সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন - একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer
সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন - একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer : সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer নিচে দেওয়া হলো। এই West Bengal WBCHSE Class 11th History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer, Suggestion, Notes | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – থেকে রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী West Bengal Class 11th Eleven XI History Examination – পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা তে এই সাজেশন বা কোশ্চেন (সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer) গুলো আসার সম্ভাবনা খুব বেশি।

 তোমরা যারা সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer খুঁজে চলেছ, তারা নিচে দেওয়া বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়তে পারো। 

রাজ্য (State) পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)
বোর্ড (Board) WBCHSE, West Bengal
শ্রেণী (Class) একাদশ শ্রেণী (WB Class 11th)
বিষয় (Subject) একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস (Class 11 History)
অধ্যায় (Chapter) সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন (Sanskritik Porospor Poriborton)

[একাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নউত্তর Click Here]

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal WBCHSE Class 11th History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer 

রচনাধর্মী | সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Descriptive Question and Answer:

1. সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো?

Ans: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো –

সামন্ততন্ত্রের উত্থান যেমন ধীরগতিতে হয়েছিল, সেরকম এর পতনও ঘটেছিল মন্থরগতিতেই। ইউরোপের সর্বত্র একইসঙ্গে সামন্ততন্ত্রের পতন ঘটেনি।

সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণসমূহ:

সামন্ততন্ত্রের পতন সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানান মত রয়েছে। মরিস ডব, পল সুইজি, মাইকেল পস্টান, রবার্ট ব্রেনার প্রমুখ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সামন্ততন্ত্রের পতনকে ব্যাখ্যা করেছেন-

(1) অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ মরিস ডব তাঁর স্টাডিজ ইন দ্য ডেভেলপমেন্ট অফ ক্যাপিটালিজম (Studies in the Development of Capitalism) গ্রন্থে (১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ) দেখিয়েছেন যে, সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই এই ব্যবস্থার পতনের মূল কারণ। তাঁর মতে, সামন্তপ্রভুরা জমিতে নিম্নমানের কৃষি প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহার করায় উৎপাদন ব্যবস্থা সমাজের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়। ফলে সামন্ততন্ত্রের মধ্যে যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ (প্রভু ও দাসশ্রমিক) শুরু হয়, তার ফলে সামন্ততন্ত্রের পতন ঘটে।

(2) বাণিজ্য ও নগরের বিকাশ: মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল সুইজি (Paul Sweezy) মরিস ডব-এর এই অভ্যন্তরীণ বিরোধতত্ত্ব মানতে রাজি হননি। তিনি সায়েন্স অ্যান্ড সোসাইটি (Science and Society) পত্রিকায় (১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ) Feudalism: A Critique প্রবন্ধে সামন্ততন্ত্রের পতনের কারণ হিসেবে বাণিজ্যিকীকরণ (Commercialisation) তত্ত্ব উত্থাপন করেন। সুইজির মতে, বাণিজ্যের অবক্ষয় যেমন সামন্ততন্ত্রের পথ প্রস্তুত করেছিল, তেমনি বাণিজ্যে নতুন জোয়ার সামন্তব্যবস্থাকে ঠেলে দিয়েছিল পতনের দিকে। একাদশ শতকে পশ্চিম ইউরোপে বাণিজ্যবৃদ্ধি ও নগরায়ণের সূত্রে সামন্তপ্রভুরা প্রজাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করলে তারা ম্যানর থেকে বিকল্প জীবনের সন্ধানে পালিয়ে যেতে থাকে। ফলে উৎপাদন ক্রমশ বাজারমুখী হয়ে উঠতে থাকলে চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে সামন্ততন্ত্রের অবসান সূচিত হয়।

(3) জনসংখ্যা হ্রাস: ঐতিহাসিক মাইকেল পস্টান (Michael M Postan) মনে করেন, Black Death-এর প্রভাবে ইউরোপের জনসংখ্যা ৪০% হ্রাস পেলে সামন্তপ্রভুরা কৃষি শ্রমিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করতে বাধ্য হন। তাছাড়া জনসংখ্যা হ্রাস পেলে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা দুর্বল হয় এবং সামন্ততন্ত্রের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।

(4)  সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি: মার্কিন ঐতিহাসিক রবার্ট ব্রেনার (Robert Brenner) তাঁর এগ্রারিয়ান ক্লাস স্ট্রাকচার অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ইন প্রি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউরোপ (Agrarian Class Structure and Economic Development in Pre-Industrial Europe) নামক প্রবন্ধে সামন্ততন্ত্রের পতনের জন্য সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, পশ্চিম ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের অবস্থানের পাশাপাশি রাজতন্ত্রের আইনগত উপস্থিতি ছিল। অন্যদিকে, পূর্ব ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কোনও শক্তিশালী রাজতন্ত্র ছিল না। রাজ্য বা রাজা থাকলেও তা ছিল দুর্বল। ফলে নিরাপত্তার জন্য সাধারণ মানুষ সামন্তপ্রভুদের উপর নির্ভর করত। এই কারণেই পশ্চিম ইউরোপে সামন্তব্যবস্থা ভেঙে পড়লেও পূর্ব ইউরোপে চতুর্দশ শতকের পরেও তার অস্তিত্ব বজায় ছিল।

(5) কৃষকদের বিদ্রোহ : সামন্ততন্ত্রের অন্তিম পর্বে ম্যানরকেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় সামন্তপ্রভুরা তাঁদের অধীনস্থ কৃষকদের উপর তীব্র অত্যাচার চালালে শুরু হয় কৃষক বিদ্রোহ। এই সমস্ত বিদ্রোহগুলি চতুর্দশ শতকের অন্তিম পর্বে তীব্র আকার ধারণ করলে সামন্ততন্ত্রের পতন নিশ্চিত হয়।

(6) ভূমিদাসদের বিদ্রোহ: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভূমিদাসদের উপর সামন্তপ্রভুরা নানারকম অত্যাচার ও কর আদায় করতেন, ফলে কার্যত তাদের কোনও স্বাধীনতা ছিল না। সামন্তপ্রভুদের সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচারের দরুন ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ভূমিদাস বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এর ফলে সামন্ততন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে তার পতন ত্বরান্বিত হয়।

2. ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি  কী ছিল?

Ans: ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি  কী ছিল

ইউরোপের ইতিহাসে সামন্ততন্ত্রের প্রভাব সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি -সবক্ষেত্রেই লক্ষণীয়।

সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ:

 সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ইউরোপীয় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থায় কয়েকটি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছিল-

(1) জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা: সামন্তপ্রভুরা দুর্গনির্মাণ, প্রাচীর নির্মাণ, গভীর পরিখা খনন ও সেনাবাহিনী গঠনের মাধ্যমে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি বহিরাগতদের আক্রমণকেও প্রতিহত করেছিল।

(2) বিকেন্দ্রীভূত ক্ষমতা: সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোতে আঞ্চলিক শাসকেরা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন। ফলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে।

(3) স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির উদ্ভব: আলোচ্য পর্বে বর্বর জাতিগুলির আক্রমণে ইউরোপের শিল্প ও বাণিজ্য ধ্বংস হলে সামন্তপ্রভুদের উদ্যোগে ম্যানরকেন্দ্রিক এক স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির জন্ম হয়েছিল, যা ইউরোপকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়।

(4) উৎপাদন ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখা: ইউরোপের উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখার উদ্দেশ্যে এই পর্বে সামন্তপ্রভুরা উদ্যোগী হয়েছিলেন। মূলত তাঁদের প্রচেষ্টাতেই ম্যানরকে কেন্দ্র করে ভ্যাসাল ও সার্ফদের সাহায্যে ম্যানরের প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভবপর হয়।

(5) শিভালরির আদর্শ প্রচার: মধ্যযুগে বর্বর জাতিগুলির আক্রমণে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ন্যায় ও নীতিবোধ যখন ধ্বংসের সম্মুখীন হয়, সেই সময় সামন্তপ্রভুদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নাইট বাহিনী শিভালরির আদর্শ মেনে নীতিবোধ প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করেছিল। ফলে মধ্যযুগীয় ইউরোপে নারী ও শিশুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, ভদ্রতা, শরণাগতকে রক্ষা করার মতো গুণগুলি টিকে ছিল।

(6) শান্তি প্রতিষ্ঠা: অষ্টম শতকে বিভিন্ন বহিরাগত জাতিগুলির আক্রমণে ইউরোপের শান্তি-শৃঙ্খলা যখন ভেঙে পড়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে সামন্ততন্ত্র শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল।

(7) শিক্ষার প্রসার: পশ্চিম ইউরোপের সনাতনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সংকটের সম্মুখীন হয়। এই পরিস্থিতিতে সামন্তপ্রভুদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা চার্চগুলি সমগ্র মধ্যযুগে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত করে রেখেছিল।

3. সুফিবাদে ‘বা-শরা’ ও ‘বে-শরা’ বলতে কী বোঝায়? সুফিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো?

Ans: সুফিসাধকরা ছিলেন অতীন্দ্রিয়বাদী। তাঁরা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিলেন। সুফিসাধকদের এই গোষ্ঠীগুলিকে সিলসিলা বলা হয়। সুফিরা প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিলেন- বা-শরা এবং বে-শরা।

বা-শরা:

সুফিসাধকদের যে মূল অংশ সিলসিলার সদস্য হিসেবে ইসলাম ধর্মতত্ত্ব ও শরিয়তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অতীন্দ্রিয় ধর্মচর্চা করতেন, তাঁদের বলা হয় বা-শরা।

বে-শরা:

সুফিদের যে ছোটো অংশ প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে এবং শরিয়তকে অস্বীকার করে রহস্যবাদী ও কঠোর ধর্মাচরণ তথা কৃচ্ছসাধন করতেন, তাঁদের বলা হয় বে-শরা। উপরোক্ত দুটি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি ভারতে কালান্দার নামক ভ্রাম্যমাণ সুফিদের কথাও জানা যায়। এই সাধকেরা নির্দিষ্ট কোনও খাল্কা স্থাপন করেননি। তা সত্ত্বেও হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে কালান্দার সাধকেরা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন।

সুফিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

সুফিবাদ হল ইসলামের আধ্যাত্মিক এবং মরমী ধারার গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ। এর মূল উদ্দেশ্য হল- আল্লাহ্র সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন। সুফিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(1) আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ: আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা হল সুফিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সুফিসাধকরা স্রষ্টার সঙ্গে মিলনের জন্য অবিরাম ঈশ্বরচিন্তায় নিমগ্ন থাকতেন। তাঁদের মতে, ভালোবাসার মাধ্যমেই ঈশ্বরের সঙ্গে সত্যিকারের সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব।

(2) পবিত্র জীবনযাপন: সুফিবাদের মূল বিষয় হল, আত্মার শুদ্ধি (তাজকিয়া বা Tazkiyah)। আর এরজন্য সুফিসাধকেরা মানুষের পবিত্র জীবনযাপনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

(3) মানসসন্ডার উপর গুরুত্ব আরোপ ও একেশ্বরবাদে বিশ্বাস : সুফিবাদে মানুষের মানসসত্তার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুফিবাদী সন্তেরা মনে করতেন, ঈশ্বর এক ও অভিন্ন। এঁরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।

(4) পির-মুরিদ সম্পর্ক: সুফিবাদে পির বা গুরুকে অত্যন্ত মান্যতা দেওয়া হয়েছে। একজন পির মানুষের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শন করবেন এবং মুরিদ বা শিষ্যগণ পিরের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চলবেন।

(5) আধ্যাত্মিক অনুশীলন: সুফিসাধকেরা যাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁরা নিয়মিত প্রার্থনা, ধ্যান, আল্লাহর নামের স্মরণ তথা পুনরাবৃত্তি (জিকির) ইত্যাদি আধ্যাত্মিক অনুশীলন করতেন। 

(6) সহজ-সরল জীবনযাপন: সুফিরা ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের জন্য অতিরিক্ত জাগতিক সুখভোগ ত্যাগ করে কৃষ্ণসাধনের মাধ্যমে জীবনযাপন করতেন। পাছে ঐশ্বর্য ও সুখ তাঁদের ঈশ্বরবিমুখ করে- এই চিন্তায় তাঁরা সাধারণ ও সহজ-সরল জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন।

(7) ঐক্য ও সহিষুতা: সুফিবাদে তাওহিদ বা আল্লাহর সঙ্গে ঐক্যস্থাপনকে বিশ্বাস করা হয়। সুফিসন্তরা মানুষের প্রতি সহনশীলতা, ক্ষমা এবং ভালোবাসার নীতিকে আপন করে নিয়েছিলেন।

(8) আধ্যাত্মিক নৃত্য ও গীত: অনেক সুফি সম্প্রদায় আধ্যাত্মিক নৃত্য (যেমন- সমা বা ঘুর্ণন নৃত্য) ও সংগীতের (যেমন- কাওয়ালি) মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি নিজেদের ভক্তি ও ভালোবাসা প্রকাশ করতেন। এর মাধ্যমেই সাধকেরা ঈশ্বরকে অন্তরে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতেন।

বস্তুত সুফিরা সর্বভূতে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলনে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা মধ্যযুগীয় সময়ে দাঁড়িয়ে ইসলাম এবং মানবতার সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

4. সুফিবাদী দর্শনে কী বলা হয়েছে?

অথবা, সুফি মতবাদের মূলতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো?

Ans:

সুফিবাদের দর্শন/মূলতত্ত্ব:

সুফিসাধকেরা হলেন ইসলামের শান্তিদূত। মহম্মদের ভাবধারা ও কর্মকে একনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করাই তাঁদের ব্রত। সুফিবাদী দর্শনের স্বরূপটি হল-

(1) মুফিবাদের পথ: সুফিবাদে মূলত দুটি পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল- আপন অন্তরে ঈশ্বরকে (আল্লাহ) অনুভব করা এবং • সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার সম্পর্ক উপলব্ধি করা। এজন্য দুটি পথের নিদের্শও দেওয়া হয়েছে- মার্গ বা তরীফৎ এবং জ্ঞান বা মরীফৎ। মার্গ হল সাতটি, যেমন- প্রেম, সেবা, ত্যাগ, ধ্যান, যোগ, সমীকরণ ও সংযোগ। জ্ঞান দুই প্রকার, যথা- বুদ্ধিনির্ভর জ্ঞান বা ইলম এবং অপরোক্ষ জ্ঞান বা মরীফৎ।

(2) সন্ডার ঐক্যপ্রতিষ্ঠা: সুফিবাদের অধ্যাত্মদর্শন সত্তার ঐক্য (Unity of being) বা ওয়াদাত-উল-ওয়াজুদ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই মতে, স্রষ্টা (হক) এবং সৃষ্টি (খালক) অভিন্ন। এই প্রকৃতির দৃশ্যমান বৈচিত্র্য আসলে একই ঈশ্বরের বহুমুখী প্রকাশমাত্র। সুফিরা মনে করেন যে, একান্ত প্রেম ও ভালোবাসার মধ্য দিয়েই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছোনো সম্ভব। অতীন্দ্রিয় সাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের আশায় সুফিরা জাগতিক সুখ-সম্পদ ভোগ থেকে দূরে থাকা আবশ্যিক মনে করেন। এই কারণে পার্থিব শক্তি বা বিষয়- আশয় থেকে তাঁরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থেকে সাধনায় লিপ্ত থাকতেন। 

  • এজুদীয়া এবং সুহূদীয়া: স্রষ্টা (হক) ও সৃষ্টি (খাল)-এর সম্পর্ক বিষয়ে সুফিদের মধ্যে দুটি মতাদর্শ চালু আছে- ওজুদীয়া এবং শুহূদীয়া। ওজুদীয়া-রা বিশ্বাস করেন যে, সবকিছুই ঈশ্বরময় (হাস্য ওসৎ)। অন্যদিকে শুহূদীয়াদের মতে, বিশ্বের সবকিছুই ঈশ্বর থেকে সৃষ্ট (হামা আজ্ব ওসৎ)।

(3) সুফিসাধনার স্তর: একটি মতানুযায়ী, ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের জন্য সুফিসাধককে সাধনার মোট দশটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। সেগুলি হল- • তওবা (অনুশোচনা), ওয়ারা (নিবৃত্তি), জুহদ (ধার্মিকতা), • ফক্স (দারিদ্র্যের স্বাদগ্রহণ), সত্র (সহনশীলতা), শুক্র (কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন), খুফ (অন্যায়ের প্রতি ভয়), রজা (আল্লাহর করুণালাভের ইচ্ছা), তওয়াক্কুল (সুখে-দুঃখে অচঞ্চল থাকা) ও রিজা (সর্বশক্তিমানের কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ)। সুফিরাও ভক্তিসাধকদের মতো পার্থিব জগতের সঙ্গে সম্পর্কশূন্য থাকাকে গুরুত্ব দিতেন।

(4) গুরুবাদ: সুফিদর্শনে পির বা গুরুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের জন্য পির তাঁর শিষ্য বা মুরিদ-কে সঠিক পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দেন। গুরুর নেতৃত্ব ও প্রদর্শিত পথে অখণ্ড প্রেম এবং ভক্তিভাবনা দ্বারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মিলন সম্ভব বলে মনে করা হত। সুফি গুরুরা শেখ বা মুর্শিদ নামেও অভিহিত হতেন। এঁরা অধিকাংশই নির্জন স্থানে দরগা বা খাল্কা নির্মাণ করে বসবাস করতেন। এই সমস্ত দরগাগুলিতে পির তাঁর শিষ্যদের ইসলামীয় শাস্ত্র, আধ্যাত্মিক উন্নতি বিষয়ে শিক্ষাদীক্ষা দিতেন। অবশ্য খাকাগুলিতে দরিদ্রদের চিকিৎসা ও অন্নদানও করা হত। এই সমস্ত দরগাগুলিতে পির তাঁর শিষ্যদের ইসলামীয় শাস্ত্র, আধ্যাত্মিক উন্নতি বিষয়ে শিক্ষাদীক্ষা দিতেন। অবশ্য খাকাগুলিতে দরিদ্রদের চিকিৎসা ও অন্নদানও করা হত।

5. সুফি আন্দোলন বলতে কী বোঝো? সুফিবাদী আদর্শের পরিচয় দাও?

Ans:

সুফি আন্দোলন:

সুফি আন্দোলন হল ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক ধারা, যা আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন এবং তার মাধ্যমে মানবজীবনের অন্তর্নিহিত ও আধ্যাত্মিক দিকের উন্নতির উপর গুরুত্ব আরোপ করে। খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে এই আন্দোলন ইসলামি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রসারিত হয়েছিল।

(1) মূল ধারণা: সুফি আন্দোলনে পার্থিব ভোগবিলাস এবং বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান থেকে মুক্ত হয়ে অন্তর্দৃষ্টি ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ অর্জনের উপর জোর দেয়। সুফিরা বিশ্বাস করেন, আত্মশুদ্ধি, ধ্যান এবং গভীর প্রেমের মাধ্যমেই আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়া সম্ভব।

সুফিবাদী আদর্শ:

ইসলাম ধর্মের উদারনৈতিক ভাবধারাই হল সুফিবাদ। সুফিসাধকেরা অতীন্দ্রিয়বাদের সাধনা করতেন এবং নিজেদের ইসলাম ও মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন। অষ্টম শতকের মহিলা সুফি রাবিয়া এবং দশম শতকের সুফিসাধক মনসুর প্রেমের মধ্যেই ঈশ্বর ও মানুষের মিলনসেতুকে প্রত্যক্ষ করেছেন।

(1) আদর্শসমূহ: সুফিবাদে বলা হয় যে, ঈশ্বরের প্রেমই হল প্রকৃত অস্তিত্বের মূল। এই প্রেমের মাধ্যমেই সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে একাত্মতা অর্জন করা সম্ভব। এই মতবাদে আত্মশুদ্ধি ও মোরাকাবা (ধ্যান), জিকির (আল্লাহর নামের পুনরাবৃত্তি), সুলুক (আধ্যাত্মিক ভ্রমণ) ইত্যাদি পালন করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি লোকশিক্ষার ব্যবস্থা করা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার করা, সহজ-সরল জীবনযাপন করা, মানবজাতির মধ্যে সাম্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও মানবতা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি ছিল সুফিবাদের আদর্শ। সুফিদের এই মহান আদর্শগুলি এক শান্তিপূর্ণ, সুখী সমাজগঠনের ইঙ্গিতবাহী ছিল।

এখানে ধৈর্য, সন্তুষ্টি প্রভৃতি সদগুণের অনুশীলন করে, সামাজিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি ও মৈত্রীর ভিত্তিতে পারস্পরিক অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। প্রখ্যাত মুসলিম ধর্মবিদ জাকারিয়া অল-আনসারি (Zakariyya al-Ansari)-র মতে, অনন্ত শান্তিলাভের জন্য আত্মাকে কীভাবে পরিশুদ্ধ করতে হয়, নৈতিক মান কীভাবে উন্নত করতে হয় এবং কীভাবেই বা ব্যাবহারিক জীবনে আচরণ করতে হয়, সুফিবাদ সেই শিক্ষাই দান করে।

6. ভারতে সুফিবাদের প্রসারের কারণগুলি কী কী?

খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের (৭১২ খ্রিস্টাব্দ) সময়কালে ভারতে সুফিদের প্রথম আগমন ঘটেছিল বলে মনে করা হয়। এরপর প্রায় তিন শতকব্যাপী কালপর্বে সিন্ধুপ্রদেশে আরবদের আধিপত্যের যুগে কোনও কোনও সুফিসাধক ভারতে প্রবেশ করলেও তুর্কি শাসন প্রতিষ্ঠার পর দলে দলে সুফিরা মধ্য এশিয়া থেকে এদেশে আসতে থাকেন ও নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। ক্রমে উপমহাদেশে প্রসার ঘটতে থাকে সুফিবাদের। এর পশ্চাৎপটে বেশ কয়েকটি কারণ লক্ষণীয়।

ভারতে সুফিবাদের প্রসারের কারণসমূহ:

(1) সুফিসাধকদের জীবনাদর্শ: সুফিসাধকেরা তাঁদের উদারতা, বৈরাগ্য ও সহজ-সরল জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে খুব দ্রুত দরিদ্র-শোষিত নিম্নশ্রেণির ভারতবাসীকে কাছে টানতে পেরেছিলেন।

(2) অলৌকিক শক্তিপ্রদর্শন: সুফি দরবেশ ও পিরগণ জনগণের সামনে নানান অলৌকিক শক্তি প্রদর্শন করতেন। সাধারণ মানুষের তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি আগ্রহ থাকায় তারা সহজেই সুফিসাধকদের দিকে আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। অনেকেই খাল্কা বা দরগাগুলিতে আসতে থাকেন। এমনকি ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেন।

(3) সুফিদের মতবাদ: সুফিদের সামাজিক সাম্যবাদ, একেশ্বরবাদ, জাতি- ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষের স্বাধিকারের ধারণা এদেশের জনগণকে মুগ্ধ করে। সুফিসাধকেরা হিন্দু সন্ন্যাসী ও তান্ত্রিকদের চেয়ে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হন। তবে লক্ষণীয় যে, ভারতীয় সুফিরা গোঁড়া ধর্মকেন্দ্র বা রাজনীতির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রাখতে চাননি। তাঁরা মনে করতেন যে, বিষয়-বৈভব বা রাজনীতির সঙ্গে উলেমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা নিতান্তই ইসলামবিরোধী। এঁদের ধারণা ছিল যে, পৃথিবীতে এক নতুন যুগ আগত, যেখানে এক মেহদী (উদ্ধারকর্তা) ইসলামের মর্মবাণীকে পুনঃসংস্থাপন করবেন।

7. বিভিন্ন সুফি সম্প্রদায়ের পরিচয় দাও।

অথবা, সুলতানি যুগের বিভিন্ন সুফি সিলসিলা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো?

Ans:

সুফি সম্প্রদায় / সিলসিলা:

দ্বাদশ শতক নাগাদ সুফিরা ‘সিলসিলা’-র মাধ্যমে সংগঠিত হতে শুরু করেন। সিলসিলা-র আক্ষরিক অর্থ হল, গুরু ও শিষ্যের মধ্যে গড়ে ওঠা অখণ্ড সম্পর্কের শৃঙ্খল। এই অখন্ড ও ধারাবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে পয়গম্বর ও শিষ্যের মধ্যে আধ্যাত্মিক ভাবের আদানপ্রদান সম্ভব হয়। সিলসিলাকে ভিত্তি করে সুফিরা নানা সম্প্রদায়ে বিভক্ত হন। মুর্শিদের নাম বা পদবি অনুসারে তাঁরা পরিচিত হতে থাকেন। যেমন- চিক্তি সিলসিলা, সুরাবর্দি সিলসিলা, কাদিরিয়া সিলসিলা ইত্যাদি। ভারতে প্রবেশের আগে সুফিদের মধ্যে ১৭৫টি সিলসিলা বা সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল। মুঘল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল লিখেছেন যে, ভারতে সুফিদের ১৪টি সম্প্রদায় প্রবেশ করেছিল। অবশ্য এদের মধ্যে চিন্তি ও সুরাবর্দি সম্প্রদায়ই বেশি প্রভাবশালী ছিল। উভয় সম্প্রদায়ের সাধকেরা ছিলেন বা-শরা বা শরা-র অনুগামী

(1) চিহ্নি সিলসিলা: চিন্তি সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা হলেন খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি। দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে তিনি এই সম্প্রদায় বা সিলসিলা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সহজ-সরল জীবনাদর্শ খুব শীঘ্রই সাধারণ মানুষের মন জয় করে। হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষই তাঁর শিষ্য হন। এই সম্প্রদায়ের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য সন্ত ছিলেন নিজামউদ্দিন আউলিয়া। এ ছাড়া কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি, নাসিরুদ্দিন চিরাগ, সেলিম চিন্তি প্রমুখও ছিলেন অন্যতম।

(2) সুরাবর্দি সিলসিলা: শেখ শিহাবউদ্দিন সুরাবর্দি ছিলেন সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। এই সম্প্রদায় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। সুরাবর্দি সাধকেরা অর্থসম্পদকে ধর্মজীবনের উন্নতির বিঘ্ন বলে মনে করতেন না। বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, সৈয়দ জালালউদ্দিন বুখারি ছিলেন এই সিলসিলার স্বনামধন্য সাধক।

(3) কাদিরিয়া সিলসিলা: সুফিদের একটি অন্যতম সম্প্রদায় ছিল কাদিরিয়া। শেখ আবদুল কাদির জিলানি ছিলেন এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। শেখ আবদুল হক, মিঞা মীর, মুল্লা শাহ ছিলেন উপমহাদেশে কাদিরিয়া শাখার কয়েকজন প্রতিথযশা সন্ত।

(4) নকশবন্দিয়া সিলসিলা: নকশবন্দিয়া সুফিদর্শনের প্রধান পুরুষ হলেন খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ। ভারতবর্ষে নকশবন্দিয়া মতাদর্শকে জনপ্রিয়তা দেন খাজা বাকিবিল্লাহ। শেখ আহমদ সিরহিন্দি হলেন একজন প্রখ্যাত নকশবন্দিয়া সাধক। উপরোক্ত সিলসিলাগুলি ছাড়াও ভারতবর্ষে মধ্যযুগে শত্তারি সিলসিলা, ফিরদোসি সিলসিলা

(5) ফিরদোসি সম্প্রদায় : ফিরদোসি সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সমরখন্দের শেখ বদরউদ্দিন। প্রথমদিকে ভারতবর্ষের দিল্লিতে এই সম্প্রদায়ের বিকাশ ঘটলেও পরবর্তীতে বিহার ফিরদোসিদের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। শেখ শরফউদ্দিন ছিলেন ফিরদোসি সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ সাধক সুফিবাদের প্রচারকার্যে নিয়ত ছিল। আলোচ্য পর্বে এদেশে যে সুফি ভাবধারা প্রবাহিত হয়েছিল, এই সম্প্রদায় বা সিলসিলাগুলিই ছিল তার দ্যোতক।

8. ভারতে সুফিবাদের প্রসারে চিন্তি সম্প্রদায়ের ভূমিকা লেখো?

Ans:

চিস্তি সম্প্রদায়:

চিন্তি সম্প্রদায়ের উৎপত্তি হয়েছিল আফগানিস্তানের চিন্ত-এ। প্রখ্যাত সুফিসাধক খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি প্রথম ভারতে এই সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

(1) আদর্শ: চিশতি সাধকেরা ছিলেন উদার এবং সাদামাটা পবিত্র – জীবনযাপনে বিশ্বাসী। এই সাধকরা উপবাস ও কৃচ্ছসাধনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপর গুরুত্ব দিতেন এবং যাবতীয় পার্থিব ভোগবাদ থেকে দূরে থাকতেন। চিন্তি সম্প্রদায়ের সুফিরা মানুষে মানুষে প্রভেদ মানতেন না। দিল্লির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, বিহার, গুজরাট এমনকি দাক্ষিণাত্যেও চিন্তি সম্প্রদায় তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিল।

(2) প্রখ্যাত চিশতি সাধকগণ: ভারতের কয়েকজন বিশিষ্ট চিন্তি । সাধকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

  • খাজা মইনউদ্দিন চিস্তি: খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি (১১৪১ খ্রিস্টাব্দ, মতান্তরে ১১৪৩-১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ভারতে চিন্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শিস্তান থেকে ভারতে আসেন এবং লাহোর ও দিল্লিতে কিছুকাল অবস্থানের পর চলে যান আজমিরে (সম্ভবত ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ)। আজমিরই ছিল তাঁর প্রধান কর্মকেন্দ্র। আজমিরে মইনউদ্দিন চিন্তির সমাধিটি আজও জাতি-বর্ণ-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলের কাছেই তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। 
  • শেখ হামিদউদ্দিন: খাজা মইনউদ্দিনের অন্যতম শিষ্য ছিলেন শেখ হামিদউদ্দিন। রাজস্থানের নাগাউর শহরকে তাঁর সুফিবাদ প্রচারের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সেখানেই তিনি গৃহী জীবনযাপন করতেন। স্থানীয় হিন্দাভি (Hindavi) ভাষায় শেখ হামিদ সুফিতত্ত্ব প্রচার করতেন।
  •  কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি : বিশিষ্ট সুফিসাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি (১১৭৩ ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন খাজা মইনউদ্দিন চিন্তির উত্তরসূরি। ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে বখতিয়ার কাকি ভারতে আসেন। চিন্তি সিলসিলাকে দিল্লিতে প্রধান সুফি সম্প্রদায়রূপে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা তাঁরই ছিল। অনুমিত হয় যে, বখতিয়ার কাকির স্মৃতিরক্ষার্থেই দিল্লিতে কুতুবমিনার নির্মিত হয়েছিল।
  • হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া: হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (১২৩৮-১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন চিপ্তি সম্প্রদায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় সুফিসাধক। জানা যায়, সুলতানি আমলের জিয়াউদ্দিন বারানি এবং আমির খসরু তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
  • নাসিরুদ্দিন চিরাগ: চিত্তি সিলসিলার অন্যতম বিখ্যাত সুফিসন্ত হলেন নাসিরুদ্দিন চিরাগ (১২৭৪-১৩৫৬ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি চিরাগ-ই-দিল্লি বা দিল্লির আলো নামে পরিচিত ছিলেন। উপরোক্ত চিতি সাধকগণ ছাড়াও শেখ ফরিদউদ্দিন-গঞ্জ-ই শক্কর, সেলিম চিত্তি ছিলেন এই সিলসিলার বিশিষ্ট প্রচারক। চিতি সন্তদের জীবনাদর্শ, ত্যাগ, তিতিক্ষা, সাধনা ভারতের জনসাধারণকে প্রভাবিত করেছিল।
  • জ্শেখ ফরিদউদ্দিন-গঞ্জ-ই শম্ভুর: উত্তর ভারতে সুফিবাদের একজন বিশিষ্ট প্রচারক ছিলেন শেখ ফরিদউদ্দিন-গঞ্জ-ই শক্কর (আনুমানিক ১১৭৩-১২৬৬ খ্রিস্টাব্দ), যিনি বাবা ফরিদ নামেই সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। শেখ ফরিদউদ্দিন অল্প বয়সেই শেখ কুতুবউদ্দিনের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে হরিয়ানার হানসি প্রদেশে তিনি খাল্কা প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তীতে বর্তমান পাকিস্তানের অযোধানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। হিন্দু ভক্তিবাদী সাধকদের সঙ্গে শেখ ফরিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি পার্থিব বস্তুর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, পরোপকারিতা ইত্যাদির উপর জোর দিয়েছিলেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এত উদার ছিল যে, শিখদের আদিগ্রন্থে শেখ ফরিদের নামের উল্লেখ পাওয়া যায়।

9. টীকা লেখো: হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া।

Ans:

হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া:

বাবা ফরিদ গঞ্জ-ই- শক্করের যোগ্য উত্তরসূরি এবং চিন্তি সম্প্রদায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় সুফিসাধক ছিলেন হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (১২৩৮-১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ)। ভারতে সুলতানি আমলের এই বিখ্যাত সুফিসন্ত দিল্লির নানান রাজনৈতিক উত্থানপতনের সাক্ষী থেকেছেন।

(1) প্রথম জীবন: হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া উত্তরপ্রদেশের বদাউনে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই তিনি পিতাকে হারান। মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজামউদ্দিন বাবা ফরিদের শিষ্য হন।

(2) কর্মজীবন: নিজামউদ্দিন আউলিয়ার জীবৎকালে ৭ জন সুলতান দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এঁদের মধ্যে একজনেরও দরবারে যাননি কিংবা সুলতানের সাহায্যও গ্রহণ করেননি। সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক একবার এই মহান সাধককে শাস্তিদানের হুমকি দিলে তিনি বলেছিলেন দিল্লি হনুজ দূর অস্ত (দিল্লি এখনও বহুদূর)। কাকতালীয়ভাবে গৌড় অভিযান সমাপ্ত করে দিল্লিতে প্রবেশের আগেই সুলতান গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনা নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত করে।

(3) কৃতিত্ব: নিজামউদ্দিন আউলিয়া ছিলেন একজন প্রকৃত জনদরদি। তিনি সুলতান খসরু কর্তৃক প্রদান করা অর্থ গরিব মানুষদের মাঝে বিতরণ করেন। সমগ্র দেশেই তাঁর খাকা প্রতিষ্ঠিত ছিল। বহু অভিজাত নাগরিক এই সাধককে ‘পির’ হিসেবে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। সুলতানি আমলের সুবিখ্যাত ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারানি এবং কবি ও সংগীতজ্ঞ আমির খসরু ছিলেন তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম।

10. খাজা মইনউদ্দিন চিস্তি এবং সেলিম চিন্তির পরিচয় দাও?

Ans:

খাজা মইনউদ্দিন চিস্তি:

ভারতীয় উপমহাদেশে চিন্তি ধারার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি (১১৪১, মতান্তরে ১১৪৩-১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি গরিব নওয়াজ নামেও সর্বজন পরিচিত।

(1) প্রথম জীবন: খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের মধ্যভাগে খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি পারস্যের শিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। অল্পবয়স থেকেই তিনি অতীন্দ্রিয়বাদের দিকে আগ্রহী হয়ে পড়েন। এরপর ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। কিছু সময় লাহোর ও দিল্লিতে বসবাসের পর অবশেষে তিনি আজমিরে পদার্পণ করেন। এখানেই তিনি তাঁর ধর্মকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন।

(2)মতাদর্শ ও প্রচার: খাজা মইনউদ্দিন চিত্তি বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন এবং আবদুল কাদির জিলানি, নজমউদ্দিন কুবরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি একজন হিন্দু সন্ন্যাসীর মতোই জীবনযাপন করতেন। বেদান্ত দর্শনের ন্যায় অদ্বৈতবাদ প্রচার করতেন তিনি। প্রভেদ শুধু এতটুকুই ছিল যে, তিনি সৃষ্টিকর্তাকে আল্লাহ্ নামে ডাকতেন। মইনউদ্দিন সাধারণ মুসলিমদের জীবন ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করার শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। শেখ হামিদউদ্দিন, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি প্রমুখ ছিলেন তাঁর স্বনামধন্য শিষ্যবর্গ।

(3) মৃত্যু: ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে এই মহান সাধক পরলোকগমন করেন। আজমিরে মইনউদ্দিন চিন্তির সমাধিটি আজও জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলের কাছেই তীর্থস্থান স্বরূপ। জানা যায়, সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক তাঁর সমাধি পরিদর্শন করেছিলেন।

সেলিম চিস্তি:

সেলিম চিস্তি (১৪৭৮-১৫৭২ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ভারতে চিন্তি ধারার একজন প্রতিথযশা সুফিসাধক। পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে তিনি পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন শেখ ফরিদের শিষ্য।

(1) কৃতিত্ব: মুঘল সম্রাট আকবর ছিলেন মহান সাধক সেলিম চিস্রতি একান্ত অনুরাগী। কথিত আছে, আকবর তাঁকে একজন পুরুষ উত্তরাধিকারীর জন্য প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। সেলিম চিন্তি আকবরকে আশীর্বাদ করেন এবং তাঁর নামানুসারেই আকবর তাঁর পুত্রসন্তান জাহাঙ্গিরের নাম রাখেন সেলিম। জানা যায়, সেলিম চিন্তির একমাত্র কন্যা নাকি জাহাঙ্গিরের পালক মাতা ছিলেন।

(2) সমাধি: এই খ্যাতনামা সন্তের মরদেহ ফতেহপুর সিক্রির জাম-ই- মসজিদে সমাধিস্থ করা হয়। সম্রাট আকবর এই সমাধির উপর নির্মাণ করেন এক অপূর্ব স্মৃতিসৌধ, যা আজও মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে বিস্ময়।

11. ভারতে সুফিবাদের প্রচারে সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের কী ভূমিকা ছিল?

অথবা, টীকা লেখো: সুরাবর্দি সম্প্রদায়।

Ans:

সুরাবর্দি সম্প্রদায়:

চিস্তি সম্প্রদায় ছাড়াও অপর এক উল্লেখযোগ্য সুফি সিলসিলা হল সুরাবর্দি বা সুহরাবর্দি সম্প্রদায়। বাগদাদে শেখ শিহাবউদ্দিন সুরাবর্দি এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন।

(1) মতাদর্শ: সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের সুফিরা কখনোই অতিরিক্ত কৃচ্ছসাধনের পক্ষপাতী ছিলেন না। এঁরা বিচারবিভাগীয় ও ধর্মসংক্রান্ত উচ্চপদে থেকে ধর্মচর্চায় লিপ্ত ছিলেন। এই সম্প্রদায়ের সুফিরা বিলাসী জীবনযাপন পছন্দ করতেন। স্বভাবতই সমাজের নিম্নশ্রেণির দরিদ্র ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের বিশেষ যোগাযোগ ছিল না।

(2) ভারতে সুরাবর্দি আদর্শ: মুলতানের শেখ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া আরবদেশে গিয়ে সুরাবর্দির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। অতঃপর তিনি মুলতানে এসে খাল্কা প্রতিষ্ঠা করে সুরাবর্দির আদর্শ প্রচার করতে থাকেন। সিধু ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে সুরাবর্দি মতাদর্শের যথেষ্ট প্রভাব ছিল।

(3) বাহাউদ্দিন জাকারিয়া: ভারতে সুরাবর্দি সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (আনুমানিক ১১৭০ – ১২৬২ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের দক্ষিণে অবস্থিত মুলতানের কাছে কোট কেহরর (বর্তমান নাম কারোর লাল এসান) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গোঁড়া উলেমাদের মতো রোজা, নামাজ ইত্যাদি আচার-অনুষ্ঠানের উপর জোর দেন। সুলতান ইলতুৎমিসকে। তিনি সিন্ধু প্রদেশে আহ্বান করেন এবং নাসিরুদ্দিন কুবাচার বিরুদ্ধে  সহায়তা দানও করেন। বাহাউদ্দিন জাকারিয়া সরকারি অনুদান নিয়ে গরিব- দুঃখীদের সাহায্য করতেন। জাকারিয়ার মৃত্যুর ১৫০ বছরের মধ্যে তাঁর অনুগামীরা সিধু প্রদেশ ও পাঞ্জাবে প্রভাব বিস্তার করেন। ক্রমে বাংলা, গুজরাট ও কাশ্মীরেও তারা ছড়িয়ে পড়েছিলেন।

(4) অন্যান্য সুরাবর্দি সাধকগণ: সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের অন্যান্য সাধকরা হলেন- সদরউদ্দিন আরিফ, সৈয়দ জালালউদ্দিন বুখারি প্রমুখ। প্রথমদিকে জনপ্রিয় হলেও ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিক পথ, মানুষের মঙ্গলসাধন, সমদর্শিতা, পরমত সহিষ্ণুতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতি সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রকট হতে থাকে। এর ফলে একটা সময় এই গোষ্ঠী জনপ্রিয়তা হারায়।

12. নকশবন্দিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে যা জানো লেখো?

Ans:

নকশবন্দিয়া সম্প্রদায়:

নকশবন্দিয়া সুফিদর্শনের উদ্ভব হয়েছিল তুর্কিস্থানে এবং এই দর্শনের উদ্‌দ্গাতা ছিলেন খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (১৩১৮-১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ)। বাহাউদ্দিনের শিষ্য উবায়দুল্লা অল- আহরার এই মতবাদকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।

(1) খাজা বাকিবিল্লাহ: ভারতভূমিতে নকশবন্দিয়া মতবাদকে যিনি জনপ্রিয়তা দিয়েছিলেন, তিনি হলেন খাজা বাকিবিল্লাহ (১৫৬৪- ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ)। মাত্র ৪১ বছর বয়সে বাকিবিল্লাহ মারা গেলে তাঁর শিষ্য শেখ আহম্মদ সিরহিন্দি (১৫৬৪-১৬২৪ খ্রিস্টাব্দ) নকশবন্দিয়া মতবাদকে ছড়িয়ে দেন ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে।

(2) শেখ আহম্মদ সিরহিন্দি: সুফিসাধক শেখ আহম্মদ সিরহিন্দি ছিলেন ব্যক্তিত্ববান ও সুবক্তা। তিনি সাধারণ মুসলিমদের কাছে সহজ-সরলভাবে নকশবন্দিয়া ভাবধারা প্রচার করেন। তিনি ইৎবা-ই-সন্নত (ঐতিহ্য বা বিধিনিয়মের অনুসরণ) এবং বাকা-ই-বিদৎ (নতুনত্বের প্রতি অনাকর্ষণ) এই দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন। তাঁর মতবাদ ওয়াদাৎ-ই-শুহুদিয় নামে খ্যাত। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের পৃষ্ঠপোষকতায় সিরহিন্দি ইসলাম ধর্মের পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন। যদিও এই কাজ করতে গিয়ে তিনি সুফিদর্শনের মৌলিক দুটি বৈশিষ্ট্যকেই (ধর্মসহিষুতা, সমন্বয়) অগ্রাহ্য করেন। এতকাল যাবৎ সুফিবাদের মধ্যে হিন্দু ধর্মের যেসব আচার-অনুষ্ঠান প্রবেশ করেছিল, তিনি সেগুলিকে পরিহার করতে বলেন। অনুদারতা ও অদূরদর্শিতার কারণে এই সুফিসাধক ভারতের জনমানসে কোনও স্থায়ী চিহ্ন রেখে যেতে পারেননি।

(3) অন্যান্য নকশবন্দিয়া সাধকগণ: শেখ আহম্মদ সিরহিন্দির প্রয়াণের পর তাঁর পুত্র খাজা মহম্মদ মাসুদ, খাজা মহম্মদ নকশবন্দ এবং খাজা মহম্মদ জুবেইর কিছুকাল নকশবন্দিয়া ভাবাদর্শকে সজীব রেখেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই আদর্শের প্রভাব দ্রুত শিথিল হয়ে পড়ে।

13. সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?

Ans:

সামন্ততন্ত্র:

পঞ্চম শতকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে যে রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তার সূত্র ধরেই পশ্চিম ইউরোপে জমিকেন্দ্রিক যে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তা সামন্ততন্ত্র বা Feudalism নামে পরিচিত।

(1) সামন্ততন্ত্র’ শব্দের উৎস: সামন্ততন্ত্র বা Feudalism শব্দটির উৎস হল ল্যাটিন শব্দ ফিওডালিস (Feodalis) এবং ফরাসি শব্দ ফিওডালিতে (Feodalite)।

সামন্ততন্ত্রের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মত:

(1) বোলাভিয়ের-এর মত: বিশিষ্ট ফরাসি ঐতিহাসিক বোলাঁভিয়ের (Boulainvilliars) সামন্ততন্ত্রকে মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম বলে উল্লেখ করে এর যে সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন, সেটি হল- সামন্ততন্ত্র হল সার্বভৌম অধিকারের বিভাজন। এই ব্যবস্থায় প্রশাসনকে খণ্ডিত ও বিকেন্দ্রীভূত করে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষের জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করা হয়।

(2) মন্তেস্কু-র মত: ফরাসি রাষ্ট্রচিন্তাবিদ মন্তেস্কু (Montesquieu)-র মতে, নীচ থেকে উপরের দিকে ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া সরকারি অধিকার ও ক্ষমতার বিভাজিত কাঠামোই হল সামন্ততন্ত্র।

(3) কার্ল মার্কস-এর মত: কার্ল মার্কস (Karl Marx) সামন্ততন্ত্রের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, যে সমাজব্যবস্থায় শাসক শ্রেণি স্বাধীনতাহীন শ্রমজীবী মানুষের শ্রমকে ব্যবহার করে কৃষিকাজ ও হস্তশিল্পের মাধ্যমে শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন করে, তাকে সামন্ততন্ত্র বলা হয়।

(4) মার্ক ব্লথ-এর মত: ঐতিহাসিক মার্ক ব্লখ (Marc Bloch) তাঁর Feudal Society শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, যাজক ও কৃষক শ্রেণিকে নিয়ে ম্যানরকে কেন্দ্র করে যে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তাকে সামন্ততন্ত্র বলা হয়।

(5) মরিস ডব-এর মত: মার্কসবাদী ঐতিহাসিক মরিস ডব (Maurice Dobb) তাঁর Studies in the Development of Capitalism গ্রন্থে সামন্ততন্ত্রকে একটি উৎপাদন ব্যবস্থা বা Mode of Production বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি সামন্তপ্রথাকে ভূমিদাস প্রথার প্রায় সমার্থক হিসেবে দেখিয়েছেন।

উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলির নিরিখে সামন্ততন্ত্রের একটি সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলা যায় যে, নগরসভ্যতার অবক্ষয়ের পরবর্তীকালে মধ্যযুগীয় পশ্চিম ইউরোপে জমির উপর বিশেষ অধিকারের ভিত্তিতে যে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তাকে বলা হয় সামন্ততন্ত্র বা Feudalism.

14. ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?

Ans: ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল-

পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সামন্ততন্ত্রের কিছু আঞ্চলিক বৈচিত্র্য থাকলেও এই ব্যবস্থার কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়।

সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

(1) কেন্দ্রীয় দুর্বলতা: ৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ভার্দুনের বণ্টনের পর কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে বিভিন্ন বহিরাগত জাতির আক্রমণে ইউরোপের শক্তিশালী সাম্রাজ্যের কাঠামো ভেঙে পড়ে। একে কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক শাসকরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় শাসকও আঞ্চলিক সামন্তপ্রভুদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

(2) স্থবির অর্থনীতি: ঐতিহাসিক অঁরি পিরেন (Henry Pirenne) দেখিয়েছেন যে, মধ্যযুগে ইসলামীয় আগ্রাসনের ফলস্বরূপ ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যের পতন ও তার থেকে নগরের অবক্ষয় ঘটলে গ্রামগুলি সমৃদ্ধ হয়। গ্রামগুলি নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদন করতে শুরু করলে জন্ম হয় স্থবির অর্থনীতির।

(3) কৃষির অনগ্রসরতা: প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মরিস ডবের মতে, আলোচ্য কালপর্বে সামন্তপ্রভুরা উন্নতমানের কৃষি প্রযুক্তি ও অর্থকরী ফসল চাষে উৎসাহী না হলে উদ্বৃত্ত কৃষিজ উৎপাদন ব্যাহত হয়।

(4)  জমির গুরুত্ব: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামন্তপ্রভুদের মর্যাদা ও শক্তির যাবতীয় আধার ছিল জমি। যে প্রভুর অধীনে যত বেশি সংখ্যক জমি থাকত, সে তত বেশি সংখ্যক ভ্যাসাল ও ভূমিদাস নিয়োগ করতে পারত। মধ্যযুগীয় ইউরোপে এভাবেই জমিকে কেন্দ্র করে উৎপাদন ব্যবস্থা ও আর্থসামাজিক কাঠামোর ভিত্তি রচিত হয়, যা ছিল সামন্ততন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

(5) ম্যানর প্রথা: বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের জনক কার্ল মার্কস মনে করেন যে, ম্যানর ব্যবস্থা হল সামন্ততন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সামন্ততন্ত্রের যুগে যে জমিকেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ম্যানর প্রথা। এই ব্যবস্থায় ভূম্যধিকারী তাঁর ম্যানরের অন্তর্গত সকল ভূমিদাস কৃষকের উপর শাসন ও বিচার সংক্রান্ত যাবতীয় অধিকার ভোগ করতেন। এর বিনিময়ে ভূমিদাসরা বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা ও জীবনধারণের অধিকার লাভ করত। শুধু তাই নয়, সামন্তপ্রভু তাঁর ম্যানর হাউসকে কেন্দ্র করে ভূমিদাস ও মুক্ত কৃষকদের নিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন।

(6) শিক্ষিত যোদ্ধা শ্রেণি: রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে সামন্তযুগে নাইট নামে পরিচিত যোদ্ধা শ্রেণির অস্তিত্ব অনিবার্য হয়ে পড়ে। সুশিক্ষিত এই যোদ্ধা শ্রেণি শিভালরি আদর্শ মেনে জীবন অতিবাহিত করত।

(7) উর্ধ্বতনের কাছে আনুগত্য: ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অধস্তনের আনুগত্য প্রদর্শন হল সামন্ততন্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। সামন্তযুগে ঊর্ধ্বতন প্রভু কমানডেশন (Commendation) নামক একটি অনুষ্ঠানের দ্বারা তাঁর অধস্তনকে ফিফ বা জমি প্রদান করতেন। এই সময় অধস্তন কর্তৃপক্ষ তাঁর ঊর্ধ্বতনকে সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিত হোমেজ (Homage) নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এ ছাড়া অধীনস্থ কৃষক শ্রেণির অস্তিত্ব, শোষণমূলক করব্যবস্থা ইত্যাদিও ইউরোপের সামন্ততন্ত্রকে পূর্ণমাত্রায় বিকশিত করতে সহায়তা করেছিল।

15. ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?

Ans:

ফিফ:

মধ্যযুগীয় ইউরোপের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী রাজা বা সম্রাট ছিলেন দেশের যাবতীয় সম্পত্তির অধিকারী। সামন্তপ্রথার উদ্ভব ও বিকাশলাভের ফলে রাজা বা সম্রাটের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমি কালক্রমে { ডিউক (Duke), আর্ল (Earl), কাউন্ট (Count)-দের মধ্যে ফিফ্ (Fief) হিসেবে বণ্টিত হতে থাকে। ফিফ শব্দটি এসেছে ফিয়েফ থেকে, যার অর্থ হল রাজ্যাংশ। ফিফ হল এমন একটি ভূখণ্ড, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অধস্তনকে নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্বপালনের বিনিময়ে সমর্পণ করেন। ঊর্ধ্বতন সামন্তপ্রভু তাঁর অধীনস্থ অধস্তন সামন্তদের সেবা ও আনুগত্যের বিনিময়ে যে ভূমিখণ্ড প্রদান করতেন, তাই ফিফ নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে সামন্তপ্রভু তাঁর অধস্তন সামন্তদের কমানডেশন নামক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই ফিফ্ফ প্রদান করতেন। ঊর্ধ্বতনের থেকে ভূমিখণ্ড বা জমির অধিকারলাভের বিনিময়ে অধস্তন সামন্তরা তাদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে সর্বদা সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত রাখত।

শিভালরি:

মধ্যযুগে সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠলে নাইট (Knight) নামে পরিচিত এক সুশিক্ষিত যোদ্ধা শ্রেণির আবির্ভাব হয়। এই যোদ্ধা শ্রেণির মধ্যে বীরত্বের যে মহান আদর্শ গড়ে উঠেছিল, তা শিভালরি (Chivalry) নামে পরিচিত।

শিভালরি শব্দটির উদ্ভব হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ক্যাবালাস (Caballus) থেকে। প্রথমদিকে এর অর্থ ছিল অশ্ব, যদিও পরবর্তীকালে এই শব্দের অর্থ হয় আচরণবিধি। আবার শিভালরি শব্দের ফরাসি প্রতিশব্দ হল শিভেলিয়ার (Chevalier) বা অশ্বারোহী। সুতরাং বলা যায়, মধ্যযুগীয় ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বীর যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত নাইটদের যে আদর্শপূর্ণ আচরণবিধি পালন করতে হত, তা শিভালরি নামে পরিচিত ছিল।

Class 11th All Semester Question and Answer – একাদশ শ্রেণীর সমস্ত সেমিস্টার প্রশ্নউত্তর

আরোও দেখুন:-

Class 11 All Subjects 1st Semester Question and Answer Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 All Subjects 2nd Semester Question and Answer Click here

Class 11 Suggestion 2025 (Old) – একাদশ শ্রেণীর সাজেশন ২০২৫

আরোও দেখুন:-

Class 11 History Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 English Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Geography Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 History Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Political Science Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Education Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Philosophy Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Sociology Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 Sanskrit Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

Class 11 All Subjects Suggestion 2025 Click here

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Class 11th History Question and Answer / Suggestion / Notes Book

আরোও দেখুন :-

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নউত্তর Click Here

FILE INFO : সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer with FREE PDF Download Link

PDF File Name সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer PDF
Prepared by Experienced Teachers
Price FREE
Download Link  Click Here To Download
Download PDF Click Here To Download

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – অধ্যায় থেকে আরোও বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন :

Update

[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন রচনা – Rabindranath Tagore Biography]

[আমাদের YouTube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন Subscribe Now]

Info : সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

 Class 11 History Suggestion | West Bengal WBCHSE Class Eleven XI (Class 11th) History Question and Answer Suggestion 

” সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Eleven XI / WB Class 11 / WBCHSE / Class 11 Exam / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WB Class 11 Exam / Class 11th / WB Class 11 / Class 11 Pariksha ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Bhugol Shiksha .com এর পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ( একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন / একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ও উত্তর । Class-11 History Suggestion / Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer / Class 11 History Suggestion / Class-11 Pariksha History Suggestion / History Class 11 Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer / Class 11 History Suggestion FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর (Class 11 History Suggestion / West Bengal Eleven XI Question and Answer, Suggestion / WBCHSE Class 11th History Suggestion / Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer / Class 11 History Suggestion / Class 11 Pariksha Suggestion / Class 11 History Exam Guide / Class 11 History Suggestion 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030 / Class 11 History Suggestion MCQ , Short , Descriptive Type Question and Answer. / Class-11 History Suggestion FREE PDF Download) সফল হবে।

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস 

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – SAQ সংক্ষিপ্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ শ্রেণির ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – প্রশ্ন উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Question and Answer, Suggestion 

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – | পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সহায়ক – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer, Suggestion | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Suggestion | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Notes | West Bengal Class 11th History Question and Answer Suggestion. 

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – MCQ প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE Class 11 History Question and Answer, Suggestion 

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – । Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Suggestion.

WBCHSE Class 11th History Sanskritik Porospor Poriborton Suggestion | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন –

WBCHSE Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – প্রশ্ন উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।

Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Suggestions | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর 

Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর । 

WB Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Suggestion | একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – সাজেশন 

Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর – সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – সাজেশন । Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Suggestion একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

West Bengal Class 11 History Suggestion Download WBCHSE Class 11th History short question suggestion . Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Suggestion download Class 11th Question Paper History. WB Class 11 History suggestion and important question and answer. Class 11 Suggestion pdf.পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

Get the Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer by Bhugol Shiksha .com

Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB Class 11 History Suggestion with 100% Common in the Examination .

Class Eleven XI History Sanskritik Porospor Poriborton Suggestion | West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Class 11 Exam 

Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Class 11 Eleven XI History Suggestion is provided here. Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free here. 

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer 

  অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন – একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Class 11 History Sanskritik Porospor Poriborton Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Bhugol Shiksha ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।