়বে ।
যেমন — অনুন্নত দেশগুলোতে এরূপ অবস্থা দেখা যায় ।
মাধ্যমিক জনসংখ্যা অবস্থা :
মূলকথাঃ যে অবস্থায় কোন দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল থাকে না তখন ওই অবস্থাকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমিক অবস্থা বলে । এই অবস্থায় সাধারণ মানুষসহ সমগ্র সমাজ এক নির্দিষ্ট জীবনযাপন মানে পৌঁছায় ।
বৈশিষ্ট্যঃ ( i ) এই অবস্থায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার নির্ভর করে বিবাহের হারের ওপর । ( ii ) এই অবস্থায় মানুষের উচ্চতর জীবন প্রণালীর আগ্রহ থাকে । তবে অধিক জনবৃদ্ধি তার বাধা হয়ে দেখা যায় । ( iii ) কোন দেশের জনসংখ্যা আয়তন নির্ভর করে দেশের অর্থিক উৎপাদনের ওপর । ( iv ) দেশের আর্থিক উৎপাদন বৃদ্ধি সে দেশের জনগণের জীবনযাপন মানকে উন্নত করে ।
( v ) উন্নত জীবনযাপনের উন্নত মান ধরে রাখার জন্য মানুষ বেশী সন্তান উৎপাদন করে যার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে । যেমন — উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এরুপ অবস্থা ঘটে ।
৩। আধুনিক জনসংখ্যা অবস্থা : • মূলকথাঃ এই অবস্থায় জনসংখ্যা বিবর্তনের চরম স্তরে পৌঁছায় । তবে এই স্তরে জনসংখ্যা খুবই কম হারে বাড়তে থাকে ।
বৈশিষ্ট্যঃ ( i ) এই অবস্থায় জন্মহার কমতে থাকে । ( ii ) উন্নত প্রযুক্তির দরুণ খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও তা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে না । ( iii ) এই অবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে মানুষ উন্নত স্তরে পৌঁছে তবে তা জনসংখ্যা বৃদ্ধির সহায়ক হয় না । যেমন — উন্নত দেশগুলোতে এই অবস্থার জন্য জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে না ।
9. CHRISTALER- এর কেন্দ্রীয় স্থানতত্ত্ব কী ?
Ans: জার্মান ভূগোলবিদ ক্রিস্টেলার ১৯৩৩ সালে তাঁর পুস্তক ‘ Central place in southern Ger many ” তে বেভেরিয়া অঞ্চলের পৌরবসতির অবস্থানের ওপর নির্ভর করে Central Place Theory ‘ প্রকাশ করে ।
মূলকথা : কেন্দ্রীয় স্থান হলো কোন বৃহৎ নগরের কেন্দ্রবর্তী স্থান । ওই স্থানে জমির মূল্য বেশী হয় । এখানেই শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রীভব ঘটে শিল্পকর্মরত শ্রমিক ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষজন এখানে বসবাস করে এখানেই আমদানী যোগ্য দ্রব্য সঞ্চিত হয় ও রপ্তানীযোগ্য সম্পদ এখান থেকেই বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় ।
প্রতিপাদ্য বিষয় : ক্রিস্টেলারের কেন্দ্রীয় স্থানতত্ত্বের প্রাথমিক অনুমানগুলো হল ( i ) সমঅঞ্চল : ভূ – প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে তিনি সমঅঞ্চলের কথা বলেন , যেখানে কোন বসতি অন্য কোন বসতি অপেক্ষা বাড়তি কোন সুবিধা ভোগ না করে । ( ii ) অর্থনৈতিক কাজকর্ম : এই স্থানে প্রাথমিক পর্যায়ে কোন অর্থনৈতিক কাজ থাকে না , এখানের মানুষজন তখন কৃষি ও সম্পদ আহরণজনিত কাজে নিয়োজিত থাকবে না । ( iii ) জনগোষ্ঠীর বন্টনঃ এই স্থানে চাহিদা সমন্বিত একটি জনগোষ্ঠী বন্টন সর্বত্র সমান হবে । ( iv ) যানবাহনহীন প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় স্থানে কোন যান্ত্রিক যানবাহন চলবে না । ( v ) সম আয় ও চাহিদা : এই স্থানের অধিবাসীগণের আয় ও চাহিদার মান প্রায় সমান হয় ।
ক্রিস্টেলারের ‘ K ‘ ধ্রুবকের ধারণা ঃ ক্রিস্টেলার তাঁর কেন্দ্রীয় স্থানতত্ত্বের কয়েকটি কার্যক্রম তৈরী করেন । এই কার্যক্রমে কোন বসতিকে সেবা দিতে সক্ষম তার মনকে তিনি ‘ K ‘ ধ্রুবক দ্বারা নির্ণয় করেন । এই ‘ K ’ ধ্রুবককে ধরে কেবল মানের প্রভেদ ঘটিয়েই তিনি নানান সূত্র তৈরী করেন ( i ) তাঁর মতে বাজার সংক্রান্ত ‘ K এর মান 3 – 9 – 27 প্রভৃতি হয় । ( ii ) পরিবহন সংক্রান্ত ‘ K ‘ এর মান ৪ হয় । ( iii ) প্রশাসনিক সংক্রান্ত ‘ K ‘ এর মান 7 হয় ।
এলাকা : তিনি তাঁর তত্ত্বে দুটো এলাকার কথা বলেছেন –
( i ) Threshold area এই এলাকাতে জনগণ তাদের যাবতীয় প্রয়োজনীয় দ্রব্য হাতের কাছে পেয়ে থাকে । ( ii ) Range area এই এলাকা হলো পণ্যদ্রব্য পরিবাহিত হওয়ার পরিসীমা এই স্থানে অবাধ বিপনন কেন্দ্র মানুষজন যাতে সকল পণ্যদ্রব্য সহজে নিয়ে আসতে পারে ।
তত্ত্বের ত্রুটি : ( i ) বাস্তব ক্ষেত্রে সমধর্মী অঞ্চলের অস্তিত্ব দেখা যায় না । ( ii ) ভূমির বন্ধুরতা ও পরিবহন এর পরিবর্তন তাঁর ষড়ভূজাকৃতি বিন্যাসের প্রতিকুলতা সৃষ্টি করে । ( iii ) যান্ত্রিক যানবাহনহীন কেন্দ্রীয় স্থান বাস্তবে দেখা যায় না ।। ( iv ) কলিপয় স্থানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থাকবে না তা আসলে সম্ভব নয় । ( v ) বিভিন্ন চাহিদা সম্বলিত একটি জনগোষ্ঠীর বন্টন সর্বত্র সম্ভব নয় । ( vi ) কল্পিত অঞ্চলের সকল মানুষের আয় ও ব্যয় করার সমান ক্ষমতা হবে তা কখনোই সম্ভব নয় ।
10. কৃষিবিপ্লব ও ব্যবসাতত্ত্ব কী ?
Ans: কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও বংশগতিকে কাজে লাগিয়ে হঠাৎ করে ও কম সময়ে অধিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়াকেই বর্তমানে সবুজ বিপ্লব বা কৃষিবিপ্লব বলা হয় । কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়াকে আমেরিকান বিজ্ঞানী ড . উইলিয়াম গাউড প্রথম সবুজ বিপ্লব বলেছেন । পরে এই সবুজ বিপ্লব প্রক্রিয়াকে সফলতম রূপ দেন জন্মসূত্রে নরওজীয় তবে মার্কিন বিজ্ঞানী নরম্যান বোরলগ তাঁর উচ্চ ফলনশীল সংকর প্রজাতির বীজ আবিস্কারের মাধ্যমে । যার ফলে পৃথিবী জুড়ে ফসল উৎপাদনের মাত্রা অধিক বৃদ্ধি পেয়ে খাদ্যসংকট দূর হয় । সবুজ বিপ্লবের চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়ায় অত্যধিক সার প্রয়োগ , কীটনাশক , মৃত্তিকা শোধক প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ । পরবর্তী ক্ষেত্রে অধিক রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগের ফল দাঁড়ায় মারাত্বকভাবে । যার অনিবার্য ফল দেখা দেবে মানব অস্তিত্বের সংকট ।
কুপ্রভাব :
১। মৃত্তিকায় অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা দিচ্ছে যেমন— ( ক ) কৃষিজমির লবণতা বেড়ে যাচ্ছে , যাতে উদ্ভিদ মাটি থেকে তার প্রয়োজনীয় অনুখাদ্য ও জল অধিশোষণ করতে পারছে না । ( খ ) উচ্চ ফলনশীল ফসল চাষে ও বারবার ফসল চাষে অধিক সেচের কারণে মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে । ( গ ) অধিক সেচের ফলে মাটির অম্লত্ব বাড়ছে । ( ঘ ) সেচকার্যে অধিক জল তুলে নেওয়ার ফলে জলস্তর নেমে যাচ্ছে । ( ঙ ) মৃত্তিকা শোধনকারী পদার্থ প্রয়োগের ফলে মাটির প্রচুর প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি মারা গিয়ে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে ।
২। মাটিতে রাসায়নিক দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে । বিভিন্ন ফসল ওই ক্ষতিকারক পদার্থগুলো অধিশোষণ দ্বারা তাদের ডাল , কাণ্ড , পাতা , ফলে সঞ্চয় করছে । উক্ত ফসল ও শাক – সব্জির খাদ্য হিসাবে গ্রহণের ফলে মানুষসহ সকল প্রাণীদেহে জীব কেন্দ্রীভবন ও জীববিবর্ধন দ্বারা তাদের দেহে সঞ্চয়ে বিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছে ।
৩। অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে জমিতে প্রচুর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করার ফলে মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা ও উৎপাদিকা শক্তি নষ্ট হচ্ছে । একসময় অনিবার্য ফল হিসাবে দেখা যাবে যে সার ছাড়া আর কোন ফসল উৎপাদন সম্ভব নয় । যেমন — বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে পাঞ্জাব লাঙলের ফলা মাটি পায় । না । ৬-৭ ইঞ্চি পর্যন্ত সারের বজ্র দ্বারা আস্তরণে মাটি আবৃত ।
ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি অথবা রোগের প্রকোপ বৃদ্ধিঃ সবুজ বিপ্লবের ফলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এক চরম মিথ্যাচারিতা । অধিক রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে ফসল উৎপাদন মাত্রা বাড়ানো গেলেও এক সময় তা ফসলের গা সওয়া ( সেচুয়্যাটেড ) হয়ে গেলে তা আর সম্ভব হবে না । উৎপাদন বৃদ্ধির মাত্রা অনন্ত নয় ; এক সময় তা স্থির হবে । পরন্তু মাটি অধিক রায়াসনিক দূষণের শিকার হবে । তখন উক্ত অঞ্চলের মানুষ , গবাদি পশু , মাছ সকলেই বিভিন্ন রোগের শিকার হবে ।
যেমন — আজ ভারতের অন্যান্য অঞ্চল অপেক্ষা অধিক সবুজ বিপ্লব কার্যকরী অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বেশী — পাঞ্জাব ।
জিন শস্য ও রোগের প্রকোপ : বর্তমানে সমগোত্রীয় শস্যের জিনকে কাজে লাগিয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির নতুন কৌশল প্রচলিত হচ্ছে । এর ফলেও সাময়িক উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে বটে তবে তারও অনিবার্য ফল রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি । কানাডার বিজ্ঞানীগণ এ বিষয়ে সতর্কবাণী দিয়েছেন । এই জিন শস্যের উৎপাদন হিসাবে গাইকোজেট , গ্লুফোসোনট প্রভৃতি অধিবিষের এক উদ্যোগজনক পরিস্থিতির কারণ । ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে ।
( i ) মাতৃগর্ভস্থ ভ্রুণের রোগ , অস্বাভাবিক বৃদ্ধি , ক্ষয় , বিকৃতি প্রভৃতি দেখা যাচ্ছে । ( ii ) মাতৃরস্ত দূষণগ্রস্থ হচ্ছে , গর্ভমূলের ক্ষতি হচ্ছে । ( iii ) শিশু মৃত্যু , অকাল মৃত্যু , বিকলাঙ্গতা , অন্ধত্ব , বন্ধ্যাত্ব দেখা যাচ্ছে ।
জিন শস্যের গ্রহণ যোগ্যতাঃ জিন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফসল উৎপাদন সাময়িক বাড়ানো গেলেও তা গুণমানে অনুন্নত নয় রোগগ্রস্থও বটে । খাদ্যগুণ কম । কালোরির পরিমাণও কম । ফলে এর গ্রহণযোগ্যতা বেশী নয় । তাই এই ফসল খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের মাত্রা নগণ্য । সব্জি হিসাবে এর গ্রহণ যোগ্যতা আরও কম । বর্তমানে পৃথিবীর অনেক বিজ্ঞানী জিনশস্যকে মানুষের জন্য উপযোগী নয় বলে মনে করতে পারেন ।
জিনশস্য জীববৈচিত্র্য , ফসল বৈচিত্র্য সংহারকঃ সবুজ বিপ্লব ও জিনশস্য চাষের ফলে প্রচুর কীটনাশক , মৃত্তিকা শোধক , রাসায়নিক বিষ প্রয়োগের ফলে বহু জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে । তাছাড়া মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব হলো প্রচুর দৈশীয় ফসল বৈচিত্র্য । চিরতরে বিলুপ্ত হচ্ছে । যেমন — উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের ফলে ভারত বর্তমানে ৭০ রকম প্রজাতির ধান অবলুপ্ত হয়েছে । যাদের খাদ্যগুণ ছিল অনেক বেশী ।
কৃষি বিপ্লব অথবা ব্যবসা বিপ্লব ঃ কৃষি বিপ্লব আসলে এক চরম ভাঁওতা ; যা প্রকারান্তরে কিছু স্বার্থন্বেষী বাণিজ্যিক বহুজাতিক গোষ্ঠীর কলা কৌশল । যেমন — বিটি বেগুন অথবা বিটি তুলো চাষের কথাই ধরা যাক । এরূপ ফসল চাষের ফলে সাধারণ চাষের থেকে ১০ গুণ বেশী সার দরকার ; বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ রোধ করতে দরকার প্রচুর কীটনাশক ; এইরূপ ফসল চাষে কিনতে হবে বছর বছর বীজ ( অথচ দেশীয় বেগুন চাষে ওই ফসলের বীজ থেকেই গাছ জন্মে ) । ফলে ব্যবসা বাড়বে তরতর করে । আসলে এই জিন শস্য হিসাবে বাণিজ্যিক সংস্থার ব্যবসা বৃদ্ধির এক আবিষ্কার । তাই বিটি ফসল বা জিন শস্য চাষ এবং সবুজ বিপ্লব যদি বিজ্ঞানের আবিস্কার হয় তবে তাকে বিজ্ঞানের কুসংস্কার বলা যেতে পারে । কেননা বিজ্ঞান তো কেবলই আবিষ্কার নয় ; তার দীর্ঘস্থায়ী কল্যাণকর গুণও থাকা জরুরী । তাই জিনশস্য চাষ ও সবুজ বিপ্লব নিছকই এক বাণিজ্যিক বিষয় ; তাকেই বিজ্ঞান বলা যায় না । এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান ও একমাত্র সহায় হবে জৈবকৃষি ব্যবস্থা । —কানাইলাল মণ্ডল
11. FUNDAMANTAL CONCEPTS IN GEOMORPHOLOGY কী ?
Ans: W.D. Thornbury ভূমিরূপবিদ্যার ধারণাগুলিকে 10 টি মৌলিক তত্ত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন । এগুলি হল –
ধারণা -1 : পৃথিবীর ভূ – ত্বকে যে সমস্ত ভূ – প্রাকৃতিক শক্তিগুলি বর্তমানে কাজ করে চলেছে এবং ভূমিরূপের পরিবর্তন সাধন করছে সেগুলি সুদূর অতীত থেকে একইভাবে কাজ করে চলেছে , হয়তো তাদের তীব্রতা বা কাজের ব্যাপ্তি বর্তমানের মতো ছিল না ।
ধারণা 2 : ভূমিরূপের বিবর্তনে শিলা গঠনের ব্যাপক প্রভাব আছে ।
ধারণা -3 : পৃথিবীর প্রতিটি ভূ – বিবর্তনকারী শক্তি ভূমিরূপের ওপর নিজস্ব ছাপ রাখে এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের ভূমিরূপগোষ্ঠী তৈরী করে ।
ধারণা -4 : পৃথিবীতে দীর্ঘদিন যাবত ভূ – বিবর্তনকারী শক্তি ভূ – পৃষ্ঠে রাজ করলে পর্যায়ক্রমিক ভূমিরূপ তৈরী করে ।
ধারণা -5 : ভূমিরূপের বিভিন্ন কাল ও দৈশিক পরিসর আছে , যার ভিত্তিতে কার্যকরণ সম্পর্কের পরিবর্তন এবং স্থিতাবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয় ।
ধারণা -6 : পৃথিবীর বেশীরভাগই ভূমিরূপের বিবর্তন ইতিহাস জটিল ।
ধারণা 7 : পৃথিবী পৃষ্ঠের বেশীরভাগ ভূমিরূপগুলি টার্নিয়ারী যুগের থেকে নবীন ও প্রায় সবই প্লিস্টোসিনযুগের আগে সৃষ্টি হয়েছে ।
ধারণা -৪ : পৃথিবীর প্রত্যেক জলবায়ু নিজ চরিত্রের ভূমিরূপ গঠন করে ।
ধারণা -9 : প্লিস্টোসিন যুগের ভূ – তাত্ত্বিক ও জলবায়ু সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে বর্তমানের ভূমিরূপ সম্পর্কে সঠিক পর্যালোচনা সম্ভব নয় ।
ধারণা -10 : ভূমিরূপবিদ্যা আলোচনায় বর্তমান ভূমিরূপের সঙ্গে পুর্বেকার পরিস্থিতির যোগসাধন হলেই ভূমিরূপের সৃষ্টির ইতিহাস সম্পূর্ণ হয় ।
12. হুদভূমি তত্ত্ব কী ?
Ans: Sir Mackinder ছিলেন একজন প্রখ্যাত ব্রিটিশ ভৌগলিক । 1904 খ্রীঃ তিনি তার Heart Land Toon on ধারণা দেন ।
মূলকথা : ** Who rules east Europe Commands the Heartland . ” * ” Who Rules the Heart Land commands the World Island . ” ” Who Rules the World Island Commands the World . ”
অর্থাৎ , “ যে পূর্ব ইওরোপকে শাসন করে হার্টিল্যান্ডের শাসনকারীও সে । ” “ যে হার্টল্যান্ড শাসন করে সে পৃথিবীর সমস্ত দ্বীপের শাসক । ” “ যে সমস্ত দ্বীপের শাসক সে বিশ্ব শাসন করে । ”
মূল ধারণা : ম্যাকাইভার তার তত্ত্বকে আলোচনার জন্য তিনি বিশ্বকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করেন । যথা— ( A ) হার্টল্যান্ড বা প্রিভট অঞ্চল । ( B ) অর্ধচন্দ্রাকৃতি অঞ্চল । ( C ) বহিঃ চন্দ্ৰাকৃতি অঞ্চল ।
( A ) হার্টল্যান্ড বা প্রিভট অঞ্চলঃ ইওরেশিয়াকে ম্যাকিনডার Heartland বলে চিহ্নিত করেন । কারণ এই অঞ্চলটি একটি প্রাকৃতিক দূর্গ । এই অঞ্চলটি পূর্বদিকে ভগ্না নদী থেকে দক্ষিণে হিমালয় , পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল অঞ্চল থেকে উত্তরে সুমেরু সাগরের তীর পর্যন্ত বিস্তৃত । এই অঞ্চলের তিনটি বৈশিষ্ট্য হল ( i ) অঞ্চলটি ইওরোপ মহাদেশের দ্বিগুণ । ( ii ) পৃথিবীর মধ্যস্থানে অঞ্চলটি অবস্থিত । ( iii ) অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ ।
( B ) আন্তঃ অর্ধচন্দ্রাকৃতি অঞ্চল ( Inner Crescent Area ) : পশ্চিম ইওরোপ , দক্ষিণ এশিয়া , পশ্চিম এশিয়া নিয়ে এই অন্তঃ অর্ধচন্দ্রাকৃতি অঞ্চলটি হার্টল্যান্ডকে ঘিরে রাখে । এখানকার নদীগুলি আটলান্টিক , ভূমধ্যসাগর ও ভারত মহাসাগরে পড়েছে । অর্থাৎ এখানকার জলনির্গম অভ্যন্তরীণ নয় ।
( C ) বহিঃ চন্দ্ৰাকৃতি অঞ্চল ( Outer Crescent Area ) : উত্তর আমেরিকা , দক্ষিণ আমেরিকা , দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত । সমুদ্রশক্তির জন্য এই অঞ্চলটি পরিচিত । এই অঞ্চলটি আন্তঃ অর্ধচন্দ্রাকৃতি অঞ্চলের বর্হিঅংশ ।
সুবিধা । ম্যাকিনডারের হৃদভূমি তত্ত্ব সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রেক্ষাপট আলোচনার পরিধি ও ক্ষেত্রের মধ্যে একটি সংযোগ রক্ষা করে ।
অসুবিধা : ( i ) ম্যাকিনডার সমুদ্রশক্তির উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন । ( ii ) তিনি বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার ভূমিকাকে কোন গুরুত্ব দেননি । ( iii ) ম্যাকিনডারের কতকগুলি কল্পিত ধারণা বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন ধারণার ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে সঙ্গতি বজায় রাখতে অসমর্থ থাকায় তার তত্ত্ব ধীরে ধীরে প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে ।
13. প্রাত্তভূমি তত্ত্ব কী ?
Ans: ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মার্কিন ভূ – রাজনীতিবিদ Nicholas Spykman , তাঁর The Geography of the Peace ‘ গ্রন্থ ‘ Rimland Theory প্রদান করেন ।
মূল ধারণা : স্পাইকম্যান তাঁর ‘ Rimland Theory কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কতকগুলি ধারণা দেন । যথা –
- i) স্পাইকম্যান প্রথমেই ম্যাকিনডারের হৃদভূমি ইওরেশিয়ার বিরোধিতা করেন । কারণ এই অঞ্চলের জলবায়ু মহাদেশীয় এবং জনবসতি ও কৃষি উন্নয়নের অনুপযোগী । এছাড়া অঞ্চলটি একমাত্র একটি রেলপথ ( পশ্চিমে উইরি ব্যালেন থেকে পূর্বে ভ্লাডিভোস্টক ) ছাড়া সার্বিক যোগাযোগ বিন্যাস অনুন্নত । তাই অঞ্চলটি বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে অক্ষম ।
ii ) স্পাইকম্যানের মতে পশ্চিম গোলার্ধের তুলনায় পূর্ব গোলার্ধের অর্থাৎ ইউরেশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ , জনশক্তি ও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে , যা উম্ন উপকূলীয় অঞ্চল বরাবর অবস্থিত এবং এর বিস্তৃতি উত্তর – পশ্চিম ইওরোপ থেকে দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ।
iii ) স্পাইকম্যান বলেন , ইওরেশিয়ার রাজনৈতিক কর্তৃত্বের ইতিহাস কেবলমাত্র স্থলশক্তির প্রাধান্যের ইতিহাস নয় । বিশ্বের এই অঞ্চলে সংগঠিত একাধিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সশস্ত্র সংগ্রামে স্থলশক্তি রাশিয়াকে নৌ – শক্তি ব্রিটেনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে সাহায্য করে ।
iv ) স্পাইকম্যানের মতে , “ Who controls the Rimland , rules Eurasia . ” Who rules Eurasia control the destinies of the World . ” অর্থাৎ , “ যে প্রান্তভূমি নিয়ন্ত্রণ করে ইওরেশিয়া সেই শাসন করে , যে ইউরেশিয়া শাসন করে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ সেই করে ” ।
প্রান্তভূমি তত্ত্বের যথার্থতা ও সীমান্তবদ্ধতা ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে Spykman- এর প্রান্তভূমি তত্ত্বের প্রভাব ভূ – রাজনীতি ও ভূ – মণ্ডলীয় রণ কৌশলে একটি বিশিষ্ট স্থান নিয়েছে । কিন্তু প্রান্তভূমি তত্ত্বের অন্তর্গত রাষ্ট্রগুলির রাজনৈতিক বিন্যাস এখনো স্থায়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত হয় । নি । যা এই তত্ত্বের প্রধান দুর্বলতা ।
FILE INFO : তাত্ত্বিক ভূগোল – Theoretical Geography | তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল প্রশ্নোত্তর
File Details:
PDF Name : তাত্ত্বিক ভূগোল – Theoretical Geography | তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল প্রশ্নোত্তর
Price : FREE
Download Link : Click Here To Download
INFO : তাত্ত্বিক ভূগোল (Theoretical Geography) প্রশ্নোত্তর
” ভূগোল (Geography) – তাত্ত্বিক ভূগোল – তাত্ত্বিক ভূগোল – Theoretical Geography “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিভিন্ন শ্রেনীর পরীক্ষা (Class 5, 6, 7, 8, 9, Madhyamik, Class 11, Higher Secondary – HS, College & University Exam) এবং বিভিন্ন চাকরির (WBCS, WBSSC) পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে BhugolShiksha.com এর পক্ষ থেকে ভূগোল পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নো ও উত্তর উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস ভূগোল (Geography) তাত্ত্বিক ভূগোল – তাত্ত্বিক ভূগোল – Theoretical Geography / তাত্ত্বিক ভূগোল সংক্ষিপ্ত ছোট প্রশ্ন ও উত্তর / তাত্ত্বিক ভূগোল (তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Theoretical Geography SAQ / Short Question and Answer / তাত্ত্বিক ভূগোল (তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Theoretical Geography Quiz / তাত্ত্বিক ভূগোল (তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Theoretical Geography QNA / তাত্ত্বিক ভূগোল (তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Theoretical Geography Question and Answer FREE PDF Download ) পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর সফল হবে।
তাত্ত্বিক ভূগোল (তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Theoretical Geography Question and Answer in Bengali
আশা করি এই ” তাত্ত্বিক ভূগোল (তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Theoretical Geography – Biogeography Geography ” পোস্টটি থেকে উপকৃত হয়েছেন। স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ডিজিটাল মাধ্যম BhugolShiksha.com । এর প্রধান উদ্দেশ্য পঞ্চম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় এবং গ্রাজুয়েশনের শুধুমাত্র ভূগোল বিষয়কে সহজ বাংলা ভাষায় আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কাছে সহজ করে তোলা।
তাত্ত্বিক ভূগোল (তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Theoretical Geography
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” তাত্ত্বিক ভূগোল (তাত্ত্বিক ভূগোল – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Theoretical Geography ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই আমাদের ভূগোল শিক্ষা – Bhugol Shiksha – BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। ভূগোল বিষয়ে যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইটটি ফলাে করুন এবং নিজেকে ভৌগোলিক তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন , ধন্যবাদ।