HS History Question Paper 2020 | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০
HS History Question Paper 2020 | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০

HS History Question Paper 2020

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০

HS History Question Paper 2020 | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ : HS History Question Paper 2020 | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো। এই HS History Question Paper 2020উচ্চমাধ্যমিক  ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ মধ্যে MCQ, SAQ, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি দেওয়া হয়েছে। আপনারা যারা HS History Question Paper 2020 | পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ খুঁজে চলেছেন, তারা নিচে দেওয়া HS History Question Paper 2020 – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ২০২০ প্রশ্নপত্র গুলো ভালো করে পড়তে পারেন। 

   উচ্চমাধ্যমিক বাংলা 2020 পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ডাউনলোড। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম প্রশ্নপত্র বা উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ – HS History Question Paper 2020 নিচে দেওয়া রয়েছে।

West Bengal Higher Secondary (WBCHSE Class 12th) / HS History Question Paper 2020 | উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০

সময় : ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ( প্রথম ১৫ মিনিট শুধু প্রশ্নপত্র পড়ার জন্য এবং বাকি ৩ ঘন্টা উত্তর লেখার জন্য ) 

Full Marks :   ৮০ (80)

PART – B (Marks – 40)

1. প্রতিটি প্রশ্নের বিকল্প উত্তরগুলির মধ্যে থেকে সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে ডানদিকে নীচে প্রদত্ত বাক্সে লেখো : 1 x 24 = 24

(i) বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতা ছিলেন—

(a) শেখ মুজিবুর রহমান 

(b) জিয়াউল হক

(c) শহিদুল্লাহ 

(d) সুরাবর্দী

Ans: (a) শেখ মুজিবুর রহমান

(ii) ভারতের প্রথম অকংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন ?

(a) বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং

(b) মোরারজি দেশাই

(c) চরণ সিং

(d) চন্দ্রশেখর।

Ans: (b) মোরারজি দেশাই

(iii) বি.উপনিবেশকরণ’ বা Decolonisation শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন—

(a) ওয়াল্টার লিপম্যান

(b) মরিস ডি. মরিস

(c) ক্রিস্টোফার হিল

(d) মরিৎজ জুলিয়াস বন।

Ans: (d) মরিৎজ জুলিয়াস বন।

(iv) প্যাট্রিক লুমুম্বা কোন্ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ?

(a) ঘানা 

(b) কঙ্গো 

(c) জামাইকা

(d) মাল্টা।

Ans: (b) কঙ্গো

(v) ফালটন বক্তৃতা দেন—

(a) জর্জ কেন্নান 

(b) মার্শাল 

(c) ফ্যানন

(d) চার্চিল।

Ans: (d) চার্চিল।

(vi) ইয়ম কিপুর যুদ্ধ কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল ?

(a) সিরিয়া ও মিশর

(b) আরব ও ইজরায়েল

(c) আরব ও সিরিয়া

(d) আরব ও আমেরিকা।

Ans: (b) আরব ও ইজরায়েল

(vii) কোন খ্রীষ্টাব্দে মার্শাল প্ল্যান ঘোষিত হয়েছিল ?

(a) 1944

(b) 1945 

(c) 1947 

(d) 1948,

Ans: (c) 1947/ (d) 1948

(viii) দিয়ে বিয়েন ফুর যুদ্ধে জয়ী হয়—

(a) ভিয়েতনাম 

(b) ফ্রান্স 

(c) ইন্দোনেশিয়া

(d) ব্রিটেন।

Ans: (a) ভিয়েতনাম

(ix) কত সালের 7 ডিসেম্বর জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে ?

(a) 1941 

(b) 1942 

(c) 1943 

(d) 1944.

Ans: (a) 1941

(x) স্তম্ভ-১ এর সাথে স্তম্ভ-২ মেলাও:

স্তম্ভ-১ স্তম্ভ-২
(i) হো-চি-মিন (A) জাপান
(ii) চৌ-এন-লাই (B) ভিয়েতনাম
(iii) সুকর্ণ (C) চিন
(iv) জেনারেল তোজো (D) ইন্দোনেশিয়া

বিকল্পসমূহ :

(a) (i) – B, (ii) – D, (iii) – C, (iv) – A

(b) (i) – C, (ii) – B, (iii) – A, (iv) – D

(c) (i) – A, (ii) – D, (iii) – C, (iv) – B

(d) (i) – B, (ii) – C, (iii) – D, (iv) – A.

Ans: (d) (i) – B, (ii) – C, (iii) – D, (iv) – A.

(xi) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বাংলায় যে মন্বন্তর হয়েছিল তা হয়—

(a) 1940 সালে 

(b) 1942 সালে

(c) 1943 সালে 

(d) 1944 সালে।

Ans: (c) 1943 সালে

(xii) কোন্ মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামী ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে পরিচিত ?

(a) সরোজিনী নাইডু 

(b) মাতঙ্গিনী হাজরা

(c) অ্যানি বেসান্ত 

(d) কল্পনা দত্ত।

Ans: (b) মাতঙ্গিনী হাজরা

(xiii) “দ্য ইন্ডিয়ান মুসলমানস’ গ্রন্থটির রচয়িতা—

(a) সৈয়দ আহমেদ খান

(b) থিওডোর বেক

(c) উইলিয়াম হান্টার

(d) মৌলানা আবুল কালাম আজাদ।

Ans: (c) উইলিয়াম হান্টার

( xiv) পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল কোন্ খ্রীষ্টাব্দে ?

(a) 1930 

(b) 1931 

(c) 1932 

(d) 1933.

Ans: (c) 1932

(xv) তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন—

(a) রামমোহন রায় 

(b) বিদ্যাসাগর

(c) অক্ষয়কুমার দত্ত

(d) ভূদেব মুখোপাধ্যায়।

Ans: (c) অক্ষয়কুমার দত্ত

(xvi) চিনে 4 ঠা মে আন্দোলনের নিরিখে ‘জিউ গুয়ো’ স্লোগানের অর্থ ছিল—

(a) বিদেশীরা দূর হটো

(b) দেশকে রক্ষা করো

(c) আমরা বৌদ্ধিক সংস্কার চাই

(d) চিন কেবল চিনাদের জন্য।

Ans: (a) বিদেশীরা দূর হটো

(xvii) তিয়েনসিনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়—

(a) 1857 খ্রীষ্টাব্দে 

(b) 1858 খ্রীষ্টাব্দে

(c) 1859 খ্রীষ্টাব্দে 

(d) 1860 খ্রীষ্টাব্দে

Ans: (b) 1858 খ্রীষ্টাব্দে

(xviii) আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—

(a) 1815 খ্রীষ্টাব্দে 

(b) 1816 খ্রীষ্টাব্দে

(c) 1817 খ্রীষ্টাব্দে 

(d) 1818 খ্রীষ্টাব্দে।

Ans: (a) 1815 খ্রীষ্টাব্দে

(xix) রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়েছিল—

(a) পাঞ্জাবে 

(b) দক্ষিণ ভারতে

(c) বিহারে 

(d) বাংলা।

Ans: (b) দক্ষিণ ভারতে

(xx) স্তম্ভ-১ এর সাথে স্তম্ভ-২ মেলাও

স্তম্ভ-১ স্তম্ভ-২
(i) ফারুকশিয়ারের ফরমান (A) 1773
(ii) পিটের ভারত শাসন আইন (B) 1717
(iii) রেগুলেটিং আইন (C) 1765
(iv) কোম্পানির দেওয়ানি লাভ (D) 1784

বিকল্পসমূহ :

(a) (i)-A, (ii)-B, (iii)-C, (iv)-D

(b) (i)-D, (ii)-B, (iii)-C, (iv)-A\

(c) (i)-B, (ii)-D, (iii)-A, (iv)-C

(d) (i)-B, (ii)-A, (iii)-C, (iv)-D.

Ans: (c) (i)-B, (ii)-D, (iii)-A, (iv)-C

(xxi) ‘নতুন বিশ্ব’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন—

(a) কলম্বাস 

(b) আমেরিগো ভেসপুচি

(c) ক্যাপ্টেন বুক 

(d) গেলাম।

Ans: (b) আমেরিগো ভেসপুচি

(xxii) ‘কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গ মানুষের বোঝা’- এই ধারণাটি প্রচার করেন—

(a) রুডইয়ার্ড কিপলিং 

(b) চার্লস ডারউইন

(c) মেকলে 

(d) জুলি ফেরি।

Ans: (a) রুডইয়ার্ড কিপলিং

(xxiii) পূল্ভের মিউজিয়াম অবস্থিত—

(a) ফ্রান্সে 

(b) জার্মানিতে 

(c) ইংল্যান্ডে

(d) হল্যান্ড।

Ans: (a) ফ্রান্সে

(xxiv) রাজতরঙ্গিনীর রচয়িতা ছিলেন—

(a) বিলহন 

(b) কলহন 

(c) বাণভট্ট

(d) কালিদাস।

Ans: (b) কলহন

2.নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির সংক্ষেপে উত্তর দাও ( বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয় ) : 1 x 16 = 16

(i) স্বত্ববিলোপ নীতি কে প্রবর্তন করেন ?

Ans: লর্ড ডালহৌসি।

(ii) চীনে মুক্তদ্বার নীতি কে প্রবর্তন করেন ?

Ans: আমেরিকার রাষ্ট্র সচিব স্যার জন হে।

অথবা,

কাও টাও প্রথা কী ?

Ans: বিদেশিদের চীনা সম্রাটকে নতজানু হয়ে সম্মান জানানোর প্রথা।

(iii) আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ?

Ans: স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী।

অথবা,

বক্সার প্রটোকল কাদের মধ্যে সম্পাদিত হয় ?

Ans: চীন ও আটটি বিদেশি শক্তি।

(iv) বিধবা বিবাহ আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা কে ছিলেন ?

Ans: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

(v) সিমলা দৌত্য কী ?

Ans: মুসলিম লীগের নেতৃত্বে 906 খ্রিস্টাব্দে।

(vi) লিনলিথগো প্রস্তাব কবে ঘোষিত হয় ?

Ans: 1940 খ্রিস্টাব্দে।

(vii) বুলগানিন কে ছিলেন ?

Ans: সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা ।

অথবা,

ইয়াসির আরাফাত কে ছিলেন ?

Ans: প্যালেস্টাইনের নেতা।

(viii) হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা কে ছিলেন ?

Ans: পরমাণু বিজ্ঞানী।

অথবা,

স্বাধীন আলজেরিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন ?

Ans: আহমেদ বেন বেল্লা বেল্লাহ।

(ix) কোন মার্কিন সেনাপতি সর্বপ্রথম জাপানে পদার্পণ করেন ?

Ans: কমোডর পেরি।

(x) লগ্নি পুঁজি কী ?

Ans: একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্থের অধ্যায়ন.

অথবা,

ওয়েলথ অফ নেশন গ্রন্থটির রচয়িতা কে ?

Ans: অ্যাডাম স্মিথ।

(xi) কোন দুটি স্থানের মধ্যে ভারতে প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয় ?

Ans: বোম্বে থেকে থানে।

(xii) ‘সত্যশোধক সভা’র’ প্রতিষ্ঠাতা কে ?

Ans: জ্যোতিবা ফুলে ।

অথবা,

উডের ডেসপ্যাচ কী ?

Ans: শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি।

(xiii) লখনৌ চুক্তি কাদের মধ্যে সম্পাদিত হয় ?

Ans: জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে।

(xiv) কোন জাহাজে নৌ বিদ্রোহ শুরু হয় ?

Ans: তলোয়ার নামক জাহাজে।

অথবা,

এশিয়া বাসীদের জন্য এশিয়া’ – এই শ্লোগানের উদ্দেশ্য কী ছিল ?

Ans: এশিয়াকে ইউরোপীয় শক্তি মুক্ত করা।

(xv) বেষ্টনী নীতি কী ?

Ans: কমিউনিস্ট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকার প্রতিরোধ।

(xvi) স্বাধীন বাংলাদেশে কবে উদ্বোধন হয় ?

Ans: 1971 খ্রিস্টাব্দে।

PART- A (Marks : 40)

1. যে-কোন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দাও। (প্রতিটি খণ্ড থেকে ন্যূনতম দুটি প্রশ্নের উত্তর আবশ্যক ) : 8 × 5 = 40

খণ্ড – ক

(i) পেশাগত ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ? অপেশাদারি ইতিহাসের সঙ্গে পেশাদারি ইতিহাসের পার্থক্য কী ?

Ans: ইতিহাস হল মানব স্মৃতির অতীত কর্মকাণ্ডের কালানুক্রমিক ও ধারাবাহিক লিখিত বিবরণ। এই ইতিহাস নিয়ে যারা চর্চা করে তাদেরকে ইতিহাসবিদ বা ঐতিহাসিক বলে। এই ঐতিহাসিক এর মধ্যে অনেকেই ইতিহাস চর্চাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন তাই তাদেরকে পেশাদারী ঐতিহাসিক নামে অভিহিত করা হয়। আবার ঐতিহাসিকদের মধ্যে কেউ কেউ অবসর হিসাবে শখের ইতিহাস চর্চা করেন তারা হলেন মূলত অপেশাদারী ঐতিহাসিক। বর্তমানকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাদারী ভিত্তিতে নানা ধরনের ঐতিহাসিক গবেষণার কাজ হয়ে চলেছে৷

পেশাদারি ও অপেশাদার ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য—

পেশাদারী ইতিহাসের সাথে অপেশাদারী বিষয়ে যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল যথা–

উদ্ভবগত পার্থক্যঃ প্রকৃতপক্ষে উনবিংশ
শতকের শেষে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউরোপের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস চর্চার কাজ পেশাদারী ভিত্তিক হয়। সেই সময় থেকে কোন কোন ঐতিহাসিক ইতিহাস চর্চা বা ইতিহাসের গবেষণাকে পেশাদারী কাজ হিসেবে গ্রহণ করেন। যার ফলে নতুন দিক উন্মোচন হয়।

অন্যদিকে,অপেশাদার ইতিহাস চর্চা উনিশ শতকের অনেক আগেই অর্থাৎ প্রাচীনকাল থেকে শুরু বলা যায়। তাই বলা যায় হেরোডোটাস, থুকিডিডিস যে ইতিহাস চর্চার সূচনা ঘটান তাতে পেশাদারি তত্ত্বের কোন ছাপ ছিল না।

আর্থিক সম্পর্ক গত পার্থক্যঃ পেশাদারী
ইতিহাস চর্চায় আর্থিক সম্পর্ক বিষয়ে ছড়িয়ে থাকে। এই ইতিহাস চর্চার জন্য অনেক সময় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়। পাশাপাশি এই ইতিহাস চর্চায় ইতিহাসবিদ ব্যক্তিগতভাবেও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পান

অন্যদিকে, অপেশাদার ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে সাধারণত সরকারি আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়না। ইতিহাসবিদ বা গবেষকগণ নিজের আর্থিক ব্যয়ে ইতিহাস চর্চা বা গবেষণা করেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সুবিধা লাভের তেমন কোনো সুযোগ নেই।

পদ্ধতিগত পার্থক্যঃ পেশাদারী ইতিহাসবিদগন তাদের গবেষণার কাজে খুব উন্নতমানের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করেন।

অন্যদিকে, অপেশাদার ইতিহাস চর্চায় সাধারণত স্থানীয় তথ্যাদি,ক্ষেত্রসমীক্ষা প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে ঐতিহাসিক তত্ত্ব সংগ্রহ করা হয়৷

সময়গত পার্থক্যঃ পেশাদারী ইতিহাস হলো একটি দীর্ঘ সর্বক্ষণের কাজ। তাই গবেষকরা বা ইতিহাসবিদরা তাদের প্রধান পেশা হিসেবে ইতিহাস চর্চার কাজ করেন।

অন্যদিকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপেশাদারি ইতিহাস চর্চায় গবেষকগণ তাদের ইতিহাস চর্চার কাজকে একটি আংশিক সময়ের কাজ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।

ব্যক্তিগত পার্থক্যঃ বর্তমানকালে অধিকাংশ বর্বর ধরনের পেক্ষাপটে ইতিহাস চর্চা পেশাদারী ইতিহাসবিদরা করেন। এক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে এই জাতি বা রাষ্ট্রের এমনকি সভ্যতার উত্থান পতন, সমাজব্যবস্থা,অর্থনীতি,রাজনীতি,ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করা হয়।

অন্যদিকে, বর্তমানকালে অপেশাদারী ইতিহাস চর্চা তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র প্রেক্ষাপটে হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব স্থানীয় ইতিহাস চর্চা হয় সেগুলি স্থানীয় ইতিহাসকে তুলে ধরে।

(ii) সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে হবসন-লেনিন তত্ত্ব আলোচনা করো।

Ans: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল নয়া উপনিবেশবাদ ও নয়া সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসনের ব্যাখ্যা—

ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তার সাম্রাজ্যবাদ একটি সমীক্ষা নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল一

(১) অর্থনৈতিক মুনাফা লাভঃ হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনাে মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে মূলধনের পাহাড় সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়ােগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে।

(২) পুঁজিপতিদের চাপঃ হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়ােগ করার জন্য পুঁজিপতিরা নিজ দেশের সরকারকে উপনিবেশ দখলে বাধ্য করে। অর্থাৎ হবসনের মতে, বাড়তি মূলধনের চাপ ই সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ দখলের মূল কারণ।

(৩) অর্থনৈতিক শােষণঃ হবসন দেখিয়েছেন যে, অধিক মুনাফা ও সম্পদ অর্জনের জন্য ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র উপনিবেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উপনিবেশের বাজারে নিজেদের শিল্পজাত পণ্য বিক্রয় করতে থাকে। এইভাবে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র কর্তৃক উপনিবেশগুলি শােষিত হয় এবং পরিণামে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ফুলে ফেঁপে ওঠে।

(৪) ঔপনিবেশিকতাবাদের অবসানের উপায়ঃ হবসনের মতে, এই ব্যবস্থার প্রতিকার করতে হলে পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন দরিদ্র শ্রেণির মানুষগুলাের মধ্যে বিতরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়নকার্যে তা ব্যবহার করতে হবে। তার মতে, যদি লােকের জীবনযাত্রার মান বাড়ে, তবে তারা কলকারখানায় তৈরি বাড়তি জিনিস কিনে উদ্বৃত্ত মালকে ব্যবহার করতে পারবে। ফলে উদ্বৃত্ত মালের বিক্রির জন্য উপনিবেশ দখলের দরকার হবে না।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে লেনিনের ব্যাখ্যা—

রাশিয়ার বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার সাম্রাজ্যবাদঃ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর নামক গ্রন্থে (১৯১৬ খ্রি.)। এ সম্পর্কে তার প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল一

(১) পুঁজির উদ্ভব এবং তা বিনিয়ােগঃ ইউরোপের দেশগুলিতে শিল্পের অগ্রগতি ঘটার ফলে পুঁজিপতিদের হাতে বিপুল পরিমাণ পুঁজি জমা হয়। এবার তারা আরও বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য সেই পুঁজি পুনরায় বিনিয়ােগ করতে উদ্যত হয় এবং এজন্য তারা বেছে নেয় উপনিবেশগুলিকে। তারা উপনিবেশ থেকে সংগ্রহ করা কাঁচামাল নিজের দেশে না নিয়ে গিয়ে উপনিবেশেই পুঁজি বিনিয়ােগ করতে চায়। তাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পুঁজিবাদী শ্রেণির স্বার্থে উপনিবেশ দখল করে এবং পুঁজিবাদীরা সেখানেই পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চালায়।

(২) বাজার দখল ও কাঁচামাল সংগ্রহঃ অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের শিল্প মালিকরা নিজ দেশের প্রয়ােজনের তুলনায় অনেক বেশি পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করে। প্রয়ােজনের অতিরিক্ত এই পণ্য উৎপাদনের জন্য সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং সেই পণ্যকে বিক্রি করার জন্য প্রয়ােজন ছিল উপনিবেশের। লেনিনের মতে, এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালায়।

(৩) প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সাম্রাজ্যবাদঃ লেনিন বলেছেন, পুঁজিবাদের জঠরে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম। উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা জন্ম দেয় যুদ্ধের। অর্থাৎ পুঁজিবাদী অর্থনীতিই হল যুদ্ধের জন্মদাতা—যার সূত্রপাত হয় উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে।

(৪) অনুগত অভিজাত শ্রমিক শ্রেণির প্রতিষ্ঠাঃ পুঁজিবাদী অর্থনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, মালিক শ্রেণির কর্তৃক শ্রমিক শ্রেণির শােষণ। কিন্তু লেনিনের মতে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিকে উপনিবেশে পরিণত করে সেখানকার নতুন শ্রমিক শ্রেণির ওপর শােষণ চালালেও নিজ দেশের শ্রমিকদের উৎকোচ দিয়ে বশীভূত করেছিল। কারণ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির লক্ষ্য ছিল নিজ দেশের এই অনুগত অভিজাত শ্রমিক শ্রেণি-কে শ্রমিক বিপ্লব থেকে বিরত রাখা।

মূল্যায়ণঃ উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন ও লেনিনের তত্ত্ব সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়। বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই তত্ত্বের ভ্রান্তি ধরা পড়ে। তবে এই তত্ত্বের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তাই ডেভিড থমসনকে সমর্থন করে বলা যায় যে, সাগরপারে নিরাপদ বিনিয়ােগের ক্ষেত্র সন্ধানের আগ্রহই ইউরােপীয় দেশগুলিকে উপনিবেশ দখলে বিশেষ উদ্যোগী করে তুলেছিল।

(iii) ভারতে অবশিল্পায়নের কারণগুলি কী ছিল ? ভারতীয় অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব আলোচনা করো।

(iv) ব্রিটিশ শাসনে ভারতে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের আন্দোলনের বিবরণ দাও।

Ans: চুয়াড় বিদ্রোহ—

কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে আদিবাসী- উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রথম সশস্ত্র প্রতিবাদ ছিল চুয়াড় বিদ্রোহ। চুয়াররা ছিল মেদিনীপুর, বাকুড়া জেলার অন্তর্গত ‘জঙ্গলমহল’ নামক বনাঞ্চলের আদিম আধিবাসী। ব্রিটিশ-সৃষ্ট নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় অখুশি চুয়াড়, কৃষক ও জমিদাররা একযোগে বিদ্রোহ ঘোষনা করে। জগন্নাথ সিং, দুর্জন সিং, রানী শিরোমনি প্ৰমুখ বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলনের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। ১৭৬৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় তিন দশক ধরে বিদ্রোহ চলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়নের মাধ্যমে বিদ্ৰোহ দমন করে।

কোলবিদ্রোহ—

বর্তমান বিহার, ঝাড়খণ্ডের অন্তর্গত ছোটনাগপুর, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতি জনগোষ্ঠী কোল হিসেবে পরিচিত। কোলদের বাসভূমি অঞ্চল ক্রমে ব্রিটিশের খাজনা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হলে বহিরাগত ইজারাদারদের উচ্চ রাজস্বের চাপ এবং নির্মম অত্যাচার কোলদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে। সেই সঙ্গে কোম্পানির অরণ্য আইন, কোলদের চিরাচরিত অরন্যের অধিকার কেড়ে নেয়। ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দেই তারা প্রথম সংঘবদ্ধ বিদ্রোহের সূচনা করে। বুদ্ধ ভগৎ, জোয়া ভগৎ, সুঁই মুন্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে কোল বিদ্রোহ পরিচালিত হয়।

সাঁওতাল বিদ্রোহ—

মহাবিদ্রোহের পূর্বে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত অসংখ্য কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহগুলির মধ্যে সম্ভবত সর্বাপেক্ষা ব্যাপক, বিস্তৃত তথা রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহ ছিল ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ। সাঁওতালদের বাসভূমি ‘দামিন-ই-কো’ অঞ্চলে সরকারী রাজস্বের চাপ বৃদ্ধি; সাঁওতালদের উপর জমিদার, ইজারাদার, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ প্রভৃতির অত্যাচার ও শোষণ; বহিরাগত মহাজন ও ব্যবসায়ী কর্তৃক সহজ- সরল সাঁওতালদের বঞ্চনা ও ঋণের দায়ে জমি দখল; রেলপথ নির্মানের সঙ্গে যুক্ত ইংরেজ ঠিকাদার ও কর্মচারীদের সাঁওতাল সমাজব্যবস্থা ও সাঁওতাল রমনীদের প্রতি অমর্যাদাকর আচরন প্রভৃতি সহজ-সরল সাঁওতালদেরও বিদ্রোহী করে তোলে। সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব প্রমুখের সাহসী নেতৃত্বে বিদ্রোহ ক্ৰমে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। শেষপর্যন্ত এই বিদ্রোহের ফলে ইংরেজ সরকার সাঁওতালদের জন্য ‘সাঁওতাল পরগনা’ নামে একটি পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করে সাঁওতালদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করো।

মুন্ডা বিদ্ৰোহ—

ছোটনাগপুর মালভূমি ও সন্নিহিত অরণ্য- অধ্যুষিত অঞ্চলে ছিল ভারতের প্রাচীনতম আদিবাসী মুন্ডাদের ইংরেজ-সৃষ্ট ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় চিরাচরিত ‘খুঁৎকাঠি’ প্রথা বা জমির যৌথ মালিকানা ব্যবস্থায় ভাঙন ধরে। তাছাড়া, ছোটনাগপুর অঞ্চলে বহিরাগত ঠিকাদার, জমিদার, মহাজনদের আগমন এবং মুন্ডাদের চিরাচরিত সমাজব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, তাদের বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা, বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ প্রভৃতি মুন্ডাদের শেষপর্যন্ত বিদ্রোহের পথে চালিত করে। ১৮৯৯ সালে ‘স্বাধীন মুন্ডারাজ্য’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে বিদ্রোহের সূচনা হয়। মুন্ডাদের আত্মত্যাগ, স্বাধীনতাস্পৃহা এবং মরনপণ সংগ্রাম ইতিহাসের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত।

ভীল বিদ্রোহ—

পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পাদদেশে খান্দেশ অঞ্চলে বসবাসকারী আদিম উপজাতিরা ভীল নামে পরিচিত। ব্রিটিশের শাসন, শোষণ, অত্যাচার, মহাজনী শোষণ প্রভৃতির বিরুদ্ধে ১৮১৮-১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে তারা বিদ্রোহে সামিল হয়। চিল নায়েক, শিউরাম প্রমুখ ভীলদের নেতৃত্ব দেন।

ব্রিটিশ শাসনকালে দলিত সম্প্রদায়ের আন্দোলন—

মারাঠা ‘দলন’ শব্দ থেকে দলিত শব্দের উৎপত্তি, যার আক্ষরিক অর্থ পদদলিত বা অবহেলিত। ভারতীয় বর্ণ-বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থায় প্রান্তিক স্তরে অবস্থিত শোষিত, বঞ্চিত, অস্পৃশ্য জনগোষ্ঠী ‘দলিত’ নামে পরিচিত ছিল। সাধারণভাবে মাহার, চামার, একাবা, পুলায়া, নমঃশূদ্র প্রভৃতি জনগোষ্ঠী দলিত নামে পরিচিত ছিল।

জ্যোতিবা ফুলের নেতৃত্বে আন্দোলন—

উনিশ শতকে মহারাষ্ট্রের একজন বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক ছিলেন জ্যোতিবা ফুলে ১৮৭৩ সালে তিনি ‘সত্যশোধক সমাজ’ প্রতিষ্ঠা করে সমাজ সংস্কারে ব্রতী হন।

শ্রীনারায়নগুরুর নেতৃত্বে আন্দোলন—

কেরালায় দলিত মানুষদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় জোরদার আন্দোলন সংগঠিত করেন এজহাবা সম্প্রদায়ের নেতা শ্রীনারায়নগুরু। ১৯২৪ সালে কেরালায় একটি হিন্দু মন্দিরে নিম্নবর্ণের মানুষের প্রবেশাধিকারের দাবিতে ভাইকম সত্যাগ্রহ’ নামে একটি সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনা করে দলিত শ্রেণির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ব্ৰতী হন।

আম্বেদকরের নেতৃত্বে আন্দোলন—

দলিত আন্দোলনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন বাবাসাহেব ভীমরাও রামজী আম্বেদকর। হিন্দু সমাজের অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে তিনি জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৩০ সালে তাঁর নেতৃত্বে কলারাম মন্দিরে প্রবেশের দাবীতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে ওঠে। স্বাধীন ভারতে তাঁর নেতৃত্বে রচিত নতুন সংবিধান অস্পৃশ্যতাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে।

গান্ধীজির নেতৃত্বে আন্দোলন—

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধিজিও দলিত শ্রেণির আর্থ-সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে সরব হয়েছিলেন। গান্ধিজী বৰ্ণাশ্ৰম ব্যবস্থাকে অক্ষুন্ন রেখেই অস্পৃশ্যতা দূরীকরন ও দলিত সম্প্রদায়ের কল্যানে মনোনিবেশ করেন। গান্ধিজি ‘দলিত’ শব্দের পরিবর্তে ‘হরিজন’ (ঈশ্বরের সন্তান) শব্দটি ব্যবহারের পক্ষপাতী ছিলেন।

বাংলায় দলিত আন্দোলন—

দলিত আন্দোলনের এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ছিল অবিভক্ত বাংলার-নমঃশূদ্র আন্দোলন। পূর্ববঙ্গের ছয় জেলা-যশোহর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং ফরিদপুর ছিল নমঃশূদ্রদের আদি বাসস্থান। পেশাগত দিক থেকে নমঃশূদ্ররা ছিল মূলত কৃষিজীবি এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল কর্মের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সমাজে তারা ছিল অস্পৃশ্য।

হরিচাদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে আন্দোলন—

পূর্ববঙ্গের নিপীড়িত সম্প্রদায়কে নতুন জীবন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করেন হরিচাঁদ ঠাকুর। তিনি ‘মতুয়া’ নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন গড়ে তোলেন। তাঁর পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়া আন্দোলন ও মতাদর্শকে আরও জোরদার করে তোলেন। পরবর্তীকালে প্রমথরঞ্জন ঠাকুর, যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল, বিরাটচন্দ্র মন্ডল প্রমুখের নেতৃত্বে মতুয়া আন্দোলন আরও সংগঠিত রূপ পায়।

মূল্যায়ন—

সামগ্রিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায়, আদিবাসী ও দলিত শ্রেণির আন্দোলন জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না বরং জাতীয় আন্দোলনের মূল ধারাকে, অন্ত্যজ শ্রেণির এই সংগ্রাম তাদের সুদৃঢ় বাহুবলে টেনে নিয়ে গেছে বহুদুর।

অথবা,

নানকিং সন্ধির (১৮৪২ খ্রীষ্টাব্দ) শর্তগুলি কী ছিল ?

Ans: নানকিং-এর সন্ধি—

সন্ধি স্বাক্ষর: আফিম যুদ্ধে ব্রিটেন চিনকে হারিয়ে দেয়। পরাজিত চিন যুদ্ধ শেষে বিজয়ী ব্রিটেনের সঙ্গে এক সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হয়। চিনা কমিশনার চিইং (Chiying) এবং নব নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার হেনরি পট্টিনগার (Sir Henry Pottinger) -এর উদ্যোগে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় নানকিং চুক্তি (২৯ আগষ্ট, ১৮৪২ খ্রি.)। এই সন্ধি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আফিম যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

নানকিং সন্ধির শর্তাবলি—

(১) চিন গ্রেট ব্রিটেনকে হংকং সমর্পন করবে অর্থাৎ হংকং ইংরেজদের অধীনে আসবে।

(২) চিন সর্বমােট ব্রিটেনকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২১ মিলিয়ন ডলার দেবে। এই ২১ মিলিয়নের মধ্যে ১২ মিলিয়ন ডলার সামরিক খরচ বাবদ, ৬ মিলিয়ন ডলার আফিমের ক্ষতিপূরণ বাবদ এবং ৩ মিলিয়ন ডলার ব্রিটিশ বণিকদের কাছে হং বণিকদের ঋণ পরিশােধ বাবদ।

(৩) ক্যান্টন, অ্যাময়, ফুচাও, নিংপাে এবং সাংহাই-এই পাঁচটি বন্দর ইংরেজ বণিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ওই বন্দরগুলিতে ব্রিটিশ কনসাল, ব্রিটিশ বণিকগণ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতে পারবে।

(৪) খুব কম সময়ের মধ্যে এক নির্দিষ্ট পণ্যশুদ্ধকের হার নির্ধারণ করা হবে। আমদানি ও রপ্তানির উপর অভিন্ন (Uniform) এবং অনতিরিক্ত (Moderate) পণ্যশুল্ক আরােপ চিন মেনে নেবে।

(৫) ব্রিটিশ প্রতিনিধি পটিনগার (Pottinger) চোরাকারবারি (বিনা শুল্কে আমদানি রপ্তানি) বন্ধের জন্য সাহায্য করবেন।

(৬) ব্রিটেন ও চিনের মধ্যে সরকারি চিঠিপত্র আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে সমতা নীতি বজায় রাখা হবে।

(৭) ইতিপূর্বে যেসব চিনা বণিকগােষ্ঠীকে বাণিজ্যের একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়েছিল তা বাতিল হবে।

আফিম বাণিজ্যই ছিল আফিম যুদ্ধের মূল কারণ। কিন্তু, সন্ধিতে শুধুমাত্র নষ্টহয়ে যাওয়া আফিমের ক্ষতিপূরণ ছাড়া আফিম বিষয়ক অন্যান্য উল্লেখ ছিল না। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, ব্রিটিশ প্রতিনিধি পটিনগার আশা প্রকাশ করেন এই বলে যে, চিনা সরকার আফিম আমদানি আইনসিদ্ধ করবে ও নিয়ন্ত্রণ করবে। বাস্তবে নানকিং চুক্তির পরেও ইংল্যান্ড চিনে আফিম রপ্তানি বন্ধ করেনি। ব্রিটেনের পক্ষে রানি ভিক্টোরিয়া পরবর্তী সময়ে এই সন্ধির শর্তগুলির প্রতি সমর্থন জানান (২৮ ডিসেম্বর, ১৮৪২ খ্রি.)।

খণ্ড – খ

(v) 1919 সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য ও ত্রুটিগুলি আলোচনা করো।

Ans: ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের পর থেকে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস দায়িত্বশীল শাসন কায়েমের ওপর জোরালাে দাবি জানায়। ফলে ১৯১৯ সালে ভারত শাসন আইন বা মন্টেগু-চেমসফোর্ড ভারত শাসন-সংস্কার আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—

(১) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা : এ আইনের মাধ্যমে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইন পরিষদ সৃষ্টি করা হয়। উচ্চ পরিষদকে রাষ্ট্রীয় পরিষদ এবং নিম্ন-কক্ষকে ব্যবস্থাপক সভা বলা হয়।

(২) প্রদেশে দ্বৈতশাসন : এ আইন দ্বারা প্রদেশে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। প্রাদেশিক বিষয়গুলােকে ‘সংরক্ষিত’ ও ‘হস্তান্তরিত’- এ দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

(৩) প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : এ আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলােতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তিত হয়।

(৪) পৃথক নির্বাচন : এ আইন দ্বারা পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা হয়।

(৫) যুক্তরাষ্ট্রীয় : এ আইনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়।

(৬) আইনসভার সীমাবদ্ধতা : এ আইনের ফলে আইন পরিষদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ রাখা হয়। কর ধার্য ও ব্যয় নির্ধারণের | ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেলের অপরিসীম ক্ষমতা রাখা হয়।

(৭) শাসন পরিষদ : গভর্নর জেনারেলকে সহায়তা করার জন্য ৭ (সাত) সদস্যবিশিষ্ট একটি শাসন পরিষদ গঠন করা হয়।

(৮) ক্ষমতা বণ্টন : পররাষ্ট্র, দেশরক্ষা, যােগাযােগ, মুদ্রা ইত্যাদি বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়। প্রাদেশিক | বিষয়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা, বিচার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি বিষয় প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়।

(৯) সংসদীয় সরকার : এ আইনে প্রদেশগুলােতে সীমিত আকারে সংসদীয় সরকার-ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।

১০. হাইকমিশনার পদ : এ আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে “ভারতীয় হাই কমিশনার” পদের সৃষ্টি করা হয়।

আইনের ত্রুটি সমূহ—

মন্ট-ফোর্ড রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ১৯১৯ সালে যে ভারত শাসন আইন পাস হয় তা ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এ আইনটি মধ্যপন্থী এবং এ্যাংলো- ইন্ডিয়ান ছাড়া সকল ভারতীয়দের মধ্যে গভীর অসন্তোষ এবং হতাশার সৃষ্টি করে। মিসেস বেসান্ত এই আইন সম্পর্কে তার New India বইতে মন্তব্য করেন, “The scheme was ungenerous for England to offer and unworthy for Indian to accept” বালগঙ্গাধর তিলক এই আইন সম্পর্কে বলেন “ আইনটি একটি সূর্যলোকহীন প্রভাতের সৃষ্টি করেছে । এ আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের কিছু সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হলেও ভারতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা এবং প্রশাসনে ভারতীয়দের জড়িত করণের ক্ষেত্রে এ আইন ব্যর্থ হয় । নিম্নে এ আইনের প্রধান প্রধান ত্রুটি সমূহ আলোচনা করা হলো—

(১) এ আইনে যে কেন্দ্রীয় শাসন পরিষদ গঠিত হয় তা প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা ছিল না। শাসন বিভাগ ছিল মূলতঃ গভর্নর জেনারেলের আজ্ঞাবহ এক প্রতিষ্ঠান। পরিষদের সদস্যবৃন্দ যেহেতু ভারত সচিব কর্তৃক অপসারিত হতেন, সেহেতু কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ব ছিল না। সদস্যদের উপর কেন্দ্রীয় আইন পরিষদেরও কোন এক্তিয়ার ছিল না। গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদে যে ৩ জন ভারতীয় সদস্য ছিলেন তারা সবাই বড়লাটের অনুগত হয়ে কাজ করতেন। ভারতীয় সদস্যদের আইন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি গুরুত্বহীন দপ্তরের ভার দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে, গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলি ইংরেজদের অধীনে রাখা হয়।

(২) কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে নানা দিক হতে গুরুত্বহীন ছিল। প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ, আইন প্রণয়ন এবং অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আইন পরিষদের কোন ক্ষমতা ছিল না। বাজেটের ৬০% এর উপর কোনো ভোটাভুটি করা যেত না। ৪০% উপর আইনসভা পাস না করলেও বড়লাট বিশেষ ক্ষমতাবলে তা কার্যকরী করতে পারতেন। বড়লাটের পূর্ব সম্মতি ছাড়া কোন বিল উত্থাপন করা যেত না। কোন বিল আইনসভা নাচক করলে বড়লাট অর্ডিন্যান্স ও সার্টিফিকেটের জোরে তা বৈধ করতে পারতেন। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত যে কোনো বিলে তিনি ভেটো দিতে পারতেন। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোটাধিকার ছিল খুবই সীমাবদ্ধ। একমাত্র বিত্তশালী লোকজনই ভোটাধিকার লাভ করেন। সুতরাং কেন্দ্রীয় আইনসভা প্রকৃতপক্ষে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভিত্তিতে গঠিত হয়নি।

(৩) কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে দপ্তর বন্টন ছিল ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে দপ্তর বণ্টনের সময় কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো দেওয়া হয়।

(৪) ভারতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯১২ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ৯টি প্রদেশে ‘দ্বৈত শাসন’ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এর আগু কারণ ছিল ভারতে দায়িত্বশীল সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দান করা। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এটাও আশা করা হয়েছিল যে, দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা ব্রিটিশ আমলাতন্ত্র এবং ভারতীয় জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু কার্যত তা হয়নি।

(vi) 1942 খ্রীষ্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখো।

ভূমিকাঃ 1942-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল ভারতীয় জাতিয় সংগ্রামের ইতিহাসে ‘সর্বশেষ ও সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন’। গান্ধিজি পরিচালিত এই আন্দোলন ছিল সর্বাপেক্ষা ব্যাপক ও ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

ভারত ছাড়ো প্রস্তাব 1942 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সমিতির ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাবে বলা হয় যে, শুধু ভারতের মঙ্গলের জন্যই নয়, ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অবসান এবং বিশ্বের নিরাপত্তার জন্যও ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান একান্ত জরুরি। এই প্রসঙ্গে গান্ধিজি ঘোষণা করেন—‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’।

আন্দোলনের সূচনা 1942 খ্রিস্টাব্দের 8 আগস্ট রাতে বোম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেস সমিতির বিপুল ভোটে ভারত ছাড়ো প্রস্তাব পাস হয়। ঘোষণা করা হয় 9 আগস্ট থেকে সারা ভারত ব্যাপী ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হবে এবং ইংরেজ ভারত না ছাড়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। কিন্তু 8 আগস্ট মধ্যরাতে গান্ধিজি, জওহরলাল, প্যাটেল, জে বি কৃপালনি-সহ শীর্ষ নেতাদের ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করলে পরদিন সকালে সারা ভারত গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে।

বিস্তারঃ কোনো শীর্ষ নেতা ছাড়াই জনগণ নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। (1) বাংলার মেদিনীপুর জেলার তমলুক ও কাঁথি মহাকুমায় এই আন্দোলন সবথেকে তীব্র আকার ধারণ করে। তমলুকে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে। এছাড়াও কলকাতা, ঢাকা, হুগলি-সহ বাংলার বিভিন্ন স্থানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। (2) বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজাফফরপুর, যুক্তপ্রদেশের আজমগড়, জৌনপুর, গোরক্ষপুর প্রভৃতি জেলায় গান্ধিজির ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’ ধ্বনি জনগণকে স্বাধীনতালাভে ব্যাকুল করে। (3) বোম্বাই, আমেদাবাদ, পুনা প্রভৃতি অঞ্চলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পাটনা, কটক, বেনারস প্রভৃতি স্থানে আন্দোলনকারীরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

নেতৃবৃন্দঃ গান্ধিজির ডাকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যাঁরা দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ, অরুণা আসফ আলি, সুচেতা কৃপালনি, অজয় মুখার্জি, সুশীল ধাড়া প্রমুখ। এছাড়াও আসামের 13 বছরের স্কুলছাত্রী কনকলতা বড়ুয়া ও মেদিনীপুরের তমলুকের 73 বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন উল্লেখযোগ্য।

ব্রিটিশের তীব্র দমননীতি আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে গুলিচালনা, গ্রেফতার, জরিমানা, লাঠিচালনা, বেতের আঘাত এমনকি বিমান থেকে গোলাবর্ষণও করা হয়। সারা দেশে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর তান্ডব শুরু হয়।

ব্যর্থতার কারণ ভারত ছাড়ো আন্দলন ব্যর্থতার পিছনে একাধিক কারণ দায়ী ছিল। যথা—

(১) শীর্ষ নেতৃত্বের অভাবঃ গান্ধিজি সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কারারুদ্ধ থাকায় এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো উপযুক্ত নেতা ছিলেন না।

(২) ঐক্যের অভাবঃ মুসলিম লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি, হিন্দু মহাসভা কেউই আন্দোলন সফল করার জন্য কংগ্রেসকে সমর্থন করেনি। এই দলগত ঐক্যের অভাব আন্দোলনকে ব্যর্থ করে।

(৩) তীব্র সরকারি দমননীতিঃ ব্রিটিশের তীব্র দমননীতি আন্দোলনকে সফল হতে দেয়নি। দৈহিক নির্যাতন, গ্রফতার, ঘর পুড়িয়ে দেওয়া, ধর্ষণ, এমনকি গুলি চালিয়ে ব্রিটিশ সরকার এই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়।

(৪) নেতৃত্বের কালবিলম্বঃ 1942 সালের 14 জুলাই ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গৃহীত হলেও আন্দোলন শুরু হয় 9 আগস্ট। এই সময়ের মধ্যে সরকার নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়। নেতারাও এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। জওহরলালের চোখে এই অভ্যুত্থান ছিল ‘জনসাধারণের তাৎক্ষণিক উন্মাদনা’।

গুরুত্বঃ আপাত দৃষ্টিতে ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এর গুরুত্ব ছিল অনস্বীকার্য—

(১) ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ফলে জাতীয় কংগ্রেসের মর্যাদা ও প্রভাব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

(২) এই আন্দোলন সাম্প্রদায়িক ঐক্যকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে।

(৩) এই আন্দোলন প্রমাণ করে ভারতীয়দের জাতীয় চেতনা কত গভীর। তারা শুধুমাত্র স্বাধীনতার জন্য সর্বপ্রকার আত্মত্যাগে প্রস্তুত।

উপসংহার 1942-এর আন্দোলন যেভাবে জাতীয় জাগরণ ঘটিয়েছিল ইতিপূর্বে তা আর দেখা যায়নি। তাই ঐতিহাসিক বরুণ দে’র মতে— “ভারত ছাড়ো আন্দোলন যেন ব্যর্থ হয়েও ব্যর্থ হয়নি”।

(vii) জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মূল্যায়ন করো।

অথবা,

কোরিয় যুদ্ধের (1950 খ্রীষ্টাব্দ) ফলাফল ও তাৎপর্য কী ছিল ?

(viii) সার্কের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করো। এর উদ্দেশ্য কী ছিল ?

◆ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি, বিনামূল্যে নোটস, সাজেশন, PDF ও সমস্ত আপডেটের জন্য আমাদের WhatsApp Group এ Join হয়ে যাও।

HS WhatsApp Groups Click Here to Join

HS Suggestion 2025 | উচ্চ মাধ্যমিক সাজেশন ২০২৫

আরোও দেখুন:-

HS Bengali Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

HS English Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

HS History Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

HS Geography Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

HS Political Science Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

HS Philosophy Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

HS Sanskrit Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

HS Education Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

HS Sociology Suggestion 2025 Click here

আরোও দেখুন:-

HS All Subjects Suggestion 2025 Click here

HS History Question Paper 2020 | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০

File Details: 

PDF File Name WB HS History Question Paper 2020 | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০
Board WBCHSE
Download Link Click Here To Download
Download PDF Click Here To Download

Info : West Bengal HS History Question Paper 2020 | WBCHSE Class 12th HS History Question Paper 2020

HS History Question Paper 2020 download with Sure Common in Examination. West Bengal HS 2020 Bengali Question Paper and new question pattern. WBCHSE 12th Class Board Exam suggestive questions. HS Bengali Question Paper PDF Download. Important questions for WB HS 2020 Bengali Subject. West Bengal Council of Higher Secondary Education HS 2020 Model Question Paper Download.

West Bengal HS  Bengali Question Paper 2020 Download. WBCHSE HS Bengali short question Question Paper 2020 . HS History Question Paper 2020  download. HS Question Paper  Bengali. WB HS 2020 Bengali Question Paper and important questions. HS Question Paper 2020 pdf.পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক  বাংলা পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন উত্তর ও শেষ মুহূর্তের প্রশ্নপত্র ডাউনলোড। উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

Get the HS History Question Paper 2020 by BhugolShiksha.com

 West Bengal HS History Question Paper 2020  prepared by expert subject teachers. WB HS  Bengali Question Paper with 100% Common in the Examination 2020.

HS History Question Paper 2020 – উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০

HS History Question Paper 2020 Download good quality Question Papers for HS 2020 Bengali Subject prepared by Expert Bengali subject teachers. Get the WBCHSE HS 2020 Bengali Question Paper. উচ্চমাধ্যমিক 2020 ইতিহাস প্রশ্নপত্র. his HS History Question Paper 2020 will help you to find out your HS 2020 preparation.

West Bengal Class 12th Bengali Board Exam 2020 details info

West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS 2020 Exam Question Paper download for Bengali subject. West Bengal HS 2020 Examination will be started from February. Students who are currently studying in Class 12th, will seat for their first Board Exam HS. West Bengal Council of Higher Secondary Education will organize this Examination all over West Bengal. WBCHSE HS 2020 Bengali Question Paper download.

West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) Bengali Exam 2020

West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) will organize HS (12th) Board Examination 2020. Students who are currently studying in Class 12 standard, will have to seat for their second Board Exam HS 2020. Bengali is the first language for many students in the exam.

HS Bengali Syllabus 2020

West Bengal Council of Higher Secondary Education (WBCHSE) HS Bengali Syllabus with all the important chapters and marks distribution. Download the HS 2020 Bengali Syllabus and Question Paper. 

Questions on the Bengali exam will come from these chapters. All the chapters are equally important, so read them carefully.

HS 2020 Bengali Question Paper Marks Details

The total marks for this Examination will be 100, out of which 80 marks for the written exam and 20 marks for viva voce. The question pattern and Marks distribution of HS Bengali Question Paper are given below.

West Bengal HS History Question Paper 2020 FREE PDF

West Bengal HS 2020 Bengali Question Paper Download in Bengali version. WBCHSE HS History Question Paper 2020 pdf version. Get the complete Higher Secondary Bengali Question Paper 2020 with 100% Common in Examination. HS 2020 Bengali Question Paper pdf download. HS Scientific Question Paper. WBCHSE Class 12th Bengali exam 2020 notes and Important questions.

HS History Question Paper 2020

 This HS 2020 Bengali Question Paper prepared by expert subject teachers. Hope this will help you on your first Board Examination. First, read your textbooks carefully and then practice this Question Paper. In this Question Paper, all the questions are mentioned, which are important for the HS 2020 Bengali exam.

HS History Question Paper 2020 FREE PDF Download

HS History Question Paper 2020 PDF Download : This Question Paper prepared on the basis of all the important questions for this year’s Examination. This is not a complete study material, never depends upon only this Question Paper. Read your textbooks carefully first.
This is the complete list of Question Papers and other information of West Bengal HS 2020 Examination.  Share this page to help your friends.

© BhugolShiksha.com

West Bengal HS History Question Paper 2020 | WB HS History Question Paper 2020 | পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০

     উচ্চমাধ্যমিক  বাংলা পরীক্ষা 2020 (HS 2020 / WB HS 2020 / HS Exam 2020 / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WBCHSE HS Exam 2020 / HS Class 12th / Class XII / HS Pariksha 2020 ) এবং বিভিন্ন চাকরির (WBCS, WBSSC, RAIL, PSC, DEFENCE) পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে BhugolShiksha.com এর পক্ষ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (দ্বাদশ শ্রেণী) বাংলা পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর এবং প্রশ্নপত্র (HS Bengali Question Paper / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WBCHSE Bengali Question Paper / HS Class 12th Bengali Question Paper 2020 / Class XII Bengali Question Paper / HS Pariksha Bengali Question Paper / Bengali HS Exam Guide / MCQ , Short , Descriptive  Type Question Paper / HS History Question Paper 2020 FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারেলাগলে, আমাদের প্রয়াস  উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা 2020 / দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা পরীক্ষা 2020 প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর এবং উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ / পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ / দ্বাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ (HS History Question Paper 2020 / West Bengal Council of Higher Secondary Education – WBCHSE Bengali Question Paper 2020 / HS Class 12th Bengali Question Paper 2020 / Class XII Bengali Question Paper 2020 / HS Pariksha Bengali Question Paper 2020 / HS Bengali Exam Guide 2020 / HS Bengali MCQ , Short , Descriptive  Type Question Paper 2020 / HS History Question Paper 2020 FREE PDF Download) সফল হবে।

HS History Question Paper 2020 | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০

        আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” HS History Question Paper 2020 | পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই  BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করুন এবং নিজেকে  তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন , ধন্যবাদ।

Google News Follow Now
WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Channel Follow Now