সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর
সমুদ্র স্রোত | Ocean Current – Oceanography (Geography) Question and Answer in Bengali
সমুদ্র স্রোত (সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Ocean Current (Oceanography – Geography) : সমুদ্রবিদ্যা – Oceanography (ভূগোল – Geography) সমুদ্র স্রোত – Ocean Current প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হল। এই (সমুদ্র স্রোত – Ocean Current – সমুদ্রবিদ্যা Oceanography – ভূগোল Geography) প্রশ্নোত্তর গুলি স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট। তোমরা যারা সমুদ্র স্রোত – Ocean Current – সমুদ্রবিদ্যা – Oceanography (ভূগোল – Geography) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর (Short Question and Answer) খুঁজে চলেছো, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্নউত্তর ভালো করে পড়তে পারো।
সমুদ্র স্রোত (Ocean Current) সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর
1. সমুদ্রস্রোত ( Ocean Current ) কাকে বলে?
উত্তরঃ পৃথিবীর আবর্তন গতি , নিয়ত বায়ুপ্রবাহ , সমুদ্রজলের উষ্ণতা, লবনতা, ঘনত্ব ইত্যাদির তারতম্যের জন্য সমুদ্রজলের জলরাশি নিয়মিতভাবে একটি দিকে প্রবাহিত হয় । সমুদ্রজলের এই গতিকেই সমুদ্রস্রোত বলে ।
উদাহরণ : পারু স্রোত (প্রশান্ত মহাসাগর), ক্যানারি স্রোত (আটলান্টিক) ইত্যাদি।
2. সমুদ্রস্রোত এর সংজ্ঞা দাও ?
উত্তরঃ সংজ্ঞা : বায়ুপ্রবাহ , পৃথিবীর আবর্তন গতি , সমুদ্রজলের লবণতা , উয়তা , ঘনত্ব এবং মহাদেশ ও দ্বীপপুঞ্জের অবস্থানজনিত কারণে যখন সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে একস্থান থেকে অন্যস্থানের দিকে চলাচল করে , তখন তাকে সমুদ্রস্রোত বলে ।
3. সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্য লেখ ।
উত্তরঃ সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্য গুলো হল –
i ) গতিবেগ : সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ গড়ে 3-9 কিমি . / ঘন্টা । যা বায়ুপ্রবাহের মতো দ্রুত নয় । অগভীর সমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ বেশি এবং গভীর সমুদ্রে গতিবেগ কম।
ii ) নামকরণ : সমুদ্রস্রোত যে স্থানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় , সেই স্থানের নামানুসারে সমুদ্রস্রোতের নাম হয়।
iii ) প্রকৃতি : উষ্ণ স্রোত বহিঃস্রোতরূপে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে ও শীতলস্রোত অন্তঃস্রোতরূপে মেরু অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় ।
iv ) গতিবিক্ষেপ : পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য সমুদ্রস্রোতের গতিবিক্ষেপ হয় ।
v ) ঝড়ঝঞ্জা ও কুয়াশা : উষ্ণ ও শীতলস্রোতের মিলনস্থলে ঝড়ঝঞ্জা ও কুয়াশা সৃষ্টি হয়।
4. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ কী ?
উত্তরঃ সমুদ্রস্রোতের কারণ গুলি হল –
বায়ুপ্রবাহ : নিয়ত বায়ুপ্রবাহের দিক অনুযায়ী সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় ।
আবর্তন গতি : পৃথিবীর আবর্তন গতির কারণে সমুদ্রস্রোতেরও গতিবিক্ষেপ ঘটে ।
উষ্ণতার তারতম্য : উষ্ণ অঞ্চলের জলরাশি শীতল অঞ্চলের দিকে এবং শীতল অঞ্চলের জলরাশি উষ্ণ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় ।
সমুদ্রজলের লবণতা : বেশি লবণাক্ত ভারী জল কম লবণাক্ত হালকা জলের দিকে অন্তঃস্রোত রূপে প্রবাহিত হয় ।
মহাদেশ ও দ্বীপপুঞ্জের আকৃতি : বিভিন্ন মহাদেশের আকৃতি অনুযায়ী সমুদ্রস্রোত গতি পরিবর্তন করে । বাধার মাত্রা বেশি হলে দিক পরিবর্তন বেশি হয় ।
স্থানীয় বায়ু ও ঘূর্ণিঝড় : বিভিন্ন স্থানীয় বায়ু যেমন — বোরা , মিস্ট্রাল এবং বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় যেমন — টাইফুন , হারিকেন প্রভৃতি সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে ।
5. টীকা লেখ : অন্তঃস্রোত ও বহিঃস্রোত
উত্তরঃ টীকা লেখ : অন্তঃস্রোত সংজ্ঞা : উচ্চ অক্ষাংশের শীতল ও ভারী জল সমুদ্রের গভীর অংশ দিয়ে নিম্ন অক্ষাংশের দিকে প্রবাহিত স্রোতকে অন্তঃস্রোত বলে ।
উষ্ণতা ও লবনতা : অন্তঃস্রোতের উষ্ণতা ও লবণতা খুবই কম ।
হিমশৈল : মেরু অঞ্চল থেকে আসে বলে হিমশৈল বহন করে আনে ।
বর্ণ : জলের বর্ণ গাঢ় সবুজ ।
টীকা লেখ : বহিঃস্রোত সংজ্ঞা : নিম্ন অক্ষাংশের হালকা উষ্ণ জল সমুদ্রের উপরিভাগ দিয়ে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে বয়ে যাওয়া স্রোতকে বহিঃস্রোত বলে।
উষ্ণতা ও লবনতা : বহিঃস্রোতে উষ্ণতা ও লবণতা উভয়ই খুবই বেশী ।
হিমশৈল : হিমশৈল এই স্রোতের প্রভাবে গলে যায় ।
বর্ণ : জলের বর্ণ গাঢ় নীল ।
6. নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত ( Equatorial counter current ) কাকে বলে ?
উত্তরঃ উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নিরক্ষরেখা বরাবর পূর্ব থেকে পশ্চিমে অগ্রসর হয় । ফলে নিরক্ষরেখার পশ্চিমাংশে জলের পর্যাপ্ততা ও | পূর্বাংশে জলের অভাব দেখা যায় । তাই উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের বিপরীত দিকে যে স্রোত প্রবাহিত হয় , তাকে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলে ।
7. নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত ( Equatorial counter current ) বৈশিষ্ট্য লেখ ?
উত্তরঃ নিরক্ষীয় প্রতিস্রোতের বৈশিষ্ট্য হল –
- i) নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত একটি উষ্ণ সমুদ্রস্রোত ।
- ii) নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত নিরক্ষীয় শান্তবলয়ে প্রবাহিত একটি ক্ষীণ স্রোত ।
iii) আটলান্টিক , প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরে এই সমুদ্রস্রোত দেখা যায় ।
- iv) নিরক্ষীয় প্রতিস্রোতের গতি খুব কম ।
- v) উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের বিপরীতে পশ্চিম থেকে পূর্বে এটি প্রবাহিত হয় ।
8. টীকা লেখ : হিমপ্রাচীর ( Cold wall ) ।
উত্তরঃ সংজ্ঞা : উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের নীল জলরাশি ও শীতল সমুদ্রস্রোতের গাঢ় সবুজ জলরাশি যেখানে মিলিত হয় , সেখানে উভয় জলের সীমারেখা স্পষ্ট দেখা যায় , একে হিমপ্রাচীর বলে ।
উদাহরণ : আটলান্টিক মহাসাগরে কানাডা ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থলে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়েছে ।
বৈশিষ্ট্য : i) এটি বিপরীতমুখী ও বিপরীতধর্মী দুই সমুদ্রস্রোতের মিলনস্থল ।
- ii) হিমপ্রাচীর অঞ্চলে উষ্ণতার পার্থক্য হয় ও ঝড় – ঝঞ্ঝা , কুয়াশা সৃষ্টি হয় ।
iii) উষ্ণ নীল জলের তলায় শীতল সবুজ জলের অবস্থান স্পষ্টত সীমারেখা সৃষ্টি করে ।
- iv) হিমপ্রাচীর মগ্নচড়া সৃষ্টির সহায়ক ।
9. সমুদ্রস্রোত ( OCEAN CURRENT ) ও বায়ুপ্রবাহের ( WIND SYSTEM ) মধ্যে পার্থক্য ।
উত্তরঃ সমুদ্রস্রোত ( OCEAN CURRENT ) ও বায়ুপ্রবাহের ( WIND SYSTEM ) মধ্যে পার্থক্য নীচে আলোচনা করা হয়েছে-
পার্থক্যের বিষয় | সমুদ্রস্রোত | বায়ুপ্রবাহ |
নামকরণ | i ) সমুদ্রস্রোত যে স্থানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় , সেই স্থানের নামানুসারে সমুদ্র প্রবাহের নামকরণ করা হয় । যেমন ব্রাজিল উপকূলে ব্রাজিল সমুদ্রস্রোত । | i ) পক্ষান্তরে , যে দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় , সেই দিক অনুসারেই বায়ুপ্রবাহের নামকরণ করা হয় । যেমন – উত্তর – পূর্ব আয়নবায়ু । |
সৃষ্টির কারণ | ii ) সমুদ্রস্রোত আবর্তনগতি , নিয়ত বায়ুপ্রবাহ , লবণতা , উয়তার তারতম্যের কারণে সৃষ্টি হয় । | ii ) অন্যদিকে বায়ুচাপের তারতম্য ও কোরিওলিস বল বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ । |
গতি | iii ) সমুদ্রস্রোতের গতি বায়ুপ্রবাহের তুলনায় কম , গড়ে মাত্র 3-9 কি.মি. / ঘন্টা । | iii ) বায়ুপ্রবাহের গতি সমুদ্রস্রোতের কয়েকগুণ বেশি গড়ে 30-90 কিমি . / ঘন্টা । আবার টর্নেডো , হ্যারিকেন , টাইফুন প্রভৃতি বিধ্বংসী ঝড়ের গতিবেগ 300-500 কি.মি. / ঘন্টাও হয় । |
গতির প্রকৃতি | iv ) এক্ষেত্রে অনুভূমিক সঞ্চালন ঘটে । | iv ) এক্ষেত্রে অনুভূমিক ও উল্লম্ব উভয় সঞ্চালনই ঘটে । |
10. জায়র ( GYRE ) কি? কয় প্রকার?
উত্তরঃ সমুদ্রস্রোতে সমুদ্র জলরাশির এক চক্রাকার গতি দেখা যায় । এই গতি দুপ্রকার । যথা—
( i ) উপক্রান্তীয় গতি : উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ( 250 30 ° অক্ষাংশে ) আয়ন ও পশ্চিমাবায়ুর দ্বারা সমুদ্র জলরাশি উপক্রান্তীয় উয় বায়ুচাপক্ষেত্রের চারিদিকে উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণে ও দঃ গোলার্ধে বামাবর্তে ঘুরতে থাকে ।
( ii ) উপমেরুক্ষেত্রীয় গতি : উত্তর আটলান্টিক ও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে শীতল মেরু বায়ুপ্রবাহ ও পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহের ফলে এর সৃষ্টি হয় ।
11. অন্তঃস্রোত ও বহিঃস্রোতের মধ্যে পার্থক্য ।
উত্তরঃ অন্তঃস্রোত ও বহিঃস্রোতের মধ্যে পার্থক্য নীচে আলোচনা করা হয়েছে-
অন্তঃস্রোত | বহিঃস্রোত |
উচ্চ অক্ষাংশের শীতল ও ভারী জল সমুদ্রের গভীর অংশ দিয়ে নিম্ন অক্ষাংশের দিকে প্রবাহিত স্রোতকে অন্তঃ স্রোত বলে । | পক্ষান্তরে , নিম্ন অক্ষাংশের হালকা উন্ন জল সমুদ্রের উপরিভাগ দিয়ে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে বয়ে যাওয়া স্রোতকে বহিঃস্রোত বলে । |
অন্তঃস্রোতের উদ্ধৃতা ও লবণতা খুবই কম । | বহিঃস্রোতে উন্নতা ও লবণতা উভয়ই খুবই বেশী । |
মেরু অঞ্চল থেকে আসে বলে হিমশৈল বহন করে আনে । | হিমশৈল এই স্রোতের প্রভাবে গলে যায় । |
জলের বর্ণ গাঢ় সবুজ । | জলের বর্ণ গাঢ় নীল । |
12. সমুদ্রস্রোত ( Ocean current ) ও সমুদ্র তরঙ্গ ( Ocean wave ) – এর পার্থক্য লিখুন ।
উত্তরঃ সমুদ্রস্রোত ( Ocean current ) ও সমুদ্র তরঙ্গ ( Ocean wave ) – এর পার্থক্য নীচে আলোচনা করা হয়েছে –
সমুদ্রস্রোত | সমুদ্রতরঙ্গ |
নিয়মিতভাবে সমুদ্রের জলরাশি অনুভূমিকভাবে স্থানান্তরিত হলে , তাকে জলরাশি সমুদ্রস্রোত বলে । | সমুদ্রতরঙ্গ স্থানিক , অর্থাৎ নির্দিষ্ট স্থানে জলরাশি উল্লম্বভাবে ওঠানামা করে । |
সমুদ্রস্রোতের অগ্রগতি ঘটে। | সমুদ্রতরঙ্গের কোনো ঘটে অগ্রগতি ঘটে না । |
বায়ুপ্রবাহ , পৃথিবীর আবর্তন গতি , লবণতা ও উন্নতা ইত্যাদি সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ । | জলপৃষ্ঠে বাতাসের ঘর্ষণ , তলদেশের ভূকম্পন তরঙ্গ ইত্যাদি সমুদ্রতরঙ্গ সৃষ্টির কারণ । |
সমুদ্রস্রোত উপকূলীয় জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে । | উপকূলীয় ক্ষয় ও সঞ্চয়ে এর ভূমিকা প্রধান । |
13. আটলান্টিক মহাসাগরে শৈবাল সাগর সৃষ্টির কারণ কী ?
উত্তরঃ জলাবর্ত : উয় উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত , উয় উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ক্যানারি স্রোতের ঘূর্ণাবর্তে জল বাইরে থেকে ঢুকতে পারে না বা বাইরে বেরোতে পারে না ।
শৈবাল প্রাপ্তি : ক্যারিবিয়ান সাগর , মেক্সিকো উপসাগর , ফ্লোরিডা প্রণালী থেকে সমুদ্রস্রোতে বাহিত শৈবাল , শৈবাল সাগর সৃষ্টিতে সাহায্য করে ।
বাষ্পীভবন ও লবণতা : আটলান্টিক মহাসাগরের শৈবাল সাগর অঞ্চলে বাষ্পীভবনের হার সর্বাধিক , তাই জলের লবণতা ও ঘনত্ব বেশি , ফলে জল প্রবাহহীন ।
বায়ুপ্রবাহ : আটলান্টিকের শৈবাল সাগর কর্কটীয় শান্তবলয়ে অবস্থিত হওয়ার দক্ষিণ – পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু মেরুদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে এবং উত্তর – পূর্ব আয়নবায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে অগ্রসর হয় । তাই এই মাঝখানের বায়ুপ্রবাহশূন্য স্থানে স্রোতহীন অবস্থা শৈবাল সাগর সৃষ্টি করে ।
14. আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবাহিত প্রধান স্রোতগুলির নাম লিখুন ।
উত্তরঃ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবাহিত প্রধান স্রোতগুলির নাম হলো-
স্রোতের নাম | প্রকৃতি | প্রবাহের স্থান |
কুমারু স্রোত | শীতল | কুমারু মহাসাগর থেকে। |
ফকল্যান্ড স্রোত | শীতল | দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলে, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে। |
বেঙ্গুয়েলা স্রোত | শীতল | আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল বরাবর। |
উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত | উষ্ণ | নিরক্ষরেখার উত্তরে, নিরক্ষরেখার প্রায় সমান্তরালে । |
দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত | উষ্ণ | নিরক্ষরেখার দক্ষিণে, নিরক্ষরেখার প্রায় সমান্তরালে । |
ব্রাজিল স্রোত | উষ্ণ | ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর। |
উপসাগরীয় স্রোত | উষ্ণ | ক্যারিবিয়ান সাগর , মেক্সিকো উপসাগর , ফ্লোরিডা প্রণালী । |
উ : আটলান্টিক স্রোত | উষ্ণ | উত্তর – পশ্চিম ইউরোপের পশ্চিম উপকূল বরাবর। |
ক্যানারি স্রোত | শীতল | আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমাংশ। |
ইরমিঙ্গার স্রোত | শীতল | গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিমদিক দিয়ে। |
ল্যাব্রাডর স্রোত | শীতল | গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম ও পূর্ব উপকূল বরাবর। |
নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত | উষ্ণ | উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মাঝখানে। |
15. প্রশান্ত মহাসাগরের চারটি সমুদ্রস্রোতের নাম লিখুন ।
উত্তরঃ চারটি সমুদ্রেস্রোত :
স্রোতের নাম | প্রকৃতি | প্রবাহের স্থান |
পেরু বা হামবোল্ট স্রোত | শীতল | দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ – পশ্চিমে পেরু , চিলি স্রোত উপকূল । |
নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত | উষ্ণ | অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয় বলে একে পূর্ব – অস্ট্রেলীয় স্রোত বলে । |
জাপান স্রোত | উষ্ণ | জাপান ও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল বরাবর । |
বেরিং স্রোত | শীতল | এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যস্থিত বেরিং প্রণালীর ভেতর দিয়ে । |
16. ভারত মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোতগুলির নাম লিখুন ।
উত্তরঃ প্রধান সমুদ্রস্রোত :
স্রোতের নাম | প্রকৃতি | প্রবাহের স্থান |
কুমেরু স্রোত | শীতল | দক্ষিণ মেরুর নিকটবর্তী |
পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত | শীতল | অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূল |
উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত | উষ্ণ | নিরক্ষরেখার দক্ষিণে |
মাদাগাস্কার স্রোত | উষ্ণ | মাদাগাস্কার দ্বীপের পূর্ব উপকূল |
মৌসুমি স্রোত | উষ্ণ | ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম ও পূর্ব উপকূল |
মোজাম্বিক স্রোত | উষ্ণ | আফ্রিকার পূর্ব ও মাদাগাস্কারের পশ্চিম উপকূল |
আগুলহাস স্রোত | উষ্ণ | উত্তমাশা অন্তরীপের নিকটে |
নিরক্ষীয় প্রতি স্রোত | উষ্ণ | দক্ষিণ গোলার্ধে নিরক্ষরেখার সমান্তরালে |
সোমালি স্রোত | উষ্ণ | পূর্ব আফ্রিকার সোমালি উপকূল |
17. জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাব আলোচনা করুন ।
উত্তরঃ উন্নতা : উয় জাপান স্রোতের প্রভাবে , জাপানের পূর্ব উপকূল ও উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের উন্নতা বৃদ্ধি পায় ।
বাণিজ্য : এশিয়ার পূর্ব উপকূল উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের মধ্যে সুলভ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ সৃষ্টি হয় ।
মৎস্যশিকার ক্ষেত্র : উয় জাপান স্রোত ও শীতল বেরিং স্রোতের মিলনস্থলে অগভীর মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে । প্ল্যাংকটনের প্রাচুর্যের ফলে এটিং মৎস্যশিকারের আদর্শ ক্ষেত্র ।
বঝড় – ঝঞ্ঝা ও ঘন কুয়াশা : উয় ও শীতলস্রোতের মিলনের ফলে এখানে সারাবছর বাড় – ঝঞ্ঝা ও ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় ।
বরফ গলন : উয় জাপান স্রোতের প্রভাবে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের বরফ গলে যায় ।
18. ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও ল্যাব্রাডর উপকূল একই অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের উপকূলভাগে বরফ জমে না , কিন্তু ল্যাব্রাডর উপকূলে বরফ জমার কারণ কী ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম উপকূল বরাবর উয় উত্তর আটলান্টিক সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হওয়ায় উপকূলভাগ উন্ন ও বরফমুক্ত থাকে ।
অপরদিকে , ল্যাব্রাডর উপকূলে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় উপকূলের উয়তা হ্রাস পায় ও বরফ
19. মগ্নচড়াগুলি মৎস্যশিকারে উন্নত কেন ?
উত্তরঃ মাছের খাদ্য : মগ্নচড়াগুলিতে মাছের প্রধান খাদ্য প্ল্যাংকটন ও অন্যান্য জৈব উপাদানের প্রাচুর্য মৎস্য সমাবেশের অনুকূল ।
জলবায়ু : মগ্নচড়াগুলিতে মাছের সহনোপযোগী নাতিশীতোয় তাপমাত্রা মৎস্য সমাবেশে সাহায্য করে ।
লবণ : মগ্নচড়াতে উয় ও শীতল স্রোতবাহিত লবণ কেন্দ্রীভূত হয় , যা মাছের খাদ্য ।
গভীরতা : মগ্নচড়াগুলির গভীরতা মাত্র 200 মিটারের মধ্যে হওয়ায় , অগভীর সমুদ্রে মৎস্যশিকার সুবিধাজনক ।
20. গ্র্যান্ড ব্যাংক কী ?
উত্তরঃ সংজ্ঞা : গ্র্যান্ড ব্যাংক হল একটি অগভীর মগ্নচড়া , যার গভীরতা প্রায় 200 মিটার ।
অবস্থান : উত্তর আমেরিকার উত্তর – পূর্ব এবং আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর – পশ্চিম উপকূলের বিস্তৃত মহীসোপানে ‘ গ্র্যান্ড ব্যাংক ’ মগ্নচড়াটি সৃষ্টি হয়েছে ।
সৃষ্টির কারণ : উয় উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থলে স্রোতবাহিত উপাদান ও হিমশৈলস্থিত উপাদান সজ্জিত হয়ে এই মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে ।
মৎস্য শিকারের উপযোগী : প্ল্যাংকটনের প্রাচুর্য ও নাতিশীতোয় জলবায়ু এই অঞ্চলটিকে মৎস্য শিকারের উপযোগী করে তুলেছে ।
প্রধান মৎস্য : এটি পৃথিবীর বৃহত্তম কড্ মাছ শিকারক্ষেত্র ।
21. নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে ঘন কুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝা সারা বছর ধরে হয় কেন ?
উত্তরঃ ঘন কুয়াশা সৃষ্টির কারণ : উয় উপসাগরীয় স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলীয় বাষ্পপূর্ণ উয় বায়ু ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল বায়ু নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে মিলিত হলে , উষ্মবায়ু শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে জমে গিয়ে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি করে ।
ঝড় – ঝঞ্ঝা সৃষ্টির কারণ : নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে উষ্ম উপসাগরীয় স্রোতের উগ্নবায়ু এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের শীতল বায়ু পরস্পরমুখী হওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায়শই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় ।
22. সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্যগুলি লিখুন ।
উত্তরঃ বহিঃস্রোত : উয়স্রোত বহিঃস্রোতরূপে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে প্রবাহিত হয় ।
অন্তঃস্রোত : শীতলস্রোত অন্তঃস্রোতরূপে মেরু থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় ।
বায়ুপ্রবাহ : নিয়ত বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় ।
গতিবেগ : অগভীর সমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ বেশি এবং গভীর সমুদ্রে গতিবেগ কম ।
ঝড় – ঝঞ্ঝা ও কুয়াশা : উয় ও শীতলস্রোতের মিলনস্থলে ঝড় – ঝঞ্ঝা ও কুয়াশা সৃষ্টি হয় ।
23. উপসাগরীয় স্রোত সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তরঃ সংজ্ঞা : উত্তর আটলান্টিক স্রোতের যে অংশটি ক্যারিবিয়ান সাগর , মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় , তাকে উপসাগরীয় স্রোত বলে । >
বৈশিষ্ট্য : i) এটি উন্ন প্রকৃতির , গড় উন্নতা 27 ° সে । ii) এই স্রোতের মাধ্যমে শৈবাল বাহিত হয় ।
শ্রেণি : এটি তিনটি অংশে বিভক্ত— i) ইরমিঙ্গার , ii) ক্যানারি ও iii) উত্তর আটলান্টিক ।
প্রভাব : i) নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে ঝড় – ঝঞ্ঝা ও ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় । ii) নরওয়ে , ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম উপকূল বরফমুক্ত রাখে । iii) নিউফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে ‘ গ্র্যান্ড ব্যাংক ’ নামক মগ্নচড়ার সৃষ্টি করেছে । iv) হিমপ্রাচীর সৃষ্টি ও নৌপরিবহনে সাহায্য করে ।
24. সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লিখুন ।
উত্তরঃ প্রভাব : i) সমুদ্রসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে উন্নতার তারতম্য হয় । ii) ঝড় – ঝঞ্ঝা , কুয়াশা সৃষ্টি করে । iii) মৎস্য শিকারে সাহায্য করে । iv) মগ্নচড়া ও হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয় । v) নৌ – পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে । vi) বন্দরের বরফ মুক্তি বা বরফ জমাট বাঁধা নিয়ন্ত্রণ করে । vii) সমুদ্র উপকূলের নিকটবর্তী অঞ্চলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে । viii) জাহাজ ডুবির সম্ভাবনা থাকে । ix) শীতল সমুদ্রস্রোত তুষারপাত ঘটাতে সাহায্য করে । x) হিমশৈলের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ।
25. আগুলহাস স্রোত কোন্ মহাসাগরে দেখা যায় ? এর প্রবাহপথ ব্যাখ্যা করুন ।
উত্তরঃ অবস্থান : আগুলহাস স্রোত দক্ষিণ – পশ্চিম ভারত মহাসাগরে আফ্রিকার দক্ষিণ – পূর্ব উপকূলে দেখা যায়।
প্রবাহপথ : দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের একটি অংশ মাদাগাস্কার দ্বীপের উত্তরে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মোজাম্বিক ও মাদাগাস্কার এই দুটি অংশে বিভক্ত হয় । আফ্রিকার দক্ষিণে উত্তমাশা অন্তরীপের কাছে এই দুটি সমুদ্রস্রোত মিলিত হয়ে আগুলহাস স্রোত নামে আরও দক্ষিণমুখী হয়ে কুমেরু স্রোতের সাথে মিলিত হয় ।
প্রকৃতি : i) এটি উয় সমুদ্রস্রোত । ii) এটি পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পূর্বদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় ।
26. পেরু বা হামবোল্ট স্রোত সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তরঃ অবস্থান : পেরু স্রোত দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পেরু উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয় ।
প্রবাহপথ : কুমেরু স্রোতের একটি শাখা দক্ষিণ আমেরিকার হর্ন অন্তরীপে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উত্তর – পশ্চিম পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে পেরু ও চিলি উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয় ।
বৈশিষ্ট্য : i) এটি শীতল স্রোত । ii) আলেকজান্ডার ভন হামবোল্টের আবিষ্কৃত এই স্রোত হামবোল্ট স্রোত নামেও পরিচিত । iii) এই স্রোতের প্রভাবে পেরু উপকূলের শীতলতা বেড়ে যায় ।
27. সোমালি স্রোত সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তরঃ অবস্থান : সোমালি স্রোত ভারত মহাসাগরে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের সোমালিল্যান্ডের পাশ দিয়ে প্রবাহিত একপ্রকার উন্নস্রোত ।
প্রবাহপথ : দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের এই শাখাটি আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের পাশ দিয়ে উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়ে আরবসাগরে প্রবেশ করে ।
বৈশিষ্ট্য : i) এটি উষ্ম স্রোত । ii) এই সমুদ্রস্রোত আরবসাগরে প্রবেশ করার পর মৌসুমি বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । iii) এর গতি ও দিক উত্তর – পূর্ব আয়ন বায়ু ও মৌসুমি বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
27. কামচটিকা স্রোত সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তরঃ অবস্থান : কামচাটকা সমুদ্রস্রোত উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর – পশ্চিমাংশে কামচাটকা উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয় ।
প্রবাহপথ : শীতল সুমেরু স্রোতের একটি অংশ বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে বেরিং স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় । কামচাটকা উপদ্বীপের কাছে এই স্রোত কামচাটকা স্রোত নামে পরিচিত । এই স্রোত আরও দক্ষিণে সাখালিন ও হক্কাইডোর পাশ দিয়ে ওয়াশিও স্রোত নামে প্রবাহিত হয় ।
বৈশিষ্ট্য : i) এটি শীতল স্রোেত । ii) জাপানের পূর্ব উপকূলে এটি উয় কুরোশিয়ো স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঝড় – ঝঞ্ঝা ও কুয়াশা সৃষ্টি করে ।
28. উত্তর ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতে ঋতুভিত্তিক পরিবর্তন দেখা যায় কেন ?
উত্তরঃ কারণ : (1) ঋতু পরিবর্তনের ফলে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতির পরিবর্তন হয় । এই কারণে শীত ও গ্রীষ্মে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দুটি বিপরীত সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয় – ( a ) গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি স্রোত ও ( b ) শীতকালীন মৌসুমি স্রোত । (2) গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সোমালি স্রোত উত্তর – পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আরবসাগরে প্রবেশ করে । এই স্রোত ভারতের পশ্চিম উপকূল ধরে শ্রীলংকার দক্ষিণে পৌঁছায় । সেখান থেকে উত্তর দিকে বাঁক নিয়ে ভারতের পূর্ব উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয় । কিন্তু শীতকালীন মৌসুমি স্রোত উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বিপরীতমুখী হয় ।
29. উপসাগরীয় স্রোতের প্রধান শাখাগুলি লিখুন ।
উত্তরঃ অবস্থান : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ।
প্রধান শাখা :
( 1 ) উদ্বৃ উত্তর আটলান্টিক স্রোত : উয় উপসাগরীয় স্রোতের প্রধান শাখাটি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিম ইউরোপের পশ্চিম উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয় । এটি উত্তর আটলান্টিক স্রোত নামে পরিচিত ।
( 2 ) উদ্বু ইরমিঙ্গার স্রোত : এটি উয় উপসাগরীয় স্রোতের উত্তর শাখা । এটি গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিমদিক দিয়ে উত্তরদিকে প্রবাহিত হয় ।
( 3 ) শীতল ক্যানারি স্রোত : এটি উপসাগরীয় স্রোতের দক্ষিণ শাখা । এটি ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে । ক্যানারি স্রোত নাম গ্রহণ করে ।
30. উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে শৈবাল সাগর সৃষ্টির কারণ কী ?
উত্তরঃ কারণ :
( 1 ) জলাবর্ত : জাপান স্রোত , উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত , ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত ও উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়ে গতিহীন শৈবাল সাগর সৃষ্টি করেছে ।
( 2 ) কর্কটীয় শান্তবলয়ের অবস্থান : উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর কর্কটীয় শান্তবলয়ে অবস্থান করে । এখানে উত্তর – পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু ও দক্ষিণ – পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু পরস্পর বিপরীতমুখী হওয়ায় , মাঝখানে বায়ুপ্রবাহশূন্য অবস্থা সৃষ্টি হয় ।
( 3 ) সমুদ্রজলের উন্নতা , লবণতা , ঘনত্ব : এই অংশে সমুদ্রজলের উন্নতা , লবণতা ও ঘনত্ব বেশি থাকে বলে সমুদ্রস্রোত প্রায় গতিহীন থাকে ।
31. ল্যাব্রাডর স্রোতের বৈশিষ্ট্যগুলি লিখুন ।
উত্তরঃ বৈশিষ্ট্য :
( 1 ) প্রকৃতি : এটি প্রকৃতিতে শীতল স্রোত অন্তঃস্রোত রূপে প্রবাহিত হয় । এবং
( 2 ) বর্ণ : এটি গাঢ় সবুজ বর্ণের হয় ।
( 3 ) উৎপত্তি : সুমেরু মহাসাগর থেকে এই শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের উৎপত্তি হয় ।
( 4 ) প্রবাহপথ : সুমেরু মহাসাগর থেকে উৎপন্ন একটি শীতল স্রোত গ্রিনল্যান্ডের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল দিয়ে ল্যাব্রাডর দ্বীপের কাছে মিলিত হয় ।
( 5 ) প্রভাব : এটি নিউফাউন্ডল্যান্ডের নিকট উয় উপসাগরীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঘন কুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝা সৃষ্টি করে ।
32. আটলান্টিক মহাসাগরস্থিত প্রধান প্রধান মগ্নচড়াগুলির নাম লিখুন ।
উত্তরঃ উত্তর – পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর : গ্র্যান্ড ব্যাংক , জর্জেস ব্যাংক , সেবল ব্যাংক , জেফ্রি ব্যাংক ইত্যাদি ।
উত্তর – পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগর : ডগার্স ব্যাংক , রকফল ব্যাংক , সিডার ব্যাংক , গডউইন ব্যাংক , সার ব্যাংক প্রভৃতি ।
বৈশিষ্ট্য : (1) সাধারণত উয় ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে এই মগ্নচড়াগুলি সৃষ্টি হয় । ÷2) এগুলি মৎস্যশিকারের আদর্শ ক্ষেত্র । (3) পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মগ্নচড়া হল গ্র্যান্ড ব্যাংক ।
33. উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাব লিখুন ।
উত্তরঃ প্রভাব :
( 1 ) নৌবাণিজ্য : উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে নৌবাণিজ্যপথ সুগম হয় ।
( 2 ) বরফমুক্ত উপকূল : উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ , সুইডেনের উপকূল অঞ্চল বরফমুক্ত থাকে ।
( 3 ) ঘন কুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝা : উন্ন উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ড ল্যান্ডের কাছে সারাবছর ঘন কুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝা দেখা যায় ।
( 4 ) মগ্নচড়া : উপসাগরীয় ও ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে পৃথিবীবিখ্যাত মগ্নচড়া ‘ গ্র্যান্ড ব্যাংক ‘ সৃষ্টি হয়েছে , যা মৎস্য শিকারের আদর্শক্ষেত্র ।
34. হিমশৈল ( Iceberg ) কী ?
উত্তরঃ সংজ্ঞা : উপকূলীয় হিমবাহের বিশালায়তন বরফের স্তূপ বিচ্ছিন্ন হয়ে সাগর বা মহাসাগরে ভাসমান । থাকলে , সেই ভাসমান বরফের চাঁইকে হিমশৈল বলে ।
বৈশিষ্ট্য : (1) হিমশৈলের 1/9 ভাগ সমুদ্রে জলের ওপর ভাসমান থাকে এবং 8/9 ভাগ জলে নিমজ্জিত থাকে । (2) হিমশৈলের মধ্যে যে হিমগ্রাব থাকে তা উন্নস্রোতের সংস্পর্শে হিমশৈল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমুদ্রে সঞ্চিত হয় ও মগ্নচড়া সৃষ্টি করে ।
উদাহরণ : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে একটি হিমশৈলের ধাক্কায় টাইটানিক জাহাজের সলিলসমাধি ঘটেছিল ।
35. বান ডাকা ( Tidal bore ) কী ?
উত্তরঃ সংজ্ঞা : বর্ষাকালে ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল নদীর মোহানা দিয়ে নদী প্রবাহের বিপরীত দিকে নদীখাতের মধ্য দিয়ে প্রবল জলোচ্ছ্বাস ঘটিয়ে প্রবেশ করলে , তাকে বান ডাকা বলে ।
বান ডাকার কারণ : (1) নদী মোহানা শঙ্কু বা ফানেল আকৃতির হলে , (2) নদী মোহানায় বালির চড়া থাকলে , (3) নদীতে জলের পরিমাণ বেশি হলে , (4) ভরা কোটালে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হলে বান ডাকে ।
উদাহরণ : পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদী , লন্ডন অববাহিকার টেমস নদীর মোহানায় বান ডাকার ঘটনা ঘটে ।
36. ষাঁড়াষাঁড়ির বান কী ?
উত্তরঃ সংজ্ঞা : বর্ষাকালে ভরা কোটালের সময় নদীর গতিপথের বিপরীত দিকে প্রবল গর্জন করে বান ডাকে । এটি দুটি পূর্ণবয়স্ক ষাঁড়ের লড়াইয়ের সময় যে আওয়াজ শোনা যায় তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় , একে ষাঁড়াষাড়ির বান বলে ।
কারণ : (1= শঙ্কু বা ফানেল আকৃতির নদী মোহানা । (2) অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য ও চন্দ্রের মিলিত আকর্ষণ । (3) নদী মোহানায় বালির চড়া ।
উদাহরণ : হুগলি নদীতে এই প্রবল বানে জলের উচ্চতা 7-8 মিটার পর্যন্ত হয় ।
37. বেরিং স্রোত সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তরঃ সংজ্ঞা : উত্তর – পূর্ব মেরু বায়ুর প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সুমেরু অঞ্চল থেকে সংকীর্ণ বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে যে শীতল স্রোত প্রবাহিত হয় , তাকে বেরিং স্রোত বলে ।
প্রবাহপথ : এটি এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণমুখী হয় ও জাপান বা কুরোশিয়ো স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
এই দুই স্রোতের মিলনস্থলে ঘন কুয়াশা ও ঝড় – ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় ।
38. প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের সাদৃশ্যপূর্ণ সমুদ্রস্রোতগুলির নাম লিখুন ।
উত্তরঃ প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের সাদৃশ্যপূর্ণ সমুদ্রস্রোতগুলির নাম
প্রকৃতি | প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত | অটলান্টিক মহাসাগরীয় স্রোত |
শীতল | পেরু বা হামবোল্ট | বেঙ্গুয়েলা স্রোত |
উষ্ণ | পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত | ব্রাজিল স্রোত |
উষ্ণ | কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত | ক্যানারি স্রোত |
উষ্ণ | ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত | ক্যানারি স্রোত |
উষ্ণ | নিরক্ষীয় স্রোত | নিরক্ষীয় স্রোত |
শীতল | কুমেরু স্রোত | কুমেরু স্রোত |
শীতল | বেরিং স্রোত | ল্যাব্রাডর স্রোত |
উষ্ণ | উত্তর প্রশান্ত উত্তর মহাসাগরীয় স্রোত | উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরীয় স্রোত |
উষ্ণ ও শীতল | জাপান ও বেরিং উপসাগরীয় স্রোতের মিলনস্থল | উপসাগরীয় ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলন |
39. মগ্নচড়া ( Banks ) কী ?
উত্তরঃ শীতলস্রোত পরিবাহিত হিমশৈল উষ্ণস্রোতের সংস্পর্শে এলে গলে যায় । তখন হিমশৈলের মধ্যস্থিত নুড়ি , বালি , কাদা ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে যে অগভীর চড়া সৃষ্টি হয় , তাকে মগ্নচড়া বলে ।
মগ্নচড়া অঞ্চলে জলের গভীরতা 200 মিটারের মধ্যে হওয়ায় , এখানে মাছের খাদ্য প্ল্যাংকটন প্রচুর জন্মায় । ফলে প্রচুর মাছের সমাবেশ ঘটে । মগ্নচড়াগুলি মৎস্য শিকারের আদর্শ স্থান ।
উদাহরণ : উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থলে অবস্থিত বিখ্যাত গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক , জর্জেস ব্যাঙ্ক মগ্নচড়ার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ।
40. মগ্নচড়ার অর্থনৈতিক গুরুত্ব কি?
উত্তরঃ মগ্নচড়ারঅর্থনৈতিক গুরুত্ব : (1) মগ্নচড়া অঞ্চলে জলের গভীরতা 200 মিটারের মধ্যে হওয়ায় , এখানে মাছের খাদ্য প্ল্যাংকটন প্রচুর জন্মায় । (2) ফলে প্রচুর মাছের সমাবেশ ঘটে । (3) মগ্নচড়াগুলি মৎস্য শিকারের আদর্শ স্থান ।
উদাহরণ : নিউফাউন্ডল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে 37 হাজার বর্গকিমি স্থান জুড়ে অগভীর মগ্নচড়া ‘ গ্র্যান্ড ব্যাংক ’ সৃষ্টি হয়েছে ।
FILE INFO : সমুদ্র স্রোত – Ocean Current | সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল প্রশ্নোত্তর (Oceanography – Geography)
File Details:
PDF Name : সমুদ্র স্রোত – Ocean Current | সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল প্রশ্নোত্তর (Oceanography – Geography)
Price : FREE
Download Link : Click Here To Download
INFO : Geography – Oceanography – Question and Answer | ভূগোল – সমুদ্রবিদ্যা – সমুদ্র স্রোত (Ocean Current) প্রশ্নোত্তর
” ভূগোল (Geography) – সমুদ্রবিদ্যা (Oceanography) – সমুদ্র স্রোত – Ocean Current “ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিভিন্ন শ্রেনীর পরীক্ষা (Class 5, 6, 7, 8, 9, Madhyamik, Class 11, Higher Secondary – HS, College & University Exam) এবং বিভিন্ন চাকরির (WBCS, WBSSC) পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে BhugolShiksha.com এর পক্ষ থেকে ভূগোল পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নো ও উত্তর উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারে লাগলে, আমাদের প্রয়াস ভূগোল (Geography) সমুদ্রবিদ্যা (Oceanography) – সমুদ্র স্রোত – Ocean Current / সমুদ্র স্রোত সংক্ষিপ্ত ছোট প্রশ্ন ও উত্তর / সমুদ্র স্রোত (সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Ocean Current (Oceanography – Geography) SAQ / Short Question and Answer / সমুদ্র স্রোত (সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Ocean Current (Oceanography – Geography) Quiz / সমুদ্র স্রোত (সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Ocean Current (Oceanography – Geography) QNA / সমুদ্র স্রোত (সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Ocean Current (Oceanography – Geography) Question and Answer FREE PDF Download ) পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর সফল হবে।
সমুদ্র স্রোত (সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Ocean Current (Oceanography – Geography) Question and Answer in Bengali
আশা করি এই ” সমুদ্র স্রোত (সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Ocean Current – Oceanography Geography ” পোস্টটি থেকে উপকৃত হয়েছেন। স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ডিজিটাল মাধ্যম BhugolShiksha.com । এর প্রধান উদ্দেশ্য পঞ্চম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় এবং গ্রাজুয়েশনের শুধুমাত্র ভূগোল বিষয়কে সহজ বাংলা ভাষায় আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কাছে সহজ করে তোলা।
সমুদ্র স্রোত (সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Ocean Current (Oceanography – Geography)
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” সমুদ্র স্রোত (সমুদ্রবিদ্যা – ভূগোল) প্রশ্ন ও উত্তর | Ocean Current (Oceanography – Geography) ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই আমাদের ভূগোল শিক্ষা – Bhugol Shiksha – BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। ভূগোল বিষয়ে যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইটটি ফলাে করুন এবং নিজেকে ভৌগোলিক তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন , ধন্যবাদ।