ধ্যান চাঁদ এর জীবনী
Dhyan Chand Biography in Bengali
ধ্যান চাঁদ এর জীবনী – Dhyan Chand Biography in Bengali : হকির জাদুকর ধ্যানচাদ এখন ভারতের হকি আর বিশ্ব ইতিহাসে গৌরবজনক অধ্যায়ে অধিষ্ঠিত নয় । পাশ্চাত্যের দেশগুলি ভারতকে অনায়াসে হারিয়ে দেয় । এমনকি মহাশক্তিশালী পাকিস্তানের কাছেও ভারতকে বারবার মাথা নত করতে হয় । কিন্তু এমন একদিন ছিল যখন আমাদের দেশের হকি বিশ্বের সর্বত্র সারা জাগানো আলোড়ন ফেলে দিতো । হকির সেই গৌরবদিপ্ত সোনালী সকালে হকির যাদুকর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ধ্যানচাঁদ ।
ভারতীয় হকি খেলোয়াড় ধ্যান চাঁদ এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । ধ্যান চাঁদ এর জীবনী – Dhyan Chand Biography in Bengali বা ধ্যান চাঁদ এর আত্মজীবনী বা (Dhyan Chand Jivani Bangla. A short biography of Dhyan Chand. Dhyan Chand Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) ধ্যান চাঁদ এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ধ্যান চাঁদ কে ছিলেন ? Who is Dhyan Chand ?
ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) ছিলেন একজন ভারতীয় হকি খেলোয়াড় এবং খেলাধুলার ইতিহাসের অন্যতম সেরা হকি খেলোয়াড়। ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) তিনটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক অর্জনের পাশাপাশি তাঁর অসাধারণ গোল-স্কোরিংয়ের জন্যও পরিচিত ছিলেন, 1928, 1932 এবং 1936 সালে, ভারত এমন একটি যুগে যেখানে ফিল্ড হকি প্রাধান্য পেয়েছিল। ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) এর প্রভাব এই জয়ের বাইরেও প্রসারিত হয়েছিল, যেহেতু ভারত ১৯২৮ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত আটটি অলিম্পিকের মধ্যে সাতটিতে মাঠের হকি ইভেন্ট জিতেছিল। ধারণা করা হয় যে ১৯৩৬ সালের অলিম্পিক ফাইনালে ৮-১ গোলে জার্মানিকে পরাজিত করার পরে অ্যাডলফ হিটলার তাকে সিনিয়র পদে প্রস্তাব করেছিলেন। জার্মান সেনাবাহিনী, যার কাছে চাঁদ অস্বীকার করেছিল।
ধ্যান চাঁদ এর জীবনী – Dhyan Chand Biography in Bengali :
নাম (Name) | ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) |
জন্ম (Birthday) | ১৯০৫ সালের ২৯ আগস্ট (29th March 1905) |
জন্মস্থান (Birthplace) | এলাহাবাদ, ব্রিটিশ ভারত |
ডাকনাম | (গুলি), উইজার্ড, যাদুকর। |
কাজের মেয়াদ | ১৯২২ – ১৯৫৬ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | পদ্মশ্রী |
মৃত্যু (Death) | ৩ ডিসেম্বর ১৯৭৯ (3rd December 1979) |
ধ্যান চাঁদ এর জন্ম – Dhyan Chand Birthday :
১৯০৫ সালে ২৯ আগস্ট কিংবদন্তী হকি খেলোয়াড় ধ্যানচাদের জন্ম হয় । অখ্যাত গ্রামের ধানক্ষেতে , গম ক্ষেতে হকির স্টিক নিয়ে নেমে পড়তেন । ধীরে ধীরে এভাবেই ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) নিজেকে এক খেলোয়াড় হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন । ছোটোবেলায় খেলাধুলার খুব একটা সুযোগ পাননি । তখন পরাধীন ভারতবর্ষ , হকি খেলার সরকারি সাহচর্য ছিল না । ছোটো ধ্যানচাদ মনের আনন্দে খেলতেন । আসলে পাঞ্জাবের ঘরে ঘরে হকি খেলার জনপ্রিয়তা । সেখানকার ছেলেরা একটু বড়ো হবার সঙ্গে সঙ্গে হকিস্টিক হাতে মাঠে চলে যায় । শরীরটা ছিল পেটানো লোহার মতো । ধূমপান করতেন না কোনো বদ – নেশায় নিজেকে যুক্ত রাখতেন না । জীবনের শেষ প্রহর পর্যন্ত সংযমী জীবন যাপন করে গেছেন । তাই বোধ হয় এত বড়ো মাপের খেলোয়াড় হতে পেরেছিলেন ।
ধ্যান চাঁদ এর শিক্ষাজীবন – Dhyan Chand Education Life :
স্কুল পর্যায়ের খেলাতেই ধ্যানচাদের প্রতিভার বিচ্ছুরণ সকলকে অবাক করে দেয় । ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) এর স্টিক হাতে ছুটে যাওয়ার মধ্যে ছিল রাজকীয় আভিজাত্য ৷ বিপক্ষ দলের ডিফেন্ডাররা তাকে ধরতে পারতেন না । একে একে ডিফেন্ডারদের টপকে গোল করে আসতেন । গোল করতে ভালোবাসতেন হকির জাদুকর ।
ধ্যান চাঁদ এর কর্মজীবন – Dhyan Chand Work Life :
তিনি মাত্র যোলো বছর বয়সে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন । সেনাবাহিনীতেই ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) হকি খেলা শুরু করেন এবং অল্পদিনের মধ্যে একজন দক্ষ হকি খেলোয়াড় হিসাবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন ।
ধ্যান চাঁদ এর ভারতীয় জাতীয় দলে যোগদান – Dhyan Chand Joined Indian Team :
ধ্যানচাদ হকি খেলায় এমনই নৈপুণ্য ও পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন যে , মাত্র তেইশ বছর বয়সে ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) ভারতীয় জাতীয় দলে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসাবে মনোনীত হন । ভারতীয় এই জাতীয় দল ১৯২৮ সালে হল্যান্ডের আমস্টার্ডামের অলিম্পিকে অংশ গ্রহণ করেছিলো ।
১৯২৮ সালের হকিতে ভারতের স্বর্ন পদক লাভ – Indian team Win Gold :
হল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯২৮ সালের অলিম্পিক হকি খেলায় ভারত ফাইনালে বিজয়ী হয় এবং স্বর্ণপদক লাভ করে । ভারতের মোট ২৮ টি গোলের মধ্যে সেবার ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) একাই এগারোটা গোল করার মতো অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে সবাইকে অবাক করে দেন ।
এরপর হকিতে ধ্যানটাদের নৈপুন্য ও কৃতিত্ব একের পর এক ভারতকে সাফল্যের বরমাল্য এনে দেয় ।
বিশ্বের চোখে ভারতীয় হকি খেলাকে একটা সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত করতে একজন দক্ষ হকি খেলোয়াড় হিসাবে ধ্যানচাদ সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন । তার উঁচুমানের অনন্যসাধারণ খেলার কারণে ধ্যানচাদ দেশে – বিদেশে সর্বত্র গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হন ।
[আরও দেখুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali]
হকি তে তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত – Indian Team win 3 time Worldcup :
হকি খেলায় সে সময় ভারত তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় । উপর্যুপরি তিনবার বিশ্ব অলিম্পিকে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করতে যাঁর কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন ধ্যানচাদ ।
ভারতীয় দলের বার্লিনে স্বর্ন পদক লাভ – Indian Team Win Gold In Barlin :
১৯৩৬ সালের ঐতিহাসিক অলিম্পিক খেলা অনুষ্ঠিত হয় বার্লিনে । সেবারও ভারতীয় দল স্বর্ণপদক লাভ করে । ১৯৩৬ সালের সেই অলিম্পিক খেলায় ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন ধ্যানচাঁদ ।
হকিতে ধ্যান চাঁদ এর বিশ্ব রেকর্ড :
ধ্যানচাদ তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে বিশ্ব অলিম্পিক হকি খেলায় মোট ১০১ টি গোল করেন । এছাড়া আন্তর্জাতিক হকি খেলাতে ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) মোট ৩০০ টি গোল করেন । এটা একটা রেকর্ড । ধ্যান চাঁদ (Dhyan Chand) এর এই বিশ্ব রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হননি ।
[আরও দেখুন, মারাদোনা এর জীবনী – Diego Maradona Biography in Bengali]
ধ্যান চাঁদ এর পুরস্কার – Dhyan Chand Prize :
ভারত সরকার কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ধ্যান চাঁদকে (Dhyan Chand) ‘ পদ্মভূষণ ’ উপাধিতে সম্মানিত করে । তাছাড়া বিদেশেও ধ্যানচাদ অশেষ সম্মান পেয়ে এসেছেন । ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিকে ধ্যান চাঁদকে (Dhyan Chand) সম্মানিত করা হয় ‘ জলপাই ’ এর মুকুট দিয়ে ।
১৯৬৮ সালে মেক্সিকো অলিম্পিকে ধ্যানচাঁদ বিশিষ্ট অতিথি , হিসাবে আমন্ত্রিত হবার গৌরব অর্জন করেন ।
তরুণ ও উদীয়মান হকি খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ধ্যানচাদ একটা ইনস্টিটিউট খোলেন । এ ব্যাপারে সরকার থেকেও তিনি সাহায্য সহযোগিতা পান ।
ধ্যান চাঁদ এর মৃত্যু – Dhyan Chand Death :
ভারতের এই স্বনামধন্য কৃতি হকি খেলোয়াড় ১৯৭৯ সালের ৩ রা ডিসেম্বর ৭৪ বছর বয়সে প্রাণত্যাগ করেন।
হকির স্টিককে যে কতরকম ভাবে কাজ করানো যেতে পারে , ছোট ছোট ড্রিবলিং – এর সাহায্যে বলটিকে তার লক্ষ্যে অর্থাৎ গোলের দিকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে , ধ্যানচাদের খেলা না দেখলে আমরা তা বুঝতে পারতাম না । মাঠের মধ্যে ধ্যানচাদের উপস্থিতি দর্শকদের মনে বাড়তি মনোবল যোগাতো । বিপক্ষ ডিফেন্সকে তীক্ষ্ণ ছুরির ফলায় ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করতেন ধ্যানচাদ । গোলের মালা পরিয়ে দিতেন বিপক্ষ দলের গলায় । এমনকি আন্তর্জাতিক আঙিনাতেও তিনি একাধিকবার সফলতা অর্জন করেছেন । ধ্যানচাদ যখন অবসর নিলেন হকির আসর থেকে , সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রাণবন্ত হকি ঘরানার অবসান হয়ে গেল । ধ্যানচাদের মত আর কেউ স্টাইলিস্ট ঢঙে হকি খেলেন না । হকির মধ্যে এখন এসে গেছে পাওয়ার । আর তখন ছিল স্কিল । এই স্কিল বা ব্যক্তিগত ক্ষমতার শেষ উদাহরণ হয়ে আছেন হকির মহানায়ক ধ্যানচাদ ।
উত্তরকালের খেলোয়াড়দের জন্য ধ্যানচাদ যে আহ্বান রেখে গেছেন ত হল – । ” Keep the flag of India flying “
ধ্যান চাঁদ এর জীবনী – Dhyan Chand Biography in Bengali FAQ :
- ধ্যান চাঁদ কে ছিলেন ?
Ans: ধ্যান চাঁদ ছিলেন একজন ভারতীয় হকি খেলোয়াড় এবং খেলাধুলার ইতিহাসের অন্যতম সেরা হকি খেলোয়াড় ।
- ধ্যান চাঁদ এর জন্ম কোথায় হয় ?
Ans: ধ্যান চাঁদ এর জন্ম হয় এলাহাবাদ, ব্রিটিশ ভারত।
- ধ্যান চাঁদ এর জন্ম কবে হয় ?
Ans: ধ্যান চাঁদ এর জন্ম হয় ২৫ ডিসেম্বর ১৯০৫ সালে।
- হকিতে ভারত প্রথম কবে সোনা পাই ?
Ans: হকিতে ভারত প্রথম ১৯২৮ সালে সোনা পাই ।
- ধ্যান চাঁদ আন্তর্জাতিক খেলতে মোট কয়টি গোল করেন ?
Ans: ধ্যান চাঁদ আন্তর্জাতিক খেলতে মোট ৩০০ টি গোল করেন ।
- ধ্যান চাঁদ অলিম্পিক এ কয়টি গোল করেন ?
Ans: ধ্যান চাঁদ অলিম্পিক এ ১০১ টি গোল করেন ।
- ভারত সরকার ধ্যান চাঁদ কে কি পুরস্কার দেন ?
Ans: ভারত সরকার ধ্যান চাঁদকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেন।
- ধ্যান চাঁদ কবে মারা যান ?
Ans: ধ্যান চাঁদ মারা যান ৩ ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে ।
[আরও দেখুন, ফ্রান্ৎস বেকেনবাউয়ার এর জীবনী – Franz Beckenbauer Biography in Bengali
আরও দেখুন, মহাত্মা গান্ধীর জীবনী – Mahatma Gandhi Biography in Bengali
আরও দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali
আরও দেখুন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী – Bankim Chandra Chatterjee Biography in Bengali
আরও দেখুন, আলবার্ট আইনস্টাইন জীবনী – Albert Einstein Biography in Bengali]
ধ্যান চাঁদ এর জীবনী – Dhyan Chand Biography in Bengali
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” ধ্যান চাঁদ এর জীবনী – Dhyan Chand Biography in Bengali ” পােস্টটি পড়ার জন্য। ধ্যান চাঁদ এর জীবনী – Dhyan Chand Biography in Bengali পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাও। আশা করি এই ধ্যান চাঁদ এর জীবনী – Dhyan Chand Biography in Bengali পোস্টটি থেকে উপকৃত হবে। এই ভাবেই BhugolShiksha.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।