ভগৎ সিং এর জীবনী
Bhagat Singh Biography in Bengali
ভগৎ সিং এর জীবনী – Bhagat Singh Biography in Bengali : ভগৎ সিংহের জন্ম একটি জাট শিখ পরিবারে। ভগৎ সিং (Bhagat Singh) এর পরিবার পূর্ব থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল। কৈশোরেই ভগৎ ইউরোপীয় বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে পড়াশোনা করেন এবং নৈরাজ্যবাদ ও কমিউনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপর ভগৎ সিং (Bhagat Singh) একাধিক বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
বিপ্লবী ভগৎ সিং এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । ভগৎ সিং এর জীবনী – Bhagat Singh Biography in Bengali বা ভগৎ সিং এর আত্মজীবনী বা (Bhagat Singh Jivani Bangla. A short biography of Bhagat Singh. Bhagat Singh Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) ভগৎ সিং এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভগৎ সিং কে ছিলেন ? Who is Bhagat Singh ?
ভগৎ সিং (Bhagat Singh) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভগৎ সিং (Bhagat Singh) ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী বিপ্লবী। ভগৎ সিং (Bhagat Singh) ছিলেন এক জাতীয়তাবাদি। ভারতের জাতীয়তাবাদিরা তাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে শ্রদ্ধা করে।
ভগৎ সিং এর জীবনী – Bhagat Singh Biography in Bengali :
নাম (Name) | ভগৎ সিংহ বা ভগৎ সিং (Bhagat Singh) |
জন্ম (Birthday) | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯০৭ (28th September 1907) |
জন্মস্থান (Birthplace) | লয়ালপুর, পাঞ্জাব (ব্রিটিশ ভারত) |
অভিভাবক (Parents) | সর্দার কিসান সিংহ সান্ধু ও বিদ্যাবতী দেবী |
আন্দোলন | ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন |
প্রধান সংগঠন | নওজওয়ান ভারত সভা, কীর্তি কিসান পার্টি ও হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন |
ধর্ম | শিখ ধর্ম |
মৃত্যু (Death) | ২৩ মার্চ ১৯৩১ (23th March 1931) |
মৃতুস্থান (Deathplace) | লাহোর, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত |
ভগৎ সিং এর জন্ম ও পিতামাতা – Bhagat Singh Birthday And Parents :
ভগৎ সিংহের জন্ম পাঞ্জাবের লায়ালপুর জেলার বাঙ্গার নিকটস্থ খাতকর কালান গ্রামের এক সান্ধু জাট পরিবারে। ভগৎ সিং (Bhagat Singh) এর পিতার নাম সর্দার কিসান সিংহ সান্ধু ও মায়ের নাম বিদ্যাবতী।
গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার :
বিপ্লবী ভগৎ সিং ১৯২২ খ্রিঃ গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার পর ভারতীয় রাজনীতিতে দলাদলি ও সাম্প্রদায়িক বিরোধ তীব্র হয়ে উঠেছিল । ১৯২৭ খ্রিঃ নাগাদ এই অস্থিরতা অনেকটা স্তিমিত হয়ে এল । সেই সঙ্গে চারদিকে দাবি উঠল প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের ।
ভারতের দিকে দিকে জেগে উঠল নবজীবনের সাড়া । স্বাধীনতা ভারতবাসীর জন্মগত অধিকার , আমরা চাই স্বাধীনতা ।
সাইমন কমিশন – Simon Commission :
ভারতের রাজনীতি ক্ষেত্রে এই অস্থিরতা লক্ষ্য করে বড়লাট লর্ড আরউইন একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিশন গঠন করার কথা ঘোষণা করলেন ।
এই কমিশনের নাম সাইমন কমিশন । নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন প্রখ্যাত উদারনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট সাংবিধানিক আইন বিশারদ স্যার জন সাইমন । তাঁর নামানুসারেই কমিশনের নাম হয়েছে সাইমন কমিশন ।
সাইমন কমিশন এর সদস্যরা – Saimon Commission Members :
কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন ভাইকাউন্ট বার্নহ্যাম , লর্ড স্ট্র্যাথকোনা , স্টিফেন ওয়েলিস , এডওয়ার্ড ক্যারোগান , মেজর এটলি ও কর্নেল লেনফক্স । কোন ভারতীয়কে এই কমিশনে নেওয়া হয়নি ।
ব্রিটিশ সরকার নিয়োজিত এই কমিশন ১৯২৭ খ্রিঃ ভারতে এলো ।
এই কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল ১৯১৯ খ্রিঃ সংস্কার আইন ভারতে কতটা কার্যকর হয়েছে তা পর্যালোচনা করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে রিপোর্ট পেশ করা । কমিশনে কোন ভারতীয় সদস্য গ্রহণ না করায় ভারতে এই কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হল । কংগ্রেস ছাড়া মুসলিম লিগ সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনের গঠনতন্ত্রের নিন্দা করে ৷
যেখানে কমিশন যাচ্ছে , সেখানেই হচ্ছে হরতাল । লক্ষ লক্ষ কন্ঠে ধ্বনি ওঠে — গো ব্যাক সাইমন ।
গো ব্যাক সাইমন স্লোগান – Go back Simon Slogan :
কলকাতা , বম্বে , মাদ্রাজ সর্বত্রই একই দৃশ্য । ১৯২৮ খ্রিঃ ৩০ শে অক্টোবর কমিশন এলো লাহোরে । সমগ্র পাঞ্জাব সেদিন উত্তাল । কালো পতাকা হাতে কমিশনকে ধিক্কার জানাতে পথে বেরলো বিরাট মিছিল । মিছিলের পুরোভাগে পাঞ্জাবের অবিসংবাদী নেতা লালা লাজপৎ রায় । তিনিও ধ্বনি তুলছেন — গো ব্যাক সাইমন ।
পুলিসবাহিনী তৈরিই ছিল । ইঙ্গিত পেয়ে হিংস্র হায়নার মত ঝাঁপিয়ে পড়ল মিছিলের ওপর । এলোপাথারি চলল লাঠি ।
পুলিশের লাঠির নির্মম প্রহারে প্রবীণ নেতা লালাজির সর্বাঙ্গ রক্তে লাল হয়ে গেল । তবু তিনি অবিচল কন্ঠে ধ্বনি তুলছেন – গো ব্যাক সাইমন সাইমন ফিরে যাও ।
আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে একসময় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন লালাজি । সেই জ্ঞান আর কোন দিনই ফিরে এলো না তার ।
হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল সঙ্গে সঙ্গেই । কয়েকদিন ধরে টানা চলল যমে মানুষে টানাটানি । সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শহীদ হলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নির্ভীক যোদ্ধা লালা লাজপৎ রায় ।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যোজিত হল এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ৷
দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল এই দুঃসংবাদ । বিস্মিত আঘাতে স্তব্ধ হয়ে গেল ভারতবাসী । কিন্তু অন্যায় তারা মুখ বুজে মেনে নিতে রাজি ছিল না ।
সর্বক্ষমতার অধিকারী । হলেই বা ভারতবাসী লালাজির হত্যার বিচার করবার অধিকার তো কেউ ওরা শাসক – পরাধীন কেড়ে নিতে পারে না । স্বাধীনতাকামী তরুণের দল রক্তের অক্ষরে শপথ নিলেন — বিচার আমরাই করব ।
পাঞ্জাবের বীর বিপ্লবী ভগৎসিং , শুকদেব , রাজগুরু , চন্দ্রশেখর আজাদ শপথ নিলেন – লাইফ ফর লাইফ । এছাড়া আর কোন হিসাব আমরা মানব না ।
পুলিসের বড়কর্তা মিঃ স্কটের হুকুমে সেদিন মিছিলের ওপরে আক্রমণ চালিয়ে ছিল পুলিস বাহিনী । তাকেই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে এই অন্যায় কাজের জন্য । মিঃ স্কটের ক্ষমা নেই ।
একমাস পরে ১৭ ই ডিসেম্বর । সেদিন অপরাহ্ন চারটে সাঁইত্রিশ মিনিটের সময় দেখা গেল পুলিস দপ্তরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন ভগৎ সিং , রাজগুরু , চন্দ্রশেখর আজাদ প্রমুখ বিপ্লবীগণ ।
তাঁরা আগেই খবর নিয়ে জেনেছেন , মিঃ স্কটের অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সময় এটাই । সেইজন্য তারা রিভলবার তৈরি রেখে প্রস্তুত হয়েই এসেছেন ।
হঠাৎ দেখা গেল মিঃ স্কট মোটর সাইকেল নিয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে । পলকের মধ্যে রাজগুরুর হাতের অস্ত্র গর্জন করে উঠল -দ্রাম – – দ্রাম – ।
রাজগুরুর অব্যর্থগুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন মিঃ স্কট । তবু নিশ্চিত হবার জন্য এবারে গর্জন করল ভগৎ সিংয়ের হাতের অস্ত্র । গুলিরশব্দ লক্ষ্য করে ছুটে এলেন একজন ইউরোপীয়ান সার্জেন্ট আর মিঃ স্কটের দেহরক্ষী চন্দন সিং ।
চন্দ্রশেখর আজাদ এবার অস্ত্র তুললেন । তার অব্যর্থ গুলিতে মুখ থুবড়ে পড়ল চন্দন সিং ।
হৈ – চৈ চিৎকার চঁাচামেচির মধ্যে কে কোথায় পালিয়ে গেল কেউ তার হদিস পেল না ।
বিপ্লবীদের দুর্ভাগ্য , সেদিন মস্ত বড় ভুল হয়েছিল তাঁদের । গুলিতে সেদিন নিহত হয়েছিলেন একজন পুলিস অফিসার মিঃ স্যান্ডার্স– স্কট নন ।
এরপর যা হবার তাই শুরু হল । তদন্ত আর নির্বিচারে গ্রেপ্তার । সরকার হত্যাকারীর সন্ধানে মরিয়া হয়ে উঠল।
প্রতিবাদে ফুঁসে উঠল বিপ্লবী তরুণের দল । অভিনব উপায়ে তারা সরকারকে তাদের চ্যালেঞ্জের ঘোষণা জানালেন ।
হত্যাকান্ডের চারদিন পরে , ২৯ শে ডিসেম্বর শহরে সর্বত্র এক ইস্তাহার বিলি করা হয়েছে । তাতে বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছেঃ
‘ এতদ্বারা মহামান্য সরকার ও পুলিসবাহিনীকে অবগত করা হচ্ছে যে , তাদের মধ্যে কেউ স্যান্ডার্সের হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলে , হিন্দুস্থান সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান পার্টির সামরিক অধিকর্তার তরফ থেকে তাকে প্রচুর অর্থ পুরস্কার দেওয়া হবে । ‘
কয়েকদিন পরেই ভগৎ সিং চলে এলেন কলকাতায় কিছু অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের জন্য । বিপ্লবের পীঠভূমি কলকাতা । বাংলার বিপ্লবীরা সাদরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন ৷
কিছু অস্ত্রশস্ত্র আর গোটা কতক বোমা নিয়ে ভগৎ সিং ফিরে গেলেন লাহোরে । এবারে তার সংকল্প আরো শক্ত আঘাত হানতে হবে যাতে সাগরের ওপারে শাসকের আসন টলে ওঠে । গোটা সাম্রাজ্য তোলপাড় হয় । বিপ্লবীদের একটাই বীজমন্ত্র , কর্তব্য সাধন কিংবা শরীর পাতন ।
স্বাধীনতা তো হেসেখেলে আসে না । তার জন্য উপযুক্ত মূল্য দিতে হয় । জাতিকে হতে হয় নির্ভয় । বিপ্লবীদের তাই তাদের সবচাইতে প্রিয় জিনিসটিকে বন্ধক রেখেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে হয় । হাসতে হাসতে তারা প্রাণ উৎসর্গ করেন ।
বিপ্লবী মদনলাল এর ইংল্যান্ডের আদালতে :
বিপ্লবী মদনলাল ধিংড়া ইংলন্ডে তার বিচারকালে আদালতে দাঁড়িয়ে বিপ্লবীদের বীজমন্ত্র দৃপ্তকণ্ঠে প্রচার করে বলেছিলেনঃ ” The only lesson required in India at present is to learn how to die and the only way to fetch it is by dieing ourselves . “
বিপ্লবী মদনলাল ধিংড়াই প্রথম শহীদ যিনি বিদেশের কারাগারে ফাঁসির মঞ্চে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ।
সেই আদর্শেই অনুপ্রাণিত ভগৎ সিং । প্রাণ উৎসর্গ করতে হবে অকাতরে । মৃত্যুভয়ে ভীত সাধারণ ভারতবাসীকে জাগিয়ে তুলতে হবে ।
এ পরিকল্পনা রূপায়িত হল ১৯২৯ খ্রিঃ ৬ ই জুন । দিল্লীর অ্যাসেমব্লিতে সেদিন কতকগুলি জরুরী বিল নিয়ে আলোচনা হবে । বিশিষ্ট দর্শকদের মধ্যে রয়েছেন মিঃ সাইমন আর স্পীকার বল্লভভাই প্যাটেল । আলোচনা শুরু হয়েছে এমনি সময়ে দুই বলিষ্ঠ তরুণ গুচ্ছ লাল ইস্তাহার ছড়িয়ে দিলেন গোটা অ্যাসমব্লি হলে । সঙ্গে সঙ্গেই হল প্রচন্ডবিস্ফোরণ – বুমবুম্ম—
ধোঁয়ায় ঢেকে গেল চতুর্দিক । হৈ হৈ চিৎকার চেঁচামেচি । ধোঁয়া সরে গেলে চিৎকার উঠল — কে – কে করেছে এমন কাজ ? হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে ধীর অবিচলিত ভাবে এগিয়ে গেলেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত । তারা জানালেন , ‘ কাউকে হত্যা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয় । তা যদি থাকত তাহলে সাইমন এতক্ষণ ওখানে বসে থাকতে পারতেন না । আমাদের উদ্দেশ্য পাবলিক সেফটি বিলের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো । ‘
” It takes a loud voice to make the deaf hear . Let the government know that while protesting against the public safty and Trade Dispute Bills and call our murder of Lala Lajpat Rai , on behalf – of the helpess Indian mas , we want to emphasise the lesson often repeated by history that it is easy to kill individuals but you can not kill ideas . Great empires crumbled while ideas survive . We are sorry to admit we attach great sancity to human life But the sacrifice of individuals at the alter of great revolution that will bring free dom to all rendering exploitation of man by man impossible in inevitable , Long live Revolution . ”
একটা মাত্র বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গোটা ভারতবর্ষের সঙ্গে তোলপাড় হয়ে গেল ইংলন্ড ।
বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার :
এরপরই শুরু হল ব্যাপক গ্রেপ্তার । একে একে গ্রেপ্তার করা হল শুকদেব , রাজগুরু , যতীন দাস প্রমুখ বিপ্লবীদের । যতীনদাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কলকাতায় । তারপরই তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লাহোরে ।
গ্রেপ্তারের পর পরবর্তীকালে যতীন দাস দীর্ঘ তেষট্টি দিনের অনশনের পরে দেহরক্ষা করে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের যোজনা করেছিলেন ।
১৯২৯ খ্রিঃ ১০ ই জুলাই শুরু হল লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা । প্রধান আসামী ভগৎ সিং , শুকদেব , বটুকেশ্বর দত্ত , রাজগুরু , যতীনদাস প্রমুখ বিপ্লবীবৃন্দ । মোট চব্বিশ জন । তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ — ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং স্যান্ডার্স হত্যা । যতীন দাস চলে গেলেন তেষট্রি দিন অনশনের পরে । ঐতিহাসিক লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় আদালতে ভগৎ সিং যে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছিলেন , সারা দেশ , সারা পৃথিবী সেদিন চমকে উঠেছিল । তিনি বলেছিলেন ,
” Revolution does not necessarily involve santinary strife , not is there only place in it for individual vendetta . It is not the cult of bobs and pistol . By Revolution . we mean that he present order of things which is baesed on manifest in justice must change .
There should be radical change to re – organise the society on a sociolistic basis , so the exploite – tion of man by man or of nation by nation is brought to an end ushering is an era of Universal peace ……
This is our ideal . It ( our warning ) goes unheeded and the present system of Government continues , agrim struggle must ensue to have the way for the consummation of the ideal of revolution . ”
ইনকিলাব জিন্দাবাদ ধ্বনি :
এই বিবৃতির পরেই আর কিছু বক্তব্য আছে কিনা আদালত তা জানতে চাইলে ভগৎসিং দৃপ্তকণ্ঠে ধ্বনি তুললেন “ ইনকিলাব— জিন্দাবাদ –
ইনকিলাব – জিন্দাবাদ – ” সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য অভিযুক্ত বন্দিরা গলা মেলালেন — ইনকিলাব জিন্দাবাদ — বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক ।
বিচার শেষ হল ৭ ই জুলাই লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার প্রথম শুনানী আরম্ভ হয়েছিল । ১৯৩০ খ্রিঃ ৭ ই অক্টোবর দীর্ঘ পনের মাস পরে মামলার রায় বের হয় ।
মাসিক ভারতবর্ষ ( ১৩৩৭ , অগ্রহায়ণ ) পত্রিকায় এই মামলা সম্পর্কে লেখা হয়েছিল :
“ … লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার বিচার আইনের ইতিহাসের দিক দিয়া বিশেষ স্মরণীয় হইয়া থাকিবে , কারণ এই মামলায় দুইবার বিচারক বদলাইতে হইয়াছে । দুইজন বিচারক স্বেচ্ছায় এই মামলা পরিচালনে অস্বীকার করেন এবং বড়লাট লর্ড আরউইনকে তাহার অতিরিক্ত ক্ষমার বলে বিচার শীঘ্র শেষ করিবার জন্য ‘ লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা অর্ডিন্যান্স ’ প্রয়োগ করিতে হয়।
আসামীরা এই অর্ডিন্যান্সের প্রতিবাদকল্পে আদালতে আসিতে অস্বীকার করেন । কিন্তু আইন ও পুলিশ কাহারও জন্য অপেক্ষা করে না । সুস্থ দেহে আদালতে আসার পরিবর্তে , এমনি ঘটনাবিপর্যয় হয় যে , কয়েক জনকে দোলায় চড়িয়া আসিয়া মামলা শুনিতে হইয়াছিল ।
এই প্রহারের ব্যাপারের পর ট্রাইবুন্যালের সভাপতি জাস্টিস কোলস্ট্রিম ও কমিশনার আগা হায়দর এই মামলার সহিত তাঁহাদের সম্পর্ক ছিন্ন করেন । তাঁহাদের শূন্যস্থানে নূতন বিচারক হইয়া আসিলেন জাস্টিস ট্যাপ ও স্যার আবদুল কাদের বিচার শেষ হইল । ”
রায়ের বিরুদ্ধে ভগৎ সিংয়ের পিতা সর্দার করণ সিং প্রিভি কাউন্সিলে আপীল করবার জন্য আদালতে এক আবেদন পেশ করলেন ।
এই কথা জানতে পেরে ভগৎ সিং তাঁর পিতাকে লিখলেন : “ আমার পক্ষ সমর্থনের জন্য আপনি স্পেশাল ট্রাইবুন্যালের বিচারপতিদের নিকট আবেদন করিয়াছেন । এই সংবাদ অবগত হইয়া আমি মর্মাহত হইয়াছি । এই কঠিন আঘাত স্থিরভাবে সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় । আপনার এই আবেদন ভিক্ষা আমার মানসিক শান্তিকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করিয়াছে ।
আপনি আমার জীবনকে যতখানি মূল্যবান মনে করেন , আমি তাহা মনে করি না । আমার আদর্শকে বলি দিয়া আমার প্রাণকে রক্ষা করিবার কোনও প্রয়োজন নাই । আমার বহু সহকর্মীর অবস্থা আজ ঠিক আমারই মত গুরুতর । আমরা সকলে একই আদর্শ গ্রহণ করিয়াছিলাম এবং এতকাল একসঙ্গে পাশাপাশি দাঁড়াইয়া আসিয়াছি । শেষ পর্যন্তও আমরা ঠিক সেই ভাবেই থাকিব । উহাতে আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি যত গুরুতরই হোক না কেন , কোন ক্ষতি নাই ।
পূর্বে আমার যে অভিমত ছিল , আজও তাহা স্থির আছে । আত্মপক্ষ সমর্থন করিলে বোরস্ট্যাল কারাগারে আমার যে বন্ধুগণ বন্দি হইয়া আছেন তাঁহাদের প্রতি আমার বিশ্বাসঘাতকতা করা হইবে । ” ( ট্রিবিউন পত্রিকা থেকে গৃহীত )।
[আরও দেখুন, ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী – Khudiram Bose Biography in Bengali]
বিপ্লবী ভগৎ সিং এর ফাঁসির আদেশ : Bhagat Singh Death Panalty :
জাতীয় বীর ভগৎ সিংয়ের ফাঁসির হুকুম শুনে ভারতবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল । দিকে দিকে আওয়াজ উঠল– ভগৎ সিংয়ের ফাসি হলে আমরা তা সহ্য করব না ।
এই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠল গান্ধী ও বড়লাট লর্ড আরউইনের মধ্যে এক চুক্তির ফলে । এই চুক্তিকে দিল্লি চুক্তিও বলা হয় ।
১৯৩১ খ্রি : ৫ ই মার্চ গান্ধী আরউইন চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরকার ( ১ ) নিপীড়ন মূলক আইন ও অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার করে নেন ( ২ ) হিংসাত্মক কার্যকলাপের অভিযোগে রাজনৈতিক বন্দিদের ছাড়া অন্যান্য সব বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে । ( ৩ ) সমুদ্রতীরে বসবাসকারী অধিবাসীদের নিজেদের প্রয়োজনে লবন তৈরি করা এবং বিলিতী মদ ও বস্ত্রের দোকানে শান্তিপূর্ণভাবে পিকেটিং করা বিধিসম্মত হবে । সরকার স্বীকার করে নেন ( ৪ ) ভারতের প্রতিরক্ষা , বৈদেশিক সম্পর্ক এবং সংখ্যালঘু শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার সব দায়দায়িত্ব সরকারের হাতে রাখা হবে ।
শর্ত অনুযায়ী রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হল । কেবল মুক্তি পেলেন না বিপ্লবীরা ।
৫ ই মার্চ তারিখে চুক্তি স্বাক্ষর করেই গান্ধীজি সিমলা থেকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন , এই চুক্তি সর্বতোভাবে গৃহীত হলে , সহিংস কাজের জন্য যাঁদের ফাঁসির হুকুম হয়ে আছে , তাঁরাও মুক্তি পাবেন বলে তিনি আশা করেন ।
কিন্তু দেশবাসী প্রচন্ড ক্ষোভ ও দুঃখের মধ্যে ২৩ শে মার্চ জানতে পারলেন , দেশবাসীর সকল আবেদন অগ্রাহ্য করে ভগৎ সিং , শুকদেব ও রাজগুরুকে সেদিন লাহোর জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে ।
পরদিনই করাচিতে কংগ্রেসের অধিবেশন শুরু হবার কথা । লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী সেদিন করাচির পথে ।
এর পরের ঘটনা ভগৎ সিংয়ের এক সহকর্মী মুক্তিপ্রাপ্ত অজয় ঘোষ জানিয়েছেনঃ
“ বাইরে এসে সেদিন বুঝতে পারলাম , ভগৎ সিংয়ের মূল্য আমাদের দেশের কাছে কতখানি । তখনকার দিনে যত সভা হত , সেখানে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে শ্লোগান হত– ভগৎ সিং জিন্দাবাদ ।
ভগৎ সিংয়ের নাম তখন লক্ষ লক্ষ লোকের মুখে শোনা যেত , প্রতিটি যুবকের বুকে আঁকা ছিল তাঁরই মূর্তি । আমার বুক আনন্দে ও গর্বে ভরে যেত , যখন ভাবতাম — এমন একজন লোকের সহকর্মী ছিলাম আমি — যাঁকে আমি চিনতাম ।
[আরও দেখুন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী – Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali]
ভগৎ সিং এর ফাঁসি – Bhagat Singh Death Panalty :
… ১৯৩১ খ্রি মার্চ মাস , কংগ্রেসের করাচি অধিবেশনের ঠিক পূর্বে একদিন তাদের ফাসি হয়ে গেল । ভগৎ সিংয়ের বয়স তখন চব্বিশও পূর্ণ হয়নি ।
আমি করাচির পথে এ সংবাদ পেলাম । যারাই শুনল , শিশুর মতই কেঁদে উঠল ৷ আমি বিমূঢ় হয়ে গেলাম ।
একটা ধূমকেতুর মত ভগৎ সিং ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আকাশে ক্ষণিকের জন্য উদয় হয়েছিল । কিন্তু তাঁর এই ক্ষণিক উদয় ব্যর্থ হয় নি । কোটি কোটি লোকের দৃষ্টি ছিল তাঁর ওপর নিবদ্ধ । তাঁরা তাঁর মধ্যে খুঁজে পেয়েছিল নূতন ভারতের আত্মার প্রতীক ।
মরণে নির্ভীক , সাম্রাজ্যবাদী শাসনের উচ্ছেদে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল সে । সে চেয়েছিল আমাদের এই দেশে সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংসাবশেষের উপর গড়ে তুলতে এক স্বাধীন গণতন্ত্রের প্রাচীর।”
ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়ে , ভারতবর্ষে ইনকিলাব জিন্দাবাদ এই মহামন্ত্রের উদ্গাতা বীর বিপ্লবী ভগৎ সিং ভারতবাসীর হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে রইলেন ।
ভগৎ সিং এর জীবনী – Bhagat Singh Biography in Bengali FAQ :
- ভগৎ সিং কে ছিলেন ?
Ans: ভগৎ সিং ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ।
- ভগৎ সিং এর জন্ম কোথায় হয় ?
Ans: ভগৎ সিং এর জন্ম হয় লয়ালপুর, পাঞ্জাব এ ।
- ভগৎ সিং এর জন্ম কবে হয় ?
Ans: ভগৎ সিং এর জন্ম হয় ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯০৭ সালে।
- ভগৎ সিং এর পিতার নাম কী ?
Ans: ভগৎ সিং এর পিতার নাম সর্দার কিসান সিংহ সান্ধু।
- ভগৎ সিং এর মাতার নাম কী ?
Ans: ভগৎ সিং এর মাতার নাম বিদ্যাবতী দেবী ।
- ভগৎ সিং এর ফাঁসি কবে হয় ?
Ans: ভগৎ সিং এর ফাঁসি হয় ১৯৩১ সালে ।
- ভগৎ সিং এর আন্দোলন কী ছিল ?
Ans: ভগৎ সিং এর আন্দোলন ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ।
- ভগৎ সিং এর কোথায় ফাঁসি হয় ?
Ans: ভগৎ সিং এর ফাঁসি হয় লাহোর এ ।
[আরও দেখুন, এ.পি.জে. আবদুল কালাম এর জীবনী – A.P.J. Abdul Kalam Biography in Bengali
আরও দেখুন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী – Sourav Ganguly Biography in Bengali
আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali
আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali
আরও দেখুন, শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী – Sachin Tendulkar Biography in Bengali]
ভগৎ সিং এর জীবনী – Bhagat Singh Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” ভগৎ সিং এর জীবনী – Bhagat Singh Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। ভগৎ সিং এর জীবনী – Bhagat Singh Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই ভগৎ সিং এর জীবনী – Bhagat Singh Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।